তারিখ লোড হচ্ছে...

ইফতারের আগে যেসব আমল করা যায়

স্টাফ রিপোর্টার:

রহমত, মাগফেরাত ও নাজাতের বার্তা নিয়ে এসেছে পবিত্র রমজান মাস। রমজানে আল্লাহর নির্দেশ পালনের উদ্দেশ্যে সারাদিন উপবাস করেন মুসলমানরা। সূর্য ডোবার পরে সুন্নত তরিকায় ইফতার পালন করেন রোজাদার। ইফতারের সময় কিছু আমল ও গুরুত্বপূর্ণ দোয়া রয়েছে। প্রত্যেক রোজাদারের জন্য যা পালন করা দরকার।

ইফতার সামনে নিয়ে অপেক্ষা করা

আল্লাহ কাছে অনেক পছন্দনীয় কাজের একটি হলো- ইফতারের আগে ইফতার সামনে নিয়ে তাসবিহ-তাহলিল ও তাওবা-ইসতেগফার করার মাধ্যমে অপেক্ষা করা। ইফতারের সময় বান্দার সব চাওয়াগুলোই আল্লাহ পূরণ করে থাকেন।

বেশি বেশি ইসতেগফার পড়া

উচ্চারণ : আসতাগফিরুল্লাহাল আজিম, আল্লাজি লা ইলাহা ইল্লাহু আল-হাইয়্যুল ক্বাইয়্যুম, ওয়া আতুবু ইলাইহি লা হাওলা ওয়ালা কুয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহিল আলিয়্যিল আজিম।

নিচের দয়াটিও বিশেষভাবে পড়া যায়

উচ্চারণ : ‘আলহামদুলিল্লাহি আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা বিরাহমাতিকাল্লাতি ওয়াসিআত কুল্লা শাইয়িন আন তাগফিরলি।’

অর্থ : ‘সব প্রশংসা আল্লাহর জন্য; হে আল্লাহ! আমি তোমার দরবারে তোমার সর্ববেষ্টিত রহমতের উসিলায় প্রার্থনা করছি, তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও।’ (ইবনে মাজাহ)

ইফতারের সময় বিশ্বনবি যে দোয়া করতেন

হজরত মুয়াজ ইবনে যুহরাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন ইফতার করতেন, তখন এ দোয়া পড়তেন-

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা লাকা সুমতু, ওয়া আ’লা রিযক্বিকা আফত্বারতু।’

অর্থ : হে আল্লাহ! আমি তোমারই জন্যে রোজা রেখেছি এবং তোমারই দেয়া রিযিক দ্বারা ইফতার করছি। (আবু দাউদ মুরসাল, মিশকাত)

ইফতার করার পর বিশ্বনবির দোয়া

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন ইফতার করতেন তখন বলতেন-

উচ্চারণ : ‘জাহাবাজ জামাউ; ওয়াবতালাতিল উ’রুকু; ওয়া ছাবাতাল আঝরূ ইনশাআল্লাহ।’

অর্থ : ‘(ইফতারের মাধ্যমে) পিপাসা দূর হলো, শিরা-উপসিরা সিক্ত হলো এবং যদি আল্লাহ চান সাওয়াব ও স্থির হলো।’ (আবু দাউদ, মিশকাত)

কারো ঘরে মেহমান হয়ে ইফতার করলে এ দোয়াটি পড়া

উচ্চারণ : আকালা ত্বাআমাকুমুল আবরারু, ওয়া সাল্লাত আলাইকুমুল মালায়িকাতু, ওয়া আফত্বারা ইংদাকুমুস সায়িমুন।’ (আবু দাউদ)

সময়মতো ইফতার করা

সারাদিন রোজা রাখার পর সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে ইফতার করা প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অন্যতম সুন্নত। ‘সূর্যাস্তের ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার পর দেরি না করে দ্রুত ইফতার করে নেওয়া সর্বোত্তম।’ (বুখারি)

খেজুর দিয়ে ইফতার করা

খেজুর দিয়ে ইফতার করা নবিজির সুন্নত। তবে খেজুর না পেলে কিংবা না থাকলে তবে সাদা পানি দিয়ে ইফতার শুরু করা উত্তম।

 

যেভাবে পতন ঘটেছিল ফেরাউনের

যেভাবে পতন ঘটেছিল ফেরাউনের

ডেস্ক রিপোর্ট: ফেরাউন শব্দটি সাধারণত চূড়ান্ত জালেম বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। এমন কাউকে পাওয়া দুষ্কর যে এই নাম কখনো শোনেনি। তবে ফেরাউন আসলে কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তির নাম নয়; বরং এটি ছিল প্রাচীন মিসরের রাজা বা শাসকদের উপাধি। তাদের কেউ কেউ ‘ফারাও’ নামেও পরিচিত।

মহান আল্লাহ হজরত মুসা (আ.)-কে নবুয়ত দিয়ে তার সময়কার ফেরাউনের কাছে তাওহিদের (এক আল্লাহর উপাসনা) দাওয়াত দিতে পাঠান। কিন্তু সেই ফেরাউন ছিল চরম অহংকারী ও গোঁয়ার প্রকৃতির।

সে নিজেকে মিসরবাসীর প্রভু বলে দাবি করত। পবিত্র কোরআনের বহু স্থানে হজরত মুসা (আ.)-এর দাওয়াত, ফেরাউনের ঔদ্ধত্য এবং তাদের মধ্যকার সংঘাতের ঘটনা বিশদভাবে বর্ণনা করা হয়েছে।

মুসা (আ.)-এর যুগের ফেরাউনের প্রকৃত নাম নিয়ে নানা মত রয়েছে। কেউ বলেন তার নাম ছিল রামেসিস, আবার কেউ বলেন মারনেপতাহ। কারও মতে, তার নাম ছিল ওয়ালিদ ইবনে মাসআব ইবনে রাইয়ান, যিনি প্রায় ৪০০ বছর জীবিত ছিলেন।

পবিত্র তুয়া উপত্যকায় আল্লাহর পক্ষ থেকে মুসা (আ.)-এর ওপর ওহি নাজিল হয় এবং তাকে নবুয়ত ও অলৌকিক মুজিজা দান করা হয়। তিনি আল্লাহর নির্দেশে ফেরাউনের কাছে গিয়ে সত্যের দাওয়াত দেন। কিন্তু ফেরাউন তার ঔদ্ধত্য থেকে ফিরে আসেনি। বরং নিজেকেই খোদা দাবি করতে থাকে।

মুসা (আ.) যখন বনি ইসরায়েল জাতিকে নিয়ে মিসর ত্যাগ করেন, ফেরাউন তাদের ধ্বংস করতে সেনাবাহিনীসহ তাড়া করে। তখন আল্লাহর হুকুমে লোহিত সাগর দুই ভাগ হয়ে যায় এবং বনি ইসরায়েল নিরাপদে পার হয়ে যায়। ফেরাউন সেই পথেই ধাওয়া করে কিন্তু সাগরের পানি একত্রিত হয়ে তাকে ডুবিয়ে মারে।

পবিত্র কোরআনের সুরা নাজিয়াতে মহান আল্লাহ বলেন, هَلۡ اَتٰىكَ حَدِیۡثُ مُوۡسٰی – اِذۡ نَادٰىهُ رَبُّهٗ بِالۡوَادِ الۡمُقَدَّسِ طُوًی – اِذۡهَبۡ اِلٰی فِرۡعَوۡنَ اِنَّهٗ طَغٰی – فَقُلۡ هَلۡ لَّكَ اِلٰۤی اَنۡ تَزَكّٰی – وَ اَهۡدِیَكَ اِلٰی رَبِّكَ فَتَخۡشٰی- فَاَرٰىهُ الۡاٰیَۃَ الۡكُبۡرٰی – فَكَذَّبَ وَ عَصٰی – ثُمَّ اَدۡبَرَ یَسۡعٰی – فَحَشَرَ فَنَادٰی – فَقَالَ اَنَا رَبُّكُمُ الۡاَعۡلٰی – فَاَخَذَهُ اللّٰهُ نَكَالَ الۡاٰخِرَۃِ وَ الۡاُوۡلٰی اِنَّ فِیۡ ذٰلِكَ لَعِبۡرَۃً لِّمَنۡ یَّخۡشٰی

অর্থ : মুসার বৃত্তান্ত আপনার কাছে পৌঁছেছে কি? যখন তার রব তাকে পবিত্র তুয়া উপত্যকায় ডেকে বলেছিলেন, ফেরাউনের কাছে যাও, নিশ্চয় সে সীমালঙ্ঘন করেছে। তাকে বল, তুমি পবিত্র হতে আগ্রহী কি না? আমি তোমাকে তোমার রবের দিকে পথ দেখাব, যাতে তুমি তাকে ভয় কর। সে (মুসা) তাকে মহা-নিদর্শন দেখাল। কিন্তু সে মিথ্যারোপ করল এবং অমান্য করল এবং আল্লাহর বিরুদ্ধাচরণে সচেষ্ট হলো। সে সকলকে সমবেত করল এবং সজোরে চিৎকার করে বলল, আমিই তোমাদের সেরা রব। ফলে আল্লাহ তাকে পরকালের ও ইহকালের শাস্তি দিলেন। যে ভয় করে তার জন্যে অবশ্যই এতে শিক্ষা রয়েছে। (সুরা নাজিয়াত: ১৫-২৬)

পবিত্র কোরআনের সুরা ইউনুসে ফেরাউনকে ডুবিয়ে মারার ঘটনা বর্ণনা করে মহান আল্লাহ বলেন, وَ جٰوَزۡنَا بِبَنِیۡۤ اِسۡرَآءِیۡلَ الۡبَحۡرَ فَاَتۡبَعَهُمۡ فِرۡعَوۡنُ وَ جُنُوۡدُهٗ بَغۡیًا وَّ عَدۡوًا ؕ حَتّٰۤی اِذَاۤ اَدۡرَكَهُ الۡغَرَقُ ۙ قَالَ اٰمَنۡتُ اَنَّهٗ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا الَّذِیۡۤ اٰمَنَتۡ بِهٖ بَنُوۡۤا اِسۡرَآءِیۡلَ وَ اَنَا مِنَ الۡمُسۡلِمِیۡنَ – آٰلۡـٰٔنَ وَ قَدۡ عَصَیۡتَ قَبۡلُ وَ كُنۡتَ مِنَ الۡمُفۡسِدِیۡنَ – فَالۡیَوۡمَ نُنَجِّیۡكَ بِبَدَنِكَ لِتَكُوۡنَ لِمَنۡ خَلۡفَكَ اٰیَۃً ؕ وَ اِنَّ كَثِیۡرًا مِّنَ النَّاسِ عَنۡ اٰیٰتِنَا لَغٰفِلُوۡنَ অর্থ : আমি বনি ইসরাইল বংশকে সাগর পার করে দিলাম আর ফেরাউন ও তার সেনাবাহিনী দুরাচার ও বাড়াবাড়ির উদ্দেশে তাদের পশ্চাদ্ধাবন করল। যখন তারা ডুবতে আরম্ভ করল, তখন (ফেরাউন) বলল, এবার বিশ্বাস করে নিচ্ছি যে, তিনি ছাড়া কোন মাবুদ নেই যার ওপর ঈমান এনেছে বনি ইসরাইল; আমিও তারই অনুগতদের অন্তর্ভুক্ত। (আল্লাহ বললেন) এখন এ কথা বলছ! অথচ তুমি (ডুবতে শুরু করার) পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত নাফরমানি করছিলে এবং পথভ্রষ্টদেরই অন্তর্ভুক্ত ছিলে। আজকের দিনে আমি শুধু তোমার দেহ রক্ষা করব যেন তা পরবর্তীদের জন্য নিদর্শন হতে পারে। নিঃসন্দেহে বহু মানুষ আমার নিদর্শনসমূহের ব্যাপারে উদাসীন। (সুরা ইউনুস : ৮৮-৯২)

এই ঘটনাটি ঘটে ১০ মহররম, পবিত্র আশুরার দিনে। হাদিস শরিফে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন মদিনায় হিজরত করেন, তখন দেখেন ইহুদিরা আশুরায় রোজা রাখে। জিজ্ঞেস করলে তারা জানায়, এই দিনে আল্লাহ মুসা (আ.) ও তার জাতিকে ফেরাউন থেকে মুক্ত করেছেন এবং ফেরাউনকে সাগরে ডুবিয়ে দিয়েছেন। মুসা (আ.) এই উপলক্ষে রোজা রাখতেন।

এ কথা শুনে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, মুসার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক তাদের চেয়ে ঘনিষ্ঠ। তিনি নিজেও আশুরার রোজা পালন করেন এবং মুসলমানদেরও তা রাখতে বলেন। (বুখারি : ৩৩৯৭)

সুন্নাহ অনুযায়ী, আশুরার রোজা একটি আগে বা পরে আরেকটি রোজার সঙ্গে পালন করা উত্তম।

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম