তারিখ লোড হচ্ছে...

আওয়ামী মন্ত্রী এনামুলের ছোঁয়ায় কৃষকের মেয়ে কনিকার রাজকীয় জীবন

স্টাফ রিপোর্টার:
মাগফেরাত মিম কনিকা, বাবা- মরহুম বাবুল মাদবর, মাদবর কান্দি, চরসেনসাস, সখিপুর, শরিয়তপুর। শিক্ষাগত যোগ্যতা: এইচএসসি।

পাড়াগায়ের কৃষক বাবার একজন সহজ সরল মেয়ে। গত আওয়ামী পিরিয়ডে হঠাৎ করেই আঙুল ফুলে কলা গাছ। তার বিলাসী জীবন যেন, দুবাই শেখদের সন্তানদেরও হার মানায়। বাবা টাকার অভাবে বিনা চিকিৎসায় মারা যাওয়ার পর, আলাদীনের চেরাগ পাওয়া তার মেয়ের গ্রামের বাড়ীতে করা দৃস্টি নন্দন বাড়ী পথচারীদের নজর কাড়ে প্রতিনিয়ত।

কোথা থেকে আসে এতো টাকা?

আমাদের অনুসন্ধান টিম তথ্য উপাথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে অবাক করা তথ্যের সন্ধান পেলো। এ যেন কেচো খুড়তে গিয়ে স্বাপ বেড়িয়ে আসলো। তার উত্থানের নেপথ্যে আর কেউ নয়, একজনই ব্যাক্তি, তিনি হলেন সাবেক পানি সম্পদ উপমন্ত্রী, তথাকথিত উন্নয়নের রুপকার একেএম এনামুল হক শামীম।

উন্নয়নতো বটেই। গ্রামের একজন সহজ সরল মেয়ের উন্নয়ন দেখলেই বুঝা যায়। আমাদের অনুসন্ধানী টিম জানতে পারে- মেয়েটি গরীব ঘরের সন্তান হলেও চেহারা সুন্দর হওয়ায় তার বিয়ে হয়েছিল একই এলাকার খোকা বেপারী নামক একজন বংশীয় ছেলের সাথে। মেয়েটির চারিত্রিক সমস্যা থাকায়, বিয়েটি ভেঙ্গে যায়।

বিয়ে ভাঙ্গা মানুষের কাল হলেও মেয়েটির জন্য হয়েছিলো শাপে বর। মেয়েটি ছেলের বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন ও দেনমহরের মামলা করে। অতপর মেয়েটি তাদের মুরুব্বি তৎকালীন চেয়ারম্যান জিতু মিয়া বেপারীর দ্বারস্থ হয়। রতনে রতন চিনে বলে একটি কথা আছে। চরিত্রহীন জিতু বেপারী তার গুরু উপমন্ত্রী শামীম সাহেবের কাছে পাঠায় এবং বলে – লিডার একটি মেয়ে পাঠালাম। ওর সমস্যাটি একটু দেখবেন।

যেই কথা সেই কাজ। সেই মামলায় খোকা বেপারী জেলে ঢুকে, আর শামীম সাহেব মেয়েটিকে ঢাকা এসে দেখা করতে বলে। মেয়েটি ঢাকা আসার পর, মিরপুরে একটি বিলাসবহুল বাসা ভাড়া করে দিয়ে, মন্ত্রী মহোদয় সেখানে প্রতিনিয়ত রোমাঞ্চ করতো। পাশাপাশি মন্ত্রীমহোদয়কে দিয়ে বিভিন্ন ধরনের তদবীর করিয়ে বিপুল পরিমান অর্থ বিত্তের মালিক বনে যায়।

মন্ত্রীমহোদয়ের মাধ্যমে গ্রামের সহজ সরল, এরকম আরও অনেক সুন্দরী কনিকা, অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন বলে জানা যায়।

( চলবে)

মাইলস্টোন ট্র্যাজেডিতে প্রাণ হারানো শিক্ষক মাহরীন চৌধুরী ছিলেন তিতুমীর কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী

ডেস্ক রিপোর্টঃ মাহরীন চৌধুরীর বাবা মহিতুর রহমান চৌধুরী ২০১৪ সালে এবং মা ছাবেরা চৌধুরী ২০২০ সালে মারা যান। মাহরীন রাজধানীর শাইনপুকুর স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি ও এইচএসসি পাস করেন। এরপর তিতুমীর কলেজ থেকে ইংরেজিতে অনার্স শেষ করে মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে মাস্টার্স করেন।

গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকার বাসায় গিয়ে দেখা গেছে, মেহেরীনের শোকে কাঁদছেন সবাই। শিক্ষক হিসেবে আশপাশের সবাই তাঁকে চিনতেন। তাঁর মরদেহ দাফনের জন্য নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার বগুলাগাড়ি গ্রাম নিয়ে যাওয়া হয়েছে সোমবার রাতেই। সেখানেই দাফন হয়ে গেছে।

ওই বাসার বাসিন্দা আব্দুর রহমান বলেন, শিক্ষক মাহরীন অত্যন্ত মানবিক একজন মানুষ ছিলেন। সবার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করতেন।

অভিভাবক মাহমুদা আক্তার বলেন, ম্যাডাম ছুটে এসেছেন, হাত ধরে টেনে নিয়ে গেছেন শিক্ষার্থীদের। এমন সাহসিকতা আজকের দিনে বিরল। তিনি আমাদের মনে করিয়ে দিলেন– শিক্ষকতা কেবল পেশা নয়, এটা এক মহান ব্রত।

মাইলস্টোন কলেজের নিষেধাজ্ঞার কারণে এক শিক্ষিকা নিজের নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ২০০৬ সালে মেহেরীন মাইলস্টোন কলেজে যোগদান করেন। বিয়ের পর চাকরি ছেড়ে দিয়ে আবার এক বছর পর যোগ দেন। পুরো কলেজে তিনি সহানুভূতিশীল শিক্ষক হিসেবে পরিচিত ছিলেন।

সোমবার, দুপুর ১টা ১৮ মিনিট। ঢাকার উত্তরার দিয়াবাড়ীর মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে হঠাৎ করেই আকাশ থেকে এসে পড়ল আগুনের গোলা। বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি যুদ্ধবিমান বিদ্যুৎ গতিতে বিধ্বস্ত হয় স্কুল প্রাঙ্গণে। সঙ্গে সঙ্গে দাউদাউ করে জ্বলে ওঠে আগুনের লেলিহান শিখা। বিস্ফোরণে আতঙ্কে ছোটাছুটি শুরু করে শিক্ষার্থীরা। হাহাকার, আর্তচিৎকারে কেঁপে ওঠে চারপাশ। এই আতঙ্কের মুহূর্তে একা দাঁড়িয়ে যান একজন– তিনি শিক্ষক মাহরীন চৌধুরী।

মায়ের মতো বুকের মাঝে শিক্ষার্থীদের আগলে রাখলেন। অথচ চাইলেই তিনি সরে যেতে পারতেন, বাঁচাতে পারতেন নিজের জীবন। কিন্তু তা তিনি করলেন না। নিজের জীবনকে আগুনের মুখে ঠেলে দিয়ে বারবার ফিরে গেলেন সেই শ্রেণিকক্ষে, যেখানে আটকে পড়েছিল তাঁর ‘বাচ্চারা’। একে একে টেনে বের করে আনেন কমপক্ষে ২০ শিক্ষার্থীকে। শরীরটাতে যখন আগুন লেগে যায়, তখন স্বামী মনছুর হেলাল ফোন দিলেন। তিনি বারবার তাদের দুই সন্তানের কথা ভেবে নিরাপদে সরে যেতে বলছিলেন। কিন্তু মাহরীন চৌধুরী স্বামীকে বলেছিলেন, ‘এরাও আমার বাচ্চা। তারা পুড়ে মারা যাচ্ছে, আমি কীভাবে সহ্য করি?’ এরপর বার্ন ইনস্টিটিউটে গিয়ে মেহেরীনের দগ্ধ শরীর পেলেন স্বামী। তাঁর শরীরের শতভাগই আগুনে পুড়ে গিয়েছিল। সোমবার রাতেই লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।

মাহরীন চৌধুরী মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের দিয়াবাড়ী শাখার সমন্বয়ক ছিলেন। স্বামী ও দুই ছেলে মিয়াত চৌধুরী ও সাইফ চৌধুরীকে নিয়ে থাকতেন দিয়াবাড়ীতেই। স্বামী মনছুর প্রাইড গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক।

নীলফামারীতে থাকা মেহেরীনের স্বামী মনছুর হেলাল মোবাইল ফোনে কান্নাভেজা কণ্ঠে সমকালকে বলেন, আমি তাকে অনেকবার অনুরোধ করেছি নিরাপদে সরে যেতে। কিন্তু সে বারবার বলেছে, ‘ওরাও তো আমার বাচ্চা’। এই একটি বাক্যই তার জীবনদর্শন। আমি আর না করতে পারিনি। নিজের বাচ্চাদের এতিম করে চলে গেল! এখন আমি এ ছোট্ট সন্তানদের নিয়ে কীভাবে বাঁচব!

তিনি আরও জানান, হাসপাতালের বেডে শুয়েও মেহেরীন স্বামীর দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলেছিলেন, আমার ডান হাতটা শক্ত করে ধরো। অথচ সেই হাত পুরোপুরি আগুনে পুড়ে গেছে। স্বামী যখন জিজ্ঞেস করলেন, কেন এ কাজ করলে? মেহেরীন শুধু বলেছিলেন, ‘আমার সামনে আমার বাচ্চারা পুড়ে মারা যাচ্ছে– আমি কীভাবে সরে যেতে পারি!’

নীলফামারীর বগুলাগাড়ি গ্রামে শিক্ষার আলো ছড়াতে নিজ গ্রামে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বগুলাগাড়ি স্কুল অ্যান্ড কলেজ। সেই স্কুলের অ্যাডহক কমিটির সভাপতির দায়িত্বও ছিল তাঁর কাঁধে। সবার সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন। ফোনে নিয়মিত খোঁজ নিতেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের।

সর্বশেষ গত ২২ জুন গ্রামের স্কুলে গিয়ে একটি সভায় অংশ নিয়েছিলেন। পরের বার ২৮ জুলাই ফেরার কথা ছিল। তিনি ফিরলেন আপন ঘরে, আপন মাটিতে, তবে লাশ হয়ে।

গতকাল বিকেল সাড়ে ৩টায় নিজের প্রতিষ্ঠিত বগুলাগাড়ি স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে জানাজা শেষে মেহেরীনকে বাবা-মায়ের কবরের পাশে শায়িত করা হয়। তখন ছিল আকাশ মেঘলা, বাতাস ভারি। এর আগে লাশবাহী গাড়ি যখন কলেজ চত্বরে প্রবেশ করে, চারদিক থেকে ছুটে আসেন গ্রামের মানুষ। শিক্ষক-শিক্ষার্থী, প্রতিবেশী–সবাই। কেউ বলছিলেন, ‘ও আপা তো সবাইকে সাহায্য করতেন।’ কেউ কাঁদছিলেন– ‘এই কলেজ তো উনার স্বপ্ন।’

মেহেরীন চৌধুরী প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের খালাতো ভাই মহিতুর রহমানের মেয়ে। কিন্তু তিনি সেই পরিচয়ে নয়; মৃত্যুর পরও বেঁচে আছেন এক সাহসিকতার প্রতীক হয়ে। শিক্ষক, মা, যোদ্ধা– সব পরিচয়ের ঊর্ধ্বে গিয়ে তিনি সাহসের বাতিঘর।

মাইলস্টোন কলেজের পরিচালক রাসেল তালুকদার বলেন, যখন আগুন ধেয়ে আসছিল, সবাই প্রাণ বাঁচাতে ছুটছিল, তখন মেহেরীন চৌধুরী ছুটেছিলেন অন্যদের বাঁচাতে। নিজের জীবন দিয়ে তিনি অন্যের জীবন রক্ষা করেছেন। তিনি আমাদের মনে করিয়ে দিয়েছেন– শিক্ষক মানে শুধু পাঠদাতা নন। তিনি আশ্রয়, তিনি আলোকবর্তিকা। তিনি সাহসের নাম। আমরা কেবল তাঁর জন্য শোক প্রকাশ করতে পারি না। তাঁর সাহসিকতা থেকে আমাদের শিখতে হবে– মানুষ হয়ে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর শিক্ষা।
প্রতিবেশী মাহমুদুর রহমান বলেন, দুই ঈদ ও মাঝেমধ্যে গ্রামে আসতেন মেহেরীন। এ সময় এলাকার গরিব মানুষকে আর্থিক সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতেন

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম