তারিখ লোড হচ্ছে...

জাফলংয়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের নেতৃত্বে চলছে হরিলুট

নিজস্ব প্রতিবেদক
সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার পর্যটন কেন্দ্র জাফলংয়ে বালু-পাথর রক্ষায় এক রকম অসহায় প্রশাসনের সর্বোচ্চ কর্তা ব্যক্তিরা। তবে প্রশাসনের মতে, লাগাতার অভিযান, ১২টি মামলা করেও জাফলংয়ের অবৈধ পাথর উত্তোলন বন্ধ করা যাচ্ছেনা। থানা পুলিশ গেলে কিছু সময় বন্ধ থাকে পাথর উত্তোলন, চলে আসলে আবার শুরু হয়। সরেজমিন দেখা গেছে, গোয়াইনঘাট থানার পুলিশ, বিজিবি ও আনসার সদস্যদের সামনেই চলছে ধানব যন্ত্র দিয়ে জাফলং ধ্বংসের উৎসব। কয়েক হাজার নৌকা দিয়ে শ্রমিকরা তুলছেন বালু-পাথর। কেউ লাগিয়েছেন শ্যালো মেশিন আবার কেউ লাগিয়েছে এক্সেভেটর বা ফেলুডার। কেউ বা আবার ফোর সিলিন্ডার মেশিন।

স্থানীয়রা জানান, বিগত ৫/৬ মাস থেকে স্থানীয় প্রভাবশালী পূর্ব জাফলং ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি, আমজাদ বক্স, পূর্ব জাফলং ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক, মাসুদ রানা, পূর্ব জাফলং ইউনিয়নের মামার বাজার মোহাম্মদপুর মিতালি যুব সংঘ ক্লাবের সভাপতি, আব্দুল রাজ্জাক ইউসুফ, সাওার মিয়া, নয়াবস্তি জাফলং এলাকার মহরম আলির প্রত্যক্ষ মদদে নেতৃত্বে গড়ে উঠেছে একটি লুটতরাজ বাহিনী। এই বাহিনী সকাল থেকে জাফলং এলাকার প্রতিটি নৌকা, শ্যালো মেশিন, পাথর-বালু বাহি গাড়ি, কোয়ারির গর্ত থেকে নির্দিষ্ট হারে চাঁদা উত্তোলন করেন।

সূত্রে জানা যায়, তাদের রয়েছে পৃথক সিন্ডিকেট। রয়েছে নিজস্ব একটি লাইন সিন্ডিকেট। এরা জাফলং এলাকায় যে সকল পাথর কোয়ারী রয়েছে সেখান থেকে প্রতিদিন ১৫ হাজার টাকার করে চাঁদা কানেকশন করেন।

নাম প্রকাশ না করে স্থানীয়রা জানান, মাসুদ রানা, আব্দুর রাজ্জাক যে জমি থেকে কোয়ারী করে পাথর তুলছেন উক্ত জমির প্রকৃত মালিক মৃত মন্তন মিয়া গং। মন্তন ও মঞ্জুর মিয়ার প্রচুর জমি রয়েছে জাফলং এলাকায়। কিন্তু মৃত মন্তনের পরিবারের সদস্যরা সামাজিক ও আর্থিক ভাবে দুর্বল হওয়ায় , আমজাদ বক্সসহ তারা পুলিশি ভয় দেখিয়ে তাদের জমি জবর দখল করে পাথর উত্তোলন করছেন।

জাফলং এলাকায় বিভিন্ন গ্রুপ হলেও দিন শেষে এখন ক্যাশিয়ার আমজাদ বক্স। তিনিই প্রশাসনের লাইন ম্যানেজ করেন। তার কথা মতোই চলতে হয় জাফলং এলাকায় দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের।

সম্প্রতি জাফলং জুমপার এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, মৃত মন্তনের জমির উপর প্রায় ৬ টি বিশাল পাথর কোয়ারীর মাটি কাটা হয়েছে, দিনে চলছে লেবার দিয়ে পাথর উত্তোলন আর রাতে চালানো হচ্ছে এক্সেভেটার, ফেলুডার।

স্থানীয়রা আরো জানান, উক্ত জমির প্রকৃত মালিক মৃত মন্তন মিয়া কিন্তু সিলেট নগরীর বাসিন্দা রায়নগর এলাকার বাসিন্দা দেলোয়ার ওরফে সোনা দেলোয়ার একটি জাল দলিল সৃজন করে নিজেকে ঐ জমির মালিক দাবি করেন। এ নিয়ে তার সাথে মৃত মন্তনের মিয়া গংদের একাধিক মামলা আদালতে চলমান রয়েছে।

সর্বশেষ নিজের জমি রক্ষায় বাধ্য হয়ে ভূমির মালিক মন্তন মিয়ার ছেলে মতিউর রহমান মুহিব সিলেট সহকারী জজ আদালত গোয়াইনঘাট এ সম্প্রতি একটি মামলায় অবৈধ পাথর উত্তোলন বন্ধের জন্য আদালতের মাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করলে আদালত বিষয়টি আমলে নিয়ে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ইং জুমপার ২৬৩ নং দাগের ভূমির উপর সব রকম স্থিতি অবস্থা (ইংজাংশন) জারি করে ব্যবস্থা নিতে গোয়াইনঘাট থানা পুলিশকে নির্দেশ দেন।

কিন্তু আদালতের আদেশের না মেনে আব্দুর রাজ্জাক রাতের আধারে এক্সেভেটার ফেলুডার লাগিয়ে প্রায় প্রায় ১০ কোটি টাকার পাথর লুট করে নিয়ে গেছেন এ কয়েক দিনে। ইতিমধ্যে তিনি থানার ওসি, জেলা প্রশাসক, সিলেট পুলিশ সুপারকে বিষয়টি অবহিত করেছেন। তারা তাকে সহযোগিতা আশ্বাস দিলেও ক্ষান্ত হয়নি এসব অপরাধচক্র

সাধারণ মানুষের প্রশ্ন জাফলং ধ্বংসের নায়ক সাবেক এমপি ইমরান আহমদের সাবেক লাইনম্যান চক্রের সদস্য ছাত্র-জনতার তিনটি মামলার এজাহার ভুক্ত আসামি হওয়ার পর তাকে পুলিশ গ্রেফতার করছেনা। বরং জাফলং খাবলে খাওয়ার সুযোগ দিচ্ছে কীসের বিনিময়ে। ইতঃপূর্বে জাফলংয়ে পাথর লুটপাটের মামলায় সিলেট জেলা বিএনপি পদহারানো নেতা রফিকুল ইসলাম শাহপরান ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান বহিষ্কৃত বিএনপি নেতা শাহ আলম স্বপনের দলীয় পদ স্থগিত করেন। তারা দুজন এখন কোয়ারী ছেড়ে দলীয় পদ ফিরে পেতে জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, গত ৫ মাসে জাফলং কোয়ারি থেকে অন্তত ৫০০ কোটি টাকার বালু ও পাথর লুট করা হয়েছে। সারাদেশে ছাত্র-জনতার মামলায় আওয়ামী লীগ নেতারা কারাগারে কিংবা পালিয়ে বেড়ালে প্রকাশ্যে জাফলংয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে বিএনপির সাবেক সাংসদ দিলদার হোসেন সেলিমের নির্বাচনী স্টেজ ভাংচুরে মামলার এজাহারভুক্ত আসামি কুখ্যাত চাঁদাবাজ আমজাদ বক্স, মাসুদ রানা, আব্দুল রাজ্জাক, ইউসুফ, সাওার মিয়া , মহরম আলি।

উপজেলা প্রশাসন সূত্র জানিয়েছে, গত পাঁচ মাসে সেখানে ১৫-১৬টি অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। সর্বশেষ গত শনিবার পরপর দুটি অভিযান চালানো হয়। থানায় মামলা হয়েছে ৮-৯টি। এদুটি বাহিনীর হয়ে মাঠে দখল দায়িত্বে রয়েছেন পূর্বজাফলং ইউনিয়ন ছাত্রদলের বহিষ্কৃত সভাপতি আজির উদ্দিন, ইউনিয়ন ছাত্রদলের বহিষ্কৃত সিনিয়র সহ-সভাপতি সুমন শিকদার, বহিষ্কৃত সহ-সভাপতি পারভেজ শিকদার ও রুবেল আহমদ, শিমু, ইসমাঈল ও মামুন।

পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, জাফলং জিরো পয়েন্ট থেকে সরকার পতনের পর ১২০ কোটি টাকার পাথর লুটের ঘটনার মামলাটির চার্জশিট প্রক্রিয়াধীন। কিন্তু কিছুতেই যেনো থামানো যাচ্ছেনা জাফলং কোয়ারী লুটপাট।

আমজাদ বক্স ও মাসুদ রানা, আব্দুর রাজ্জাক এই দুটির বাহিনীর সদস্যরা আধিপত্ব্য বিস্তার করতে এলাকায় প্রায়ই প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়া দেয়। ফলে ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না। এক সময় শাহপরানের মদদে চললেও এখন সে আমজাদ বক্সের ডান হাত হিসেবে পরিচিত।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে আমজাদ বক্স বলেন, দেশের পট পরিবর্তনের পরে জাফলং এলাকায় যে যার মতো পাথর ও বালু উত্তোলন করছে। কেউ কারও কথা শুনছে না। আমি একজন মুরব্বি মানুষ সালিশি ব্যক্তিত্ব পাথর, বালু উত্তোলনের সাথে জড়িত না। যারা পাথর বালু উত্তোলন করছে তাদের মধ্যে কোন সমস্যা সৃষ্টি হলে সমাধানের জন্য আমার কাছে আসে আমি সমাধান করার চেষ্টা করি।

তবে অভিযোগের বিষয়ে জানতে মাসুদ রানার মোবাইলে একাধিক কল দিলে ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। এমনকি তাদের বক্তব্য নিতে জাফলংয়ে তাদের নিজের বাড়িতে গিয়েও পাওয়া যায়নি।

প্রায় সময় প্রকাশ্যেই বলে বেড়ান, আমজাদ বক্সের হয়ে কোয়ারিতে আছেন। তবে তিনি তার বিরুদ্ধে দায়ের করা কোন মামলায় জামিন নেননি আদালত থেকে। এসব মামলায় তার কিছু হবেনা বলেও দম্ভোক্তি করেন।

গোয়াইনঘাট থানার ওসি সরকার তোফায়েল আহমদ জানান, অবৈধ পাথর উত্তোলন বন্ধে পুলিশি অভিযান চলছে। তিনি ছুটিতে ছিলেন তাই আদালতের আদেশটি বাস্তবায়ন করতে দেরি হয়েছে। তবে তিনি স্থানীয় পুলিশের বিট অফিসারকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালতের আদেশটি বাস্তবায়নের জন্য।

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) সিলেট বিভাগীয় সম্পাদক শাহ সাহেদা বলেন, পাথর ও বালুখেকোরা প্রকাশ্যে আদালত ও সরকারকে অমান্য করছে।

সিলেটের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন, উপজেলা বা জেলা প্রশাসনের টাস্কফোর্স ও মোবাইল কোর্টের অভিযানে থানা-পুলিশ সহায়তা করে। খবর পেলে পুলিশও অভিযান চালায়।

বিজিবি সিলেট সদর দপ্তরের সেক্টর কমান্ডার কর্নেল সাইফুল ইসলাম চৌধুরি বলেন, সীমান্তের ১৫০ গজের ভেতর থেকে বালু-পাথর তুললে আমরা বাধা দিই। এর বাইরে অবৈধ ভাবে কেউ কাজ করলে সেটা উপজেলা প্রশাসন দেখে।

সিলেটের জেলা প্রশাসক শের মোহাম্মদ মাহবুব মুরাদ জানান, গত ৫ আগস্টের পর প্রকৃতি-কন্যা জাফলংয়ের পাথর কোয়ারিতে ব্যাপক লুটপাট হয়েছে শুনেছেন। ইতোমধ্যে পাথর লুটপাটে জড়িতদের বিরুদ্ধে স্ব-স্ব থানায় মামলা হয়েছে। দ্রুত তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।

গোয়াইনঘাটে নৌকা ডুবে বিজিবি সদস্য নিখোঁজ

গোয়াইনঘাটে নৌকা ডুবে বিজিবি সদস্য নিখোঁজ

সিলেট সংবাদদাতা:

সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার সদর ও পশ্চিম জাফলং ইউনিয়নের মধ্যবর্তী পিয়াইন নদীতে ভারতীয় (সুপারি) পণ্যবাহী একটি নৌকার ধাক্কায় বিজিবির নৌকা ডুবে গিয়ে মাসুম বিল্ল্যাহ (৩৫) নামে এক বিজিবি সদস্য নিখোঁজ রয়েছেন। শনিবার (৯ আগস্ট) বিকেল ৪টার দিকে পিয়াইন নদীর পন্নগ্রাম নামক স্থানে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিখোঁজ বিজিবি সদস্য মাসুম বিল্ল্যাহ ৪৮ বিজিবি’র আওতায় গোয়াইনঘাটের সোনারহাট ক্যাম্পের একজন সিপাহী।

জানা যায় পিয়াইন নদীতে নৌকা যোগে দুইজন বিজিবি সদস্য নৌকা নিয়ে ভারতীয় পণ্যবাহী নৌকা থামাতে যান। এ সময় পণ্যবাহী নৌকার ধাক্কায় উভয় নৌকা ডুবে যায়। নৌকায় থাকা এক বিজিবি সদস্য ও নৌকার মাঝি কোনোভাবে কিনারে উঠলেও মাসুম বিল্ল্যাহ উঠতে পারেননি। তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাটি এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে আশপাশের লোকজন অনেক খোঁজাখুঁজি করলেও তাতে কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়নি।

স্থানীয় ইউপি সদস্য দেলোয়ার হোসেন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, খবর শুনার সঙ্গে সঙ্গে আমরা ঘটনাস্থলে এসে উদ্ধার তৎপরতা চালাচ্ছি। এখনও নিখোঁজ বিজিবি সদস্য মাসুম বিল্ল্যাহকে খোঁজে পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রতন কুমার অধিকারী বলেন, ঘটনার খবর পেয়ে আমরা ফায়ার সার্ভিসকে জানিয়েছি। ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার তৎপরতা চালাবে।

৪৮ ব্যাটালিয়নর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. হাফিজুর রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ভারতীয় নৌকার ধাক্কায় আমাদের নৌকা ডুবে গিয়ে এক সিপাহী নিখোঁজ রয়েছেন। ডুবুরি দল নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার তৎপরতা চালানো হবে ।

language Change
সংবাদ শিরোনাম