স্টাফ রিপোর্টার॥
স্বেচ্ছাসেবা দানকারী সংস্থা রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিতে শকুনের নজর পড়েছে। আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদী শাসনেও এই সংস্থাটির কার্যক্রম প্রশংসা কুড়িয়েছিল। অথচ অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে গোলযোগ লেগেই আছে। ৫ আগস্টের পর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গঠন করে দেওয়া পরিচালনা পর্ষদের নেতৃত্বে সংস্থাটির নিয়মিত কার্যক্রমের বাইরে ন্যূনতম উল্লেখযোগ্য সেবা কার্যক্রম নেই। অথচ প্রতিষ্ঠানটি স্বজনপ্রীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও অনিয়মে জর্জরিত। সেবামূলক নতুন নতুন কার্যক্রমের চেয়ে অভ্যন্তরীণ কোন্দল জিইয়ে রেখে চেয়ার রক্ষায় কাজ করছে বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ।
সংকটের শুরু বর্তমান চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই। ব্যক্তিগত সহকারী (পিএস) নিয়োগে দুর্নীতি, বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতিসহ দুজন আওয়ামী সমর্থক অবসরপ্রাপ্ত পরিচালককে ফের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ, নারী নিপীড়নের শাস্তি মওকুফ করে পুরস্কৃত করে পদায়ন, দুর্নীতি করে শাস্তিপ্রাপ্তদের তোষণ, কমিউনিকেশন স্পেশালিস্ট নিয়োগে বিধিবহির্ভূত সিদ্ধান্ত প্রদানসহ নানা অনিয়মে জড়িয়ে গেছেন চেয়ারম্যান। তাঁর এসব অনিয়মে দ্বিমত করায় রোষানলে পড়েছেন খোদ বোর্ডের একাধিক সদস্য। নিজেরাই দুদক ডেকে প্রতিষ্ঠানের সম্মানহানি করেছেন। চেয়ারম্যান নিজেই বোর্ড সদস্য ও অধীনস্তদের বিরুদ্ধে নিউজ করতে গণমাধ্যমে বার্তা পাঠান। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনেকে তাঁর অনিয়মে দ্বিমত করায় হয়েছেন শত্রু। অনেককে অযৌক্তিক বদলিসহ নানা চাপে রেখেছেন। বিশেষ করে, যুব স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গে দফায় দফায় দুর্ব্যবহারের কারণে পুরো স্বেচ্ছাসেবা প্রক্রিয়া হয়েছে বাধাগ্রস্ত।
এসব অনিয়ম সামনে এনে গেল বুধবার (৮ অক্টোবর) থেকে সংস্থাটির চেয়ারম্যানের পদত্যাগ চেয়ে আন্দোলন করছেন কর্মকর্তা, কর্মচারী ও স্বেচ্ছাসেবকরা। সেই থেকে পুলিশি প্রটোকলে অফিসে আসেন ও বের হন চেয়ারম্যান। কিন্তু বন্ধ হয়নি তাঁর স্বেচ্ছাচারিতা। এরই মধ্যে সংস্থার যুব ও স্বেচ্ছাসেবক বিভাগের উপপরিচালক মুনতাসির মাহমুদকে চাকরিচ্যুত করেছেন।
এ বিষয়ে সংস্থাটির যুব বিভাগের উপপরিচালক মুনতাসির মাহমুদ বলেন, স্বেচ্ছাসেবকরা কঠোর পরিশ্রম করে, বিনিময়ে মানুষের মুখে হাসি ফুটাতে চান। অথচ এই স্বেচ্ছাসেবকদের নানা সময়ে দ্বিমত করার কারণে মারতে গেছেন চেয়ারম্যান, অপমান-হেনস্তা করেছেন। এদের নিয়মতান্ত্রিক প্রতিবাদে বহিরাগত দিয়ে হামলা চালিয়েছেন। স্বেচ্ছাসেবকদের পক্ষে কথা বলায় আমাকেও চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। যিনি তাঁর মতের বিরুদ্ধে যান, তাঁর ওপর নেমে আসে চেয়ারম্যানের খড়গ। এমন স্বৈরাচারী আচরণ ও স্বেচ্ছাচারিতার জন্য তো জুলাই গণঅভ্যুত্থানে হাজার মানুষ জীবন দেয়নি।
তিনি বলেন, এই চেয়ারম্যান বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতিসহ দুজন আওয়ামী লীগ সমর্থককে অবসরের পর এনে চুক্তিভিত্তিক পরিচালক নিয়োগ দিয়েছেন। অভ্যন্তরে ফ্যাসিবাদের দোসরদের লালন করছেন। অথচ স্বৈরাচারবিরোধী কর্মকর্তাদের অযৌক্তিক বদলি ও চুক্তি বাতিলসহ নানা অযৌক্তিক ও আক্রোশমূলক সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। প্রতিটি নিয়োগে অনিয়ম করে নিজের লোক নিয়োগ দিচ্ছেন, যোগ্য আবেদনকারীদের নিচ্ছেন না। এমন চেয়ারম্যান আমরা চাই না।
যদিও চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. আজিজুল ইসলাম বলেন, “বিএনপি-এনসিপির একাধিক ব্যক্তির যোগসাজশে একটি গ্রুপ আমার বিরুদ্ধে মব করছে। চেয়ারম্যানের এসব স্বেচ্ছাচারিতার বিষয়ে তাঁর নিয়োগকারী স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য জানতে চাইলে তারা চেয়ারম্যানের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।
জানা গেছে, চেয়ারম্যানের স্ত্রী আলেয়া আক্তার বর্তমানে পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা সচিব। স্বাস্থ্য সচিবের সঙ্গে সম্পর্কের জেরে স্বামীর পদ আগলে রাখছেন। যদিও স্বাস্থ্য সচিব মো. সাইদুর রহমান জানিয়েছেন, “রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি তার নিজস্ব আইনে চলে। আমরা হস্তক্ষেপ করার পক্ষপাতি নই। অথচ বর্তমান চেয়ারম্যানসহ পরিচালনা পর্ষদ গঠন ও তাদের মেয়াদ বৃদ্ধি—দুটোই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আদেশে হয়েছে।
এসব অনিয়মের প্রমাণ নিয়ে বক্তব্য নিতে গেলে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম বলেন, এসব বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বলেছি। আর পরিচালনা পর্ষদ নির্বাচনের জন্য তাঁকে তিন মাস সময় দিয়েছি। শুধু নির্বাচন করে সে চলে যাবে।
তবে, পরিচালনা পর্ষদ নির্বাচন আয়োজনে দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির চেয়ারম্যানের কার্যক্রমেও। বরং তিনি অভ্যন্তরীণ কোন্দল জিইয়ে রেখে নির্বাচন পেছানো ও পদ আঁকড়ে থাকার কৌশল নিয়েছেন। একটি জেলার তথ্য তুলে ধরে সেখানে নির্বাচন সম্ভব নয়—বলেও এই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন।
কমিউনিকেশন স্পেশালিস্ট নিয়োগে অনিয়ম:
বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির যোগাযোগ বিভাগের “কমিউনিকেশন স্পেশালিস্ট” পদে নিয়োগে অনিয়মের আশ্রয় নেওয়া হয়েছে। চেয়ারম্যানের ঘনিষ্ঠজনকে নিয়োগ দিতে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও যোগাযোগ বিভাগের পরিচালক আরিফা মেহরা সিনহা নিয়মভঙ্গ করে ডেডলাইন পার হওয়া এক প্রার্থীর (মো. মিদুল ইসলাম মৃদুল) আবেদন নিজে জমা দেন এবং তাঁকে শর্টলিস্টে অন্তর্ভুক্ত করেন। তদন্তে জানা গেছে, নিয়োগপ্রাপ্ত প্রার্থী তাঁর কর্মজীবনের তথ্য ভুয়া দিয়েছেন এবং একাধিক গণমাধ্যমে চাকরি করার দাবি মিথ্যা। আরিফা সিনহার নিজস্ব নিয়োগ নিয়েও অস্বচ্ছতার অভিযোগ রয়েছে; ছুটি ও প্রশাসনিক বিধি লঙ্ঘনের ঘটনাও পাওয়া গেছে। প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা এই অনিয়মের স্বাধীন তদন্ত ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন।
অযৌক্তিক বদলি ও পদায়ন:
প্রতিষ্ঠানের সবচেয়ে পুরনো ও সিনিয়র পরিচালক জাফর ইমাম সিকদারকে চট্টগ্রামে বদলি করে উপপরিচালক সমমর্যাদার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তাঁকে “মাফিয়া” আখ্যায়িত করেন চেয়ারম্যান। তাঁর বিরুদ্ধে নিউজ তৈরি করে গণমাধ্যমেও পাঠিয়েছেন। কিন্তু দীর্ঘ ৩৩ বছরের চাকরিজীবনে তাঁর বিরুদ্ধে একটি শোকজও দেখাতে পারেননি। লিগ্যাল বিভাগের খুরশিদ আলম (জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম নেতা) ইউনিট লেভেল কর্মকর্তা হিসেবে বদলি হয়েছেন, অথচ এটি তাঁর অভিজ্ঞতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। আসিফ আলমাস রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদল নেতা। তার চাকুরি প্রজেক্টে বদলি যোগ্য নন, অথচ তাকেও রাজশাহী জেলা ইউনিটে বদলি করেছেন। গাড়িচালক রহিমকে জাতীয়তাবাদী হওয়ার অপরাধে ঢাকা থেকে দিনাজপুরে বদলি করেছেন—সেখানে কোনো গাড়ি নেই। একজন দক্ষ কর্মীকে বসিয়ে বেতন দেওয়া হচ্ছে। সুমন মিয়া ও লিটন কুমারকেও জাতীয়তাবাদী হওয়ার অপরাধে বদলি করেছেন। সম্প্রতি, তিন দিনের সফরে যান সংস্থাটির মহাসচিব। এই সময়ে স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক শাহানা জাফরকে মহাসচিব এর দায়িত্ব দিয়ে তিনদিনে ইচ্ছে মতো বদলি পদায়নসহ নানা আদেশ করিয়েছেন। রেড ক্রিসেন্টের একাধিক কর্মকর্তা দাবি করেছেন, এত সংখ্যক বদলি গত ১০ বছরেও হয়নি। যদিও এর সত্যতা প্রমাণ করা যায়নি।
নারী হেনস্তার শাস্তি বাতিল করে পুরস্কার:
প্রতিষ্ঠানটিতে আওয়ামী লীগের আমলেই (২০২৩) নির্যাতনের দায়ে অভিযুক্ত উপ-সহকারী পরিচালক মইন উদ্দিন মঈনকে পদাবনতি করে ফিল্ড অফিসার পদে টাঙ্গাইলে পাঠানো হয়। বর্তমান চেয়ারম্যান নিয়মবহির্ভূতভাবে এক বছর পর রিভিউ করে তাঁকে এই শাস্তি থেকে মুক্তি দিয়ে ভূতাপেক্ষভাবে আগের পদ ফিরিয়ে দিয়ে মইন উদ্দিন মঈনকে মানবসম্পদ বিভাগে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব প্রদান করেছেন। যদিও রেড ক্রিসেন্টের নিয়মে তিন মাসের মধ্যে রিভিউ করার বিধান আছে।
এ বিষয়ে রেড ক্রিসেন্টের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. আজিজুল ইসলাম বলেন, "অভিযোগকারী একজন সিঙ্গেল মাদার মহিলা। তার পোশাক এবং বাহ্যিক আচরণ দেখে আমি বিব্রত হই। অন্যদিকে মইন উদ্দিন একজন ভদ্র, চরিত্রবান এবং দক্ষ অফিসার।
পাশাপাশি, উপপরিচালক সাদ মো. জহিরের নামে অভিযোগ করায় আরেক নারী সহকর্মীকেই সতর্ক করেছেন। এমনকি “বাড়াবাড়ি করলে” ভিকটিমকে উল্টো বদলি করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন পরিচালক ডা: শাহানা জাফর।
ভিকটিমদের মানসিক বিকারগ্রস্ত প্রমাণ করতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন ডা: শাহানা জাফর। চেয়ারম্যানের নির্দেশে ভিকটিমদের হলি ফ্যামিলি হাসপাতালের মনো:চিকিৎসক দ্বারা বিকারগ্রস্ত প্রমাণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এরইমধ্যে একজন ভিক্টিমকে হাসপাতালের প্রধান মনো:চিকিৎসকের কাছে কাউন্সেলিং এর জন্যও পাঠানো হয়েছে।
ফ্যাসিস্টবিরোধীরা কোণঠাসা, আশ্রিত দোসররা:
নতুন বোর্ড গঠন, নানাবিধ নিয়মবহির্ভূত নিয়োগ, ইচ্ছেমতো বদলি—এসবের মাধ্যমে কয়েকজন কর্মকর্তা—বিশেষত যারা সিস্টেমগত অনিয়মকে বাধা দিচ্ছে—তাদের কোণঠাসা করা হয়েছে। নতুন চক্রটি তাদের কোণঠাসা করার জন্য বদলি-সহ এমন কোনো পদ্ধতি অনুসরণ করেনি যা করা সম্ভব হয়নি। অধিকন্তু আওয়ামী লীগের দোসর বা বঙ্গবন্ধু পরিষদের নেতাকর্মীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়েছেন, কারণ তারা তাদের অনিয়ম ও দুর্নীতিতে বাধা হচ্ছেন না। ইতিমধ্যে পাঁচ উপপরিচালককে পদোন্নতি দিয়ে পরিচালক করা হয়েছে; তাঁদের মধ্যে তিনজনই আওয়ামী লীগের—বঙ্গবন্ধু পরিষদ রেড ক্রিসেন্ট শাখার সদস্য রেজাউল করিম, আওয়ামী লীগের জন্য প্রকাশ্যে ভোটের প্রচারণায় অংশ নেওয়া এ এস এম আক্তার, এবং আওয়ামী সমর্থক সাবিনা ইয়াসমিন। এর মধ্যে জনাব এস এম আক্তার চলতি মাসে চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করলেও ডা: শাহানার ইশারায় চেয়ারম্যানের নির্দেশে তাকে আবার চুক্তিভিত্তিক পরিচালক হিসেবে মানবসম্পদ বিভাগে নিয়োগ দেয়া হয়েছে; যেখানে চুক্তির মেয়াদ পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে অফিস আদেশ প্রদান করা হয়।
এর বাইরে ২৮ জন কর্মচারীকে কর্মকর্তা পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। তন্মধ্যে অনেকেই আওয়ামী লীগের। অনেকের নাম বঙ্গবন্ধু পরিষদের তালিকায় পাওয়া গেছে। এরা হলেন—ইসরাত জাহান পুষ্প, ফাতেমা খাতুন, বিলকিস পারভীন, মো. ইসরাফিল তালুকদার, মো. হুমায়ুন কবির, রাবেয়া আক্তার লিপি, তাহমিনা আহমেদ ও মো. হায়দার আলী।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও যোগাযোগ বিভাগের পরিচালক আরিফা মেহরা সিনহা ২০২৪ সালে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পান। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কার্যালয়ে চাকরি করার এই কর্মকর্তা নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই ছয় মাসে ১২০ দিন ছুটি কাটিয়েছেন। সংস্থার নিয়ম অনুযায়ী চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্তরা সাধারণ ও অসুস্থতাজনিত ছুটি ছাড়া অর্জিত ছুটি পান না। এ বিষয়ে রেড ক্রিসেন্ট চিঠি দিয়ে সতর্ক করলেও মানেননি; বরং চেয়ারম্যানকে “ম্যানেজ” করে চুক্তির মেয়াদ বাড়িয়ে নেন।
আওয়ামী সমর্থক ফিল্ড অফিসার কাজী আসাদকে এই চক্র পাবনা থেকে ঢাকায় বদলি করে পুরস্কৃত করেছেন। তাঁর স্ত্রী মনিরা বেগমকে হলি ফ্যামিলি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ডেন্টাল বিভাগের জুনিয়র অফিসার থেকে পদোন্নতিসহ স্থায়ী করার প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে, যা সামনে বোর্ডে উপস্থাপন হবে। যদিও প্রতিষ্ঠানটির চুক্তিভিত্তিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর স্থায়ীকরণ বিশেষ আদেশে স্থগিত রাখা হয়েছে।
দুর্নীতিবাজ পরিচালককেই স্বাস্থ্য বিভাগে পদায়ন
স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক ডা: শাহানা জাফর—আওয়ামী লীগের আমলেই দুর্নীতির দায়ে বদলি হন তহবিল সংগ্রহ বিভাগে। অথচ নতুন সরকার আসলে তিনি ভিকটিম সাজেন এবং পরিচালক (স্বাস্থ্য বিভাগ) পদে ফিরে আসেন। সম্প্রতি মহাসচিব বিদেশ সফরে গেলে তিন দিনের জন্য তাঁকে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের দায়িত্ব দিয়ে অযৌক্তিক সব বদলি করিয়ে নিয়েছেন চেয়ারম্যান। অথচ এই কর্মকর্তাই গত জুলাই মাসের ১ তারিখে স্বাস্থ্য বিভাগে কর্মরত ডা: নাজমুস সাকিবের চুক্তির মেয়াদ বাড়াননি। নিয়ম অনুযায়ী, চুক্তির মেয়াদ না বাড়ালেও এক মাস আগে জানাতে হয়। কিন্তু সেটি অমান্য করে তাঁকে তাৎক্ষণিকভাবে বের করে দেওয়া হয়। পাশাপাশি রেড ক্রিসেন্টে রীতি অনুযায়ী প্রকল্পের ফান্ড থাকলে চুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হয়।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক ডা: শাহানা জাফর বলেন, তিনি নিজেই ভিকটিম ছিলেন। তাঁকে এতদিন অন্যায়ভাবে এখান থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এখন পট পরিবর্তনের পর তিনি স্বপদে ফিরেছেন।
নিয়মবহির্ভূত নতুন নিয়োগ:
৫ আগস্টের পর বোর্ড পুনর্গঠন, চেয়ারম্যান-মহাসচিবের নিয়োগের পাশাপাশি ভেতরে বেশ কয়েকজনকে নতুন করে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এগুলোতে মানা হয়নি প্রতিষ্ঠানটির নিয়োগবিধি। এরা হলেন—সদর দপ্তরে চেয়ারম্যানের পিএস-১ সোহাগ মিয়া ও গাড়িচালক খান এনামুল সুলতান। রক্ত কেন্দ্রে দুইজন অভ্যর্থনা কর্মী সীমা সাহানা রাকা ও আবদুল্লাহ আল সাকিব নিয়োগ পেয়েছেন। পাশাপাশি তথ্যপ্রযুক্তি সহকারী এস কে সালাউদ্দিনকে পদোন্নতি দিয়ে অফিসার করে বেতন ২০ হাজার থেকে ৪০ হাজার করা হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী, বছরে ইনক্রিমেন্ট হয় মূল বেতনের ৫ শতাংশ।
এর মধ্যে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়েও আবেদনকারীদের বিবেচনা করা হয়নি; হয়নি কোনো বাছাই বা পরীক্ষা। এর বাইরে গিয়ে অবসরে যাওয়া দুইজন পরিচালককে ফের একই পদে বসানো হয়েছে। তারা হলেন—এ এইচ এম মইনুল ইসলাম ও মিজানুর রহমান। মিজানুর রহমানের স্ত্রী ছিলেন রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির বোর্ডের সদস্য এবং আওয়ামী লীগ নেত্রী। তাঁর ভাই পলাতক ডিআইজি হাফিজ আখতার।
চেয়ারম্যানের পিএস নিয়োগ: যত স্বেচ্ছাচারিত:
চেয়ারম্যান তাঁর একজন লোক নিয়োগ দেবেন—সেজন্য প্রথমে মানবসম্পদ বিভাগ থেকে প্রস্তাবনার ভিত্তিতে অনুমোদন করান জনসংযোগ কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগের জন্য। পরে সে সিদ্ধান্ত পাল্টে একই কাগজে আলাদা লিখে নোট দেন পিএস-১ হিসেবে নিয়োগের জন্য, যার বেতন ধরা হয় ৩০ হাজার টাকা—যা রাজস্ব খাত থেকে দেওয়া হবে। একই নোটে আবার পরিবর্তন করে বেতন ৫০ হাজার টাকা প্রস্তাব করা হয়। কিন্তু নিয়োগের তিন দিনের মাথায় তাঁর বেতন করা হয় ৬৭ হাজার টাকা। কেন, কীভাবে, কোন আইনের ভিত্তিতে করা হলো—সেটির উল্লেখ নেই। এমনকি এগুলো বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির নিয়োগ ও বাছাই বিধির পরিপন্থি।
অনুসন্ধানে উঠে আসে, সোহাগ মিয়া একটি ওষুধ কোম্পানির মেডিকেল প্রতিনিধি ছিলেন। সে সুবাদে বর্তমান চেয়ারম্যান ডা. আজিজুল ইসলামের সঙ্গে তাঁর পরিচয় ও সখ্যতা গড়ে ওঠে। এমনকি তিনি তাঁর প্রাইভেট চেম্বারে সহকারী হিসেবেও কাজ করেন। যদিও গেল মাসে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের চাপে সোহাগকে পদত্যাগ করিয়েছেন চেয়ারম্যান। বস্তুত এখনও এই সোহাগই চালায় রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি। এমনকি বিভিন্ন জেলা কমিটি করতে গিয়ে সোহাগ আর্থিক লেনদেন করেন বলে প্রমাণ আমাদের হাতে এসেছে। চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. আজিজুল ইসলাম বলেন, “কিছু বিষয়ে ব্যত্যয় আছে এখানে। আমি আসার পর নানা প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করছি। নানা অভিযোগও পেয়েছি। সমাধানেরও চেষ্টা করছি।”
সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি: কে এম মাসুদুর রহমান, সম্পাদক ও প্রকাশক: মোহাম্মদ মাসুদ।
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ২১/১ নয়াপল্টন (মসজিদ গলি),ঢাকা - ১০০০।
✆ ০১৫১১৯৬৩২৯৪, ০১৬১১৯৬৩২৯৪ 📧dailysobujbangladesh@gmail.com.
কপিরাইট © ২০২৫ দৈনিক সবুজ বাংলাদেশ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত