তারিখ লোড হচ্ছে...

প্রতিদিন কোটি টাকার উপরে চাঁদাবাজি করেন পরিবহন মালিক সমিতির নামে

মোহাম্মদ মাসুদ॥
ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্লাহ রাজধানী ও এর আশেপাশে বিভিন্ন রুটের প্রায় ১৫ হাজার বাস থেকে দৈনিক ১ কোটি ৬৫ লাখ টাকা চাঁদা তুলছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এমন অভিযোগ বাস চালক ও মালিকদের। তারা বলেন, দেশের পরিবহন খাত এনায়েত উল্লাহর হাতে জিম্মি। এ দশা থেকে মুক্তি পেতে শুদ্ধি অভিযান পরিচালনার দাবিও তাদের। তিনি গত জোট সরকারের সময়েও ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তখন এই সংগঠনের সভাপতি ছিল বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং বর্তমানে ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মির্জা আব্বাস। বর্তমানে বিএনপি নেতা সেই খন্দকার এনায়েত উল্লাহ খোলস পাল্টে নব্য আওয়ামী লীগ সেজে প্রশাসনকে ম্যানেজ করে সারাদেশে চাঁদাবাজি করছে। এতে মহাজোট সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। মহাজোট সরকারকে বিব্রত করার জন্য বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন ৬৫ বার পরিবহন ধর্মঘট দিয়েছে।
ভিক্টর ও আকাশ পরিবহনে ব্যানারের বাস মালিক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, সকালে বাস বের করার পরপর ঢাকা মালিক সমিতিও ভিবিন্ন রুটের মালিক সমিতিকে (গেট পাস- জিপি) হিসেবে প্রতিটি গাড়ি বাবাদ দিতে হয় ১২ থেকে আঠারোশো টাকা। এরমধ্যে থেকে ত্রিশ ভাগ শ্রমিক ইউনিয়ন আর শ্রমিক ফেডারেশন দিতে পাঁচ ভাগ টাকা। তবে এই টাকা কেন দিতে হবে তার সুস্পস্ট জবাব নেই কারো কাছে। আর চাঁ’দা না দিলে রাস্তা চলতে দেয়া হয় না বাস এমন অ’ভিযোগ বাস মালিকদের। তারা জানান, চাঁদাবাজী বন্ধ হলে ভাড়ার পাশাপাশি কমবে দুর্ঘটনাও। এছাড়া সড়কে ও ফিরবে শৃঙ্খলা।
সড়ক পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য লীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক মোজাহারুল ইসলাম সোহেল জানান, পরিবহন খাতে দৈনিক যে চাঁদ ওঠে। মাসে এই চাঁদার পরিমান দাঁড়ায় প্রায় ৪৮ কোটি টাকায়। যার পুরোটাই যাচ্ছে সিন্ডিকেটের কাছে। এই সিন্ডিকেটে আবার আওয়ামী লীগ বিএনপি ও জামায়াত মিলে একাকার। এর মধ্যে সরকার দলীয় প্রভাবশালীরা প্রথমে একটি কোম্পানি খোলেন। এরপর বিভিন্ন বাস মালিকরা বাস চালাতে দেন। এ জন্য বাস প্রতি দিতে হয় দুই থেকে বিশ লাখ টাকা।এমন একটি নতুন বাস সময় নিয়ন্ত্রণের ব্যানারে বর্তমানে মিরপুর চিড়িয়াখানা থেকে শুরু করে মদনপুর পর্যন্ত চলাচলের অনুমোদন দেয়া হয়।আদৌ রুট পারমিট আছে কি না প্রশাসন খতিয়ে দেখে না। আরেকটি পরিবহনের নাম মৌমিতা,যার অল্প সংখ্যক গাড়ি চলাচলের অনুমতি থাকলেও প্রায় ২০০/২৫০ টি বাস রাস্তায় প্রতিনিয়ত চলাচল করছে।
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় থাকলেও বাংলাদেশের পরিবহন সেক্টরের সর্ববৃহৎ শ্রমিক সংগঠন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন পরিচালিত হচ্ছে জামায়াত-বিএনপির নেতৃত্বে। দুর্নীতি, চাঁদাবাজি হালাল করার জন্য তারা এই ফেডারেশনে মাত্র ২/১ জন আওয়ামী লীগ ও সমমনা দলের প্রতিনিধি রেখেছেন। জামায়াত-বিএনপির নেতৃত্বাধীন এই ফেডারেশন প্রতিদিন রাজধানীর ৪টি বাস টার্মিনাল থেকে প্রায় ৫০ লাখ টাকা চাঁদাবাজি করে। এসব অভিযোগে সম্বলিত একটি অভিযোগ পত্র প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, গোয়েন্দা সংস্থা ও সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে দাখিল করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
ওই অভিযোগ অনুযায়ী জানা যায়, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের অধিকাংশ নেতা-কর্মীই জামায়াত-বিএনপির। এই ফেডারেশনের অন্তর্ভূক্ত সংগঠন পরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদ প্রতিদিন রাজধানীর বাস টার্মিনালগুলোতে ৫০ লাখ টাকা চাঁদাবাজি করে। অভিযোগকারীদের দাবি স্বাধীনতার ৪৪ বছর পরও বাংলাদেশে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কোনও পরিবহন শ্রমিক সংগঠন প্রতিষ্ঠিত হয়নি।
অভিযোগে জানা যায়, ফেনী জেলার ছাগলনাইয়া থানার নীচপনুয়া গ্রামের বাসিন্দা খন্দকার এনায়েত উল্যাহ। তিনি ১৯৮৪ সালে গুলিস্তান মিরপুর রোডে একটি মিনিবাস দুইজনে পার্টনারে ক্রয় করে পরিবহন ব্যবসা শুরু করেন। যার মূল্য ছিল মাত্র এক লাখ ৭০ হাজার টাকা। সেই এনায়েত উল্লাহ বিএনপির নেতা মির্জা আব্বাসের সাথে হাত মিলিয়ে ১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর সেই সময়ে ঢাকা সড়ক পরিবহন সমিতির সভাপতি মির্জা আব্বাস ও খন্দকার এনায়েত উল্যাহ সাধারণ সম্পাদক পদে থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন।
আরও অভিযোগ আছে বর্তমানেও মির্জা আব্বাস, সাইফুল, বাতেনসহ বিএনপি’র নেতা কর্মীদের লাখ লাখ টাকা গোপনের ডোনেশন দিয়ে আসছেন। কারণ বিএনপি ক্ষমতায় এলে আবারও ভোল পাল্টে দল বদল করে পুনরায় ক্ষমতা পাওয়ার লোভে। এছাড়াও ঢাকা পরিবহন, গাজীপুর রোডে, ঢাকা চাকা, গ্রিন ঢাকা নামক শহরে প্রায় ১৫ (পনের) টি রোডে চলাচলকৃত গাড়ি ও কুমিল্লা রোডে প্রিন্স ও মতলব পরিবহন, নেতৃত্ব দিচ্ছেন বিএনপি নেতা মির্জা আব্বাস ও সাইফুল এবং এই সকল পরিবহনের উপার্জিত অর্থ চলে যাচ্ছে বিএনপি ও ক্যাডারদের বিভিন্ন কর্মকান্ড। এরপরও এই সকল কোম্পানির গাড়ি ও ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কোনরূপ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে না।
জানা যায়, নিহত পরিবহন শ্রমিক হত্যা মামলার অন্যতম আসামী বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার বিশেষ সহকারী এড. মামুনুর রহমান শিমুল বিশ্বাসকে পুলিশ গ্রেফতার করলে তার মুক্তির দাবিতে দেশব্যাপী বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন পরিবহন ধর্মঘট আহ্বান করে মহাজোট সরকারকে নাজেহাল করার চেষ্টা করে এই এনায়েত উল্লাহ। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক লীগ তাদের অভিযোগে আরো উল্লেখ করে জয় বাংলার বিরুদ্ধে অবস্থানকারী বামপন্থী নেতা নিজে স্বাক্ষর করে সরকারের বিভিন্ন জায়গা বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক লীগ বাতিল করার আবেদন করে এবং গত ১০ নভেম্বর ২০১৪ পরিবহন মালিক সমিতির নেতা খন্দকার এনায়েত উল্যাহই বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক লীগকে প্রতিহত ও প্রতিরোধ করারও ঘোষণা দিয়েছিলেন।
সেই এনায়েত উল্লাহই আবার ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ নেতা হাজী মকবুল সাহেবের হাতে পায়ে ধরে স্ব-পদে বহাল থাকেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনের পরে বর্তমানে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর পুনরায় ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির দায়িত্বগ্রহণ করেন এনায়েত উল্যাহ। খন্দকার এনায়েত উল্যাহ ক্ষমতায় আসার পর বিভিন্ন টার্মিনালের দক্ষ শ্রমিক নেতাদের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিয়ে। আর তার একমাত্র সহযোগি গুলিস্তানের রহমান আর এই রহমান গুলিস্থান টু জুরাইন সড়কে ৫ শতাধিক রেগুনা থেকে প্রতটি থেকে ৬ শত টাকা করে চাদা আদায় করে বলে অভিযোগ রয়েছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রহমান বলেন আমি সেই রহমান নই কিন্তু অভিযোগ রয়েছে এই রহমানেই এই সড়কটি নিয়ন্ত্রন করেন। (আগামী সংখ্যায় দেখুন রহমানের সাত কাহন)

টঙ্গীর কিশোর গ্যাং ‘ডি কোম্পানির’ সেকেন্ড ইন কমান্ড পাপ্পু গ্রেফতার

স্টাফ রিপোর্টারঃ

গাজীপুর টঙ্গীর আলোচিত কিশোর গ্যাং ‘গ্রুপ ডি কোম্পানির’ সেকেন্ড ইন কমান্ড সজীব চৌধুরী পাপ্পু (৩০) ওরফে লন্ডন পাপ্পুকে গ্রেফতার করেছে টঙ্গী পূর্ব থানার চৌকস পুলিশ অফিস এএসআই পারভেজ মল্লিক ও এএসআই মোঃ জাহিদুল ইসলাম। গতকাল রোববার রাত আনুমানিক ১০টার দিকে টঙ্গীর পূর্ব আরিচপুর শাহী মসজিদের সামনে থেকে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়।মারধরের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় পাপ্পুকে আট মাসের কারাদণ্ড দেন আদালত। এর পর থেকে পলাতক ছিলেন তিনি। টঙ্গীর পূর্ব আরিচপুর এলাকার আব্দুল মালেকের ছেলে তিনি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পূর্ব থানা এলাকায় দীর্ঘদিন ‘ডি কোম্পানি’ নামে একটি কিশোর গ্যাং সক্রিয় আছে। লন্ডনে পড়াশোনা শেষে দেশে ফিরে ২০১৬ সালে সজীব চৌধুরী পাপ্পু ও তাঁর ভাই রাজীব চৌধুরী বাপ্পি মিলে গড়ে তোলেন এই গ্রুপ। এতে প্রায় ২৫ থেকে ৪০ জন সক্রিয় সদস্য রয়েছে বলে জানা যায়।বিভিন্ন সময় আধিপত্য বিস্তার, দখল-বাণিজ্য, মাদক কারবার ও মানুষকে নানাভাবে হয়রানি মূলক কাজকর্ম করত। সজীব চৌধুরী পাপ্পু স্বেচ্ছাসেবক লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত।আর এই সজীব চৌধুরী পাপ্পুর শেল্টারদাতা গাজীপুর মহানগর আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ বিল্লাল হোসেন।রাজনৈতিক কর্মসূচিতেও এই কিশোর গ্যাংকে ব্যবহার করা হতো পলাতক থেকে পাপ্পু গ্যাং গ্রুপটি পরিচালনা করছিলেন। পুলিশের তথ্যমতে, সজীব চৌধুরী পাপ্পুর বিরুদ্ধে ঢাকা ও গাজীপুরের বিভিন্ন থানায় মাদক, অস্ত্র, হত্যাচেষ্টা, ডাকাতি, মারামারিসহ প্রায় ডজন খানেক মামলা রয়েছে। এসব মামলার বেশ কয়েকটিতে সাজা ভোগ করেন এবং কয়েকটি মামলা এখনো আদালতে বিচারাধীন। এ বিষয়ে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ বিল্লাল হোসেনের মুঠোফোনে একাধিক যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেন নি। এ বিষয়ে টঙ্গী পূর্ব থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘একটি গ্রেফতারী পরোয়ানায় পাপ্পুকে গ্রেফতার শেষে আদালতে পাঠানো হয়েছে। ঐ মামলায় আদালত পাপ্পুকে আট মাসের সাজা দিয়েছেন।

এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে কিশোর গ্যাং গ্রুপ পরিচালনাসহ নানা অভিযোগে মামলা রয়েছে।’তার বিরুদ্ধে আরো তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে কে কে তাদেরকে শেল্টার দিতো তাদের কেউ আইনের আওতায় আনা হবে।

language Change
সংবাদ শিরোনাম