যুক্তরাষ্ট্রে অবতরণের সময় দাঁড়িয়ে থাকা প্লেনে আঁছড়ে পড়ল বিমান

যুক্তরাষ্ট্রে অবতরণের সময় দাঁড়িয়ে থাকা প্লেনে আঁছড়ে পড়ল বিমান

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

যুক্তরাষ্ট্রে একটি ছোট বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে। দেশটির মন্টানায় অবতরণের সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পার্ক করা বিমানের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে ওই ছোট বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। অবশ্য এই ঘটনায় বড় ধরনের কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

তবে পার্ক করে রাখা বেশ কয়েকটি বিমান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বার্তাসংস্থা এপির বরাত দিয়ে মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।

কালিস্পেল পুলিশ প্রধান জর্ডান ভেনেজিও এবং মার্কিন ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফএএ) জানায়, চার যাত্রীবাহী এক ইঞ্জিনের বিমানটি সোমবার স্থানীয় সময় দুপুর ২টার দিকে কালিস্পেল সিটি বিমানবন্দরে অবতরণের চেষ্টা করছিল।

প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, পাইলট নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রানওয়েতে ক্র্যাশ করে এবং কয়েকটি পার্ক করা বিমানে ধাক্কা দিলে একাধিক বিমানে আগুন লেগে যায়। পরে আগুন ঘাসে ঢাকা এলাকাতেও ছড়িয়ে পড়ে, তবে দ্রুত তা নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।

প্রায় ৩০ হাজার মানুষের শহর কালিস্পেলের দক্ষিণে এই ছোট বিমানবন্দরটি অবস্থিত।

কালিস্পেল ফায়ার চিফ জে হাগেন জানান, প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন— বিমানটি রানওয়ের শেষ প্রান্তে জরুরি অবতরণ করে আরেকটি বিমানে ধাক্কা মারে। তবে বিমানটি থামার পর যাত্রীরা নিজেরাই বের হয়ে আসতে সক্ষম হন। দুজন সামান্য আহত হন এবং ঘটনাস্থলেই চিকিৎসা নেন।

কাছের একটি সরাইখানার ব্যবস্থাপক রন ড্যানিয়েলসন বলেন, তিনি দুর্ঘটনার দৃশ্য দেখেছেন। দুর্ঘটনার পর ঘন কালো ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ে। তার ভাষায়, “শব্দটা ছিল ঠিক যেন কেউ আপনার মাথা বেজ ড্রামের ভেতর ঢুকিয়ে জোরে আঘাত করেছে।”

ন্যাশনাল ট্রান্সপোর্টেশন সেফটি বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, ফ্লাইটটি ওয়াশিংটনের পুলম্যান থেকে ছেড়েছিল। এফএএ জানায়, বিধ্বস্ত বিমানটি ছিল ২০১১ সালে নির্মিত সোকাটা টিবিএম ৭০০ টার্বোপ্রপ। এর মালিক পুলম্যানের ‘মিটার স্কাই এলএলসি’। কোম্পানির পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

পাকিস্তানের সঙ্গে সমুদ্র পথে যোগাযোগের নেপথ্যে কী

সবুজ বাংলাদেশ ডেস্ক॥
স্বাধীনতার পর প্রথমবারের মতো পাকিস্তানের সঙ্গে সমুদ্রে পথে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক যোগাযোগ শুরু হয়েছে। বুধবার (১৩ নভেম্বর) করাচি থেকে পণ্যবাহী একটি কনটেইনার জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে এসেছে।

ঢাকায় নিযুক্ত পাকিস্তান হাইকমিশনের এক বিবৃতিতে বলা হয়, করাচি থেকে সারাসরি পণ্যবাহী একটি জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে এসেছে, যা দুই দেশের মধ্যে প্রথম সরাসরি সামুদ্রিক সংযোগ। এই সরাসরি রুটটি সরবরাহ শৃঙ্খলা আরও সহজ করবে এবং পণ্য পরিবহনে সময় কমাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

তবে দুই দেশের বাণিজ্য বিলিয়ন ডলারের কম। ব্যবসায়ীরা বলছেন, পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের যে বাণিজ্য রয়েছে, তাতে সরাসরি কনটেইনার জাহাজসেবা চালুর মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। বিষয়টি বোঝার জন্য ২০২৩-২৪ অর্থবছরে পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের চিত্র তুলে ধরা যাক।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) জানাচ্ছে, গত অর্থবছরে পাকিস্তান থেকে আমদানি হয়েছে ৭৪ কোটি ৪৫ লাখ ডলারের পণ্য। এর মধ্যে রপ্তানিমুখী শিল্পের কাঁচামাল সুতা-কাপড় ও প্রস্তুত চামড়া ছিল ৭৯ শতাংশ বা ৫৯ কোটি ডলার। এ ছাড়া সিমেন্টশিল্পের কাঁচামাল ক্লিংকার, ফল, শুঁটকি ও মেয়েদের থ্রি–পিস আমদানি হয়েছে। আবার একই সময়ে পাকিস্তানে রপ্তানি হয় ৬ কোটি ২৪ লাখ ডলারের পণ্য। রপ্তানির তালিকায় রয়েছে কাঁচা পাট, ওষুধ, হাইড্রোজেন পার অক্সাইড, চা ও তৈরি পোশাক।

গত অর্থবছরে পাকিস্তান থেকে মোট আমদানি পণ্যের পরিমাণ ছিল ১৬ লাখ টন, এর মধ্যে কনটেইনারে আনা হয়, এমন পণ্যের পরিমাণ ছিল তিন লাখ টনের কম। শিপিং ব্যবসায়ীরা বলছেন, পাকিস্তান থেকে মাসে সর্বোচ্চ এক-দেড় হাজারের বেশি কনটেইনারে পণ্য আমদানি হয় না, যা দিয়ে একটি জাহাজসেবা চালু করা যাবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে, আমদানি ব্যয়ের দিক থেকে পাকিস্তানের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি বাণিজ্য ছিল ২০২১-২২ অর্থবছরে। সে সময় পাকিস্তান থেকে পণ্য আমদানি ব্যয় ছিল ৮০ কোটি ডলার।

এখন বাণিজ্য কমলেও কেন সরাসরি জাহাজসেবা চালু হলো? এ প্রশ্নে ব্যবসায়ীরা জানান, ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর পাকিস্তানের সঙ্গে পণ্য আমদানিতে কড়াকড়ি শিথিল করা হয়েছে। আগে দেশটির পণ্য চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছানোর পর শতভাগ কায়িক পরীক্ষা করা হতো। গত ২৯ আগস্ট এক প্রজ্ঞাপনে এনবিআর তা তুলে নিয়েছে। তাতে সামনে আমদানি বাড়তে পারে, এমন আশায় নতুন এই সেবা চালু হয়েছে।

বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ বলেন, ‘পাকিস্তানের সঙ্গে আমাদের বাণিজ্য খুব বেশি নয়। আমদানিতে কড়াকড়ি শিথিল করায় হয়তো সামনে বাড়তে পারে, এ জন্যই এই সেবা চালু হতে পারে। কনটেইনার জাহাজের সেবা প্রথমবার হলেও দুই দেশের বন্দরগুলোর সঙ্গে সাধারণ পণ্যবাহী জাহাজ অনিয়মিতভাবে চলাচল করছে।

শিপিং সূত্র জানায়, দুবাইভিত্তিক কনটেইনার জাহাজ পরিচালনাকারী সংস্থা ‘ফিডার লাইনস ডিএমসিসি’ একটি কনটেইনার জাহাজ দিয়ে নতুন এই সেবা চালু করেছে। সংস্থাটির ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, গ্রুপটির পাকিস্তানের করাচির সঙ্গে ব্যবসা রয়েছে।

বাংলাদেশে কর্ণফুলী লিমিটেডের সহযোগী প্রতিষ্ঠানে রিজেনসি লাইনস লিমিটেড এই সংস্থার বাংলাদেশে স্থানীয় প্রতিনিধি হিসেবে যুক্ত হয়েছে। এটি আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরীর পারিবারিক প্রতিষ্ঠান।
বিষয়টি নিয়ে জানতে গ্রুপটির নির্বাহী পরিচালক আনিস উদ দৌলার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন না ধরায় তার মতামত জানা যায়নি।

তবে গ্রুপটির একজন কর্মকর্তা বলেন, নতুন এই কনটেইনার জাহাজের পরিষেবা শুধু পাকিস্তান-বাংলাদেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। আরও চারটি দেশ ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ভারত ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের বন্দর থেকেও পণ্য আনা-নেওয়া করবে। এই ছয় দেশে পুরো একবার যাত্রা শেষ করতে সময় লাগবে ৩৮ দিন। অর্থাৎ পণ্য আনা-নেওয়া মিলে পুরো যাত্রা শেষ করতে সময় লাগবে ৭৬ দিন। এখন পর্যন্ত ‘এমভি ইউয়ান জিয়ান ফা ঝং’ নামে একটি জাহাজ দিয়ে এই সেবা দেওয়া হচ্ছে।

বন্দরসচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, ‘এমভি ইউয়ান জিয়ান ফা ঝং’ জাহাজটিতে করে মঙ্গলবার চট্টগ্রাম বন্দরে আমদানি হয়েছে ৩৭০ একক কনটেইনার। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে নেওয়া হয়েছে ২৮৯ একক কনটেইনার। এর মধ্যে পণ্যবাহী কনটেইনার ছিল একটি। বাকিগুলো সব খালি কনটেইনার।

তবে পাকিস্তান থেকে কী পণ্য এসেছে, তার বিস্তারিত জানা যায়নি। বন্দরের তথ্যে দেখা যায়, ছয় দেশের এই জাহাজসেবার প্রথম যাত্রায় পণ্য আমদানি হয়েছে মূলত পাকিস্তান থেকে। পণ্য রপ্তানি হয়েছে মাত্র একটি কনটেইনারে, তা–ও গন্তব্য ছিল মালয়েশিয়ার পোর্ট কেলাং।

সূত্র: প্রথম আলো

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম