তারিখ লোড হচ্ছে...

জালিয়াতি ও দুর্নীতিতে সম্পদের পাহাড় গড়লেন এটিএম সেলিম

স্টাফ রিপোর্টার:

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কাছে একাধিক অভিযোগ জমা দেওয়ার পরও অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে কোনো কার্যকরী ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বিপিসির (বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন) হিসাব বিভাগের মহাব্যবস্থাপক এটিএম সেলিমের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে, যা ধামাচাপা দেওয়া হয়েছে।

এটিএম সেলিমের বিরুদ্ধে ২০২২ সালের আগস্ট মাসে দুদকে একটি অভিযোগ জমা দেওয়া হয়, যেখানে বলা হয়েছিল, তার নিয়োগটি ছিল এক ধরনের জালিয়াতি এবং চাকরিতে যোগদানের পর থেকে তিনি বিপুল পরিমাণ দুর্নীতি করেছেন। অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, এটিএম সেলিম ব্যক্তিগত স্বার্থে সব কিছু করেছেন, তখন তার দায়িত্ব ছিল সংস্থার হিসাব এবং স্বার্থ রক্ষা করা। বর্তমানে তিনি একই পদে বহাল আছেন।

এটিএম সেলিম চট্টগ্রামের ফয়েস লেক আবাসিক এলাকার হাজী আবদুল হামিদ রোডে ৬ তলা বিলাসবহুল বাড়িতে পরিবারসহ বসবাস করতেন। বাড়িটির নাম ‘জ্যোৎস্না’ হলেও, এটিএম সেলিম দাবি করেন এটি তার শ্বশুরের বাড়ি। তবে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এই বাড়িটি তিনি দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থে নির্মাণ করেছেন, আর সেই বাড়ির নাম শাশুড়ির নামে রেখেছেন।

এটিএম সেলিমের বিরুদ্ধে এই অভিযোগের পরেও দুদক তার বিরুদ্ধে কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেয়নি, যা দুর্নীতিবাজদের কাছে আরও বড় একটি বার্তা হয়ে উঠেছে।

দুর্নীতির টাকায় এটিএম সেলিমের বিশাল সম্পদের সাম্রাজ্য: চট্টগ্রাম-ঢাকা-অস্ট্রেলিয়া পর্যন্ত

চান্দগাঁও থানার খালাসী লেকের বিপরীতে ৪ ইউনিটের ৬ তলা বিশিষ্ট বিশাল একটি ভবনের মালিক এটিএম সেলিম। শুধু চট্টগ্রামের চকবাজার এলাকায় নয়, তার নামে বেনামে রয়েছে একাধিক দোকান এবং নানা স্থানে সম্পত্তি। চট্টগ্রামের বাইরেও দুর্নীতির টাকায় সে নিজের সম্পদের সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন, যার অন্যতম স্থান রাজধানী ঢাকা। ঢাকার অভিজাত এলাকা বনানীতেও তার নামে একাধিক ফ্ল্যাট রয়েছে, যা সে বিভিন্ন কৌশলে অর্জন করেছে।

এটিএম সেলিম তার দুর্নীতির চক্র শুধু দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখেননি, তিনি বিদেশেও তার কালো টাকার মাধ্যমে ব্যবসা ও সম্পত্তি গড়েছেন। অস্ট্রেলিয়াতে তার বন্ধু আবদুল করিমের মাধ্যমে টাকা পাচার করে সেখানে বাড়ি কিনেছেন এবং একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন।

এটিএম সেলিম বিপিসিতে চাকরি পেতে জালিয়াতি করেছিলেন। ১৯৯৯ সালে বিপিসি ৪ জন সহকারী ব্যবস্থাপক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। নিয়োগ বোর্ডে ছিলেন হিসাব বিভাগে কাজী শহীদুর রহমান, বাণিজ্য বিভাগে আবুল কালাম আজাদ, এমআইএস বিভাগে মোঃ সোয়েব আহমেদ এবং পরিকল্পনা বিভাগে মোঃ মনিরুল ইসলাম। ৩ মাসের মধ্যে মনিরুল ইসলাম চাকরি ছেড়ে পূর্বের কর্মস্থল সিলেট গ্যাস ফিল্ডে ফিরে গেলে একটি সহকারী ব্যবস্থাপক পদ শূন্য হয়ে পড়ে।

বিপিসির কোম্পানি সচিব কামাল উদ্দিন। যিনি এটিএম সেলিমের চাচা, তার মদদে সেলিম ওই শূন্য পদে নিয়োগ পান। তার চাচা কোনো নিয়মানুবর্তিতা বা আইন অনুসরণ না করে গোপনীয়তার সাথে এবং প্যানেল ছাড়াই, অত্যন্ত অসংবেদনশীলভাবে সেলিমকে নিয়োগ দেন।

মংলা অয়েল ইনস্টলেশন প্রকল্পে দুর্নীতির হালচাল: বিপিসির হিসাব বিভাগে জালিয়াতি ও ব্যয় বৃদ্ধির ঘটনা

তৎকালীন সময়ে মংলা অয়েল ইনস্টলেশন প্রকল্পে ব্যাপক দুর্নীতির ঘটনা ঘটেছে, যেখানে প্রকল্পটির সার্বিক তত্ত্বাবধান ছিলেন এটিএম সেলিম। প্রকল্পটি বাস্তবায়নকালে ঠিকাদারের বিলসহ সব পেমেন্ট বিপিসির হিসাব বিভাগ থেকে দেওয়া হয়। তবে প্রকল্পের শুরুতেই শূন্য শতাংশ অগ্রগতি দেখিয়ে, প্রকৃত অগ্রগতি ছাড়াই ৫০ শতাংশ অগ্রগতি দেখিয়ে ম্যাক্সওয়েল ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস এবং পাইপলাইন লিমিটেডকে বিল প্রদান করার মতো জালিয়াতির ঘটনা উঠে এসেছে অডিট রিপোর্টে।

প্রকল্পটির সংশোধিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (আরডিপিপি) অনুযায়ী অনুমোদিত ব্যয় ছিল ২০৫ কোটি ৪৬ লাখ ৮৪ হাজার টাকা কিন্তু প্রকল্পের বাস্তবায়নে খরচ হয়েছে ২০৯ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। এই অতিরিক্ত খরচের বিষয়ে অডিট প্রতিষ্ঠান খান ওয়াহাব শফিক রহমান এন্ড কোম্পানি ২০২০ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি আপত্তি জানায়। তাছাড়া প্রকল্পটির বেশ কিছু ভাউচারের হদিসও পাওয়া যায়নি। ভাউচার বিষয়ে অডিট প্রতিষ্ঠানের আপত্তির পর প্রকল্প পরিচালক মোছাদ্দেক হোসেন জানিয়েছেন যে, বিপিসির হিসাব বিভাগ থেকে বিল প্রদান করা হয়েছে এবং সেখানে ভাউচার সংরক্ষিত রয়েছে। কিন্তু পরবর্তীতে বিপিসির হিসাব বিভাগেও সেই ভাউচার খুঁজে পাওয়া যায়নি।
এদিকে, প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার এক বছরেরও আগে অফিস ও আবাসিক ভবনের প্লাস্টারে শ্যাওলা জমতে শুরু করেছে। অনেক ভবনের বারান্দায় ফাটল ধরেছে। সিড়িং রেলিংয়ের জন্য স্টেইনলেস স্টিল দেওয়ার কথা থাকলেও তা দেওয়া হয়নি বরং মরিচা ধরে রেলিংগুলো বিবর্ণ হয়ে গেছে। প্রকল্পের এই দুর্বলতার মূলে রয়েছে এটিএম সেলিমের দুর্নীতি ও অবহেলা।

দুদকের অভিযোগে নতুন দুর্নীতির চিত্র: এটিএম সেলিমের বিরুদ্ধে আরও ব্যাপক অনিয়মের প্রমাণ

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এর অভিযোগে আরো একাধিক দুর্নীতির ঘটনা উঠে এসেছে, বিশেষত বিপিসির অধীনস্থ প্রতিষ্ঠান ইস্টার্ন রিফাইনারী লিমিটেডের এসপিএম (সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং) প্রকল্পে। এই প্রকল্পে জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া নিয়ে বিস্তর দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছে দুদক। অভিযোগ অনুযায়ী, ধান ক্ষেতের একর প্রতি মূল্য ৩ লাখ এবং পানের বরজের মূল্য ৬৩ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল কিন্তু প্রকল্পের বাস্তবায়নকালে, যারা এটিএম সেলিমকে ঘুষ দিয়েছে তাদের ধান ক্ষেতকে পানের বরজ হিসেবে দেখানো হয়েছে এবং যারা ঘুষ দেয়নি তাদের পানের বরজকে ধান ক্ষেত দেখানো হয়েছে। এই জালিয়াতির ফলে প্রায় ৯৬ লাখ ৬০ হাজার ১৫০ টাকার দুর্নীতি ঘটেছে, যা খোদ দুদকের তদন্তে বেরিয়ে এসেছে।
২০২০ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি র‌্যাব একটি অভিযানে ঘুষের টাকা ভাগাভাগির সময় ৬৬ লাখ ৭৫ হাজার ৫৫০ টাকাসহ এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে, দুদকের অনুসন্ধানে আরও বহু দুর্নীতির ঘটনা উন্মোচিত হয়েছে। তবে, মূল হোতা এটিএম সেলিম এখনো ধরা ছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন।
এছাড়া, বিপিসির রন্ধে রন্ধে থাকা দুর্নীতি বন্ধ করতে অটোমেশন চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। তবে, সেই প্রক্রিয়া থামিয়ে রেখেছেন এটিএম সেলিম ও তার চক্র। অটোমেশন কার্যকর হলে, তেল বিক্রি ও মজুদ সম্পর্কিত তথ্য এক ক্লিকে দেখা যেতো, যা দুর্নীতি ও লুটপাট অনেকাংশে বন্ধ করতে পারতো। বিশেষভাবে, পদ্মা, মেঘনা, ও যমুনা কম্পানিগুলো ব্যাংকে টাকা ফেলে রেখে ব্যক্তিগত সুবিধা নেওয়া বন্ধ হয়ে যেতো। স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানিতে ঘটে যাওয়া একটি বড় দুর্নীতির ঘটনা, যার মধ্যে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা লোকসান হয় নির্ধারিত সময়ে টাকা আদায় না করার কারণে। মামলার পরেও, মূল হোতা এটিএম সেলিম এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন।
এদিকে, চট্টগ্রামের চকবাজারের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত একটি কাপড়ের দোকান ‘ইডিইএস’ (দ্বিতীয় তলায় দোকান নম্বর#২২) এর মালিকানা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এই দোকানটি পরিচালনা করেন এটিএম সেলিমের স্ত্রী ও ছোট ভাই। দোকানটির বর্তমান মূল্য প্রায় কোটি টাকার বেশি হলেও, এটি এটিএম সেলিমের আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়, যা আরও একটি উদাহরণ তার অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়ার।

এইসব অভিযোগ ও অনুসন্ধান আরও গভীর তদন্ত দাবি করছে, এবং আশা করা হচ্ছে যে, দুদকের তদন্তে সব দুর্নীতি ও অবৈধ কার্যকলাপ প্রকাশিত হবে।

সরকারের জ্বালানি সাশ্রয়ের আহ্বান উপেক্ষা করে এটিএম সেলিমের বিলাসী জীবনযাপন

যতটুকু সরকার জ্বালানি সাশ্রয়ের কথা বলছে, ঠিক ততটুকু বেপরোয়া মনোভাব দেখা যাচ্ছে এটিএম সেলিমের। তার অফিসের গাড়িটি শুধু অফিস কাজেই নয়, পারিবারিক কাজে অব্যাহতভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। প্রতিদিন সকালবেলা অফিসে নামিয়ে দিয়ে চলে যায় তার ছেলে-মেয়ে, যারা কলেজ-ইউনিভার্সিটি যাওয়া-আসার জন্য গাড়িটি ব্যবহার করে। তার দশম শ্রেণির মেয়ে মাঝে মাঝে চট্টগ্রাম ক্লাব বা র‌্যাডিসন হোটেলে সাঁতার কাটতে যায়। এমনকি তার স্ত্রীও একাধিকবার এই গাড়ি ব্যবহার করে দোকানে যাতায়াত করেন। এ ধরনের বিলাসিতা দীর্ঘ সময় ধরে চলছে এবং গাড়ির মাইল মিটার পরীক্ষা করলেই এর প্রমাণ পাওয়া যাবে।

এটিএম সেলিম শুধু নিজের আঙুলে আঙুল ঘুরিয়ে অর্থ উপার্জন করেননি, বরং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বিপিসিকে লোকসানে ঠেলে দিয়েছেন। ব্যাংকে কয়েক হাজার কোটি টাকার আমানত থাকা অবস্থায় তিনি ব্যাংক ঋণ নিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছেন। এতে দেখা গেছে, ঋণের সুদের চেয়ে বিপিসির আমানতের সুদের পরিমাণ ছিল অনেক কম। যদি ঋণ না নিয়ে নিজেদের আমানত থেকে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হতো, তবে ২৭৮ কোটি টাকা সাশ্রয় হতো। কিন্তু নিজের লাভের জন্য তিনি বিপিসিকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছেন।

জাতীয় সংসদের সরকারি প্রতিষ্ঠান সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটি এই দুর্নীতির বিষয়ে গভীর বিস্ময় প্রকাশ করেছে। ২০২২ সালের ২৩ আগস্ট কমিটির বৈঠকে কমিটির সভাপতি আসম ফিরোজ সাংবাদিকদের বলেন, “বিপিসিতে অনেক ঘাটতি রয়েছে, এবং সেখানে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নেই। তাদের অনিয়ম দেখে কমিটি স্তম্ভিত।” তিনি আরও বলেন, “নিরীক্ষা প্রতিবেদনে অনেকের নাম উল্লেখ করা হয়েছিল, এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছিল, কিন্তু বিপিসি কর্তৃপক্ষ কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। এমনকি তারা দুদকের কথাও শোনেনি।

এটিএম সেলিমের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি মোবাইল রিসিভ করেননি।

অস্থায়ী কর্মচারিদের স্থায়ী না করে আউটসোর্সিংয়ে নতুন কর্মী নিয়োগের অপচেষ্টা প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চান বাপেক্সের শত শত অস্থায়ী কর্মচারি

স্টাফ রিপোর্টারঃ

বাপেক্সের অস্থায়ীভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মচারীদের কেউ কেউ ২৫/৩০ বছর ধরে কাজ করছেন। তারা অনেক অভিজ্ঞ এবং স্ব স্ব গ্যাসক্ষেত্রের সব বিষয় সম্পর্কে তাদের জানাশোনা রয়েছে। কিন্তু একটি চক্র অস্থায়ীভাবে নিয়োগপ্রাপ্তদের স্থায়ী নিয়োগ না দিয়ে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে কর্মী নিযোগ ও কাজ পরিচালনা করার হীন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছেন। প্রতিবাদে চাকরি স্থায়ীকরণের দাবিতে মানবন্ধন করেছেন বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বাপেক্স) অস্থায়ী কর্মচারীরা। বুধবার (১৭ মে) বেলা ১১টার দিকে গণভবনের সামনে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে তারা বাপেক্সে মাস্টার রোল বা অস্থায়ী ভিত্তিতে কাজ করে আসছেন। কিন্তু এতদিনেও স্থায়ীকরণ না হওয়ায় এবার প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন। এ সময় দ্রত নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরুর দাবি জানানো হয়। এদিকে মানববন্ধনে উপস্থিত হয়ে দাবি পূরণের আশ্বাস দেন বাপেক্স কর্মকর্তারা। বিষয়টি মন্ত্রণালয়ে জানানো হয়েছে বলে আন্দোলনকারীদের জানান।
বাপেক্সের আওতাধীন এসব অস্থায়ী কর্মচারী সংস্থাটির প্রধান ও আঞ্চলিক ১৪টি গ্যাসফিল্ডে কর্মরত। আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন পাঁচ শতাধিক কর্মচারী। জানিয়েছেন, চাকরি স্থায়ীকরণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ ও বাপেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলী বরাবর তারা স্মারকলিপি দিয়েছেন। কিন্তু কোনো সাড়া না পেয়ে অনেকটা বাধ্য হয়েই তারা রাজপথে নেমেছেন। দাবি আদায়ে প্রয়োজনে আমরণ অনশনে বসার কথাও জানালেন আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা কর্মচারীরা।
সারা দেশে বাপেক্সের আওতাধীন প্রধান ও আঞ্চলিক ১৪টি কার্যালয়ে পাঁচ শতাধিক কর্মচারীকে স্থায়ী করা হয়নি বলে জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। তারা জানান, সর্বনিম্ন পাঁচ বছর থেকে সর্বোচ্চ ৩০ বছর পর্যন্ত এসব কর্মী অস্থায়ী ভিত্তিতে বাপেক্সের আওতায় কাজ করছেন। দীর্ঘ সময় ধরে যেসব কর্মচারীর চাকরি স্থায়ী হয়নি তাদের জায়গায় সম্প্রতি আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে জনবল নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয় বাপেক্স।
বাপেক্সের প্রধান কার্যালয়ে কর্মরত মেকানিক মো. ফয়সাল আহমেদ বলেন, ‘অস্থায়ীভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মচারীদের কেউ কেউ ৩০ বছর পর্যন্ত কাজ করছেন। তারা অনেক অভিজ্ঞ এবং সংশ্লিষ্ট গ্যাস ক্ষেত্রের সব বিষয় সম্পর্কে অনেক জানাশোনা রয়েছে। কিন্তু প্রশাসনের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা একটি চক্র অস্থায়ীভাবে নিয়োগপ্রাপ্তদের স্থায়ী নিয়োগ না দিয়ে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে কাজ পরিচালনা করার হীন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। এমনকি অভিজ্ঞ অস্থায়ী কর্মচারীদেরও আউটসোর্সিংয়ে কাজ করানোর কথা বলা হচ্ছে, যা একটি হাস্যকর ব্যাপার।’
বাপেক্সের আওতাধীন স্টোরকিপার বায়েজিদ বলেন, ‘প্রশাসনের পক্ষ থেকে বারবার আশ্বাস দেয়া হলেও চাকরি স্থায়ী হয়নি। চাকরি স্থায়ী হবে ভেবে অন্য কোথাও চাকরি খোঁজেননি তারা। এখন চাকরি স্থায়ী না হলে পরিবার-পরিজন নিয়ে পথে বসতে হবে।’ চাকরি স্থায়ীকরণের দাবিতে ছয় দফা দাবি তুলে ধরেন বাপেক্সের এসব কর্মী। সে সময় তারা চাকরি স্থায়ীকরণের পাশাপাশি আউটসোর্সিং ও চাকরি বদলি-বাতিলসহ কর্মক্ষেত্রে শারীরিক ক্ষতি না হওয়া-সংক্রান্ত বেশকিছু দাবি তুলে ধরেন।
উল্লেখ্য, বাপেক্স দীর্ঘদিন ধরে তার আওতাধীন গ্যাসফিল্ড থেকে শুরু করে প্রধান কার্যালয়ে দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে বড় জনবল নিয়োগ দিয়ে কাজ করাচ্ছে। দীর্ঘ সময় ধরে এসব কর্মী কাজ করলেও তাদের চাকরি স্থায়ী হয়নি। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অস্থায়ী কর্মীদের ছাঁটাই করে আউটসোর্সিং কোম্পানির মাধ্যমে জনবল নিয়োগের কথা জানায় প্রতিষ্ঠানটি। বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। আদালতের নির্দেশনার পর অনেক কর্মচারীর চাকরি স্থায়ী হয়েছে।
আন্দোলনকারীরা বলেন, বাপেক্সে দক্ষ জনবলের প্রয়োজনীয়তা পূরণের লক্ষ্যে ১৪ বার কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হলেও ২০০১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত কোনো কর্মী নিয়োগ করা হয়নি। কর্মচারী স্থায়ী করার জন্য বারবার আবেদন করা হলেও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তাতে সাড়া দেয়নি। এমনকি ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পত্র অনুযায়ী জনবল নিয়োগের সরকারী নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও বাপেক্সের চুক্তিভিত্তিক এমডি মোহাম্মদ আলী, কোম্পানি সচিব মোহাম্মদ আবুল, উপ মহাব্যবস্থাপক মো. জসিম উদ্দিন হায়দার সকল কর্মচারীদের কনফারেন্স রুমে ডেকে নিয়ে মৌখিক ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন যে, কোনো অস্থায়ী কর্মচারীকে স্থায়ী নিয়োগ দেওয়া হবে না।
তারা আরও বলেন, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে বাপেক্স কর্তৃপক্ষ আমাদের কর্মক্ষেত্রে আসতে নিষেধ করেছে। বর্তমান অস্থায়ী কর্মচারীদের স্থায়ী করার লক্ষ্যে সুপ্রীম কোর্টে ৪৭৫ জনের ৩৪টি মামলা চলমান থাকলেও বাপেক্সের পরিচালনা পর্ষদকে মামলা সংক্রান্ত মিথ্যা তথ্য দেওয়া হয়। টেকনিক্যাল পোস্টগুলোতে আউটসোর্সিং এ নিয়োগ দেওয়ার ফলে কাজের মান ও দক্ষতা দুটোই নষ্ট হচ্ছে। এ ছাড়া এখান থেকে আমরা যে পরিমান মজুরি পাই তা দিয়ে পরিবারসহ জীবনধারণ করা অসম্ভব।
অস্থায়ী কর্মচারীরা বলেন, বাপেক্স সৃষ্টির পর থেকে দেশের জ্বালানির চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে এই প্রতিষ্ঠানের সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। স্থায়ী কর্মকর্তা ও কর্মচারী যাদের চাকরির মেয়াদ পূরণের পর অবসর গ্রহণ অথবা কেউ মৃত্যুবরণ করলে তাদের পদগুলো শূন্য হয়।
এ দিকে একাধিক সুত্রে জানাগেছে, প্রভাবশালী একটি মহল আর্থিক সুবিধা হাসিল করার অভিপ্রায়ে অস্থায়ী কর্মচারিদের স্থায়ী করণ কার্যক্রমে বাঁধা দিচ্ছেন। মন্ত্রণালয়ের সচিব কর্মচারিদের চাকরি স্থায়ী করণের আশ^াস দিলেও অসাধু চক্রটি নিযোগ বাণিজ্য করার লক্ষ্যে প্রতিমন্ত্রীর কাঁধে সওয়ার হয়েছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন আন্দোলনকারী বর্মচারিরা। এ বিষয়ে তারা প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম