তারিখ লোড হচ্ছে...

দশ কোম্পানির ব্যাংক ঋণ ৬৪ হাজার কোটি টাকা

স্টাফ রিপোর্টার॥
মাত্রাতিরিক্ত ঋণের প্রভাব পড়ছে শেয়ারবাজারেও। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) তালিকাভুক্ত শীর্ষ ১০ কোম্পানির সর্বশেষ ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৬৪ হাজার ১১৩ কোটি টাকা। কিন্তু এসব কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন মাত্র ৪ হাজার ৭৫৫ কোটি টাকা।

এর অর্থ হলো প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণ ও মূলধন অনুপাত (ডেট ইক্যুইটি রেশিও) ৯৪:০৬। অ্যাকাউন্টিং মানদণ্ডে একে বলা হয় ফাইন্যান্সিয়াল লিভারেজ (ঋণজনিত ঝুঁকি) অত্যন্ত বেশি।

একক কোম্পানি হিসাবে সবচেয়ে বেশি ঋণ রয়েছে সরকারি কোম্পানি পাওয়ার গ্রিডের। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির ঋণের স্থিতি ২৪ হাজার ৫৬৯ কোটি টাকা, যা পরিশোধিত মূলধনের ৩৫ গুণ।

আর সামগ্রিকভাবে তালিকাভুক্ত সব কোম্পানির ঋণ ১ লাখ ১৫ হাজার কোটি টাকা। যা ব্যাংকিং খাতের মোট ঋণের ৮ শতাংশ। ডিএসই সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। অন্যদিকে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সংসদে মঙ্গলবার শীর্ষ ২০ ঋণখেলাপি প্রতিষ্ঠানের তালিকা দিয়েছেন। সেখানেও শেয়ারবাজারের দুটি কোম্পানির নাম রয়েছে। অর্থাৎ ঝুঁকিতে রয়েছেন এসব কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগকারীরা।

আবার কোনো কোনো কোম্পানি শেয়ারবাজার থেকে টাকা নিয়ে ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করছে। এ কারণে ওই কোম্পানি বিনিয়োগকারীদের ভালো লভ্যাংশ দিতে পারছে না। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোনো কারণে এসব কোম্পানি দেউলিয়া হলে ব্যাংক ঋণ পরিশোধের পর বিনিয়োগকারীদের টাকা ফেরত দিতে পারবে না। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এসব কোম্পানি একদিকে মুদ্রাবাজারে সংকট তৈরি করছে। পাশাপাশি পুঁজিবাজারকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। কিন্তু গত ৫ বছরের হিসাবে কোম্পানিগুলোর ওই অনুসারে উৎপাদন ও কর্মসংস্থান বাড়েনি।

জানতে চাইলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপেদষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, কোম্পানি ঋণ বেশি থাকলে দায় বেড়ে যায়। কারণ কোম্পানি যে মুনাফা করবে, সেখান থেকে সবার আগে ঋণের সুদ পরিশোধ করতে হয়। এরপর সরকারকে কর দিতে হয়। সবকিছু বাদ দিয়ে বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দেয়। আর কোনো কারণে কোম্পানি দেউলিয়া হলেও সবার আগে ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করতে হয়। ওই বিবেচনায় ইক্যুইটির চেয়ে ঋণ বেশি হলে ওই কোম্পানির ঝুঁকি বেশি।
ডিএসই সূত্র জানায়, বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে তারা তালিকাভুক্ত কোম্পানির ব্যাংকের তথ্য হালনাগাদ করছে। সর্বশেষ ২০২২ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত ঋণের তথ্য তাদের কাছে রয়েছে।

এ তথ্যে দেখা গেছে, তালিকাভুক্ত চার শতাধিক কোম্পানির ঋণ ২ লাখ ৭ হাজার ৪৪৮ কোটি টাকা। এসব কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ৬৮ হাজার ৬৮০ কোটি টাকা। তবে মোট ঋণের মধ্যে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বন্ড ও অন্যান্য কিছু দায় রয়েছে। এই বন্ড ও অন্যান্য দায়ের পরিমাণ ৯১ হাজার ৯৪৫ কোটি টাকা। এটি বাদ দিলে তালিকাভুক্ত কোম্পানির প্রকৃত ঋণ ১ লাখ ১৫ হাজার ৫০৩ কোটি টাকা।

ডিএসইর ওয়েবসাইটের তথ্য অনুসারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঋণ নিয়েছে সরকারি কোম্পানি পাওয়ার গ্রিড। ৭১২ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধনের এ প্রতিষ্ঠানটি দেশি-বিদেশি কোম্পানির কাছ থেকে নিয়েছে ২৪ হাজার ৫৬৯ কোটি টাকা। যা পরিশোধিত মূলধনের প্রায় ৩৫ গুণ। এর মধ্যে স্বল্পমেয়াদি ঋণ ২৪ হাজার ২৭৮ কোটি।

দীর্ঘমেয়াদি ঋণ ২৯০ কোটি। তবে ঋণের উল্লেখযোগ্য একটি অংশ নেওয়া হয়েছে বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক এবং জাপানি প্রতিষ্ঠান জাইকার কাছ থেকে। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা বিএসআরএম লিমিটেডের ঋণ ৬ হাজার ৮১২ কোটি টাকা। কিন্তু পরিশোধিত মূলধন ২৯৮ কোটি টাকা। আবার এই গ্রুপের আরেক প্রতিষ্ঠান বিএসআরএম স্টিলের ঋণ ৫ হাজার ৩৪৪ কোটি টাকা।

অর্থাৎ এই গ্রুপের দুটি প্রতিষ্ঠানের কাছে ঋণের পরিমাণ ১২ হাজার ১৫৬ কোটি টাকা। এছাড়াও শীর্ষ তালিকায় রয়েছে জিপিএইচ ইস্পাত, এসিআই লিমিটেড এবং কেয়া কসমেটিকসের মতো প্রতিষ্ঠান।

শীর্ষ দশ কোম্পানির ঋণ ৬৪ হাজার ১১৩ কোটি টাকা। আবার ১ হাজার কোটি টাকার ঋণ রয়েছে এ ধরনের কোম্পানির সংখ্যা ২৪টি। এই ২৪ কোম্পানির ঋণের পরিমাণ ৮৫ হাজার ৯০২ কোটি টাকা।

অর্থাৎ মোট ঋণের ৭৫ শতাংশই শীর্ষ ২৪ কোম্পানিতে। সরকারি আরেক কোম্পানি ডেসকোর ঋণ ২ হাজার ৮৯৭ কোটি টাকা। যদিও এই পাওয়ার গ্রিড এবং ডেসকো সরকারি কোম্পানি।

এরপরও এতে বিনিয়োগকারীদের শেয়ার রয়েছে। বিনিয়োগকারীদের বোনাস বা রাইট শেয়ার না দিয়ে অতিরিক্ত ঋণের মাধ্যমে তাদের দায় বাড়িয়েছে। এছাড়া প্রতিষ্ঠান দুটির আরও শেয়ার ছাড়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীরও নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু এ ব্যাপারে তেমন কোনো অগ্রগতি নেই।

অন্যদিকে মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে শীর্ষ ২০ ঋণখেলাপির তথ্য দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। সেখানে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত দুই কোম্পানির নাম উঠে এসেছে। এরমধ্যে ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ডের ঋণের স্থিতি ১ হাজার ৮৫৫ কোটি টাকা।

আবার এই টাকার মধ্যে ১ হাজার ৫২৯ কোটি টাকাই খেলাপি। এছাড়াও শীর্ষ খেলাপির তালিকায় রয়েছে অ্যাপোলো ইস্পাতের নাম। প্রতিষ্ঠানের ৮৭২ কোটি ৭২ লাখ টাকার মধ্যে ৬২৩ কোটি ৩৪ লাখ টাকাই খেলাপি।

ফিনিক্স গ্রুপের এই প্রতিষ্ঠানটি ২০১৩ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। ওই সময়ে কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে জালিয়াতি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল যুগান্তর। এরপরও অনুমতি দিয়েছিল বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন।

জানা গেছে, বর্তমানে ব্যাংকিং খাতের মোট ঋণের স্থিতি ১৪ লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকা। নিয়মিত ঋণ ১৩ লাখ ১ হাজার কোটি টাকা। আবার খেলাপি ঋণ প্রায় ১ লাখ ৩৫ হাজার কোটি। তবে নিয়মিত ঋণের মধ্যেও বিপুল অঙ্কের খেলাপি রয়েছে।

একাধিকবার পুনঃতফসিল, বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষ সুবিধা এবং উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশের কারণে এসব ঋণখেলাপি দেখানো হচ্ছে না। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের হিসাব অনুসারে বর্তমানে খেলাপি ঋণ ৩ লাখ টাকা পৌঁছেছে।

 

এনআরবি লাইফের চেয়ারম্যান কিবরিয়া ও সিইও শাহ জামালের দেশত্যাগ রোধে পুলিশের চিঠি

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥

এনআরবি ইসলামিক লাইফ ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যান কিবরিয়া গোলাম মোহামাদ ও সিইও মো. শাহ জামাল হাওলাদারের দেশ থেকে পলায়নের শঙ্কায় তাদের বিদেশ গমন রোধ চেয়ে চিঠি দিয়েছে পুলিশ। রাজধানীর আদাবর থানায় দায়ের করা এক মামলার সুষ্ঠু তদন্ত ও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের স্বার্থে আদাবর থানার উপ-পরিদর্শক রাকিবুল ইসলাম ঢাকা মহানগর পুলিশের (তেজগাঁও বিভাগ) উপ-কমিশনারের মাধ্যমে পুলিশের বিশেষ শাখার বিশেষ পুলিশ সুপার (ইমিগ্রেশন) এবং বিশেষ পুলিশ সুপার (ল্যান্ড অ্যান্ড সী পোর্ট) বরাবর এই চিঠি দিয়েছেন।

তাদের পাসপোর্ট নম্বরসহ বিস্তারিত ব্যক্তিগত তথ্য উল্লেখ করে চিঠিতে বলা হয়েছে, আদাবর থানায় দায়ের করা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি কিবরিয়া গোলাম মোহামাদ (আওয়ামী লীগ নেতা ও অর্থ যোগানদাতা) এবং মো. শাহ জামাল হাওলাদার কোটা আন্দোলন দমনের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত ছিল। উক্ত আসামি বিদেশে চলে গেলে মামলার তদন্তে বিঘ্ন ঘটার সমূহ সম্ভাবনা বিদ্যমান। অতএব মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে উক্ত আসামি যাহাতে বিদেশে যেতে না পারে সে ব্যবস্থা গ্রহণ করা একান্ত প্রয়োজন। অতএব মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে বর্ণিত আসামির বিদেশ গমন রোধের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে জনাবের মর্জি হয়।

এনআরবি ইসলামিক লাইফ ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যান কিবরিয়া গোলাম মোহামাদ ওরফে জি এম কিবরিয়া পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ দোসর। বর্তমানে কার্যক্রম নিষিদ্ধ সর্ব ইউরোপীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ইতালি আওয়ামী লীগের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক। কিবরিয়ার স্ত্রী ফ্যাসিস্টের আরেক দোসর সর্ব ইউরোপীয় আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক হোসনে আরা বেগম। যাকে কাগজে কলমে কোম্পানির ওভারসিজ এজেন্সি ডিরেক্টর বানিয়ে কমিশনের নামে পাচারের মাধ্যমে লুটে নিয়েছে বিপুল অংকের অর্থ। যার প্রধান সহযোগী কোম্পানির বিতর্কিত সিইও ও আওয়ামী লীগের আরেক অর্থদাতা শাহ্ জামাল হাওলাদার।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, ফ্যাসিস্টের অর্থায়নকারী জিএম কিবরিয়া ও তার স্ত্রী হোসনে আরাকে ২০২১ সালে উপঢৌকন হিসেবে এনআরবি ইসলামিক লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিটির লাইসেন্স দেয় পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনা। লাইসেন্স পেয়েই এনআরবি ইসলামিক লাইফ থেকে নানা উপায়ে অর্থ বের করত ফ্যাসিস্টের অর্থায়নকারী গোলাম কিবরিয়া। যে কারণে প্রতিষ্ঠার তিন বছরের মাথায় নানা অনিয়মে খাদের কিনারে এসে পড়েছে কোম্পানিটি। ঝুঁকির মুখে পড়েছে বীমা গ্রাহকদের আমানত। বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) তদন্তেও উঠে এসেছে কোম্পানিটির নানা অনিয়ম, দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের চিত্র।

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম