রাজনীতি এখন অভিশাপে পরিনত হয়েছে। অসৎ নেতৃত্ব বারবার বাংলাদেশকে পিছিয়ে দিচ্ছে। রাজনৈতিক দলের অসৎ এমপি-মন্ত্রী ও নেতাদের কাছে বার-বার হেরে যায় সততা। হেরে যায় জনতা ও বাংলাদেশ। নীরবে নির্বিতে কাঁদে সৎ মানুষগুলো। হারিয়ে যায় মানবতা। দুর্ভোগ পোহাতে হয় সাধারণ মানুষকে। স্বাধীনতার ৫৪ বছর পেরিয়ে গেলেও জনগণ তার স্বাধীনতার সুফল ভোগ করতে পারেনি। এদেশের রাজনীতিবিদেরা সব বিনষ্ট করেছে। তারা মুখে মুখে জনগণের সেবক এবং জন দরদী বলে দাবি করেন। আদতে তাদের ভিতরের চেহারাটা বনের হায়েনাদের চাইতেও জঘন্য। ভালো মানুষের লেবাসের আড়ালে তাদের পৈশাচিক চেহারা ফুটে উঠে কর্ম গুনে। সমাজ তাদের ঘৃণা করে এটা তারা বুঝেও না বুঝার ভান করে। প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা ঐসব অসৎ এমপি-মন্ত্রী ও নেতাদের জন্য সঠিক কাজটি করতে পারেননা। নিয়োগ বাণিজ্য তার মধ্যে অন্যতম। সরকারের একজন উর্ধতন কর্মকর্তা যখন তার দপ্তরে সৎ, যোগ্য ও মেধাবীকে চাকরি দিবেন, তখনই শুরু হয় অসৎ এমপি-মন্ত্রী ও নেতাদের দৌড়ঝাঁপ। শুরু হয় তদবির। কোন প্রকার যোগ্যতা থাক বা না থাক এমপি-মন্ত্রী ও নেতাদের চাপে অযোগ্য ও মেধাহীনদের চাকরি দিতে বাঁধ্য হন কর্তৃপক্ষ। এখানেই ঘটে বিপত্তি। সৎ ও মেধাবীরা হয় বঞ্চিত। অসৎ এমপি-মন্ত্রী ও নেতারা লক্ষ লক্ষ টাকা বাণিজ্য করেন। একজন পিয়নের চাকরির জন্যে ১০/২০ লক্ষ টাকা নেন ঐ সব অসৎ এমপি-মন্ত্রী ও নেতারা। তারা নিজেদের প্যাডে ডিউ লেটার পাঠান এই বলে যে, আমার এই প্রার্থীকে চাকরি দিতেই হবে। কখনো কখনো এমপি-মন্ত্রীরা কর্তৃপক্ষের কাছে ফোন করেন এবং কখনো তার পার্সোনাল রাজনৈতিক সচিবকে পাঠান নিয়োগ কর্তার কাছে।তার চেয়েও ভয়ংকর ঘটনা ঘটান নেতারা। তারা নিজ পদ পদবীর ক্ষমতা দেখিয়ে চাপ প্রয়োগ করতে থাকেন কর্তৃপক্ষকে।
উল্লেখ্য, একজন পিয়নের চাকরির জন্য ১০/২০ লাখ টাকা নিলেও, উর্ধতন কর্মকর্তা বা অফিসার পদের জন্য ৫০/৬০ লাখ টাকাও নেন ঐ সকল অসৎ এমপি-মন্ত্রী ও নেতারা। এমপি-মন্ত্রীরা জাহির করেন, তারা এমপি-মন্ত্রী হয়েছেন কোটি কোটি টাকা খরচ করে। তাই তাদের সব লাভের অংশেই হক আছে। একারনে তারা সব বাণিজ্যই অংশ নেন। এটা তাদের জন্য নিয়মে পরিনত হয়েছে। কোটি টাকার বদলি বাণিজ্যেও তারা প্রভাব খাটান। শুধু তাই নয়, ঠিকাদারি, টেন্ডার বাণিজ্যও তাদের হাতের মুঠায়। তাদের ছাড়া কোন কাজই করতে পারেননা বিভাগীয় প্রধান বা কর্তৃপক্ষ। প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তারা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেননা বলেই দেশ আজ রসাতলে। পাড়া-মহল্লায় ছোটখাটো উন্নয়ন প্রকল্প থেকে শুরু করে জাতীয় মেগা প্রকল্প গুলোতেও তাদের কালো থাবা থেকে রেহাই পায়না কোন প্রতিষ্ঠান। সব জায়গা থেকেই তাদের কমিশন বাণিজ্য চলে। আর এভাবেই তারা আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে যান। এখন তারা আঙ্গুল ফুলে কলাগাছই বনেন না। তারা হয়ে যান একেকজন হিমালয় পর্বত। কেউ বিদেশে পাঁচ ছয়শত বাড়ির মালিকও হয়ে গেছেন। অনেকে হাজার হাজার এমনকি লক্ষ কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। করেছেন বিদেশে পাচার। কেউ দেশে শতশত বিঘা বা একর জমির মালিক। অনেকে ডজন ডজন প্লট বা ফ্ল্যাটের মালিক, এমনকি অনেকে বিশাল রিসোর্ট বানিয়েছেন। অথচ সরকারি কর্মকর্তারা ঐসব দুর্নীতিবাজ দানবদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারেননা। কেউ প্রতিবাদ বা মুখ খুললে তাদের চাকরি চলে যাওয়ার ভয় থাকে। অনেকের চাকরি চলেও গেছে সৎ পথে থাকার জন্যে বা মুখ খোলার জন্যে। সৎ ও প্রতিবাদী অনেককে ওএসডি করে রাখা হয়েছে। এভাবেই দেশকে জাহান্নামে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। জনগণের সাথে করা হয়েছে প্রতারণা। এখানে বলে রাখা ভালো, ঐসব অপকর্মের জন্য মোটা অংকের ঘুষ নেন এমপি-মন্ত্রী ও নেতারা। তারা ঘুষের সামান্য অংশের কিছু কিছু অসৎ কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের দেন। এভাবেই চলে বছর ও যুগের পর যুগ অমানবিকতা। এসব হ্নদয়হীন এমপি-মন্ত্রী ও নেতাদের কারণে মেধাবীরা বঞ্চিত হয়ে সরকারের উপর থেকে আস্থা হারিয়ে ফেলেছেন।ঐ সকল চাকরি প্রার্থী মেধাবীরা নিজেরা নিজেদের সমাজের বোঝা মনে করতে থাকেন। মা-বাবার আশা আকাঙ্খা পুরোন করতে না পেরে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। বেকারত্ব জীবনের অভিশাপ থেকে মুক্তি পেতে অনেকে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। অনেকে বিপদগামী হয়ে পড়েন। এসব হতাশা থেকেই চলে আসে কোটা আন্দোলন। যে কোটা আন্দোলন ৯ দফা থেকে একসময় ১ দফায় পরিনত হয়। ঘটে যায় ২০২৪ এর ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থান বা ছাত্র জনতার বিপ্লব।যার যবনিকাপাত ঘটে একটানা ১৫ বছর ৮ মাসের শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের মাধ্যমে। দেশ ছাড়তে বাঁধ্য হন শেখ হাসিনা। দেশছাড়া হয়েছেন শেখ হাসিনার মন্ত্রী পরিষদের সকল মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীরা। স্পীকার, ডেপুটি স্পীকার, হুইপসহ শত-শত এমপিরা আত্মগোপনে বা বিদেশে পালিয়ে গেছেন। লক্ষ লক্ষ নেতা-কর্মী আত্মগোপনে চলে গেছেন। জাতি মনে করে, কোন এমপি-মন্ত্রী ও নেতা নয়। এদেশকে সোনা দিয়ে মুড়িয়ে দিতে পারেন একমাত্র প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। যদি এমপি-মন্ত্রী ও নেতারা তাদের স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেন। এদেশে সৎ মানুষের শাসন কায়েম করতে হলে সৎ মানুষ নির্বাচনের সুযোগ দিতে হবে। সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী, পুলিশ, বিজিবি, আনসার, বিডিজেসহ সকল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সরকারি আধাসরকারী এবং স্বায়ত্তশাসিত সকল বিভাগ ও প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের বেলায় এমপি-মন্ত্রী ও নেতাদের সুপারিশে নয়। নিয়োগ দিবেন যোগ্যতা ও মেধার ভিত্তিতে বিভাগের নিয়োগ কর্তা। এখানে কোন সুপারিশ বা হস্তক্ষেপ চালানো যাবেনা। তবেই দেশ হবে স্থিতিশীল এবং শান্তিময়। আর এ কাজটি প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তারা নির্বিঘ্নে করতে পারলে বাংলাদেশের সকল সেক্টর হয়ে যাবে অনিয়ম ও দুর্নীতিমুক্ত। সরকারি তথ্যমতে বাংলাদেশে সরকারি চাকরিজীবী আছেন ১২ লাখ ১৭ হাজার ৬২ জন। এদের মধ্যে সবাই দুর্নীতিবাজ নন। অল্প সংখ্যক দুর্নীতিবাজ রাজনৈতিক আশ্রয় প্রশ্রয়ে থেকে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনেছেন। জনগণ হয়েছে বঞ্চিত। বেশিরভাগই আজো সততার সাথে দেশ ও জনগণের সেবা করে যাচ্ছেন। অনেকেই ভাবতে পারেন আমি রাজনীতি বিদ্বেষি,কিন্তু না,আমি সৎ রাজনীতির পক্ষে ।
এদেশে যতবারই বিপর্যয় এসেছে তার সবকটিই অসৎ রাজনীতিবিদদের কারনে। তাই সবার আগে রজনীতিবিদদের চরিত্র গঠন করতে হবে।
লেখকঃ
এম এ হালিম ঢালী
বীর মুক্তিযোদ্ধা,সাংবাদিক,সংগঠক ও রাজনীতি বিশ্লেষক।
সম্পাদক ও প্রকাশক: মোহাম্মদ মাসুদ || বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ২১/১ নয়াপল্টন, ঢাকা-১০০০ || মোবাইল : ০১৫১১৯৬৩২৯৪,০১৬১১৯৬৩২৯৪ || ই- মেইল: dailysobujbangladesh@gmail.com || ওয়েব : www.dailysobujbangladesh.com
Copyright © 2025 দৈনিক সবুজ বাংলাদেশ. All rights reserved.