তারিখ লোড হচ্ছে...

ফ্যাসিষ্ট সরকারের দোসর ইকবাল এখন এনআরবি ব্যাংকের পরিচালক

স্টাফ রিপোর্টার:

দুর্নীতির দায়ে ২০১৫ সালে লন্ডনের আদালত জরিমানা করার পর ব্রিটিশ বাংলাদেশ চেম্বার থেকে আজীবন বহিষ্কৃত সীমার্ক গ্রুপের চেয়ারম্যান হিমায়িত মাছ ব্যবসায়ী ইকবাল আহমদ অবিকে এনআরবি ব্যাংকের পরিচালক মনোনীত করায় নানা প্রশ্ন উঠেছে। আস্থাহীনতায় ভুগতে শুরু করেছেন গ্রাহকরা।

গত ১২ মার্চ বাংলাদেশ ব্যাংকের এক আদেশে তাকে নবগঠিত ৭ সদস্যের পরিচালনা পর্ষদের পরিচালক করা হয়। বাকিরা স্বতন্ত্র পরিচালক। অর্থাৎ তিনিই ব্যাংকটির চেয়ারম্যান। শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে ইকবালের ঘনিষ্ঠতা ছিল। এ সংক্রান্ত বেশ কিছু ছবিও পাওয়া গেছে। যদিও জূলাই বিপ্লবের পর ইকবাল ফেসবুক থেকে সেগুলো সরিয়েছেন।

প্রাপ্য তথ্য বলছে, ইকবালের বিরুদ্ধে ২ শত হাজার পাউন্ড লোপাটের অভিযোগ এনে লন্ডনের আদালতে ২০১৫ সালে মামলা করেন ব্রিটিশ বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্সের নেতৃবৃন্দ। আদালত ইকবাল কে ৫ লক্ষ পাউন্ড জরিমানা করে। অর্থাৎ ইকবাল দুর্নীতিবাজ এবং ব্রিটিশ বাংলাদেশ চেম্বারের অর্থ আত্মসাৎ করেছেন বলে প্রমাণ হয় কোর্টের রায়ে।

ইকবালের উত্থান সম্পর্কে স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে, তিনি বিগত এক দশক ধরে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কর্মসূচিতে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়ে রাজনৈতিক ও সামাজিক অঙ্গনে নিজের অবস্থান গড়ে তোলেন। হয়ে ওঠেন শেখ হাসিনার আস্থাভাজন। জুলাই বিপ্লবের পর ভিন্ন পন্থা অবলম্বন করে বিপ্লবী সাজতে নানা কৌশল চালাচ্ছেন তিনি।

লন্ডনের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, বিশেষ করে লন্ডন ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ইকবালের দুই ডজন বাড়ি রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে অত্যাধুনিক প্রপার্টি যা বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ দিয়ে ক্রয় করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

এসব পাচারের টাকায় লন্ডনে গড়ে তোলা বিভিন্ন কোম্পানি ইকবালের ভাই ও ভাতিজাসহ পরিবারের সদস্যরা পরিচালনা করছেন। তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকা কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে ইবকো হোল্ডিংস লিমিটেড, ভারমিলিওন গ্রুপ লিমিটেড, ফ্লাইং ইউনিকর্ন লিমিটেড, মাই ইনভেসমেন্ট হোল্ডিংস লিমিটেড, ওপেন হাও হোল্ডিংস লিমিটেড, ইবকো লিমিটেড, সীমার্ক পিএলসিসহ মোট ১৪ টি কোম্পানি।

সূত্র বলছে, ২০১৮ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ইকবালের নাম জড়িয়ে ছিল শেখ হাসিনার উপদেষ্টা গহর রিজভীর সঙ্গে। তার অর্থ পাচারের সিন্ডিকেটের অন্যতম ছিলেন এই ইকবাল। আন্তর্জাতিক গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্ট বলছে, সুইস ব্যাংকে গওহর রিজভীর নামে জমা হওয়া ১২ মিলিয়ন ডলারের মধ্যে ৪০ শতাংশ ইকবালের মাধ্যমে পাচার করা হয়। তাদের তদন্ত প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ভুয়া কোম্পানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেন রেমিট্যান্স হস্তান্তরের ভুয়া ডকুমেন্টেশন এবং রাজনৈতিক নেতাদের সহায়তায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নজর এড়িয়ে অপকর্ম চালায় ইকবাল।

এছাড়া এস কে সুর চৌধুরীর ব্যাংকিংখাতে অর্থ লুটপাটের যে নেটওয়ার্ক ছিল তাতেও ইকবাল ছিলেন একজন শক্তিশালী সদস্য। সেই সময়ও একটি ব্যাংক থেকে প্রচুর পরিমাণে অর্থ লুটপাট করেন তিনি। তবে আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ থাকায় এসব অভিযোগ উঠলেও তৎকালীন সময়ে ইকবালের কোন বিচার হয়নি। এছাড়া ইকবালের অর্থ পাচারের অভিযোগ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।

ফিনান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্স সাম্প্রতিক রিপোর্টে বাংলাদেশকে “ধূসর তালিকা” থেকে মুক্ত করতে ইকবালের কেলেঙ্কারি দ্রুত বিচারা করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, একজন ব্যক্তির মাধ্যমে এত বড় আকারের দুর্নীতি সম্ভব হয় শুধুমাত্র রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায়। সরকারের উচিত এই নেটওয়ার্কের মূল হোতাদের বিচারের আওতায় আনা। এ বিষয়ে ইকবাল আহমেদের বক্তব্য নেওয়ার চেষ্টা করেও তার প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

বাংলাদেশকে ২৫ কোটি ডলার ঋণ দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক

বাংলাদেশকে ২৫ কোটি ডলার ঋণ দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক

ডেস্ক রিপোর্টঃ সরকারি পাঁচ সংস্থার স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও দক্ষতা বাড়াতে ২৫০ মিলিয়ন বা ২৫ কোটি ডলারের ঋণ দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালকদের পর্ষদে এই অর্থ অনুমোদন করা হয়েছে।

শনিবার (১৪ জুন) বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিস থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, ‘স্ট্রেনদেনিং ইনস্টিটিউশনস ফর ট্রান্সপারেন্সি অ্যান্ড অ্যাকাউন্টেবিলিটি (সিটার) প্রকল্প’-এর আওতায় এই অর্থায়ন অনুমোদন করেছে বিশ্বব্যাংকের নির্বাহী পরিচালকদের বোর্ড।

এই প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকারে চলমান সংস্কার কর্মসূচিগুলোকে সহায়তা করা হবে, বিশেষ করে পরিসংখ্যান ব্যবস্থাপনা, রাজস্ব আহরণ, সরকারি বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনা, ক্রয় প্রক্রিয়া ও আর্থিক তদারকির ক্ষেত্রে। প্রকল্পটি পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ সরকারি প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা জোরদারে কাজ করবে—বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস), জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), পরিকল্পনা বিভাগ, বাংলাদেশ পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অথরিটি (বিপিপিএ) এবং মহা হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়।

বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী কান্ট্রি ডিরেক্টর গেইল মার্টিন বলেন, ‘এই বিনিয়োগ সরকারের ডিজিটাল রূপান্তরকে উৎসাহিত করবে, যা স্বচ্ছতা বাড়াবে ও দুর্নীতির ঝুঁকি কমাবে। একই সঙ্গে জনগণের কাছে সরকারি পরিষেবার গুণমান ও প্রবেশাধিকার উন্নত হবে এবং প্রতিষ্ঠানের প্রতি আস্থা বাড়বে।

প্রকল্পটির মাধ্যমে ট্যাক্স ব্যবস্থাপনা আধুনিকীকরণ, ট্যাক্স আদায়ে স্বেচ্ছানুভূতিতে অংশগ্রহণ বাড়ানো এবং রাজস্ব বৃদ্ধির মাধ্যমে আর্থিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা হবে। সরকারি ব্যয় ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা ও জবাবদিহিতা বাড়ানো, ই-জিপির দ্বিতীয় প্রজন্ম চালু এবং অডিট ব্যবস্থার ডিজিটাল রূপান্তর প্রকল্পের মূল অংশ।

বিশ্বব্যাংক ও বাংলাদেশ সরকার আরো একটি ডেভেলপমেন্ট পলিসি ক্রেডিট প্রস্তুত করছে, যা এ মাসের শেষ দিকে বোর্ড সভায় উপস্থাপন করা হবে। সেটিও স্বচ্ছতা, রাজস্ব আহরণ, ব্যাংকিং খাত, তথ্য ব্যবস্থাপনা, সরকারি বিনিয়োগ, অডিট এবং সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি বাস্তবায়নে সহায়তা করবে। সিটার প্রকল্প এই উদ্যোগগুলোর পরিপূরক হিসেবে কাজ করবে।

বিশ্বব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ এবং প্রকল্পটির টিম লিডার সুলেমান কুলিবালি বলেন, একটি সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গিতে পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা বাড়ানো হচ্ছে, যা দীর্ঘমেয়াদে টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এই প্রকল্প এবং ডেভেলপমেন্ট পলিসি ক্রেডিট উভয়ই সরকারকে আর্থিক ব্যবস্থাপনা ও জনপরিষেবা উন্নয়নে সফটওয়্যার এবং হার্ডওয়্যারের সমন্বিত সমর্থন দেবে।

 

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম