তারিখ লোড হচ্ছে...

বহাল তবিয়তে আছেন আওয়ামী সুবিধাভোগী প্রকল্প পরিচালক মঞ্জুরুল হক!

স্টাফ রিপোর্টার:

“এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শিল্পসচিব মো. ওবায়দুর রহমান বলেন, এ মন্ত্রণালয়ে আমি নতুন। ৩৪টি বাফার গুদাম নির্মাণকাজে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ পাচ্ছি। বেশ কয়েকটি কাজ সম্ভবত দরপত্রের মাধ্যমে ওয়ার্ক অর্ডার দেওয়া হয়েছে। সেগুলো নিয়েও অভিযোগ আছে। অভিযোগের বিষয়গুলো তদন্তে প্রয়োজনে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) পাঠানো হবে। ব্যক্তির দায়সংক্রান্ত কোনো ধরনের অনিয়ম প্রতিষ্ঠান মেনে নেবে না।”

সুষ্ঠুভাবে সার সংরক্ষণ ও বিতরণ নিশ্চিত করতে দেশের বিভিন্ন স্থানে ৩৪টি বাফার গুদাম নির্মাণ নিয়ে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। আর এ কারণেই ব্যয় ও মেয়াদ দুটিই বেড়েছে। এতে ২১০০ কোটি টাকার প্রকল্প গিয়ে দাঁড়িয়েছে ২৫০০ কোটিতে। শুধু তাই নয়, গত ছয় বছরে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) এ প্রকল্পে খরচ হয়েছে ৩২৫ কোটি টাকা। কিন্তু কাজের অগ্রগতি এক শতাংশেরও কম-এমন মন্তব্য করেছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের অভিযোগ-নিয়মবহির্ভূতভাবে বিতর্কিত ও অদক্ষ ঠিকাদারকে কাজ দেওয়ার কারণেই মূলত একাধিকবার বাতিল করতে হয়েছে টেন্ডার। আর এসব নির্মাণকাজ দেওয়ার পেছনে মোটা অঙ্কের টাকার ‘কমিশন বাণিজ্য’ হয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ভূমি অধিগ্রহণ ও নির্মাণকাজে ১২টি প্যাকেজে ২৪ শ কোটি টাকার দরপত্র গ্রহণ করা হয়। বড় অঙ্কের টাকার কমিশন বাণিজ্য আদায় করতে ২০২৪ সালে আওয়ামী আমলে প্রকল্প পরিচালক হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হয় আওয়ামী সুবিধাভোগী প্রকৌশলী মনজুরুল হককে। তিনি একজন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। বাফার গুদাম নির্মাণ করার মতো তার কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই। তিনি বিসিআইসি ভবনে আওয়ামী লীগ সরকারের একজন ঘনিষ্ঠ কর্মকর্তা হিসেবে সবার কাছে পরিচিত। তার বাড়ি বরিশাল শহরে। মনজুরুল হক ৫ আগস্টের আগে নিজেকে শুধু ছাত্রলীগ করা নেতা হিসাবে পরিচিতই করেননি, হাসনাত আবদুল্লাহর আত্মীয়ও বলতেন। সাবেক মন্ত্রীর কমিশন বাণিজ্য নির্বিঘœ করতে ‘দলীয় কর্মকর্তা’ বিবেচনায় তাকে প্রকল্প পরিচালক করা হয়। এর আগে মনজুরুল হক ২০২২ সালে আশুগঞ্জ ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেডের জিএম থাকাবস্থায় যন্ত্রাংশ ক্রয়ের নামে ৪টি প্যাকেজে ২শ কোটি টাকা কাজের টেন্ডার করেন। অভিযোগ আছে, এ ৪টি প্যাকেজ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা ঘুস নিয়ে মেসার্স সাইফ পাওয়ার টেককে কাজ পাওয়ার ব্যবস্থা করেন। এরপর দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ প্রকাশ্যে এলে কার্যাদেশ বাতিল করা হয়। এ নিয়ে প্রকল্প পরিচালক মনজুরুল হকের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে অভিযোগ দেওয়া হয়। ভুয়া নথিপত্র তৈরি করে কাজ পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
আরএডিপি (রিভাইজড অ্যানুয়াল ডেভেলপমেন্ট প্ল্যান বা সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি) সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, পিডব্লিউডির রেট শিডিউল দিয়ে নির্মাণকাজের প্রাক্কলন করতে হবে। সেই শর্তে পিডব্লিউডি শিডিউল অনুযায়ী বাফার গুদাম নির্মাণে ২নং প্যাকেজে ৫নং লটে খুলনা সাইটের প্রাক্কলিত মূল্য ধরা হয় ৪৬ কোটি ২৪ লাখ টাকা। অভিযোগ আছে, প্রকল্প পরিচালক মো. মনজুরুল হক ব্যক্তিগত সুবিধা আদায় করে দরপত্র প্রাক্কলনের নথিপত্রে দেখানো হয় ৫৮ কোটি ২২ লাখ টাকা। এই টেন্ডারে ১২ কোটি টাকার বেশি দেখানো হয়েছে। কাজ বাস্তবায়নকারী ঠিকাদারের সঙ্গে ওই ১২ কোটি টাকা ভাগাভাগি করতে টেন্ডারের নথিপত্র জালিয়াতি করা হয়। এছাড়া ৩নং প্যাকেজের আওতায় সিরাজগঞ্জ, দিনাজপুর, লালমনিরহাট, জয়পুরহাটসহ ৪টি সাইট মিলে অফিশিয়াল এস্টিমেট ২৬৪ কোটি ৬৫ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়। মাজেদ সন্স কনস্ট্রাকশন লি. নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ২৬৬ কোটি ৬৭ লাখ টাকায় একমাত্র অংশগ্রহণকারী হিসাবে দরপত্র দাখিল করেন। এখানে অন্য কাউকে দরপত্রে অংশগ্রহণ করতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, ম্যানুয়েল পদ্ধতির দরপত্রে প্রথমবার সিঙ্গেল টেন্ডারে কার্যাদেশ দেওয়া পিপিআর পরিপন্থি। গত বছরের ৯ জুন বড় অঙ্কের টাকা কমিশনের বিনিময়ে মাজেদ সন্স কনস্ট্রাকশন লিমিটেডকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে।
সালাম কনস্ট্রাকশন লিমিটেডের মালিক সালামের বাড়ি গোপালগঞ্জ জেলায়। শেখ সেলিমের আত্মীয় পরিচয়ে বিগত সরকারের আমলে প্রভাব দেখিয়ে কোটি কোটি টাকার কাজ নিয়েছেন। আওয়ামী লীগ দলীয় প্রভাবে টেন্ডারবাজি করেছে মেসার্স এরোনাস ইন্টারন্যাশনাল লি. নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিকও। এ দুই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বেসামরিক বিমানবন্দর ঢাকা, সিলেট, কক্সবাজার নির্মাণকাজে শেখ হাসিনার সামরিক উপদেষ্টা তারিক সিদ্দিকীসহ ৮১২ কোটি টাকা দুর্নীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগে ৪টি মামলা দুদকে চলমান। প্রকল্প পরিচালক মো. মনজুরুল হক বিষয়টি জানার পরও ঘুসের বিনিময়ে ওই ২টি কোম্পানিকে মাগুরা-চাঁদপুর, যশোর-নড়াইল, ময়মনসিং-নেত্রকোনায় ৩টি লটে ৪শ কোটি টাকার গুদাম নির্মাণের কাজ দেওয়ার ব্যবস্থা করেন।
এছাড়াও ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার্স লি. (এনডিই) আওয়ামী আমলে হাজার হাজার কোটি টাকার কাজ করে। প্রথমে প্রকল্প পরিচালকের সঙ্গে সমঝোতা না হওয়ায় এনডিইকে ৪নং প্যাকেজের ১নং লটের আওতায় ভোলা-বরগুনা, ২নং লটের রাজশাহী-গাইবান্ধা, ৩নং লটের মেহেরপুরের দরপত্র বাতিল করা হয়। পরে প্রকল্প পরিচালকের সঙ্গে কমিশনের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর এনডিইকে মানিকগঞ্জ-মুন্সীগঞ্জে ১২৮ কোটি টাকার কাজ দেওয়া হয়।
একইভাবে প্রকল্প পরিচালক মো. মনজুরুল হকের সঙ্গে দরকষাকষি না হওয়ায় মীর আক্তার হোসেন লিমিটেডের দাখিলকৃত দরপত্র মাগুরা-চাঁদপুর, যশোর-নড়াইল, মানিকগঞ্জ-মুন্সীগঞ্জের দরপত্রে ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্স অর্গানাইজেশন (আইএসও) সার্টিফিকেট ৯০০১ না থাকায় দরপত্র ৩টি বাতিল করেন। পরে প্রকল্প পরিচালকের সঙ্গে গোপন সমঝোতায় রংপুর ও বগুড়া প্যাকেজে ১২১ কোটি কোটি টাকার কাজ দেওয়ার ব্যবস্থা করেন প্রকল্প পরিচালক।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, ৩৪টি বাফার গুদাম নির্মাণকাজ তদারকির জন্য সরকারি প্রতিষ্ঠান বুয়েট ও আইআইএফসিকে সিঙ্গেল সোর্সে ১০ কোটি টাকা ফি দিয়ে পরামর্শক নিয়োগের কথা ছিল। গত ৪ মার্চ বুয়েটকে বাদ দিয়ে প্রাইভেট কনসালটেন্ট নিয়োগের দরপত্র আহ্বান করে। এতে মডার্ন ইঞ্জিনিয়ার্স প্ল্যানার্স অ্যান্ড কনসালটেন্ট লি. ৪ কোটি ২৮ লাখ, ডেভেলপমেন্ট ডিজাইন কনসালটেন্ট (ডিডিসি) ৯ কোটি ৭২ লাখ, দ্য প্ল্যানার্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিায়ার্স লি. ৯ কোটি ৯১ লাখ এবং ইনোভেট ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ১১ কোটি ৬২ লাখ টাকার প্রস্তাব দাখিল করে। এখানেও মোটা অঙ্কের টাকা ঘুসের বিনিময়ে ইনোভেট ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টকে ১১ কোটি ৬২ লাখ টাকায় কাজটি পাইয়ে দেওয়ার চূড়ান্ত ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। পদে পদে প্রকল্প পরিচালকের বিরুদ্ধে দরপত্র মূল্যায়নে বিস্তর অভিযোগ থাকার পরও তাকে অপসারণে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি শিল্প মন্ত্রণালয়।
এ ছাড়াও সমস্ত টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পরও বাফার ৩৪ গুদাম নির্মাণ প্রকল্পের ৫ নং প্যাকেজে ৪ নং লটে যশোর ও নড়াইল জেলায় ১ শত ১৭ কোটি ৬৩ লাখ ৪০ হাজার ৬৬৭ টাকার কাজটি প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মঞ্জুরুল হক তার পছন্দনীয় ঠিকাদারকে দিতে না পারায় সেটি তার আলমারীতে তালাবদ্ধ করে রেখেছেন। এটি সরকারী উন্নয়ন কাজ বাধাগ্রস্থ করার সামিল অপরাধ। এ জন্য তিনি বিভাগীয় শাস্তি পাওয়ার অধিকারী।
উল্লিখিত অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক মনজুরুল হক বলেন, সার সংরক্ষণ ও বিতরণ সুবিধার্থে দেশের বিভিন্ন জেলায় ৩৪টি বাফার গুদাম নির্মাণে প্রকল্প নেওয়া হয়। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে-দেশে সারের মজুত সুনিশ্চিত করে কৃষি মন্ত্রণালয়কে সহায়তার মাধ্যমে খাদ্য উৎপাদনে দেশের স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন। তিনি বলেন, জমি অধিগ্রহণে সময় ব্যয় হওয়ায় প্রকল্পের কাজ বিলম্বিত হচ্ছে। এর মধ্যে কয়েকটি গুদাম নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। কয়েকটি নির্মাণে ঠিকাদার চূড়ান্ত করা হয়েছে। কিছু অভিযোগের কারণে কয়েকটির পুনঃদরপত্র আহ্বান করার নির্দেশনা এসেছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আসলে কাজ করতে গেলে কিছু অভিযোগ থাকে। অভিযোগ উত্থাপিত হলে যথাযথ কর্তৃপক্ষ বিষয়টি তদন্ত করে দেখবে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সদ্য যোগদানকৃত শিল্পসচিব মো. ওবায়দুর রহমান বলেন, এ মন্ত্রণালয়ে আমি নতুন। ৩৪টি বাফার গুদাম নির্মাণকাজে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ পাচ্ছি। বেশ কয়েকটি কাজ সম্ভবত দরপত্রের মাধ্যমে ওয়ার্ক অর্ডার দেওয়া হয়েছে। সেগুলো নিয়েও অভিযোগ আছে। অভিযোগের বিষয়গুলো তদন্তে প্রয়োজনে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) পাঠানো হবে। ব্যক্তির দায়সংক্রান্ত কোনো ধরনের অনিয়ম প্রতিষ্ঠান মেনে নেবে না।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)-এর নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এসব বড় প্রকল্পে ত্রিপক্ষয়ী আঁতাত থাকে। এগুলো হলো-মন্ত্রী, রাজনৈতিক সুবিধাভোগী ও আমলা। দীর্ঘদিন নিজেদের গোষ্ঠীর বিভিন্ন ফার্মের নামে নিয়মবহির্ভূতভাবে এভাবেই ব্যয়বহুল কাজ নেওয়া হয়েছে। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের তির, তারা যেন মনে না করেন এখানে কোনো দলীয় সরকার আছে। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার বিগত সরকারের আমলের বিতর্কিত বিষয়গুলো তদন্ত করছে। আশা করছি, এ ব্যাপারটিও প্রভাবমুক্ত তদন্ত করবে। তার আরও অভিমত, ২০১৮ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে যে প্রকল্প সমাপ্ত হওয়ার কথা, সেটি যদি ২০২৫ সালে এসে ১ ভাগও সম্পন্ন না হয়, তাহলে দায়িত্বশীলদের ভূমিকা কী, তা নিয়ে অবশ্যই তদন্ত করা প্রয়োজন। ৬ বছর ধরে জনগুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের খরচের বিপরীতে কী কাজ হয়েছে, তাও সুচারূপে খোঁজখবর নেওয়া উচিত। প্রকল্পের ব্যয় ও সময় কেন বাড়ল, সেটাও দেখা উচিত।
আরও জানা যায়, জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার বিপ্লবের পর থেকেই মন্ত্রী পলাতক। বিদায় করা হয়েছে সচিবকেও। তবে ওই চক্রের অনেক সদস্য এখনো কর্মরত। বিশেষ করে বহাল তবিয়তে আছেন প্রকল্প পরিচালক মনজুরুল হক, যিনি ওই সিন্ডিকেটর একজন সক্রিয় সদস্য ছিলেন বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের।
অনুসন্ধানে জানা যায়, নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠলেও দুই প্রকল্প পরিচালককে সরিয়ে দেওয়া ছাড়া বাস্তবে তেমন কোনো পদক্ষেপ দৃশ্যমান হয়নি। বিধিবিধান লঙ্ঘন করে সাবেক শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন ও সচিব জাকিয়া সুলতানার নির্দেশে কয়েকটি গুদাম নির্মাণের কাজ পায় আওয়ামী লীগের দোসর হিসাবে পরিচিত বিতর্কিত ঠিকাদার। তাদের কাজ দিতে পদে পদে দরপত্রের শর্ত লঙ্ঘন করা হয়েছে। এমনকি প্রকল্পটির বর্তমান পরিচালক মনজুরুল হক সাবেক সচিবের দেখানো পথেই হাঁটছেন। যে কারণে কাজের দরপত্র এখনো শেষ করতে পারছেন না।
প্রসঙ্গত, শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতায় বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি) ২০১৮ সালের আগস্টে ৩৪ গুদাম নির্মাণের প্রক্রিয়া শুরু হয়। ৮ লাখ মেট্রিক টন সার সংরক্ষণ করতে প্রকল্পটি গৃহীত হয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বছরে ৬শ কোটি টাকা বিদেশি মুদ্রা সাশ্রয় হবে। প্রাথমিক পর্যায়ে ২১৭০ কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করে বাস্তবায়নকাল ধরা হয় ২০১৮ সালের আগস্ট থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত ৩ বছর।
অনুসন্ধানে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে আরও জানা যায়, অধিগ্রহণ, ঠিকাদার নিয়োগ ও নির্মাণকাজের ক্ষেত্রে কমিশন বাণিজ্যের কারণেই প্রকল্পের অগ্রগতি মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে। ফলে প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ২৫শ কোটি টাকা। বিগত ৬ বছরে প্রকল্পের কাজে এখন পর্যন্ত খরচ দেখানো হয়েছে প্রায় ৩২৫ কোটি টাকা। যার মধ্যে ভূমি অধিগ্রহণ ব্যয় ৩০৫ কোটি টাকা, গাড়ি কেনা, কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন, ভ্রমণ ভাতা ব্যয় দেখানো হয় প্রায় ২০ কোটি টাকা। এমন অবস্থায় প্রকল্পের অর্থনৈতিক অগ্রগতি ১৩ ভাগ হলেও ভৌত অগ্রগতি ১ ভাগেরও নিচে।
বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি)-এর সাবেক সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন বলেন, ‘স্থান নির্ধারণ না করে বাফার গুদাম নির্মাণের প্রকল্প নেওয়ায় জটিলতা দেখা দিয়েছে। দরপত্র প্রক্রিয়ায় যদি অভিযোগ থাকে, তাহলে পুনঃদরপত্রের জন্য ৬ মাস চলে যায়। পুনঃদরপত্র আহ্বান কেন করতে হচ্ছে, এ বিষয়গুলো তদন্ত করা প্রয়োজন। এখন তো কোনো দলীয় সরকার নেই, তাই উচিত হবে ভেতর থেকে খন্ডখন্ড অভিযোগুলো জবাবদিহির আওতায় এনে কৃষকবান্ধব প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা। তিনি আরও বলেন, এটি একটি অপরিকল্পিত প্রকল্প। ওয়ার্কপ্ল্যানটিই সঠিকভাবে হয়নি।
উন্নয়ন বিশেষজ্ঞদের অভিমত: আওয়ামী সুবিধাভোগী এবং মহা দুর্নীতিবাজ প্রকল্প পরিচালক মো: মঞ্জুরুল হককে এই প্রকপের পিডি রেখে স্বচ্চতার সাথে প্রকল্পের কাজ শেষ করা সম্ভব হবে না। তাই তাকে সরিয়ে যোগ্য কোন প্রকৌশলীকে পিডি পদে দায়িত্ব প্রদান করা অতীব জরুরী।

মাদক ব্যবসার টাকায় ৯ বাড়ি

সবুজ বাংলাদেশ ডেস্ক॥
ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে বাড়ি করেছেন চারটি। এর মধ্যে দুটি বাড়ি নয়তলা, একটি দশতলা। মাদক ব্যবসা করে গত এক দশকে কুতুবের মতোই ‘বড় ব্যবসায়ী’ হিসেবে পরিচিতি রয়েছে নুরুল ইসলামের। ২০০১ সালে টেকনাফ বন্দরে চুক্তিভিত্তিক দৈনিক মাত্র ১৩০ টাকা বেতনে কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে কাজ শুরু করেছিলেন তিনি। চাকরি ছাড়েন ২০০৯ সালে। এর পরের ১৪ বছরে ঢাকার মোহাম্মদপুর ও আদাবরে তাঁর পাঁচটি বাড়ি হয়েছে।

পুলিশ বলছে, নুরুলও বড় মাদক ব্যবসায়ী। সামান্য বেতনে টেকনাফে চাকরি শুরু করার সময়ই জড়িয়ে পড়েন ইয়াবার কারবারে। মূলত ইয়াবা ব্যবসার টাকা বৈধ করতেই আমদানি–রপ্তানি ব্যবসার কাগুজে প্রতিষ্ঠান খোলেন। নুরুল ও তাঁর স্ত্রীর নামে মোট ১১টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থাকার তথ্য পেয়েছে পুলিশ। ওই সব হিসাবে গত এক যুগে ১৩ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে।
কুতুব ও নুরুলের বিষয়টি সামনে এসেছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) এবং র‌্যাবের পৃথক দুটি চিঠির ভিত্তিতে সিআইডির (পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ) অনুসন্ধান ঘিরে। কুতুবের বিষয়ে সিআইডির কাছে ২০১৯ সালে চিঠি পাঠায় বিএফআইইউ। আর নুরুলের বিষয়ে সিআইডিকে ২০২১ সালে চিঠি লেখে র‌্যাব। ওই দুই চিঠির ভিত্তিতে দীর্ঘ অনুসন্ধানের পর সিআইডি গত সপ্তাহে  বলেছে, কুতুব ও নুরুল মাদক ব্যবসা করেই বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন। এর মধ্যে কুতুবের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে মামলায় অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে ১১ জানুয়ারি। আর নুরুলের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শেষে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে শিগগরিই মামলা করা হবে। ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদে বসুন্ধরা রিভারভিউ আবাসিক এলাকার এ ব্লকের ৮ নম্বর রোডে কুতুব উদ্দিনের ৯ তলা বাড়ি।
রাজধানীর কাপ্তান বাজারে ‘মেসার্স রনি এন্টারপ্রাইজ’ নামে একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে কুতুবের (তাঁর ডাকনাম রনি)। ওই ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের নামে খোলা ব্যাংক হিসাবে কোটি কোটি টাকার লেনদেনের বিষয়টি নজরে আসার পর বিএফআইইউ ২০১৯ সালে বিষয়টি অনুসন্ধানের জন্য সিআইডিকে চিঠি দেয়। দীর্ঘ অনুসন্ধান শেষে সিইআইডি জানতে পারে কুতুবের দুটি বাড়ি রয়েছে কেরানীগঞ্জে। এ ছাড়া একটি ব্যাংকে কুতুবের হিসাব নম্বরে (অ্যাকাউন্ট) সাত বছরে ৩১ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। এর পর ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ঢাকার বংশাল থানায় তাঁর বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে মামলা করে সিআইডি। তদন্ত শেষে কুতুব ও তাঁর সহকারী মো. শাকিলকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছে (১১ জানুয়ারি) সিআইডি। সিঅঅইডি বলছে, রাজধানীর তিনটি থানায় কুতুবের বিরুদ্ধে মাদকের মামলা রয়েছে তিনটি। দেড় বছ আগে একটি মামলায় গ্রেপ্তারের পর থেকে কারাগারে রয়েছেন কুতুব উদ্দিন। আর তাঁর সহযোগী শাকিল এখনো পলাতক। ঢাকায় সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম বিভাগের পরিদর্শক মনিরুজ্জামান বলেন, মাদকের টাকায় কুতুব উদ্দিন বাড়িসহ প্রচুর সম্পদের মালিক হয়েছেন। তদন্তের সময় তাঁকে একাধিকবার সম্পদের বিপরীতে বৈধ কাগজপত্র দেখাতে বলা হয়েছে। কিন্তু তিনি বৈধ কাগজ দেখাতে পারেননি।
অন্যদিকে মাদক, জাল টাকাসহ ঢাকার আদাবর এলাকা থেকে ২০২১ সালের ২০ সেপ্টেম্বর নুরুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব। পরে র‍্যাব তাঁর বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে অনুসন্ধানের জন্য সিআইডিকে চিঠি দেয়। দীর্ঘ ১৫ মাস অনুসন্ধান করে সিআইডি ঢাকার মোহাম্মদপুর ও আদাবর এলাকায় তাঁর পাঁচটি বাড়িসহ ১৩ কোটি টাকার সম্পদের তথ্য পেয়েছে। মাদক মামলায় জামিনে মুক্ত হওয়ার পর তিনি আর প্রকাশ্যে আসছেন না।

সিআইডির ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘কাগজে-কলমে নুরুল ইসলামের যে সম্পদের তথ্য আমরা পেয়েছি, বাস্তবে তাঁর সম্পদ প্রায় তিন গুণ বেশি হবে।’

মাদকের টাকায় আবাসন ব্যবসা কুতুব উদ্দিনের বাড়ি চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার দক্ষিণ ছদাহা এলাকায়। তাঁর বাবা একসময় গ্রামে কৃষিকাজ করতেন।

সিআইডির তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কুতুব মাদক ব্যবসা আড়াল করতে ঢাকার কাপ্তান বাজারে প্রথমে ‘মেসার্স রনি এন্টারপ্রাইজ’ নামের একটি কাগুজে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খোলেন। এই ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ‘আয়’ জমা করতেন ঢাকার নবাবপুরে একটি বেসরকারি ব্যাংকের খোলা নিজের অ্যাকাউন্টে। পরে মাদকের টাকায় দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদে জমি কিনে ভবন তৈরি করে ফ্ল্যাট বিক্রির ব্যবসায় নামেন। হাসনাবাদে বসুন্ধরা রিভারভিউ এলাকার এ ব্লকের ৮ নম্বর রোডে ৪৮৭ নম্বর প্লটে একটি ৯তলা এবং ৯ নম্বর রোডের ৬৪৮ নম্বর প্লটে ১০ তলা বাড়ি করেছেন তিনি। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানের নামে খোলা ব্যাংক হিসেবে ৩৩ কোটি ৯১ লাখ ২৯৮ টাকা লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে।

তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কুতুব উদ্দিন ২০১০ সালে টেকনাফ থেকে ইয়াবা এনে ঢাকায় বিক্রি শুরু করেন। তাঁর বিরুদ্ধে ঢাকার শ্যামপুর, খিলগাঁও ও বিমানবন্দর থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে তিনটি মামলা রয়েছে। ২০১৩ সাল থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে এসব মামলা হয়েছে। এর দুটি মামলা করেছে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। অন্য মামলাটি করেছে র‍্যাব।

গতকাল শুক্রবার সরেজমিনে হাসনাবাদ এলাকায় গিয়ে ওই দুই বাড়ি ছাড়াও কুতুবের আরও দুটি বাড়ি থাকার তথ্য জানা গেছে। বসুন্ধরা রিভারভিউয়ের এ ব্লকের ৪ নম্বর রোডে তাঁর আরেকটি ৯তলা বাড়ি রয়েছে। ওই বাড়ির নিরাপত্তাকর্মী আমীর হোসেন বলেন, ‘বাড়ির অনেকগুলো ফ্ল্যাট অবিক্রীত রয়েছে। রনি স্যার গ্রেপ্তার হওয়ার পর আর কোনো ফ্ল্যাট বিক্রি হয়নি।

ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদের বসুন্ধরা রিভারভিউ আবাসিক এলাকায় ব্লক-এ–এর ৪ নম্বর রোডে কুতুব উদ্দিনের আরেকটি বাড়ি ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদের বসুন্ধরা রিভারভিউ আবাসিক এলাকায় ব্লক-এ–এর ৪ নম্বর রোডে কুতুব উদ্দিনের আরেকটি বাড়ি কুতুবের আরেকটি বাড়ি রয়েছে হাসনাবাদের খামারবাড়ি রোডে। সেখানে ৭০৩ নম্বর প্লটে নির্মাণাধীন চারতলা বাড়িটি তাঁর। ওই বাড়ির গেটে গতকাল দুপুরে তালা ঝোলানো ছিল। পাশের বাড়ির নিরাপত্তাকর্মী দুলাল মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, বছরখানেক ধরে বাড়িটির নির্মাণকাজ বন্ধ রয়েছে। বাড়িটি রনি (কুতুব উদ্দন) চেয়ারম্যানের।

২০১৬ সালে সাতকানিয়ার ছদাহা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও বিপুল ভোটে হেরে যান কুতুব। তবে লোকজনের কাছে তিনি ‘রনি চেয়ারম্যান’ হিসেবে পরিচিতি পান।
সাতকানিয়া প্রতিনিধি জানান, কুতুব উদ্দিন সাতকানিয়ার একটি আলিয়া মাদ্রাসায় পড়ালেখা করেন। পরে তিনি চট্টগ্রামে নগরে ও ঢাকায় থাকতেন। স্থানীয় লোকজন বলছেন, ব্যবসার কাজে মাঝেমধ্যে তিনি মালয়েশিয়া আসা-যাওয়া করতেন এমনটা জানতেন। ঢাকার নবাবপুরে কুতুবের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান আছে বলেও এলাকার প্রচার রয়েছে। তবে এলাকার লোকজন এখন জানেন, কুতুব মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। আর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে কুতুব হেরে গেলেও প্রায় ৪৫ লাখ টাকা খরচ করেছিলেন—এমন প্রচার আছে এলাকায়।

বসুন্ধরা রিভারভিউ এলাকার এ ব্লকের ৮ নম্বর রোডে ৪৮৭ প্লটের ৯তলায় থাকে কুতুব উদ্দিনের পরিবার। ওই বাড়ির নিরাপত্তাকর্মী মো. শহীদ গতকাল বলেন, বাড়ির একটি ফ্ল্যাট ছাড়া বাড়িগুলো বিক্রি হয়ে গেছে। শহীদের মাধ্যমে কুতুব উদ্দিনের পরিবারের সঙ্গে কথা বলতে চান এই প্রতিবেদক। তবে তাঁরা কেউ কথা বলতে রাজি হননি।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার কাপ্তান বাজারের গিয়ে মেসার্স রনি এন্টারপ্রাইজ নামের কোনো ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। সেখানকার কয়েকজন ব্যবসায়ীরা বলেন, ওই নামে কাপ্তান বাজারে কোনো দোকান কখনোই ছিল না। তবে এ নামের একটি দোকান আগে পুরান ঢাকার নবাবপুর এমএস ইলেকট্রনিকস বিপণিবিতানের তৃতীয় তলায় ছিল।

নবাবপুর এমএস ইলেকট্রনিকস বিপণিবিতানের দোকান মালিক সমিতির সভাপতি কামাল হোসেন বলেন, তিন থেকে চার বছর আগে ওই দোকানটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। ওই দোকানে কী কেনাবেচা হতো সেটা বলতে পারেননি তিনি।

ঢাকায় নুরুলের পাঁচ বাড়ি
নুরুল ইসলামের বাড়ি ভোলা জেলার সদর উপজেলার পশ্চিম কানাইনগর এলাকায়। অভাবের কারণে পড়াশোনা করতে পারেননি। ২০০৯ সালে তিনি টেকনাফ স্থলবন্দরে দৈনিক ভিত্তিতে (মাস্টাররোলে) চাকরি শুরু করেন। সিআইডি সূত্র জানায়, চাকরির পাশাপাশি তিনি ইয়াবা কারবারে জড়ান। ইয়াবা ব্যবসার টাকা বৈধ করতে তিনটি কাগজে প্রতিষ্ঠান খোলেন। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো মেসার্স আল নাহিন এন্টারপ্রাইজ, মিফতাহুল এন্টারপ্রাইজ ও আলফা এন্টারপ্রাইজ। আমদানি–রপ্তানির ব্যবসার নামে তাঁরা এসব প্রতিষ্ঠান খুলে মাদকের টাকা বৈধ করার চেষ্টা করেছেন।

সিআইডির কর্মকর্তারা বলেন, নুরুল ইসলাম, তাঁর স্ত্রী ও প্রতিষ্ঠানের নামে ঢাকার মোহাম্মদপুর, শ্যামলী ও টেকনাফে বিভিন্ন ব্যাংকের ১১টি অ্যাকাউন্টের সন্ধান পাওয়া গেছে। মেসার্স আল নাহিন এন্টারপ্রাইজের নামে বেসরকারি একটি ব্যাংকের শ্যামলী শাখায় ২০১৭ সালে একটি হিসাব খোলা হয়। সেই হিসাবে ২০২১ সালের ৪ জানুয়ারি পর্যন্ত জমা হয়েছে ৭ কোটি ৮০ লাখ টাকা। তুলে নেওয়া হয়েছে ৭ কোটি ৭৮ লাখ ৮৫ টাকা। বর্তমানে ওই ব্যাংক হিসেবে ১ কোটি ৫ লাখ ১৫ টাকা স্থিতি রয়েছে।

সিআইডির তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেনর মাদক ব্যবসার টাকায় গত ১০ বছরে ঢাকার মোহাম্মদপুর ও আদাবর এলাকায় জায়গা কিনে পাঁচটি বাড়ি করেছেন নুরুল ও রাজিয়া দম্পতি। মোহাম্মদপুরের ঢাকা উদ্যানের ৪ নম্বর রোডের ডি ব্লকে দুটি বাড়ি রয়েছে তাঁদের (বাড়ির নম্বর ৩৫ ও ৬৬)। একই এলাকার চন্দ্রিমা মডেল টাউনের ৭ নম্বর রোডের বি ব্লকের ১০ নম্বর বাড়িটিও তাঁদের। আদাবর নবীনগর হাউজিং এলাকার ৮ নম্বর রোডের ৬৮/৭০ নম্বর আধা পাকা আরেকটি বাড়ি রয়েছে নুরুলের। এ ছাড়া মোহাম্মদপুরের নবোদয় হাউজিং সোসাইটির ৩ নম্বর রোডের ৮ নম্বর বাড়িটিও তাঁর। সাততলা এই বাড়িতে পরিবার নিয়ে বসবাস করেন নুরুল। রাজধানী ঢাকার মোহাম্মদপুরের নবোদয় হাউজিং সোসাইটিতে নুরুল ইসলামের বাড়ি। এই বাড়িতে পরিবার নিয়ে বসবাস করেন তিনি।

সিআইডি বলছে, নুরুলের স্ত্রী রাজিয়ার নামে মোহাম্মদপুরের রামচন্দ্রপুর মৌজায় ৩ ও ৭ দশমিক ৪৭ কাঠার দুটি প্লট, সাভারের আমিনবাজার এলাকায় ৫৩ শতাংশ জমি রয়েছে। এ ছাড়া রাজিয়ার নামে টেকনাফে প্রায় ২৩ শতাংশ জমি রয়েছে।

সিআইডির অনুসন্ধানে উঠে আসা সম্পদের বিষয়ে বক্তব্য জানতে গতকাল কয়েক দফা মুঠোফোনে নুরুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছে প্রতিবেদক। তবে তাঁর মুঠোফোন নম্বর বন্ধ পাওয়া গেছে। এর আগে গত বৃহস্পতিবার নুরুলের স্ত্রী রাজিয়া সুলতানার সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলে । তিনি বলেন, ‘আমরা ব্যবসা করে এসব সম্পদ করেছি। আমরা ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত নই। নিয়মিত আয়কর দিচ্ছি আমরা।’

স্বামীর বিরুদ্ধে র‌্যাবের করা মাদক ও জাল টাকার মামলার বিষয়ে রাজিয়া দাবি করেন, ‘সেটা সাজানো।

তবে নুরুলের বিষয়ে দীর্ঘ অনুসন্ধানের পর সিআইডি বলছে, মূলত অবৈধ সম্পদকে বৈধ হিসেবে দেখানোর জন্য ২০০৯ সালে চাকরি ছেড়ে দেন তিনি। সিআইডির পরিদর্শক মো. মনিরুজ্জামান  বলেন, ‘নুরুল ইসলাম ও তাঁর স্ত্রী অর্জিত সম্পদের কোনো বৈধ কাগজপত্র দিতে পারেননি। অনুসন্ধানে আমরা নিশ্চিত হয়েছি, মাদকের কারবার করে তাঁরা এসব সম্পদের মালিক হয়েছেন।

 

সূত্রঃ প্রথম আলো

 

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম