তারিখ লোড হচ্ছে...

পদত্যাগ করলেন বাফুফের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা

স্টাফ রিপোর্টার:

বাফুফের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) মো. সরফরাজ হাসান সিদ্দিকী পদত্যাগ করেছেন। বাফুফে তার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করছে, যা কার্যকর হবে ১০ এপ্রিল থেকে।

পদত্যাগপত্র গৃহীত হলেও দুই পক্ষের শর্ত অনুযায়ী আরও তিন মাস বাফুফেতে থাকবেন সরফরাজ। এই অর্ন্তবর্তী সময়ে তিনি মূলত দায়িত্ব হস্তান্তর প্রক্রিয়ায় যুক্ত থাকবেন।

বাফুফের ব্যাংকিং সংক্রান্ত বিষয়াবলি এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা ফিফা, এএফসি ও সাফের সঙ্গে সরফরাজের পরিবর্তে আর্থিক যোগাযোগ করবেন ফিন্যান্স বিভাগের আরেক কর্মকর্তা সৈয়দ আমিরুল। ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসেন তুষার নির্বাহী কমিটির সকল কর্মকর্তাকে এক বার্তার মাধ্যমে বিষয়টি অবহিত করেছেন।

বাফুফের প্রশাসনিক প্রধান নির্বাহী সাধারণ সম্পাদক। তার পরেই অবস্থান প্রধান অর্থ কর্মকর্তার (সিএফও)। বিদেশি কোচিং স্টাফের বাইরে এই দুই প্রশাসনিক পদের জন্য বাফুফেকে মাসে প্রায় আট লাখ টাকা খরচ করতে হয়। গত কয়েক বছর ধরে বাফুফে প্রধান অর্থ কর্মকর্তাকে নিয়ে ভুগছে। ২০২৩ সালের ১৪ এপ্রিল সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগকে নিষিদ্ধ করে ফিফা। এরপর বাফুফে আর্থিক বিষয়াদি নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি করে। সেই তদন্ত কমিটির কাজের মধ্যেই জুন-জুলাই মাসে তৎকালীন প্রধান অর্থ কর্মকর্তা আবু হোসেন পদত্যাগ করেন। এর কয়েক মাস পরই সরফরাজ হাসানকে কাজী সালাউদ্দিন প্রধান অর্থ কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেন।

বাফুফের আয়ের প্রধান খাত ফিফা ও এএফসির অনুদান। ফিফা-এএফসি বছরে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার দিলেও সেই অর্থ ব্যয়েরও নির্দেশনা দেয়। বিগত সময় বাফুফে সেই নির্দেশনা অমান্য করায় এর সঙ্গে জড়িত স্টাফরা নিষিদ্ধ ও জরিমানার শিকার হয়েছেন। সরফরাজ হাসান দায়িত্ব নেওয়ার পর ফিফা-এএফসির কমপ্ল্যায়ান্স অনুসরণ করেছেন কঠোরভাবে। সেটা অনুসরণ করলেও ফুটবল ও ফেডারেশন সংক্রান্ত অনেক কর্মকাণ্ডে অতিরিক্ত জটিলীকরণ প্রক্রিয়ার কারণে প্রায় সবার সঙ্গেই অনভ্যস্ততার ঘাটতি শুরু হয়। এর পাশাপাশি বাফুফের নির্বাহী কমিটির কর্মকর্তাদের অনেকেই প্রধান অর্থ কর্মকর্তার কমর্কাণ্ডে অসন্তুষ্ট ছিলেন বলে জানা গেছে। নির্বাহী ও ফিন্যান্স কমিটির সভায় একাধিকবার প্রধান অর্থ কর্মকর্তা নানা প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছিলেন। সর্বশেষ ৯ এপ্রিল ফিন্যান্স কমিটির সভাতেও সিএফও’র কর্মকাণ্ড নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এ সকল কিছুর পরিপ্রেক্ষিতেই মূলত প্রধান অর্থ কর্মকর্তার পদত্যাগ বলে ধারণা বাফুফে সংশ্লিষ্ট সকলের।

২০০৮ সালে বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন দায়িত্ব নেওয়ার কয়েক মাস পরই আবু হোসেনকে প্রধান অর্থ কর্মকর্তা করেন। সিএফও’র অতিরিক্ত ছুটি, আর্থিক ব্যবস্থাপনা অসঙ্গতি নিয়ে তিনি বিভিন্ন সময় আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে ছিলেন। এরপরও কাজী সালাউদ্দিন তার উপর আস্থাশীল ছিলেন। সোহাগ ফিফা থেকে নিষিদ্ধ হওয়ার পর বাফুফে তদন্ত কমিটি আবু হোসেনের দায় খুঁজে পায়। সেই তদন্ত প্রতিবেদনের আগেই তিনি পদত্যাগ করে চলে যান এবং সালাউদ্দিনও সেই পদত্যাগ গ্রহণ করে প্রশ্নের মুখে পড়েছিলেন। আবুর বিদায়ের পর তিনি সরফরাজকে নিয়োগ দেন। বাফুফের নতুন সভাপতি তাবিথ আউয়াল নিজেই ফিন্যান্স কমিটির প্রধান। তার অস্বস্তির জন্যই মূলত সিএফও’র বিদায় ঘটছে। তবে তাবিথের বাফুফের বিগত সময়ের আর্থিক দুর্নীতি বিষয় উদঘাটনে কোনো পদক্ষেপ এখনও দৃশ্যমান হয়নি।

বাফুফে বছরে ৫০-৬০ কোটি টাকা ব্যয় করে। মাসিক ব্যয় ৪-৫ কোটি। এই আয়-ব্যয়ের হিসাবের জন্য বাফুফের ফিন্যান্স সংক্রান্ত বিষয়ে সিএফও’র পেছনে প্রতি মাসে প্রায় চার লাখ টাকা ব্যয় করে। অথচ দেশের আরেক শীর্ষ ক্রীড়া সংগঠন বিসিবি বছরে ২০০ কোটি লেনদেন ও স্থায়ী আমানত হাজার কোটি টাকা হলেও নেই প্রধান অর্থ কর্মকর্তা। যদিও গঠনতন্ত্রে প্রধান অর্থ কর্মকর্তা নিয়োগের বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে।

বিটকয়েনের মাধ্যমে পাচার হচ্ছে কোটি কোটি টাকা

স্টাফ  রিপোর্টার॥

ক্রিপ্টো কারেন্সি বিটকয়েনের মাধ্যমে দেশ থেকে পাচার হচ্ছে কোটি কোটি টাকা। বিদেশে অর্থ পাচারের জন্য এক শ্রেণির কালো টাকার মালিক বিটকয়েনকে বেছে নিয়েছেন। একইসঙ্গে বিটকয়েন কেনা-বেচার মাধ্যমে কালো টাকার মালিকরা তাদের অবৈধ অর্থ সাদা করে নিচ্ছেন। সম্প্রতি ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের তেজগাঁও বিভাগ এক বিটকয়েন ব্যবসায়ীকে গ্রেফতারের পর এসব তথ্য জানতে পেরেছে।

গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, দেশে অবৈধভাবে বিটকয়েন কেনাবেচা বেড়েছে। তারা ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি গ্রুপকে সনাক্ত করেছেন। রাজধানী ঢাকা থেকে মাহমুদুর রহমান জুয়েল নামে বিটকয়েন চক্রের এক সদস্যকে গ্রেফতার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার (তেজগাঁও বিভাগ) বলেন, বিটকয়েন বাংলাদেশে অবৈধ। কিন্তু অনলাইনে বিটকয়েনে কেনাবেচার মাধ্যমে দেশ থেকে অর্থ পাচার হয়ে যাচ্ছে। আমরা এরকম বেশ কয়েকটি গ্রুপকে শনাক্ত করেছি। তাদের গ্রেফতারে অভিযান চালানো হচ্ছে।

গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, গ্রেফতার হওয়া জুয়েলের এক স্বজন ফ্রান্সে থাকেন। তার মাধ্যমে জুয়েল ৭ হাজার ডলার দিয়ে এক বিটকয়েন কিনেছিল। সম্প্রতি সে বিটকয়েনটি ২১ হাজার ডলারে বিক্রি করে। যদিও সম্প্রতি এক বিটকয়েনের মূল্য ৫৮ হাজার ডলার পর্যন্ত উঠেছিল। বর্তমানে তা আবার কমেও এসেছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জুয়েল স্বীকার করেছে, মালয়েশিয়া থাোর সময় সে বিটকয়েন বেচাকেনায় জড়িত হয়। ২০১৬ সালে দেশে ফিরে এসে সে একই ব্যবসা করে আসছিল।

গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, বর্তমানে বিটকয়েনের মাধ্যমে অর্থ পাচারের দিকে ঝুঁকছে অসাধু ব্যক্তিরা। অবৈধভাবে আয়কৃত অর্থ নিরাপদে বিদেশে পাচার করার জন্য বিটকয়েন কেনাবেচার সিন্ডিকেটও গড়ে উঠেছে। দেশ থেকে অনেকেই বিটকয়েন কিনে ইউরোপের অনেক দেশে ভার্চুয়াল এই কয়েন অর্থে রূপান্তরিত করছে। কেউ কেউ কালো টাকা সাদা করার জন্য বিটকয়েন কেনার পর বিদেশে তা ভাঙিয়ে স্বজনদের মাধ্যমে দেশে বৈধ অর্থ হিসেবে দেশে আনছে। বিটকয়েন কেনাবেচার সঙ্গে জড়িত সিন্ডিকেটের সদস্যরা নির্দিষ্ট পরিমাণের কমিশনের বিনিময়ে অবৈধ অর্থ উপার্জনকারীদের অর্থ পাচার ও কালো টাকা সাদা করতে সহায়তা করে থাকে।

চলছে প্রতারণাও
অর্থপাচার ও কালো টাকা সাদা করার পাশাপাশি বিটকয়েন কেনাবেচার নামে চলছে প্রতারণাও। কোনও কোনও সিন্ডিকেট বিটকয়েন কেনাবেচার মাধ্যমে অধিক অর্থ আয়ের প্রলোভন দেখিয়ে সাধারণ মানুষকে প্রতারণা করে আসছে। গত ১৩ জানুয়ারি গাজীপুরের কালিয়াকৈর থানাধীন সফিপুর দক্ষিণপাড়া থেকে রায়হান নামে এক বিটকয়েন প্রতারককে গ্রেফতার করেছিল র‌্যাব-১। গ্রেফতারের পর রায়হানের অ্যাকাউন্ট পর্যালোচনা করে এক মাসে ৩৫ হাজার ডলার লেনদেনের তথ্য পায়। বিটকয়েন চক্রের মাস্টারমাইন্ড রায়হান প্রতারণা করার পাশাপাশি অর্থ পাচারের সঙ্গেও জড়িত ছিল। সে প্রতারণা করে আয়কৃত অর্থ দিয়ে এক কোটি ৭ লাখ টাকা দিয়ে একটি ওডি ব্র্যান্ডের গাড়িও কিনেছিল।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা জানান, বিটকয়েন কেনাবেচা শেয়ার বাজারের মতো। বিভিন্ন অ্যাপসের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন করে এই কেনাবেচায় অংশগ্রহণ করা যায়। সিন্ডিকেটের সদস্যরা বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় অর্থ স্থানান্তরের মাধ্যমে বিটকয়েন কেনাবেচা করতে পারেন। অধিক লাভের প্রলোভনে বিটকয়েন কেনার পর অনেকেই ফতুরও হয়ে গেছেন।

সন্ত্রাসবাদেও ব্যবহৃত হচ্ছে বিটকয়েন

সন্ত্রাসবাদ বা জঙ্গি অর্থায়নেও ব্যবহৃত হচ্ছে বিটকয়েন। আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো বিটকয়েনের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করছে। এছাড়া অস্ত্র ও মাদকের বড় বড় চালানের পেমেন্টও করা হচ্ছে বিটকয়েনের মাধ্যমে। বাংলাদেশে জঙ্গি অর্থায়নেও বিটকয়েন ব্যবহৃত হচ্ছে। ঢাকার কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের একটি টিম ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে আউয়াল নেওয়াজ ওরফে সোহেল নেওয়াজ এবং ফজলে রাব্বী চৌধুরী নামে দুই জঙ্গিকে গ্রেফতার করেছিল। নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের এই সদস্যরা বিটকয়েনের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করছিল।

কাউন্টার টেরোরিজম কর্মকর্তারা বলছেন, গ্রেফতার হওয়া দুই জঙ্গি ২০১৪ সাল থেকে বিটকয়েনের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করে আসছিল। আগে প্রথাগত পদ্ধতি বা হুন্ডির মাধ্যমে বিভিন্ন দেশ থেকে জঙ্গি অর্থায়নের জন্য অর্থ আনা হতো। কিন্তু প্রথাগত পদ্ধতি বা হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ লেনদেনের বিষয়টি গোয়েন্দারা নজরদারি করায় এখন পুরোপুরি ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে অর্থায়ন হচ্ছে।

কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (স্পেশ্যাল অ্যাকশন গ্রুপ) বলেন, এখন জঙ্গি অর্থায়ন পুরাটাই বিটকয়েন বা অন্যান্য ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে হচ্ছে। এগুলোতে নজরদারি করা কঠিন বলে জঙ্গি গোষ্ঠীগুলো অর্থ লেনদেনের জন্য ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবহার করছে। জঙ্গি প্রতিরোধে দীর্ঘ দিন কাজ করে আসা এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘অদূর ভবিষ্যতে ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে জঙ্গি অর্থায়ন আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।’

উল্লেখ্য, ভার্চুয়াল মুদ্রা বিটকয়েন বাংলাদেশে অবৈধ এবং এই মুদ্রার লেনদেনে মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধ সম্পর্কিত আইনের লঙ্ঘন হতে পারে। এ জন্য বিটকয়েন ব্যবহার করে লেনদেন না করতে সবাইকে সতর্ক করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরের শেষের দিকে এই সতর্কতা জারি করা হয়।

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম