রাজউকের জোন ৫ এলাকায় অনিয়ম: অনুমোদনহীন ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের ছড়াছড়ি

স্টাফ রিপোর্টার॥

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) জোন ৫-এর আওতাধীন এলাকায় রাজউকের বিল্ডিং কোড না মেনে যত্রতত্র উঁচু-নিচু বহুতল ভবন গড়ে উঠছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু এসব অনিয়মের বিষয়ে রাজউকের কর্মকর্তারা নীরব ভূমিকা পালন করছেন বলে জানা গেছে। জোন ৫/১, ৫/২ এবং ৫/৩-এর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, নকশাবহির্ভূতভাবে ব্যাঙের ছাতার মতো আনাচে-কানাচেতে ভবন নির্মাণ হচ্ছে, যেখানে রাজউকের বিল্ডিং কোড মানা হচ্ছে না।

অভিযোগ রয়েছে, এসব অনিয়ম দেখেও রাজউক কর্তৃপক্ষ চুপ থাকছে। অভিযোগ দায়ের করলেও লোকদেখানো নোটিশ পাঠানো হয় ভবন মালিকদের কাছে, কিন্তু কিছুদিন না যেতেই মোটা অঙ্কের ঘুষ বাণিজ্যের মাধ্যমে অভিযোগটি ধামাচাপা পড়ে যায় এবং যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয় না।

ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে রাজউকের নকশার ওপর ভিত্তি করে কাজ শুরু করার কথা থাকলেও, অধিকাংশ জমির মালিকই ছাড়পত্র পেলেই নিয়মানুযায়ী রাজউককে লিখিতভাবে অবহিত না করেই নির্মাণ কাজ শুরু করে দেন। রাজউকের নীতিতে বলা আছে, কোনো ব্যক্তি মালিকানাধীন বা রিয়েল এস্টেট কোম্পানির মোট জমির ওপর “ফার (ফ্লোর এরিয়া রেশিও)” অনুযায়ী জায়গা ছেড়ে ভবন নির্মাণ করতে হবে, কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা সঠিকভাবে মানা হচ্ছে না।

জানা গেছে, কোনো ভবন নির্মাণে কমপক্ষে ৮ ফিটের রাস্তা থাকতে হবে। কিন্তু রাজউকের জোন ৫ এর আওতাধীন এলাকায় এমন অনেক উঁচু ভবন গড়ে উঠেছে যেখানে ৬ ফিট রাস্তাও সঠিকভাবে নেই। এর ফলে ভবিষ্যতে প্রাণহানির মতো ভয়াবহতা ও ঝুঁকি থেকে যায়। এমনকি এ ধরনের জমির মালিকরা বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড (বিএনবিসি) মানছেন না। ইমারত নির্মাণ সম্পর্কিত গেজেটে নিয়ম-নীতি থাকলেও জমির মালিকরা তা তোয়াক্কা করছেন না। এসব ভবন নির্মাণের সময় অথবা নির্মাণের পরেও রাজউক কর্তৃপক্ষের কেউ পরিদর্শন করেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। মাঝে মাঝে রাজউকের ইন্সপেক্টররা পরিদর্শনে এলেও এবং ভবনের মালিকদের ভুল ধরতে পারলেও তা আবার টাকার বিনিময়ে ধামাচাপা দিয়ে বিচারহীন থাকেন বলে একটি অভিযোগের তথ্যে উঠে এসেছে।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ৭৬ কাজী আলাউদ্দিন রোড, নাজিরা বাজার-এ একটি ঝুঁকিপূর্ণ ভবন নির্মিত হচ্ছে। এই ভবনের একপাশে কার পার্কিং এবং অন্যপাশে গ্রাউন্ডফ্লোরে সাইকেল তৈরির বিভিন্ন সরঞ্জাম রয়েছে, যা কোনো প্রকার অগ্নিকাণ্ডের মতো দুর্ঘটনা ঘটলে জনজীবনে ব্যাপক ক্ষতির সম্ভাবনা তৈরি করবে। কয়েক কদম সামনে এগোলেই আরও একটি ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের দেখা মেলে – ২৯/৩০ কাজী আলাউদ্দিন রোড, নাজিরা বাজার। এই ভবনটিতে আবাসিক ব্যবহারের অনুমোদন নিলেও ভবন মালিক এটিকে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার ও ভাড়া দিয়েছেন। রাজউক থেকে এই ভবনটিতে ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে চূড়ান্ত নোটিশ দেওয়া হয়, কিন্তু তারপর আর কোনো প্রকার যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ২০ নং চানখার পুল লেন, বংশাল-এ একটি ভবন নির্মাণের জন্য কোনো প্রকার অনুমোদন বা ছাড়পত্র নেওয়া হয়নি। এছাড়াও ৯৩ আবুল হাসনাত রোড, বংশাল, ১৭০ কবরস্থান রোড, বংশাল সহ অসংখ্য এমন ভবন রয়েছে। শানাজ আব্দুল গং, ৪৮/বি পশ্চিম রায়ের বাজার, ৫২/৩ ইন্দিরা রোড, পশ্চিম রাজাবাজার, তেজগাঁও, ২৯ খাজে দেওয়ান ২ নং লালবাগ লেন, ৩ নং খাজা দেওয়ান রোড, লালবাগ, মস রিয়েল এস্টেট লিমিটেড, ১০৭/২ হাজারিবাগ আজিমপুর, ২৩৬/২ লালবাগ রোড, ১৩ এলিফ্যান্ট রোড, নিউ মার্কেট-এর মিসেস নাজমা গং-এর সাথে কথা বলে জানা যায় যে, অনুমোদন নেওয়ার পরে রাজউকের কোনো প্রকার ভূমিকা থাকে না এবং ইমারত পরিদর্শক পরিদর্শনেরও প্রয়োজন পড়ে না। কিসের উপরে ভিত্তি করে ভবন মালিক এই সব কথা বলেন তা আমাদের বোধগম্য নয়। এছাড়া ২৩/জে/২ ফ্রি স্কুল স্ট্রিট, কাঠালবাগান, কলাবাগান-এও অনিয়ম দেখা গেছে।

এলাকার অনেকেই বলেন, “আমরা দেখেছি, কোনো এলাকায় যদি ভবনে আগুন লাগে বা দুর্ঘটনা ঘটে, তাহলে রাস্তার স্বল্পতার কারণে ফায়ার সার্ভিস ও অ্যাম্বুলেন্স সেই ভবনটির কাছে যেতে পারে না। যার কারণে ক্ষতির পরিমাণও বেশি হয়। এমনকি যদি ভবিষ্যতে কখনো ভূমিকম্প হয়, তাহলে এই বহুতল ভবন (৮/১০তলা) গুলোর অবস্থা কী হবে তা কি কেউ একবার চিন্তা করে দেখেছেন?” সমাজের সচেতন ব্যক্তিরা বলেন, “যাদের চক্রান্তে আজ দেশে এ ধরনের অবৈধ ও বহুতল ভবন নির্মাণ হচ্ছে, সেই অসাধু ব্যক্তিদের আইন মানতেই হবে। অন্যথায় তাদের জন্য প্রকাশ্য শাস্তিমূলক ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে।”

আবার এমন ঢাকা শহরে, যেসব স্থানে ৭/৮ তলার বেশি অনুমোদন হয় না, সেসব স্থানে অসাধু ভবন মালিকরা ৫ তলার পরিবর্তে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে ১০/১২ তলা ভবন নির্মাণ করছেন। এমনকি ৪ ফিটের রাস্তা আছে এমন স্থানেও বহুতল ভবন তৈরির গোপন রহস্য কী? ছাড়পত্র সেকশনের ব্যক্তিরা অনিয়ম করে ও ফায়দা লুটে অনায়াসে ছাড় পেয়ে যাচ্ছে কিভাবে? অবশ্যই তা খতিয়ে দেখা দরকার।

এলাকার অনেক সচেতন ব্যক্তিরা বলেন, “মানুষের জীবন নিয়ে এভাবে খেলা করার অধিকার কারোর নেই। তাই দুর্নীতিবাজ ভবন মালিক, প্রকৌশলী, কন্ট্রাক্টরদের প্রতি সংশ্লিষ্ট রাজউকের কর্মকর্তাদের দৃষ্টি রাখা উচিৎ। এখনই সময় এসেছে।” আরও জানা গেছে, অনেক অসাধু জমির মালিকেরা গোপনে রাজউকের কর্মীদের সহায়তা ও অনৈতিক সখ্যতার মাধ্যমে ভবন নির্মাণে অনিয়ম করছেন।

মন্তব্য আছে, ভবিষ্যতে এই সব ভবনে বসবাসরত মানুষের প্রাণের ঝুঁকি থেকেই যায়। দুর্ঘটনা ঘটে গেলেও তখন আর এগুলো দেখার বা জবাবদিহিতা কারোর কাছে থাকছে না। জনমনে প্রশ্ন থেকেই যায় এতো অনিয়মের সমাধান কোথায়? অনিয়ম প্রমাণের পরেও বিচারহীন কিভাবে থাকছে? কোন অপশক্তির বলে নতুন-পুরাতন অবৈধ ভবন নির্ভয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে? কোন ক্ষমতাধরদের অবৈধ কালো হাতের ইশারায় আড়ালে চলছে অবৈধ ভবন নির্মাণ? আর কতকাল এই অনিয়মের জয়জয়কার চলবে? আদৌ যদি অবৈধ ভবনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়ে থাকে, তাহলে অবৈধ ভবনের ছড়াছড়ি কেন? এসব কথা কি নিছক আলাপ, নাকি প্রলাপ?

 

রাজউকের ইমারত পরিদর্শক জয়নাল আবেদিন এর বিরুদ্ধে ঘুষ-দুর্নীতির অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক॥

হাসিনা চলে গেলেও তার দোসর রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) জোন-৭/১ এর ইমারত পরিদর্শক জয়নাল আবেদিন এর বিরুদ্ধে ষুঘ বাণিজ্য ও অনিয়ম দুর্নীতির একাধিক অভিযোগ পাওয়া গেছে। অনুসন্ধানে জানা যায় রাজউকের জোন-৭/১ এর আওতাধীন ওয়ারী ও কদমতলি থানার বেশ কয়েকটি মৌজার দায়িত্বরত, এই ইমারত পরিদর্শক জয়নাল আবেদিন ওয়ারী যোগী নগর,মনির হোসেন লেন, বেগমগঞ্জ, স্বামিবাগ, বিসিসি রোড, টিপু সুলতান রোড, নারিন্দা, ধোলাইখাল-সহ বিভিন্ন এলাকায় একাধিক নির্মাণাধীন ভবনে মালিক’এর সঙ্গে যোগ সাজসে চলে তার এই ঘুষ বাণিজ্য, তথ্যসূত্রে জানা যায়, ভবন মালিক এর কাছে প্রথম পর্যায়ে নোটিশ পাঠিয়ে রাজউকে ডেকে পাঠান এই ইমারত পরিদর্শক জয়নাল আবেদিন। তিনি ভবন মালিকদের তাদের ভবন সম্পর্কিত নানা অনিয়ম তুলে ধরেন, যেমন বিধিমালার নিয়মানুযায়ী হচ্ছে না ভবনের ডেভিয়েশন, আউটডোর, ইনডোর স্ট্রাকচার, আবাসিক ভবনের অনুমোদন নিয়ে বাণিজ্যিক ভবন তৈরী করার মত বিভিন্ন নিয়ম ভঙ্গের ইত্যাদি অভিযোগ আনেন। এসময় বিভিন্ন ভয়ভীতি উপস্থাপন করে ভবন মালিক থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেন। শুধু তাই নয় যে সকল ভবনে উচ্ছেদ পরিচালনা করা হয় সেই সকল উচ্ছেদকৃত নির্মাণাধীন ভবনগুলো থেকে মোটা অংকের ঘুষ নিয়ে এই জয়নাল আবেদিন ভবন মালিক’কে পরামর্শ দিয়ে থাকেন কোর্ট থেকে স্টে অর্ডার নিয়ে রাখতে যাতে করে রাজউক পরবর্তীতে সময় কোনো প্রকার নোটিশ বা মোবাইল কোর্ট পরিচালনা না করতে পারে।

এছাড়া অনুমোদনহীন ভবন নির্মাণ করতে সহয়তা ও পরামর্শক হিসেবে আইনের ফাঁক ফোকর বুঝিয়ে দিয়ে ভবন মালিকদের আয়ত্ব করেন এই ইমারত পরিদর্শক জয়নাল আবেদিন। সম্প্রতি ৭৭/১ যোগীনগর ওয়ারী এলাকার জনৈক্য ভবন মালিক এনামুল ও সাদী রাজউক থেকে ৮ তলা অনুমোদন নিয়ে সেখানে গড়ে তুলেছেন সাড়ে এগারো তলা ভবন, ভবনটি যখন ৪তলা পর্যন্ত নির্মিত হয় তখন উল্লেখিত ভবনটিতে ২০/০২/২০২৩ইং তারিখে মোবাইল কোর্ট এর মাধ্যমে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয়। রাজউকের প্রশাসন পরিচালক, অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা ম্যাজিস্ট্রেট মমিন উদ্দিন’এর নেতৃত্বে এদিন সাথে ছিলেন, রাজউক’এর ইমারত পরিদর্শক নাঈমুল ইসলাম ও রাজউকের অন্যান্য কর্মকর্তাবৃন্দ।

এসময় ভবন মালিককে ২ লাখ টাকা জরিমানা করে নিজ দায়িত্বে এক মাসের মধ্যে ব্যক্তকৃত অংশ ভেঙে ফেলার মুচলেকা নেয়া হয়। কিন্তু তাতেও টনক নড়েনি ভবন মালিকে’র। বরং নিজ ইচ্ছে মতো নির্মাণা কাজ চালিয়ে যায় ভবন মালিক, এর মধ্যে নতুন ইমারত পরিদর্শক আসেন সোহাগ আহামেদ, তার সাথে ভবন মালিকের পরিচয় করিয়ে দেন ইমারত পরিদর্শক জয়নাল আবেদিন, কিছু দিনের মধ্যে তারও বদলি হয়ে যায়, এই ভবনের সমস্ত দায়িত্ব ছিলো শুরু থেকে ইমারত পরিদর্শক জয়নাল আবেদিন এবং তার সহকারী সাইফুল ইসলামের, তবে ঘুষ বাণিজ্যের মাধ্যমে এর অনুমোদনে সহয়তা করেছিলেন ইমারত পরিদর্শক জয়নাল আবেদিন, জানা যায় যে উল্লেখিত ভবন মালিক থেকে জয়নাল আবেদিন তার সহকারী সাইফুল ইসলাম এর সহায়তায় বেশ ভালো অংকের লেনদেন করেন। এই ভবনের পাশের প্রতিবেশিরা, বিভিন্ন সময় অভিযোগ করেও, পায়নি রাজউক’এর কোন সহায়তা, সরেজমিন অনুসন্ধানে এই প্রতিবেদক গেলে, পাশের বাড়ির অভিযোগকারী বাসিন্দারা বলেন, রাজউক ইন্সপেক্টর জয়নাল আবেদিনের কাছে গেলে, বারবার বলে, চিঠি ইস্যু করা হয়েছে, মোবাইল কোড দেওয়া হবে, কিন্তু আদৌ দেওয়া হয়নি, নিয়মের বাইরে, ভবন নির্মান করতে ওই সময় কোন বাধা দেয়নি রাজউক, তৎকালীন আওয়ামী লীগের সরকারের রাজনীতির সঙ্গে ছিলেন ওই মালিকগণ, জয়নাল আবেদিনকে মোটা অংকের টাকা দিয়ে মুখ বন্ধ করে রেখেছিলেন তারা, তাই পাশের লোকজনের অভিযোগ কোন ধরনের আমলে নেওয়া হয়নি।

এদিকে এমন আরো তথ্য অনুসন্ধানে পাওয়া যায় ওয়ারীর মনির হোসেন লেন এ চার ফিট রাস্তায় মাথা উচু করে দাড়িয়ে আছে ১০ তলা থেকে ৮ তলা ভবন, যার কৃষ্ণচূড়া ডেভেলপার কোম্পানির মালিক নাম জামাল, তার অফিস ১৫/এ মনির হোসেন লেন, এই ডেভলপার কোম্পানির বিজনেস করার নেই কনো লাইসেন্স সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের, তারা রিহাবের সদস্যও না, না আছে তাদের ডেভলপার বিজনেস করার জন্য রাজুকের লাইসেন্স ও যথাযথ অনুমোদন, তাহলে কোন ভিত্তিতে একটার পর একটা অবৈধ বিল্ডিং নির্মাণ করছে এবং এই বিজনেস চালিয়ে যাচ্ছেন, একের পর এক ভবন তৈরি করে যাচ্ছেন পুরান ঢাকার নারিন্দা ওয়ারী মনির হোসেন লেন ও পারিপার্শিক আরো অনেক অলিগলিতে, জানা যায় রাজউকের কিছু অসাধু কর্মকর্তার সহয়তায় গড়ে তুলছেন কৃষ্ণচূড়া ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি নামের বেশ ক’টি ভবন, যা সম্পূর্ণ নকশা বহির্ভূত ও অনুমোদনহীন। এদিকে ক্ষমতার অপব্যবহার করে ৩১/এ স্বামীবাগ, করাতীটোলা, এলাকায় লক্ষ্মী বিল্ডার্স লিমিটেড’এর একটি বহুতল ভবন নির্মাণ করছেন, যা রাজউক নকশা বহির্ভূত, তাদের জিজ্ঞেস করলে জানা যায় সরেজমিনে ইন্সপেক্টর আসেন না, এর অনিয়মগুলো দেখেন না, এসময় দায়িত্বরত একজন বলেন, ইন্সপেক্টর জয়নাল আবেদিনের সাথে, অফিসের কথা হয়, ফলে ইন্সপেক্টর’কে আসতে হয় না আমাদের সাইটে।

এমন আরো একটি কোম্পানি নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন ৩৩, স্বামীবাগ লেন’এ ডেভেলপমেন্ট টেকনোলজি এন্ড আইডিএস লিমিটেড’এর একটি ভবন এর ৬ফিট রাস্তায়, আটতলা ভবন যা নির্মানাধীন রয়েছে। এই সমস্ত বিষয়ে, জিজ্ঞাসাবাদ করলে, ভবনের সাইট ইঞ্জিনিয়ার এবং ম্যানেজার জানান, ইমারত পরিদর্শক জয়নাল আবেদিন আর আসেন না আমরাই রাজউকে যেয়ে তার সাথে কথাবার্তা বলে আসি কারণ আমাদের সবকিছু ঠিক আছে, তাদের কাছে কিছু জানতে চাইলে তারা আমাদের বলেন রাজুকে আমাদের লোক আছে এবং ইন্সপেক্টর এর সাথেও আমাদের কথাবার্তা হয়, বিল্ডিং এর শত অনিয়ম থাকার পরেও, ইন্সপেক্টর তাদের কাজ চালিয়ে যেতে বলেন।

এমন আরো কয়েকটা ভবনের তথ্য অনুসন্ধান করতে গেলে চলে আসে নতুন নতুন কিছু তথ্য, এ সকল ভবন মালিকদের উপদেশ দিয়ে আসেন জয়নাল আবেদিন, তিনি পরামর্শ দিয়ে বলেন, আপনারা রিট করে রাখেন কোর্ট থেকে আমার সাথে সম্পর্ক থাকবে যাতে রাজউক আপনাদের কোন কিছু করতে না পারে। একই ধরনের উপদেশ দিয়ে থাকেন তার পরিচিত কিছু কিছু ভবন মালিকদের এবং ঘুষ গ্রহণ করে থাকেন। জয়নাল আবেদিনের এত কিছুর পেছনে তাকে সকল সহযোগিতা, করেন তার ডিপার্টমেন্ট জোন ৭/১ সরকারি অথরাইজার অফিসার আব্দুর রাজ্জাক তোহা, এই সকল ঘুষ বাণিজ্যের এর সহকারি এবং মূল নায়ক তিনিই, এই আব্দুর রাজ্জাক তোহা মোবাইল কোটে গেলেও চলে তার নানান ধরনের ঘুষ বাণিজ্য। আগে থেকেই লেনদেন করে রাখেন অনেক ভবনের মালিকদের সাথে, যে ভবন থেকে তাদের ঘুষ দেওয়া হয় সেই ভবনের তাদের আর মোবাইল কোট হয়না, এই বিষয়ে সাংবাদিক গেলে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের ইন্সপেক্টর জয়নাল আবেদিন জানান, এই সমস্ত ভবনে নোটিশ করা আছে। আমরা উচ্ছেদ অভিযান দিবো, তার কাছে থানার নোটিশের কপি দেখতে চাইলে, সেই বিষয়কে অবহেলা করে অন্য স্থান ত্যাগ করেন, তাকে একটা প্রশ্ন করলে সে অন্যটা উত্তর দেয় তার তাল-বাহানা চলতেই থাকে, কিন্তু আদৌ কি এই নকশা বহির্ভূত ভবনগুলোর আইনগত ব্যবস্থা নিয়েছেন, এমন সকল প্রশ্ন এড়িয়ে যান তিনি। প্লান পাস ছাড়াই তাদের কিছু অসাধু কর্মকর্তাদের, সহযোগিতা নিয়েই চলছে এমন ডেভলপারের বিজনেস, এতে লাভবান হচ্ছে অসাধু অফিসাররা, এতে লাভবান হচ্ছে অসাধু ব্যবসায়িরা, কিন্তু ঝুঁকিতে পড়ছে সাধারণ মানুষ, কখনো ভূমিকম্প কখনো অগ্নিকাণ্ড কখনো বাড়িতে ফাটল বা নড়ে যাওয়া, এসবের কোনরকমই দায়িত্ব তারা নিচ্ছেন না, মানুষকে তারা বিপদের মুখে ঠেলে দিচ্ছে, আবাসিক ভবনগুলো কমার্শিয়াল করে বিপদমুখী করে তুলছেন মানুষদের, কখনো নিমতলির মত ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডর কখনো বেলি রোডের মতো ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের, কখনো রানা প্লাজারের মতো ধ্বসে যাওয়ার ভবনের ঘটনা তারা আমলে আনছেন না। এসব বিষয়ে ভবন মালিকদের কাছে জানতে চাইলে বলেন আমরা রাজউক’কে অফিসিয়ালি ম্যানেজ করে ও অবগত করে নির্মানাধীন কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। বিগত ২৬/১২/২০২৪ ইং তারিখে ৭৬ বিসিসি রোড এ মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হয় এবং ভবন মালিকের ব্যক্তকৃত অংশ ভেঙে ফেলে অপসারণ করা হয় এবং নিজ দায়িত্বে বাকি অংশ ভেঙে ফেলে এক মাসের মুচলেকা নেয়া হয় কিন্তু ভবন মালিক ক্ষমতার জোরে নিজের খেয়ালখুশি মত নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন কাউকে তোয়াক্কা না করেই, রাজউকের ইন্সপেক্টর জয়নাল আবেদিনকে জানালে তিনি বলেন, আমরা আমাদের কাজ করে যাচ্ছি অথচ সেই ভবনটি পুরোপুরি ঝুঁকিপূর্ণ এবং নিয়মবহির্ভূত প্ল্যান ছাড়াই, কে পি আই এরিয়া হয়েও গড়ে তুলছেন, এর কোন প্ল্যান নেই কোন ছাড়পত্র নেই কোন বিশেষ কমিটি থেকে অনুমোদন, কিন্তু গড়ে তুলছেন ভবনটি, রাজউকের সহকারি অফিসার জোন ৭/১ আব্দুর রাজ্জাক তোহা, এবং ইন্সপেক্টর জয়নাল আবেদিনের সহযোগিতায় বেআইনিভাবে গড়ে তুলছেন সেই ভবনটি, ঘুষ বাণিজ্য রাজউকে এখন একটা নিয়ম হয়ে গেছে, কিছু কিছু অফিসারদের দুদকের মামলাও রয়েছে, তাও তারা তাদের ঘুষ বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে।

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম