ডেস্ক রিপোর্ট :
নাসার নতুন এই পদক্ষেপের ঘোষণা আসে সোমবার (২০ অক্টোবর)। সংস্থার ভারপ্রাপ্ত প্রধান শন ডাফি টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে জানান, স্পেসএক্সের দেরির কারণে চন্দ্রযান তৈরির প্রকল্পটি পুনরায় দরপত্রের জন্য উন্মুক্ত করা হবে। তার ভাষায়, আমি এই চুক্তিটি আবার উন্মুক্ত করার প্রক্রিয়ায় আছি। আমার ধারণা বলে অরিজিনের মতো কোম্পানিগুলো এতে অংশ নেবে হয়তো অন্যরাও আসবে। অর্থাৎ এবার প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারবে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ মহাকাশ প্রতিষ্ঠানগুলো, যা নাসার প্রকল্পে নতুন গতি আনতে পারে।
মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার আর্টেমিস চন্দ্র অভিযান মানব ইতিহাসে আবারও চাঁদে অবতরণের এক নতুন অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত। এই অভিযানের জন্য চন্দ্রযান তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল ইলন মাস্কের মালিকানাধীন বিখ্যাত মহাকাশ সংস্থা স্পেসএক্স কে। তবে নির্ধারিত সময়সীমায় কাজ শেষ করতে না পারায় এখন নাসা নতুন করে এই চুক্তি অন্য কোম্পানির জন্য উন্মুক্ত করতে যাচ্ছে। এতে করে নাসার দীর্ঘমেয়াদি চন্দ্র অভিযানের পরিকল্পনায় এক বড় পরিবর্তন দেখা দিয়েছে।
শন ডাফি জানান, চাঁদে অবতরণের সময়সীমা সামনে রেখে তারা এখন এমন একটি অংশীদার খুজছেন, যারা দ্রুত ও নির্ভরযোগ্যভাবে কাজ সম্পন্ন করতে পারবে। তার মন্তব্যে বোঝা যায়, নাসা স্পেসএক্সের প্রতি আস্থা হারায়নি, তবে সময় ব্যবস্থাপনায় প্রতিষ্ঠানটি পিছিয়ে পড়েছে।নাসার সিদ্ধান্তে এখন চাঁদে মানুষ পাঠানোর দৌড়ে জেফ বেজোসের ব্লু অরিজিনসহ আরও কয়েকটি কোম্পানির সুযোগ তৈরি হয়েছে। প্রায় অর্ধশতাব্দীর মধ্যে এই প্রথমবারের মতো বেসরকারি সংস্থাগুলোর মধ্যে এমন প্রতিযোগিতা হতে যাচ্ছে যেখানে বিজয়ী প্রতিষ্ঠান পাবে মানুষবাহী চন্দ্রযান তৈরির দায়িত্ব।
নাসার এই আর্টেমিস চন্দ্র অভিযান ২০২৭ সালের মধ্যেই মানুষকে চাঁদে পাঠানোর লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিল। অন্যদিকে চীনও ২০৩০ সালের মধ্যে নিজস্ব মানবচন্দ্র অভিযান শুরু করতে চায়। এই দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দেশের মধ্যে প্রতিযোগিতা এখন অনেকটাই মর্যাদার প্রশ্নে পরিণত হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে স্পেসএক্সের বিলম্ব নাসার পরিকল্পনায় রাজনৈতিক চাপ বাড়িয়ে তুলেছে, বিশেষ করে মার্কিন প্রশাসনের ভেতরে।
নাসা জানিয়েছে, তাদের অভ্যন্তরীণ পরামর্শক কমিটি ইতিমধ্যে সতর্ক করেছে যে, স্পেসএক্সের দেরির কারণে চাঁদে অবতরণের সময়সূচি কয়েক বছর পিছিয়ে যেতে পারে। এতে করে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যেই অভিযান সম্পন্ন করার সম্ভাবনা ঝুঁকিতে পড়েছে।২০২১ সালে স্পেসএক্স নাসার কাছ থেকে ৪৪০ কোটি ডলারের একটি চুক্তি পায় স্টারশিপ ল্যান্ডার তৈরির জন্য, যা দিয়ে ২০২৭ সালের মধ্যে নভোচারীদের চাঁদে অবতরণের কথা ছিল। প্রকল্পটি শুরুতে দ্রুত অগ্রসর হলেও সম্প্রতি একাধিক প্রযুক্তিগত বাধা ও সময়সূচি জটিলতায় প্রতিষ্ঠানটি পিছিয়ে পড়েছে বলে স্বীকার করেছেন নাসা কর্মকর্তারা।
শন ডাফি বলেন, স্পেসএক্স অসাধারণ সব কাজ করছে; তবে তারা নির্ধারিত সময়সীমা থেকে কিছুটা পিছিয়ে আছে। তার মতে, এই বিলম্বের পেছনে স্পেসএক্সের অন্যান্য বড় প্রকল্প যেমন স্টারশিপ রকেট, স্টারলিংক স্যাটেলাইট নেটওয়ার্ক ও মঙ্গল মিশন প্রস্তুতি মূল কারণগুলোর একটি।এদিকে ব্লু অরিজিন ছাড়াও লকহিড মার্টিন জানিয়েছে, তারা একটি দল গঠন করে নতুন এই চন্দ্রযান প্রতিযোগিতায় অংশ নেবে। এর ফলে মহাকাশ শিল্পে আবারও শুরু হচ্ছে তীব্র প্রতিযোগিতা, যা হয়তো ১৯৬০-এর দশকের মার্কিন-সোভিয়েত মহাকাশ প্রতিযোগিতার মতো নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা করবে।
ব্লু অরিজিনের মালিক জেফ বেজোস বহুদিন ধরেই চাঁদে বাণিজ্যিক অবতরণ প্রকল্পে অংশ নিতে আগ্রহ প্রকাশ করছিলেন। এবার হয়তো সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের সুযোগ পেতে যাচ্ছে তার প্রতিষ্ঠান।তবে নাসার ঘোষণায় কোনো হতাশা প্রকাশ করেননি স্পেসএক্সের সিইও ইলন মাস্ক। বরং তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে লিখেছেন, স্পেসএক্স মহাকাশশিল্পের অন্য যেকোনো প্রতিষ্ঠানের তুলনায় বজ্রগতিতে এগোচ্ছে। স্টারশিপই শেষ পর্যন্ত পুরো চন্দ্র অভিযান সম্পন্ন করবে। মাস্কের বক্তব্যে বোঝা যায়, স্পেসএক্স এখনও নাসার প্রধান অংশীদার থাকতে চায় এবং তাদের প্রযুক্তিগত সক্ষমতা নিয়েও প্রতিষ্ঠানটির আত্মবিশ্বাস অটুট।
সম্পাদক ও প্রকাশক: মোহাম্মদ মাসুদ || বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ২১/১ নয়াপল্টন, ঢাকা-১০০০ || মোবাইল : ০১৫১১৯৬৩২৯৪,০১৬১১৯৬৩২৯৪ || ই- মেইল: dailysobujbangladesh@gmail.com || ওয়েব : www.dailysobujbangladesh.com
Copyright © 2025 দৈনিক সবুজ বাংলাদেশ. All rights reserved.