তারিখ লোড হচ্ছে...

মোয়াজ্জেম’র বিরুদ্ধে ১১শ কর্মকর্তাকে পোস্টিং বাণিজ্য , ঘুষ গ্রহনের অভিযোগ

বিশেষ প্রতিনিধি:
স্বৈরাচার হাসিনা সরকার বিদায় হয়েছে আজ ১৫ মাস তারপরেও চরম অস্থিরতা চলছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)এ। ঘুষ, দুর্নীতি, নীতিমালা বহির্ভূত বদলি বাণিজ্য, দায়িত্ব ও কর্তব্যে অবহেলা সব মিলিয়ে সংস্থাটি বর্তমানে চরম ভাবমূর্তি সংকটে। বেশিরভাগ দক্ষ ও সৎ কর্মকর্তাদের মধ্যে দেখা দিয়েছে সীমাহীন অস্থিরতা। সবচেয়ে বিতর্কিত অবস্থানে রয়েছেন এনবিআর নতুন প্রশাসনে সদস্য হিসেবে পদোন্নতিপ্রাপ্ত ফ্যাসিবাদের দোসর ১৫ ব্যাচের কর্মকর্তার মোঃ মোয়াজ্জেম হোসেন। তিনি গত ৩ জুলাই এই পদে যোগদান করার পর নীতিমালা বহির্ভূত বদলী নিয়োগ চালিয়ে কর্মরত কর্মকর্তাদের মধ্যে অস্থিরতা সৃষ্টি করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তিনি পৃথক বদলী আদেশে এ পর্যন্ত প্রায় ১১শ কর্মকর্তাকে বদলি নিয়োগ করেছেন। প্রায় অর্ধশত কোটি টাকা এই বদলি খাত থেকে আয় করারও অভিযোগ উঠেছে ঐ সদস্য প্রশাসনের বিরুদ্ধে। এআরও, আরও, এসি, ডিসি, জেসি, কমিশনার পর্যায়ের বেশিরভাগ কর্মকর্তাকেই বদলি করা হয়েছে। মোটা অংকের বিনিময়ে লোভনীয় পোস্টিং আবার চাহিদা মোতাবেক ঘুষ দিতে না পারায় ডাম্পিং পোস্টিং নিয়েও কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে এনবিআর’র সার্বিক কর্মকান্ডে স্থবিরতা নেমে এসেছে। সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বদলি বাণিজ্য করে অর্ধশত কোটি টাকা গ্রহণের বিষয়টি এখন ওপেন সিক্রেট। এহেন ঘুষ কেলেঙ্কারির বিষয়টি জানাজানি হলে সম্প্রতি প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা রায়হান মেহেবুব সহ শাখার সৎ কর্মকর্তারা মোয়াজ্জেমের সাথে দায়িত্ব পালনে অপারগতা জানালে ৩৩ ব্যাচের ঐ কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়। এ নিয়েও কর্মকর্তাদের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। সূত্রমতে এআরও সারোয়ার হোসেন, আবু বকর সিদ্দিক, শাহ মোহাম্মদ আশিকুর রহমান, আজিজ প্রসাদ রুদ্র, মো: আবুল বাশার, সানাউল হক, বাবুল সিংহ, আ: কাদের সানাউল্লাহ, শামীম হোসেন, বনজ কান্তি রায়, আবু হোসেন, শারমিন জাহান, শাহজাহান কবির, কপিল দেব গোস্বামী, প্রভৃতি কর্মকর্তাদের কাছ থেকে ২০-২৫ লাখ টাকা ঘুষের মাধ্যমে বদলী নীতিমালা লংঘন করে বদলি বাণিজ্য করা হয়েছে। অনুরূপ আরও পদের কর্মকর্তাদের লোভনীয় পদে নিয়োগ দিতে ২৫-৩০ লাখ, এসিদের ৩০-৫০ লাখ, ডিসিদের ৪০-৫০ লাখ, জেসিদের ৫০-৬০ লাখ ও কমিশনার পদে রদবদলে লোভনীয় কর্মস্থলে পোস্টিং দিতে ৩-৫ কোটি টাকার ঘুষ বাণিজ্যের ঘটনা ঘটেছে।

এনবিআর সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন হচ্ছেন আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া ও বিমানবন্দর থানা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি ফাতেমা জামান সাথীর খুবই ঘনিষ্ঠজন পরিচয়ে বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে বেপরোয়া ক্ষমতাসিন হয়ে পড়েন। ঐ সময়ে সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদেরও তিনি থোরাই কেয়ার করতেন। ঘুষ দুর্নীতির মাধ্যমে অবীধভাবে হাতিয়ে নিয়েছেন শক শত কোটি টাকা। ’বিসিএস (শুল্ক ও আবগারী) দপ্তরের ১৫ ব্যাচের কর্মকর্তা মোয়াজ্জেম চাকুরীকালে ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে অন্যায় সুবিধা দিয়ে সহকর্মীদের নিকট মুনাফিকি করে ঘুষ গ্রহন করেন। তিনি বাইরে সততার লেবাস দেখান কিন্তু অবৈধ অর্থ লেনদেন হতে বিরত থাকেননি। তার বিরুদ্ধে আমেরিকায় অর্থ পাচার, পাবনায় অবস্থিত ইউনিভার্সেল গ্রুপের কাছে ১১ কোটি টাকা ঘুষ গ্রহন, ঢাকা কাস্টমস কমিশনার থাকাকালে ব্যাপক দুর্নীতির প্রমান এবং যশোরের কমিশনার থাকাকালে অবৈধ সিগারেট বাণিজ্য হতে শত শত কোটি টাকা অবৈধ অর্থ উপার্জনের সত্যতা রযেছে।

মোয়াজ্জেমের ছেলে আমেরিকার John Hopskin University তে সেমিস্টার প্রতি ৩৫,০০০ ডলার প্রদান করে পড়ালেখা করে। মোয়াজ্জেম হুন্ডির মাধ্যমে এই টাকা আমেরিকায় প্রদান করেন। ছেলে রাগীব মোয়াজ্জেমের এই লেখাপড়ার খরচ কোন মাধ্যমে বিদেশে প্রেরন করেছেন তার কোনো বৈধ উৎস নেই। আমেরিকার বাল্টিমোরে সম্প্রতি একটি বাড়ী ক্রয় করেছেন ছেলে ও ছেলে বৌ আদিবা গাল্ফারের নামে। বিষয়টি কাস্টমস ডিপার্টমেন্টের সবাই জানে।

উল্লেখ্য গত এপ্রিল মাসে এনবিআর বিলুপ্ত করে “রাজস্ব নীতি” ও “রাজস্ব ব্যবস্থাপনা” নামে দুটি নতুন বিভাগ গঠনের অধ্যাদেশ জারি হয়। এরপর থেকেই সংস্থার ভেতরে অস্থিরতা দেখা দেয়। অধ্যাদেশ বাতিল ও চেয়ারম্যানের অপসারণ দাবিতে কর্মকর্তারা “সিবিএ স্টাইলে” ধর্মঘট, কলম বিরতি ও “মার্চ টু এনবিআর” কর্মসূচি পালন করেন। এই আন্দোলনের সময় নির্দিষ্ট কিছু সেবা ছাড়া প্রায় সব কার্যক্রম বন্ধ ছিল। মে ও জুনে বাজেট প্রণয়ন ও রাজস্ব আদায়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ সময়েও তারা অচলাবস্থা তৈরি করেন। কেউ কেউ প্রকাশ্যে বদলির আদেশ ছিঁড়ে ফেলেন—যা এনবিআরের ইতিহাসে নজিরবিহীন।
সংস্থার ভাবমূর্তি সংকটে একাধিক ঘটনায় এনবিআরের ভেতরে গভীর অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। কর্মকর্তাদের একটি অংশ বলছেন, এই অনিয়মই সংস্থার ভাবমূর্তিকে নিচে নামিয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সদস্য বলেন, “এটা অস্বীকারের উপায় নেই, এনবিআর ভাবমূর্তি সংকটে আছে। কিছু কর্মকর্তার কারণে পুরো সংস্থাটিই এখন দুর্নীতির প্রতীক মনে হচ্ছে।” একজন কমিশনার বলেন, “এখানে অধিকাংশ কর্মকর্তাই কোনো না কোনোভাবে আর্থিক অনিয়মে জড়িত। পার্থক্য শুধু কে ধরা পড়ছে আর কে পড়ছে না।” একজন দ্বিতীয় সচিবের ভাষায়, “এখন এনবিআরে কাজ করি এই পরিচয় দেওয়াটাই অনেক সময় লজ্জার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ”তবে এনবিআর বলছে, অনলাইনভিত্তিক কার্যক্রম চালুর মাধ্যমে দুর্নীতি কমানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। চলতি করবর্ষ থেকে ই-রিটার্ন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আয়কর ও ভ্যাট অডিটও অনলাইন প্রক্রিয়ায় হচ্ছে। ভ্যাট রিফান্ড ও আমদানি-রপ্তানি সংক্রান্ত নথিপত্রও ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইন্ডোর মাধ্যমে অনলাইনে দাখিল করা যাচ্ছে। কর্তৃপক্ষের আশা, সব কার্যক্রম ডিজিটাল হলে ঘুষ, অনিয়ম ও হয়রানি কমে যাবে এবং ব্যবসায়ীরা স্বস্তি পাবেন।

নিজ আয়কর রিটার্নে অসত্য তথ্য প্রদানকারী এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান দুর্নীতিবাজ সদস্য (শুল্ক ও ভ্যাট প্রশাসন) মোয়াজ্জেম ২জনই স্বৈরাচারের দোসর হওয়ায় হাজারো অভিযোগ উত্থাপন হওয়া সত্বেও চেয়ারম্যান সাহেব বিষয় সমূহ ওভারলুক করে থাকেন বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন  কমিশনার জানান।

এনবিআর সদস্য প্রশাসন মোয়াজ্জেমের এহেন ঘুষ বানিজ্যের ফলে প্রশাসনে চলমান অস্থিরতা নিরসনে ভুক্তভোগী কর্মকর্তাগন  প্রধান উপদেষ্টা ও অর্থ উপদেষ্টার আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

ফতুল্লায় যমুনা অয়েল ডিপোতে ডিজেল চুরির তদন্ত প্রক্রিয়ায় অনিয়মের অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥
নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লা এলাকায় অবস্থিত যমুনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেড-এর ফতুল্লা ডিপো থেকে সম্প্রতি ৩ লাখ ৭৮ হাজার ১৬৮ লিটার ডিজেল চুরির ঘটনা প্রকাশ পেয়েছে। এই বিপুল পরিমাণ জ্বালানি তেল গায়েব হওয়ার ঘটনায় বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) এবং জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করলেও, স্থানীয়ভাবে অভিযোগ উঠেছে যে তদন্ত কার্যক্রমটি প্রকৃত সত্য গোপন করে “ধামাচাপা দেওয়ার উদ্দেশ্যে পরিচালিত” হচ্ছে।
ঘটনাক্রম ও তেল চুরির বিবরণ:
* ২৪ জুন ২০২৫ থেকে ঢাকা–চট্টগ্রাম পাইপলাইনের মাধ্যমে ফতুল্লা ডিপোতে ডিজেল সরবরাহ শুরু হয়। প্রথম ধাপে (২৪ জুন–৪ জুলাই): ২,০৮,৬৩৪ লিটার ডিজেল ঘাটতি ধরা পড়ে। দ্বিতীয় ধাপে (৫ সেপ্টেম্বর–২২ সেপ্টেম্বর): আরও ১,৬৯,৫৩৪ লিটার ডিজেল অনুপস্থিত পাওয়া যায়।
* মোট ঘাটতি: ৩,৭৮,১৬৮ লিটার ডিজেল, যার আনুমানিক বাজারমূল্য প্রায় ৩ কোটি ৭০ লক্ষ টাকা (বর্তমান সরকারি মূল্যে আনুমানিক)।
. তদন্ত কার্যক্রম:
* বিপিসি এবং জ্বালানি বিভাগ পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। জ্বালানি বিভাগীয় কমিটির নেতৃত্বে: অতিরিক্ত সচিব (জ্বালানি)কমিটিতে বুয়েট প্রতিনিধিসহ মোট ৫ সদস্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। কমিটিকে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এদিকে যমুনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেড থেকেও অভ্যন্তরীণভাবে ৬ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।তবে অভিযোগ রয়েছে যে, এসব কমিটি কার্যত প্রভাবশালী ব্যক্তিদের আড়াল করার উদ্দেশ্যে গঠিত হয়েছে এবং তদন্তে নিরপেক্ষতা নেই।
. প্রধান অভিযুক্ত ও তার কর্মকাণ্ড
জয়নাল আবেদিন টুটুল পদবি: অপারেটর (গ্রেজার), যমুনা অয়েল ডিপো, ফতুল্লা। পলাতক ও তিনটি হত্যা মামলার আসামি উক্ত টুটুল ফতুল্লা ডিপোর তথাকথিত “গদফাদার” হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে তেল চুরির সিন্ডিকেট পরিচালনা করে আসছেন।তিনি স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের নাম ব্যবহার করে তেল চুরির সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের “ম্যানেজ” করে থাকেন।
ঘটনার সময়কার একটি উদ্ধৃতি:
৪ অক্টোবর ২০২৫ (পূজার ছুটির দিন) তিনি কালো গ্লাসের গাড়িতে ডিপোতে প্রবেশ করে উপস্থিত কর্মচারীদের হুমকি দেন—“সব কিছু উপরে ম্যানেজ করা আছে, কেউ যেন মুখ না খোলে। তদন্ত কমিটি গঠন হয়েছে, কিন্তু সব কিছু ঠিক হয়ে গেছে।”অভিযোগ আছে যে, তিনি অতীতে শত কোটি টাকার তেল চুরির সঙ্গে জড়িত থেকে অবৈধ অর্থে নিজ এলাকায় প্রায় ৭ কোটি টাকায় একটি বিশাল মসজিদ নির্মাণ করছেন।
কর্মকর্তাদের নীরবতা ও প্রভাব খাটানো:
ডিপো ঘুরে আসা বিপিসি কর্মকর্তারা স্থানীয় কর্মচারীদের সঙ্গে কথা না বলেই ফিরে যান।স্থানীয় সূত্র মতে, এই কর্মকর্তারা টুটুলের প্রভাবের কারণে মন্তব্য করা বা সাক্ষ্য দিতে ভয় পাচ্ছেন।সম্ভাব্য অনিয়ম ও দুর্নীতির দিকসমূহ:
সরকারি সম্পদ (জ্বালানি তেল) আত্মসাৎ — দণ্ডবিধির ৪০৯ ও ৪২০ ধারার আওতায় অপরাধ।প্রভাব খাটিয়ে তদন্ত প্রক্রিয়া প্রভাবিত করার প্রচেষ্টা।. সরকারি কর্মচারীদের দায়িত্বে গাফিলতি ও তথ্য গোপন।
. সুপারিশ:
দুদক কর্তৃক স্বাধীন তদন্ত কমিটি গঠন করা হোক, যেখানে বিপিসি বা যমুনা অয়েলের বর্তমান কর্মকর্তারা অন্তর্ভুক্ত থাকবে না।পলাতক টুটুলের ব্যাংক হিসাব, স্থাবর সম্পত্তি ও লেনদেনের তথ্য যাচাই করা হোক।. সংশ্লিষ্ট ডিপো কর্মকর্তা, নিরাপত্তা কর্মকর্তা ও হিসাব বিভাগকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হোক।. তদন্ত চলাকালে অভিযুক্তদের সাময়িক বরখাস্ত করা হোক।এই ঘটনাটি শুধু যমুনা অয়েল ডিপোর নয়, বরং দেশের জ্বালানি খাতে বিদ্যমান দুর্নীতির গভীর সংকেত বহন করছে।জাতীয় স্বার্থে ও সরকারি সম্পদ রক্ষার্থে দুদকের হস্তক্ষেপ এখন জরুরি।

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম