ঘুষ ও দুর্নীতির অভিযোগে বরখাস্ত দুদক কর্মকর্তা সুদীপ

স্টাফ রিপোর্টার:

ঘুষ গ্রহণ ও দুর্নীতির অভিযোগে উপ-সহকারী পরিচালক সুদীপ কুমার চৌধুরীকে বরখাস্ত করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

বুধবার (১৬ এপ্রিল) দুদক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবিদুল মোমেন সই করা আদেশ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। তাকে দুদক (কর্মচারী) চাকরি বিধিমালা, ২০০৮ এর ৩৯(খ), ৩৯(৪), ৩৯(চ) ও ৪০(১) (খ)(৫ অনুযায়ী চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, বগুড়ায় উপসহকারী পরিচালক হিসেবে কর্মরত থাকাকালে জেলা পুলিশে গোয়েন্দা বিভাগের উপপরিদর্শক আলমগীর হোসেনের সম্পদ বিবরণী যাচাই করেন। সে সময় তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার আশ্বাস দেন সুদীপ কুমার। তখন আলমগীর হোসেনের কাছে ঘুষ দাবি করেন তিনি। কিছু টাকা তিনি উৎকোচ হিসেবে গ্রহণও করেছেন।

তদন্ত প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, ৭ লাখ টাকা উৎকোচ দাবি করলে মো. আলমগীর হোসেনের খালাতো বোন বেগম সুমাইয়া শিরিনের মাধ্যমে কিছু অর্থ গ্রহণ করেছেন। যার মধ্যে বগুড়া বারের আইনজীবী মো. কামাল উদ্দিন থেকে ৫০ হাজার টাকা উৎকোচ গ্রহণ করেছেন। পরে অ্যাডভোকেট সৈয়দ আসিফুর রহমানের মাধ্যমে আরো ১ লাখ টাকা উৎকোচ নেওয়ার অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। আলমগীর হোসেনকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার জন্য অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির খালাতো বোন বেগম রুমাইয়া শিরিন এবং অ্যাডভোকেট সৈয়দ আসিফুর রহমানের সঙ্গে তার ব্যক্তিগত মোবাইলের মাধ্যমে উৎকোচ দাবি ও গ্রহণের কথোপকথনের অডিও রেকর্ডও দুদকের ফরেনসিক ল্যাবে মাধ্যমে প্রমাণ পাওয়া গেছে। কমিশনের আদেশ অমান্য করে দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির কাছ থেকে উৎকোচ দাবি করে দুদকের ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ন করায় তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (কর্মচারী) চাকরি বিধিমালা, ২০০৮ এর ৩৯(খ), ৩৯(৩) ও ৩৯(চ) বিধি অনুযায়ী যথাক্রমে অসদাচরণ, ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির অভিযোগে বিভাগীয় মামলা রুজু করে তার কাছে অভিযোগনামা ও অভিযোগ বিবরণী জারি করা হয়।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, অভিযোগের জবাব দাখিল করে ব্যক্তিগত শুনানি চান এবং সে অনুযায়ী ২০২৩ সালের ২০ সেপ্টেম্বর তার ব্যক্তিগত শুনানি গ্রহণ করা হয়। তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে পুনরায় তদন্ত শেষে ওই বছরের ২ নভেম্বর দাখিল করা তদন্ত প্রতিবেদনে সুদীপ কুমার চৌধুরীর বিরুদ্ধে আনীত অসদাচরণ, ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে। যে কারণে দুর্নীতি দমন কমিশন (কর্মচারী) চাকরি বিধিমালা, ২০০৮ এর ৩৯(খ), ৩৯(৪), ৩৯(চ) ও ৪০(১) (খ)(৫ অনুযায়ী তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে।

২০২৩ সালের ২০ জুলাই সুদীপ কুমার চৌধুরীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছিল। ওই বছরের ৯ এপ্রিল বগুড়া সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপ-সহকারী পরিচালক সুদীপ কুমার চৌধুরীর বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলনও করেছেন পুলিশ কর্মকর্তার বোন রুমাইয়া শিরিন।

ঘুষ না দিলে সিলগালা হুমকি  কর্পোরেশন কর্মকর্তা হারুন, সহযোগিতায় কথিত আওয়ামী লীগ নেতা জাফর

নিজস্ব প্রতিবেদক :

চাঁদা নেওয়ায় ডিএমপি কমিশনার বরাবর অভিযোগ হারুন ও জাফরের নামে ।

মাসিক মিটিংয়ে নির্ধারণ হয় মাসিক চাঁদার হার সিটি কর্পোরেশনের হারুন ও হলুদ সাংবাদিক জাফর । রাজধানীর গুলশান-বনানী এলাকায় প্রায় অর্ধশতাধিক স্পা সেন্টার রয়েছে। অভিযোগ আছে, এসব সেন্টার পুলিশ-সাংবাদিকসহ রাজনৈতিক নেতাদের টাকা দিয়ে স্পার আড়ালে চালায় অনৈতিক কাজ। স্পা সেন্টারের ধরনভেদে প্রতি মাসে ৪০ হাজার থেকে শুরু করে ৫০ হাজার বা তারও অধিক টাকা চাঁদা দিতে হয়। ফলে ওইসব স্পা সেন্টারের ভেতরে কী হয়, তা নিয়ে আর প্রশ্ন ওঠে না।

তবে সম্প্রতি ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গুলশান বিভাগের উপকমিশনারের (ডিসি) ‘নাম ভাঙিয়ে’ চাঁদা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে হলুদ সাংবাদিক পরিচয় দেওয়া জাফর নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে ডিএমপি কমিশনার বরাবর একটি অভিযোগ জমা দেওয়া হয়েছে।

গুলশান-বনানীসহ ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে অসংখ্য অবৈধ স্পা সেন্টার। বাইরে নাম হেয়ার কাটিং সেলুন, বিউটি পার্লার থাকলেও এসবের ভেতরে চলছে জমজমাট ‘দেহব্যবসা’ ও মাদক কারবার। আবার এ অনৈতিক কাজগুলো সাপোর্ট দিচ্ছে হলুদ সাংবাদিক জাফর, সিটি কর্পোরেশনের হারুন

অবশ্য এর বিনিময়ে তারা বড় অঙ্কের চাঁদা আাদায় করছেন স্পা সেন্টারের মালিকদের কাছ থেকে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, গুলশান-বনানী এলাকায় প্রতি মাসে প্রায় ৪ লাখ থেকে ৫ লাখ টাকা চাঁদার বাণিজ্য হয় স্পা সেন্টার ঘিরে। প্রতিটি স্পা সেন্টারে মাসিক মিটিংয়ের মাধ্যমে নির্ধারণ করা হয় মাসিক চাঁদার হার। পরে ভাগ করে দেওয়া হয় কে কত পাবে সিটি কর্পোরেশন হারুন কত আর হলুদ সাংবাদিক জাফর কত ।

পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে এক স্পা মালিক বলেন, মাসে পুলিশকে দিতে হয় প্রায় সাড়ে ৪ লাখ টাকা। এরপর হলুদ সাংবাদিক জাফরকে দিতে হয় ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা, রাজনৈতিক দল, এলাকার লোকজনসহ নানা সময়ে দিতে হয় বিভিন্ন অঙ্কের চাঁদা। চাঁদা না দিলে ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেয় হলুদ সাংবাদিক জাফর ও সিটি কর্পোরেশনে হারুন, আবার রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে কেউ কেউ এ অবৈধ ব্যবসা লুটপাটে উঠেপড়ে লেগেছে। নতুন করে এ ব্যবসায়ও জড়াচ্ছে অনেকে।

সম্প্রতি ডিএমপির গুলশান বিভাগের উপকমিশনারের (ডিসি) নাম ভাঙিয়ে চাঁদা নেওয়ার অভিযোগ ওঠে হলুদ সাংবাদিক পরিচয় দেওয়া জাফর নামে এক বিরুদ্ধে। একটা ভিডিওতে দেখা গেছে, সাংবাদিক পরিচয় দেওয়া জাফর একটি স্পা সেন্টারে বসে টাকা গুনছেন।

এক ভুক্তভোগী (স্পা সেন্টারের মালিক) অভিযোগ করে বলেন, সাংবাদিক পরিচয় দেওয়া জাফর ও তার সহযোগী সিটি কর্পোরেশনের হারুন হলুদ সাংবাদিক জাফর । তিনি নিজে স্পা সেন্টারের মালিক হয়েও নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দেন এবং সাংবাদিক পরিচয়ে বিভিন্ন মানুষকে ফাঁদে ফেলে প্রতারণা করে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। একসময় আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকলেও গত ৫ আগস্টের পর হঠাৎ সাংবাদিক বনে যান জাফর। তার নামে গুলশানসহ ঢাকার বিভিন্ন থানায় বেশ কিছু প্রতারণার জিডিও রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট আরেক ব্যবসায়ী বলেন, মোবাইল ফোনে জাফর বলেন, তোমাদের স্পা সেন্টারে দেহব্যবসা হয়। আর এ ব্যবসা অবৈধ। তুমি যদি গুলশানে স্পা ব্যবসা করতে চাও, তাহলে ডিসি-ওসি, থানা-ফাঁড়িসহ ও সিটি কর্পোরেশনের টাকা হারুনকে আমার মাধ্যমে দিতে হবে।

এই বিষয়ে জাফরকে ফোন দিলে তিনি বলেন স্পা থেকে চাঁদা নেওয়ার বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন উল্লেখ করে জাফর বলেন, ‘ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের অভিযানে কয়েকটি স্পা সেন্টার বন্ধ হয়ে যায়। স্পা সেন্টার বন্ধর পেছনে আমার হাত রয়েছে এমনটা মনে করে ব্যবসায়ীরা তাই আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দিচ্ছেন।’

টাকা নেওয়ার একটি ভিডিও ভাইরাল হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দৈনিক আমাদের মাতৃভূমি কে একটি স্পা সেন্টার নিয়ে নিউজ করায় আমি মীমাংসা করতে যাই। কিন্তু মীমাংসা করতে না পাড়ায় পরবর্তীকালে আবার টাকা ফেরত দেওয়া হয়।

এদিকে পুলিশের নাম ভাঙিয়ে চাঁদা নেওয়া ও ডিএমপি কমিশনার বরাবর অভিযোগের বিষয়ে জানতে গতকাল সন্ধ্যা ৬টায় গুলশান বিভাগের ডিসি তারিক মাহমুদকে একাধিকবার মোবাইলে ফোন ও এসএমএস দিলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

অভিযোগে বলা হয়েছে, জাফরের সঙ্গে ডিসির বডিগার্ড মেহেদীর গভীর সম্পর্ক রয়েছে। গত নভেম্বরের ১৯ তারিখে বিকেলে বনানীর ‘টাইম আউট’ রেস্টুরেন্টে মেহেদী ও জাফর ও সিটি কর্পোরেশনের হারুন বনানীর স্পা সেন্টারের মালিকদের সঙ্গে মিটিং করেন। ওই মিটিংয়ে মাসিক চাঁদার হার নির্ধারণ করা হয়।

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম