
সুনামগঞ্জ সাংবাদদাতা:
সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার ভাতগাও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আওলাদ হোসেনের বিরুদ্ধে অনিয়ম দুর্নীতি ও লুটপাটের কারণে অনাস্থার অভিযোগ করেছেন ইউপি সদস্যরা। গত রোববার দুপুরে উপজেলার নির্বাহী কর্মকতার বরাবরে ইউপি চেয়ারম্যান আওলাদ হোসেনসহ ৪ জনকে অভিযুক্ত করে ইউনিয়ন পরিষদের ৯ সদস্য ও ৩ মহিলা সদস্যের সিল স্বাক্ষরিত একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ১৫ বছরে শূন্য থেকে কোটিপতি হয়েছেন ইউপি চেয়ারম্যান আওলাদ হোসেন। তিনি উপজেলার ভাতগাঁও গ্রামের মৃত আব্দুল মান্নানের পুত্র। আওয়ামী লীগ সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় বেসরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক থেকে তিনি ইউপি চেয়ারম্যান হয়েছেন মর্মে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। গত ১৯ মার্চ রাতে থানা পুলিশের ডেভিল হান্ট অভিযানে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ইতিমধ্যে জামিনে বের হয়েছেন আওলাদ হোসেন। তিনি ছাতক উপজেলার কৃষক লীগের আহ্বায়ক ও ভাতগাঁও ইউনিয়নের চেয়ারম্যান। ২০১১ সালের নির্বাচনে ভাতগাঁও ইউনিয়ন থেকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন আওলাদ হোসেন। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর শিক্ষকতা পেশার পাশাপাশি তিনি স্থানীয় সাবেক সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিকের হাত ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যোগ দেন।
এরপর ২০১১ সালে ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এরপর সাবেক এমপির আস্থাভাজন হিসেবেও এলাকায় প্রচার চালাতে থাকেন তিনি। এরপর ২০১৬ সাল থেকে উপজেলা কৃষক লীগের আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করেন আওলাদ হোসেন। এর আগে কখনো তাকে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত দেখেননি এলাকার মানুষ। অভিযোগ উঠেছে আওলাদ হোসেন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে কয়েক বছরের ব্যবধানে বিভিন্ন অনিয়মের মাধ্যমে শুন্য থেকে কোটিপতি হয়েছেন। অবৈধ ভাবে উপার্জিত টাকার সিংহভাগই লন্ডনে পাঠিয়ে দিচ্ছেন বলে গুঞ্জন উটেছে।
উপজেলা প্রশাসনের একটি সূত্র জানিয়েছে, তার গ্রামের বাড়িতে ভাতগাঁও মৌজায় প্রায় ৩০ একর জমি কিনেছেন। সিলেটের আখলিয়া এলাকায় আব্দুল মান্নান ভিলা তার বাবার নামে আলিশান বাসা রয়েছে। যা তিনি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর নির্মাণ করেছেন। এছাড়া তার ছেলেকে ৩৫ লাখ টাকার বিনিময়ে লন্ডনে পাঠিয়েছেন। একটি ছবি জমা দিয়ে সাবেক উপজেলার দুর্নীতিবাজ পিআইও মাহবুর রহমান, সাবেক ইউপি সচিব জীতেন দাস ও তার প্রধান সহযোগী যুবলীগ নেতা শিব্বির আহমদ ভুয়া বিল উটানোর অভিযোগ রয়েছে। যে কারণে চেয়ারম্যানসহ ৪ জনকে অভিযুক্ত করে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন ইউপি সদস্যরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আওয়ামী লীগ সরকারে পতনের পরও আওলাদ হোসেন একক ক্ষমতা বলে স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে ২০২৩, ২০২৪ ও ২৫ অর্থ বছরের সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের তথ্য গোপন করে পরিষদের সদস্যদের মধ্যে সঠিক বন্টন না করে তার নামে ২০ লাখ টাকার প্রকল্প হাতিয়ে নিয়েছেন। যে কারণে মেম্বার ও মহিলা মেম্বারদের মধ্যে বিরোধ ও অসন্তোষ দেখা দেয়। এ বিষয়ে চেয়ারম্যান আওলাদ আলীর সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করে তাকে পাওয়া যায়নি। বিধায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। এ ব্যাপারে উপজেলার নির্বাহী কর্মকতা মো. তরিকুল ইসলাম অভিযোগ প্রাপ্তির সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, বিষয়টি তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।