তারিখ লোড হচ্ছে...

জেনেভা ক্যাম্পে লাশের উপর মামলা বাণিজ্য

জেনেভা ক্যাম্পে লাশের উপর মামলা বাণিজ্য

* সরকার পতনের পর টানা ১৫ মাস ধরে বিরতিহীন সংঘর্ষে
* নিহত ১২, আহত শতাধিক।
* প্রশাসনের নীরবতা ও জনপ্রতিনিধির অনুপস্থিতিতে মাদক সিন্ডিকেটের দখল যুদ্ধ

 

মোঃ মহিব্বুল্লাহঃ
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্প এখন এক ভয়ঙ্কর নৈরাজ্যের জনপদ। মাদক ব্যবসার দখলদারিত্ব নিয়ে টানা ১৫ মাস ধরে চলছে সংঘর্ষ, বোমা–গুলির আতঙ্ক আর “লাশের উপর মামলা বাণিজ্য।” প্রশাসনের ব্যর্থতা, জনপ্রতিনিধির শূন্যতা ও মাদক সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যে পুরো ক্যাম্প পরিণত হয়েছে অঘোষিত যুদ্ধক্ষেত্রে।

*বোমা-পিস্তলে কেঁপে উঠছে ক্যাম্প:
বিগত বছরের ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর শুরু হয় জেনেভা ক্যাম্পের ভয়াবহ সংঘর্ষ। স্থানীয়রা জানান, আগে এসব সংঘর্ষ হতো লাঠিসোঁটা বা ইটপাটকেল নিয়ে। কিন্তু এবার হাতে উঠেছে বোমা ও পিস্তল। ১৫ মাস ধরে চলা এ দখলযুদ্ধে প্রাণ গেছে অন্তত ১০ থেকে ১২ জনের, আহত হয়েছেন কয়েক শতাধিক। সরকার পতনের পর থেকে প্রশাসনের তদারকি না থাকায় এবং জনপ্রতিনিধির অনুপস্থিতিতে সংঘর্ষ থামানোর মতো কেউ নেই। ফলে একের পর এক প্রাণ ঝরছে, বাড়ছে ভয় ও শঙ্কা। এক স্থানীয় প্রবীণ নাগরিক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন,“এখন এটা আর ক্যাম্প না, পুরোপুরি যুদ্ধক্ষেত্র। প্রতিদিনই গুলি, বোমা আর আতঙ্ক।”

* লাশের উপর মামলার বাণিজ্য
সংঘর্ষে নিহতদের পরিবারকে ব্যবহার করে এখন চলছে মামলার বাণিজ্য। জানা যায়, অন্তত ৯ থেকে ১০টি হত্যা মামলা হয়েছে—কিন্তু অধিকাংশ বাদী নিজের মামলার আসামিকেও চিনেন না। নিহতদের অশিক্ষিত ও অসহায় পরিবারকে কাজে লাগিয়ে মাদক ব্যবসায়ীরা নিজেদের ইচ্ছেমতো যাকে খুশি আসামি বানিয়ে দিচ্ছে। কখনও প্রতিপক্ষ গ্রুপের নেতাকে, কখনও মাদকবিরোধী মানুষকেও। প্রতিটি মামলার পেছনে চলছে বড় অঙ্কের টাকার লেনদেন। স্থানীয় এক যুবক বলেন,“এখানে এখন লাশেরও দাম আছে। টাকার বিনিময়ে যাকে খুশি মামলায় ঢুকিয়ে দেয়। মৃত মানুষের নামেই এখন ব্যবসা হচ্ছে।”

* প্রশাসনের উদাসীনতা ও মিথ্যা মামলা:
সরকার পতনের পর থেকে জনপ্রতিনিধিহীন জেনেভা ক্যাম্প এখন প্রশাসনিক শূন্যতায় ভুগছে। এই দুর্বলতাকে পুঁজি করে মাদক সিন্ডিকেট আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। সম্প্রতি ক্যাম্পের চেয়ারম্যান মুরাদ কেদেরী দেশের বাইরে অবস্থান করলেও, গত ২৫ অক্টোবরের জাহিদ হত্যা মামলায় তাকেও পুনরায় আসামি করা হয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, “যে দেশে নেই তাকেও মামলায় জড়ানো হচ্ছে—এটা ক্যাম্প নয়, মিথ্যার কারখানা।”

* মানুষের আর্তনাদ:
“আমরা শান্তি চাই, লাশ নয়” দীর্ঘদিন ধরে সংঘর্ষ, আতঙ্ক ও মামলা বাণিজ্যে ক্লান্ত ক্যাম্পবাসী এখন প্রশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপ দাবি করছে।“আমরা আর মরতে চাই না। প্রতিদিনই ভয় নিয়ে বাঁচি। কেউ আমাদের বাঁচাও।”বলেন নিহত এক যুবকের মা।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এটি কেবল একটি ক্যাম্পের সংঘর্ষ নয়—এটি ঢাকার অভ্যন্তরীণ প্রশাসনিক দুর্বলতার এক ভয়াবহ প্রতিচ্ছবি। মাদক, মামলা ও মৃত্যু—এই তিনের জালে বন্দি জেনেভা ক্যাম্প আজ এক মানবিক বিপর্যয়ের নাম।

চনপাড়া বস্তির মলমপার্টি,খয়ের পার্টির প্রধান মাদকের গডফাদার বজলু মেম্বার গ্রেফতার

স্টাফ রিপোর্টারঃ

র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) ওপর হামলার অভিযোগে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার চনপাড়ার কায়েতপাড়া ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান-১ বজলুর রহমানকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

শুক্রবার (১৮ নভেম্বর) বিকেল ৪টার দিকে তাকে চনপাড়া এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আব্দুল্লাহ আল মোমেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।তিনি জানান, গত ২৮ সেপ্টেম্বর চনপাড়ার কায়েতপাড়ায় অভিযানে গেলে র‌্যাবের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় চনপাড়ার প্যানেল চেয়ারম্যান-১ বজলুর রহমানকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১।

র‍্যাব জানায়— গত ১০ নভেম্বর রাতে র‌্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ সিটি শাহীন নিহত হয়। সিটি শাহীনের সব অপকর্মের সেল্টারদাতা ছিলেন বজলু চেয়ারম্যান। এছাড়া র‍্যাবের ওপর হামলার নেতৃত্ব দেন বজলু।

সম্প্রতি চনপাড়া গিয়ে সরেজমিনে জানা গেছে— নিহত সিটি শাহীনের একটি বড় অপরাধ বাহিনী রয়েছে এলাকায়। তিনি ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং চনপাড়া মাদক নির্মূল কমিটির সদস্যসচিব ছিলেন। তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী। হামলা-নির্যাতনের ভয়ে শাহীন ও তার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কথা বলার সাহস নেই কারো।

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক অধিকাংশই জানান, চনপাড়ায় হয় না এমন কোনো কিছু নেই। চনপাড়ায় রাতকে দিন আবার দিনকে রাত বানিয়ে দেওয়া যায়। এখানে এমন কিছু মানুষ আছেন যাদের নিয়ন্ত্রণে বস্তিবাসী। বস্তিতে কোনো অনুষ্ঠান করতে গেলেও প্রভাবশালীদের অনুমতি লাগে। তাদের কথা না শুনলে চলে নির্যাতন ও চাঁদাবাজি।

স্থানীয়রা জানায়— বজলু চেয়ারম্যানের ভয়ে চনপাড়ার কারো মুখ খোলার সাহস নেই। বজলুসহ তার চার ভাই নিয়ন্ত্রণ করে চনপাড়া বস্তি। সঙ্গে রয়েছে কিছু অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী। এসব অপরাধীরা দিনে-দুপুরে মাদকের কারবার, মারধর ও খুনসহ নানা অপরাধ করে বেড়ায়।ঢাকা শহরের খয়ের পার্টি,মলম পার্টির নেতা বজলু মেম্বার

বস্তিবাসী বজলু ও তার লোকজনের বিষয়ে ভয়েও মুখ খোলে না। কথিত আছে— বজলুর কথা ছাড়া সেখানে ছাড়া গাছের পাতাও নড়ে না। তার নামে ভয় দেখিয়ে ঘুম পাড়ানো হয় বস্তির শিশুদের। বুয়েট ছাত্র ফারদিন নূর পরশ খুনের জেরে আলোচনায় এসেছে চনপাড়া বস্তির নাম।

বজলুর নামে কেবল রূপগঞ্জ থানাতেই হত্যা, অস্ত্র, মাদকের মামলা মিলিয়ে ১২টি মামলা রয়েছে। অস্ত্র ও খুনের মামলায় এক সময়ের জেলখাটা বজলু এখন নাম লিখিয়েছেন সমাজের প্রভাবশালী ব্যক্তির খাতায়।

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম