স্টাফ রিপোর্টার:
বীমা কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) নিয়োগ ও অপসারণ প্রবিধানমাল ২০১২ অনুযায়ী, বীমা কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ পেতে চাইলে সংশ্লিষ্ট প্রার্থীকে অনুরূপ বীমা কোম্পানিতে ন্যূনতম ১২ বছরের কর্মঅভিজ্ঞতা থাকতে হয়। পাশাপাশি মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার অব্যবহিত নিম্নপদে কমপক্ষে ২ বছর কাজের অভিজ্ঞতা থাকাও বাধ্যতামূলক। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ এই দুটি শর্তের কোনোটাই পূরণ না করে গার্ডিয়ান লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার (চলতি) দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন শেখ রাকিবুল করিম। শুধু তাই নয়, পূর্ণাঙ্গ সিইও হিসেবে নিয়োগ পেতেও তিনি দৌঁড়-ঝাপ শুরু করেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বীমা খাতে শেখ রাকিবুল করিমের ক্যারিয়ার শুরু হয় ২০১৯ সালে; গার্ডিয়ান লাইফে যোগদানের মধ্য দিয়ে। তিনি কোম্পানিটিতে প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) পদে যোগদান করেন।
গার্ডিয়ান লাইফের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, এই কোম্পানিতে যোগ দেওয়ার পূর্বে শেখ রাকিবুল করিম একটি চার্টার্ড অ্যাকাউন্টস (সিএ) ফার্মে কাজ করেছেন। তারও আগে তিনি কাজ করেছেন মোবাইল অপারেটর বাংলালিংকে। অর্থাৎ গার্ডিয়ান লাইফে যোগদানের পূর্বে তিনি কোনো বীমা কোম্পানিতে কাজ করেননি। সেই হিসেবে বীমা খাতে শেখ রাকিবুল করিমের কাজের অভিজ্ঞতা মাত্র ৭ বছর।
শুধু তাই নয়, গার্ডিয়ান লাইফে নিয়মিত মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা না থাকায় ২০২১ সালের ১ জানুয়ারি সিএফও শেখ রাকিবুল করিমকে ডিএমডি পদে পদোন্নতি দিয়ে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার চলতি দায়িত্ব দেওয়া হয়। ৪ বছরের বেশি সময় ধরে তিনি চলতি দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। কিন্তু সিইও নিয়োগের শর্ত অনুযায়ী তিনি মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার অব্যবহিত নিম্নপদে ২ বছর কাজ করেননি।
অভিযোগ উঠেছে, কোনো শর্ত পূরণ না করলেও শেখ রাকিবুল করিমকে পূর্ণাঙ্গ সিইও পদে নিয়োগ দিতে ‘কাজ করছে’ খোদ বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষই (আইডিআরএ)। নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির একটি সূত্র জানিয়েছে, ইতিমধ্যে শেখ রাকিবুল করিমের ফাইল আইডিআরএ জমা হয়েছে। এটার অনুমোদনের বিষয়েও ‘নমনীয়’ কর্তৃপক্ষ।
তবে বাণিজ্য বার্তা স্বতন্ত্রভাবে এই তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে পারেনি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আইডআরএ’র একজন কর্মকর্তা বাণিজ্য বার্তাকে বলেন, শেখ রাকিবুল করিমের প্রতি কর্তৃপক্ষ নমনীয় বলেই ৪ বছর ধরে তিনি ভারপ্রাপ্ত সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পেরেছেন।
তিনি বলেন, বিধি অনুযায়ী বীমা কোম্পানির সিইও পদ ৩ মাস বা বিশেষ ক্ষেত্রে ৬ মাস খালি রাখার বিধান রয়েছে। কোনো অবস্থাতেই এই নিয়মের ব্যত্যয় করার সুযোগ নেই। এ সময়ের মধ্যে সিইও নিয়োগ না দিলে কোম্পানিকে জরিমানা করতে পারবে আইডিআরএ। এরপরও সিইও নিয়োগ না দিলে প্রশাসক বসানোর বিধান রয়েছে। কিন্তু গার্ডিয়ান লাইফের ক্ষেত্রে তা হয়নি। উল্টো জরিমানা করে তা আদায় না করলে ফের জরিমানা করা হবে বলে চিঠি দিচ্ছে। এখন বুঝে নেন আইডিআরএ’র ‘রাকিব প্রীতি’ কতো?
জানা গেছে, চলতি বছরের ২৭ জানুয়ারি কর্তৃপক্ষের পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) সালেহীন তানভীর গাজী স্বাক্ষরিত একটি স্মারকের মাধ্যমে গার্ডিয়ান লাইফকে ৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। একই স্মারকে বলা হয়, আগামী ৬০ দিনের মধ্যে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগ করতে হবে। এ সময়ের মধ্যে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগ করা না হলে কোম্পানিকে ফের ৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হবে। কিন্তু গার্ডিয়ান লাইফ সিইও নিয়োগ না দিয়ে জরিমানা পরিশোধ করে। আইন থাকলেও প্রশাসক নিয়োগের দিকে যায়নি আইডিআরএ।
সিইও নিয়োগের শর্ত পূরণ না করেই আইডিআরএ ফাইল জমা দেওয়ার বিষয়ে জানতে শেখ রাকিবুল করিমকে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি। হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা দিয়েও সাড়া মেলেনি।
আইন থাকার পরও গার্ডিয়ান লাইফে প্রশাসক নিয়োগে আইডিআরএ’র ‘অনাগ্রহ’ কেনো তা জানতে সংস্থাটির চেয়ারম্যান এম আসলাম আলমকে ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা দিলেও সাড়া দেননি।
তবে বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে আইডিআরএ’র জনসংযোগ কর্মকর্তা (মিডিয়া কনসালটেন্ট) সাইফুন নাহার সুমি বাণিজ্য বার্তাকে বলেন, গার্ডিয়ান লাইফের সিইও নিয়োগের জন্য কোনো ফাইল জমা হয়েছে কিনা এই মুহূর্তে বলতে পারছি না। তবে এখন পর্যন্ত কর্তৃপক্ষ কারও ফাইল অনুমোদন করেনি।
‘লবিং’ করছেন একজন সিইও, সহযোগিতা করছেন এক সদস্য
আইডিআরএ’র একটি বিশ্বস্ত সূত্র জানিয়েছে, শেখ রাকিবুল করিমকে গার্ডিয়ান লাইফের পূর্ণাঙ্গ সিইও’র অনুমোদন নিশ্চিত করতে একটি জীবন বীমা কোম্পানির সিইও ‘লবিং’ করছেন। আর নিয়োগ ‘কনফার্ম’ করতে সহযোগিতা করছেন আইডিআরএ’র একজন সদস্য।
শর্ত পূরণ না করার পরও আইডিআরএ কীভাবে এই নিয়োগ ‘জায়েজ’ করবে তারও রূপরেখা করেছেন তারা। এর অংশ হিসেবে বলা হচ্ছে, আরও একটি জীবন বীমা কোম্পানিতে শুরু থেকেই পূর্ণাঙ্গ সিইও নেই। কিন্তু কোম্পানিটি ভালো চলছে। ওই কোম্পানির আদলে গার্ডিয়ান লাইফেও শেখ রাকিবুল করিমের নিয়োগ চূড়ান্ত করা হবে।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মাত্র ৭ বছরের কর্মঅভিজ্ঞতা বিবেচনায় কাউকে সিইও নিয়োগ দেওয়া হলে পুরো বীমা খাতের শৃঙ্খলা ভেঙে পড়বে। অভিজ্ঞ এবং পরিশ্রমী বীমা কর্মীরা পেশার প্রতি সম্মান হারাবে। আর সাধারণ মানুষের কাছে নেতিবাচক বার্তা যাবে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: মোহাম্মদ মাসুদ || বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ২১/১ নয়াপল্টন, ঢাকা-১০০০ || মোবাইল : ০১৫১১৯৬৩২৯৪,০১৬১১৯৬৩২৯৪ || ই- মেইল: dailysobujbangladesh@gmail.com || ওয়েব : www.dailysobujbangladesh.com
Copyright © 2025 দৈনিক সবুজ বাংলাদেশ. All rights reserved.