তারিখ লোড হচ্ছে...

বনফুল-কিষোয়ান গ্রুপের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অবৈধ অর্থপাচারের অভিযোগ

স্টাফ রিপোর্টার।
বাণিজ্য রপ্তানিতে বিশেষ অবদানর জন্য বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ হতে বাণিজ্যিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (সিআইপি) নির্বাচিত করা হয় প্রতি বছর। ২০২৪ সালে আওয়ামীলীগের আস্থাভাজন হওয়ায় লবিংয়ের মাধ্যমে এ তালিকায় স্থান করে নেন বনফুল-কিষোয়ান গ্রুপ অব কোম্পানীর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. শহীদুল ইসলাম।

শহীদুল ইসলাম সিআইপি বনফুল-কিষোয়ান গ্রুপের চেয়ারম্যান আওয়ামীলীগের পাতানো নির্বাচনে চট্টগ্রাম-১৫ আসন থেকে নির্বাচিত হওয়া সাবেক সংসদ সদস্য এমএ মোতালেব এমপির জ্যেষ্ঠ ছেলে। দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে বনফুল-কিষোয়ান গ্রুপের এমডি ওয়াহিদুল ইসলাম ইসলামের।

প্রাইভেটাইজেশন অব স্টেট-এ ধারণা বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচার করা হয়েছে, এমন অভিযোগ রয়েছে আওয়ামী মদদ-পুষ্ট নেতা ও শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ ভাজন চট্টগ্রামের বনফুল ও কিষোয়ান গ্রুপের চেয়ারম্যান এম এ মোতালেবের বিরুদ্ধে। পতিত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে চট্টগ্রামভিত্তিক খাদ্য প্রস্তুতকারী বনফুল ও কিষোয়ান স্ন্যাকস লিঃ এর বিরুদ্ধে ছিলো কোটি-কোটি টাকা ভ্যাট ফাঁকির নজির। তথ্যসূত্র বলছে, ২০২২ সালে কুমিল্লায় কোটি টাকার অধিক ও ২০১৯ সালে সাভারে ৬৮ লাখ টাকা কর ফাঁকির অভিযোগ ছিলো।

সে সময় এসব অভিযোগের সত্যতা পেয়ে ততকালীন ভ্যাট গোয়েন্দা বিভাগ অভিযান চালিয়ে বনফুলের বিরুদ্ধে ভ্যাট ফাঁকির দায়ে পৃথক দুটি মামলাও দায়ের করে। অভিযোগ রয়েছে, ব্যবসায়ী থেকে রাজনীতিবিদ বনে যাওয়া এম এ মোতালেবের প্রতিষ্ঠানটির সারাদেশের শাখাগুলো জুড়ে নিম্ন মানের মিষ্টি বিক্রি, মানহীন-মেয়াদোত্তীর্ণ খাবার সরবরাহ সহ সরকারি ভ্যাট/ রাজস্ব ফাঁকির মতো নানান দুর্নীতির নজির ও রয়েছে। তবে এত সকল অভিযোগ থাকার পরেও আওয়ামী সরকারের ছায়াতলে থাকার কারনে সে সময় পেয়েছিলেন রাজকীয় সূযোগ সুবিধাদি। রপ্তানি বাণিজ্যের আড়ালে প্রতিষ্ঠান এর নাম ভাঙ্গিয়ে দেশের বাহিরে পাচার করেছেন বিপুল পরিমাণ অর্থ।

জানা যায়, এম এ মোতালেব কর্ম জীবনের শুরুতে শিক্ষকতায় নিয়োজিত ছিলেন। পরবর্তীতে ব্যবসা শুরু করেন নিজেই। ঢাকার বায়তুল মোকাররম গেটে দাঁড়িয়ে স্ন্যাকস বিক্রি করতেন। পরবর্তীতে ১৯৮৯ সালে মাত্র ২০ লাখ টাকা পুঁজি এবং ২০ জন কর্মচারীর নিয়ে বনফুল লিঃ গড়েন। সেসময় চট্টগ্রাম শহরে চারটি শোরুম চালু করেন পরবর্তীতে ২০১৩ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রাম ছাড়াও সিলেট ফেনী,ও খুলনায় ক্ষুদ্র পরিসরে ব্যবসা সম্পসারন করেন। ২০০৯ সালে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসার পর এম এ মোতালেব ব্যবসায়ী থেকে রাজনীতিবিদ হয়ে ওঠা শুরু করেন। অভিযোগ রয়েছে, সে সময় থেকে আওয়ামী সখ্যতা গড়ে তুলতে মরিয়া হয়ে ওঠেন মোতালেব।

একসময় আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারক পর্যায়ের সাথে আত্মিক সম্পর্ক গড়ে তোলার মাধ্যমে ব্যবসায়ী থেকে রাজনীতিবিদ বনে যান। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশীর্বাদ পুষ্ট হয়ে ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত দক্ষিণ চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রথমবার চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে যান এমএ মোতালেব।

একই সময়ে সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে ও দায়িত্ব পালন করেছিলেন দীর্ঘ সময়। পরবর্তীতে ২০২৪ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেলেও নামে স্বতন্ত্র আওয়ামী ড্যামি প্রার্থী হিসেবে চট্টগ্রাম-১৫ আসন থেকে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এমপি বনে যাওয়ার পরপরই এমপি কোটায় শুল্কমুক্ত সুবিধায় আমদানি করেন প্রায় ১০ কোটি টাকা মূল্যের বিলাসবহুল প্রাডো গাড়ি।

শুধু তা নয় ৪ আগস্ট দুপুরের কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার একটি মিছিল চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের সাতকানিয়া-কেরানীহাট গোলচত্বর এলাকায় পৌঁছালে ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা লাঠিসোঁটা ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে মিছিলে গুলিবর্ষণ সহ নির্বিচারে হামলা চালায়। সে সময় অন্তত অর্ধশতাধিক গাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর চালায় লীগ সমর্থক কর্মীরা। মুলত এসব হামলার পিছনের অর্থ যোগানদাতা হিসেবে মোতালেবের হাত রয়েছে বলে জানান স্থানীয় সাধারণ ছাত্র ও বৈষম্য বিরোধীরা। পরবর্তীতে সে হামলার ঘটনায় সরকার পতনের পর। বনফুল মোতালেবের বিরুদ্ধে লোহাগাড়া ও সাতকানিয়া থানায় মামলা দায়ের করেন ভুক্তভোগীরা।

টাকা মেরে হয়েছেন হাজী কাজী আবদুর রহিম মিজান

স্টাফ রিপোটারঃ

অল্প দিনেই সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন চট্টগ্রামের হাটহাজারীর কাজী আব্দুর রহিম মিজান। পাহাড়ি মাটি ও বনের গাছ কেটে কাজী কর্পোরেশন অ্যান্ড কাজী ম্যানুফ্যাকচার (কেবিএম) নামক অবৈধ ইটভাটার মালিক বনে গেছেন তিনি। বিভিন্ন জনকে মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে হাতিয়ে নিয়েছেন বিপুল অর্থ। গড়ে তুলেছেন চোখ ধাঁধানো আলিশান বাড়ি। কাজী আব্দুর রহিম মিজান উপজেলার চারিয়া কাজীপাড়ার মৃত কাজী আব্দুল হালিমের পুত্র। স্থানীয় সূত্রে জানাগেছে, মিজান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রদল নেতা হলেও চলাফেরা করেন বড় কোনো শিল্পপতির মতো। বাড়ির চতুর্পাশ সিসিটিভি ক্যামেরার নিয়ন্ত্রণে। ওঠাবসা ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের সঙ্গে। এলাকার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নিয়মিত দেন অনুদান। ছদকা হিসেবে রমজান মাসে ইফতার সামগ্রী বিলান।

মিজানের এতটাকার উৎস নিয়ে এলাকায় কৌতুহল ছিল আগে থেকেই। রহস্য উন্মোচন হয় গত ৫ই মার্চ রাতে চারিয়া-মির্জাপুর ইটভাটা মালিক সমিতির একাংশে সেক্রেটারি পদ বাগিয়ে নেয়ার পর। এরপর থেকেই একের পর এক বেরিয়ে আসছে স্বঘোষিত শিল্পপতি কাজী আব্দুর রহিম মিজান এর নানা অপকর্মের তথ্য। প্রতারণা করে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ এনে মো. আলী আকবর নামে এক ব্যক্তি বাদী হয়ে আদালতে মামলা করেন। তিনি বলেন, মিজানের কাছে ৬০ লাখ টাকা পাই। সে মিথ্যা কথা বলে আমার কাছ থেকে টাকা নিয়েছে। আমার কষ্টে উপার্জিত অর্থ আত্মসাৎ করার জন্য মিজান বিভিন্নভাবে আমাকে হুমকি দিচ্ছে। অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ এনে তার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছি। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে থানাকে তদন্ত প্রতিবেদন দেয়ার নির্দেশ দেন। আরেক ভুক্তভোগী মো. আবছার বলেন, মিজান আমার কাছ থেকে মিথ্যা বলে ১১ লাখ ২৫ হাজার নিয়েছেন। তার ছোট ভাইকে ব্যারিস্টারি পড়ার জন্য দেশের বাইরে পাঠাতে হবে। টাকার প্রয়োজন। চেক দিয়েছে। পরে দেখি ব্যাংকে টাকা নেই। আমি তার বিরুদ্ধে আদালতে এনআই- অ্যাক্ট ১৩৮ ধারায় মামলা করেছি। এদিকে মেঘনা ব্যাংক লিমিটেড হাটহাজারী আমান বাজার শাখার (এভিপি) ব্রাঞ্চ ম্যানেজার শাহরিয়ার কবির বলেন, কাজী কর্পোরেশন অ্যান্ড কাজী ম্যানুফ্যাকচার (কেবিএম) ইটভাটার মালিক কাজী আব্দুর রহিম মিজান এর বিরুদ্ধে মেঘনা ব্যাংক হাটহাজারী আমান বাজার শাখার অধীনে ঋণ খেলাপির মামলা রয়েছে। মামলাটি অর্থঋণ আদালতে বিচারাধীন। এসব বিষয়ে অভিযুক্ত কাজী আব্দুর রহিম মিজান বলেন, মেঘনা ব্যাংক থেকে ১ কোটি ২০ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছি। সময়মতো ঋণ পরিশোধ করতে না পারায় ব্যাংক আমার বিরুদ্ধে মামলা করেছে। টাকা দিয়ে দেয়ার চেষ্টা করতেছি। মানুষের টাকা আত্মসাৎ এর প্রশ্নে বলেন, আমি একজন ব্যবসায়ী। ব্যবসায়ীদের ধার-কর্জ থাকতেই পারে। এটা আদালতের বিচারধীন বিষয়।
হাটহাজারী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মুহাম্মদ রুহুল আমিন সবুজ বলেন, কাজী আব্দুর রহিম মিজানের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ এর বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে। কয়েকদিন আগেও অর্থ আত্মসাৎ এর অভিযোগে এনে মো. আলী আকবর নামের এক ব্যক্তি মামলা করেছে।  অপরাধ সংঘটনের বিষয়ে সত্যতা পাওয়ায় আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেছি।

 

language Change
সংবাদ শিরোনাম