তারিখ লোড হচ্ছে...

পছন্দের দলের জার্সি না কিনে অসহায়দের দিলেন শীতবস্ত্র!

রায়হান হোসাইন, চট্টগ্রাম প্রতিনিধিঃ-

সারাদেশে কাতার বিশ্বকাপের রঙ ছড়াচ্ছে সকল বয়সিদের মাঝে। নিজের পছন্দের দলকে জানান দিতে পরছেন জার্সিও। কিন্তুু এমন আমেজে নিজের পছন্দের দলের  জার্সি না কিনে সেই টাকায় শীতবস্ত্র কিনে অসহায়কে দিলেন মো.আলাউদ্দিন রিয়াজ নামের একজন। যদিও বিশ্বকাপের এমন আমেজের সময় মানবসেবার এই কার্যক্রম কারও মনে রাখার কথাও নয়।

গত ১৯ নভেম্বর মো. আলাউদ্দিন রিয়াজ নিজে ফেসবুক ওয়ালে শীতবস্ত্র নিয়ে একটি পোস্ট দেন। সেখানে তিনি লিখেন, ভাবছিলাম আমি যে দল সাপোর্ট করি তার একটা জার্সি কিনব। পরে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে ঠিক করলাম, সেই টাকা দিয়ে অথবা আরও কিছু টাকা যোগ করে এক দুইজন অসহায় মানুষকে শীতের জামা কিনে দিব। ঠিক আমি সেটাই করেছি, ইনশাল্লাহ।

তিনি আরও লিখেন, আমি স্বল্প বেতনের চাকরি করি, তাই আমি দুইজনকে দিয়েছি। আপনারা যারা ভালো অবস্থানে আছেন,  আপনারা চাইলে আরও ভালো কিছু করতে পারেন। অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ান, দেখবেন মনে শান্তি আসবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কুমিল্লা গণপূর্ত বিভাগের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারি মো. আলাউদ্দিন রিয়াজ। তিনি এর আগে গণপূর্ত বিভাগ, চট্টগ্রাম ও খাগড়াছড়ি গণপূর্ত উপ বিভাগেও কর্মরত ছিলেন।

জার্সি না কিনে সেই টাকা দিয়ে অসহায় দুই জনকে শীতের কাপড় দেওয়ার সিদ্ধান্তের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি সবুজ বাংলাদেশকে বলেন, আসলে কখন যে কি হয়ে যায় সেটা কেউই জানে না। আমি কিনতে চাইলাম জার্সি, কিনলাম দুইজনের জন্য শীতের কাপড়। তবে দিতে পেরে আমার কাছে শান্তি লাগছে।

জানা গেছে, এর আগেও করোনাকালীন সময়ে তিনি সাধ্যমতে বহু সুবিধাবঞ্চিত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। এদিকে তার এই ছোট ছোট অসামান্য কর্মকান্ডগুলো যুবকদের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবেন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এতিম শিক্ষার্থীসহ বসুন্ধরার কম্বল পেলেন ১০০০ অসহায়

অনলাইন ডেস্কঃ

নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপের অর্থায়নে এক হাজার কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। কালের কণ্ঠ শুভসংঘের সহযোগিতায় এক হাজার অসহায় শীতার্ত মানুষের হাতে এসব কম্বল তুলে দেওয়া হয়। এ নিয়ে চলতি শীত মৌসুমে দ্বিতীয় দফার কার্যক্রমের অংশ হিসেবে গাজীপুর, ময়মনসিংহ ও নরসিংদী জেলায় তিন হাজার কম্বল বিতরণ করা হলো।

রোববার (৫ ফেব্রুয়ারি) সকালে মনোহরদী বাসস্ট্যান্ড চত্বরে অসহায় শীতার্তদের মধ্যে কম্বল বিতরণ কার্যক্রম শুরু হয়।

পরে শুকুন্দী ইউনিয়নের তাহফিজুল কোরআন ওয়াস সুন্নাহ এতিমখানা মাদরাসা এবং ভিটিপাড়া মুহাম্মদিয়া হাফিজিয়া মাদরাসা ও এতিমখানার শিক্ষার্থীদের হাতে কম্বল তুলে দেওয়া হয়। মনোহরদী উপজেলা শুভসংঘের বন্ধুরা এসব কম্বল বিতরণ করেন।

কম্বল পেয়ে হাররদিয়া এলাকার আছিয়া বেগম (৪৫) বলেন, ‘ছোট্ট দুই বাচ্চা জারে (শীতে) কষ্ট পাইত। কম্বল পাওনে এহন ওরা একটু শান্তিতে রাইতে ঘুমাইতে পারবে। কম্বল পাওনে আমার অনেক উপকার অইছে। ’

দুই ছেলেমেয়ে নিয়ে তিনজনের সংসার আছিয়ার। মানুষের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে সংসার চালান তিনি।

কম্বল পেয়েছেন আরেক অসহায় আজিমুন বেগম। তিনি বলেন, ‘কয়েক দিন ধরে শীতের কষ্টের পর নতুন কম্বল ঈদের আনন্দের মতো লাগছে। আমরা সবাই খুশি। ’

ছেলেমেয়েদের থেকে আলাদা হয়ে এক খুপরিতে একা থাকেন সত্তরোর্ধ্ব আব্দুল মোতালিব। কম্বল পেয়ে তাঁর মুখেও হাসির ঝিলিক। তিনি বলেন, ‘পোলাপান সব দূরে গ্যাছে, আমি এলহা মানুষ ক্যামনে বাঁচি কেউ খোঁজ নেয় না। তোমরাই খোঁজ নিয়া কম্বল দিলা, মনডা খুশিতে ভইর্যা গ্যাছে। ’

নিঃসন্তান রোকেয়া খাতুনও কম্বল পেয়ে বলেন, ‘আমার মতো অসহায়দের খবর নেওয়ার কেউ নেই। কতজন?কে অনুরোধ করলাম একটা কম্বলের জন্য, কেউ দিল না, কিন্তু তোমরা আমা?কে কম্বল দিলে। ’ বয়োবৃদ্ধ জালাল উদ্দিন বলেন, ‘কদিন ধইরা শীতের ঠ্যালায় ঘুমাইতে পারি না। আজ কম্বল মুড়ি দিয়ে আরাম কইরে একটা ঘুম দিব। ’

মাদরাসাছাত্র হোসাইন আহমেদ বলে, ‘কম্বল পেয়ে আমরা আজ অনেক খুশি। আমরা যারা এখানে থাকি, শীতের রাতে আমাদের ঘুমাতে কষ্ট হতো। কম্বল পেয়েছি, আমরা এখন রাতে আরামে ঘুমাতে পারব। ’

মাদরাসার মুহতামিম মুফতি মাসুম বিল্লাহ বলেন, ‘আমাদের মাদরাসায় যারা পড়াশোনা করে তারা বেশির ভাগই এতিম ও দরিদ্র। আমরা চেষ্টা করছি তাদের সব চাহিদা পূরণ করে ইসলামী শিক্ষা দেওয়ার। বসুন্ধরা গ্রুপের সহযোগিতায় ইনশাআল্লাহ আমাদের ছেলেদের কিছুটা হলেও ঠাণ্ডাটা লাঘব হবে। আমরা দোয়া করি, আল্লাহ যেন বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান ও তাঁর পরিবারের মঙ্গল করেন। ’

কম্বল বিতরণের সময় উপস্থিত ছিলেন কালের কণ্ঠ শুভসংঘের পরিচালক জাকারিয়া জামান, নরসিংদী জেলা পরিষদের সদস্য এ কে এম জহিরুল হক, ইসরাত জাহান তামান্না, শুভসংঘের মনোহরদী শাখার সভাপতি মাসুদ রানা, সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম, শুভসংঘের সাবেক সভাপতি মো. হারুন-অর-রশিদ, কালের কণ্ঠ’র মনোহরদী প্রতিনিধি মুহা. ইসমাইল হোসাইন খান, নিউজটোয়েন্টিফোরের জেলা প্রতিনিধি হৃদয় খান, মনোহরদী সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি জে এম শাহজাহান মোল্লা প্রমুখ।

শুভসংঘের মনোহরদী উপজেলা শাখার সভাপতি মাসুদ রানা ব?লেন, ‘প্রতি শীত মৌসুমেই শীতার্তদের মধ্যে কম্বল বিতরণ ছাড়াও বিভিন্ন মানবিক কাজে ভূমিকা রেখে চলেছে বসুন্ধরা গ্রুপ। ’

নরসিংদী জেলা পরিষদ সদস্য এ কে এম জহিরুল হক বলেন, ‘সুবিধাবঞ্চিত অসহায়দের পাশে এসে দাঁড়ানোর জন্য বসুন্ধরা গ্রুপ ও কালের কণ্ঠ শুভসংঘকে ধন্যবাদ জানাই। ’

কালের কণ্ঠ শুভসংঘের পরিচালক জাকারিয়া জামান বলেন, ‘শীতার্তদের মধ্যে শুভসংঘের মাধ্যমে শীতবস্ত্র পৌঁছে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান স্যার। এর অংশ হিসেবে মনোহরদী উপজেলার এক হাজার মানুষের হাতে কম্বল তুলে দিয়েছি।

language Change
সংবাদ শিরোনাম