তারিখ লোড হচ্ছে...

গণপূর্ত অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সহায়তায় হাজার কোটি টাকার লুটপাট

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥

বাংলাদেশের শীর্ষ শিল্পগোষ্ঠী প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের সরকারি ক্রয় ব্যবস্থায় ভয়াবহ দুর্নীতি এবং অনিয়মের তথ্য সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশ পেয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারি টেন্ডার, সরবরাহ এবং বিল উত্তোলনের ক্ষেত্রে অনৈতিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত, যেখানে গণপূর্ত অধিদপ্তরের কয়েকজন প্রভাবশালী নির্বাহী প্রকৌশলী সরাসরি অংশগ্রহণ করেছেন।

ভুয়া আমদানির কেলেঙ্কারি:
Rangpur Metal Industries Ltd., প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান, গত দুই-তিন বছরে প্রায় ৩০০ কোটি টাকার লিফট সরবরাহের কার্যাদেশ পেয়েছে। শর্ত ছিল ফিনল্যান্ডের Kone Lift সরবরাহ করা কিন্তু বাস্তবে সরবরাহ হয়েছে ভারতের তৈরি লিফট। শিপমেন্ট দেখানো হয়েছে জার্মানি থেকে, যেখানে Kone-এর কোনো কারখানা নেই। এর ফলে ইউরোপীয় দামের নামে বিপুল অংকের বিল উত্তোলন করা হয়েছে।

ফায়ার পাম্পে জীবনসংহারী প্রতারণা:
Property Development Ltd. গণপূর্তের বিভিন্ন প্রকল্পে UL listed Fire Pump সরবরাহের চুক্তি নিলেও বাস্তবে সরবরাহ করা হয়েছে নকল ও Non-UL listed Pump। এতে কোটি কোটি টাকা রাষ্ট্রীয় ক্ষতি হয়েছে এবং জননিরাপত্তা সরাসরি ঝুঁকির মুখে পড়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমন মানহীন যন্ত্রপাতি ব্যবহারে অগ্নিকাণ্ডের ক্ষেত্রে মানুষের জীবন ঝুঁকিতে থাকবে।

একই প্রতিষ্ঠানের দুটি নাম ব্যবহার করে টেন্ডারবাজি:
Rangpur Metal Industries Ltd. একই প্রতিষ্ঠানের দুটি নাম ব্যবহার করে সরকারি টেন্ডারে অংশগ্রহণ করেছে। Rangpur Metal Industries Limited – ১০১টি কাজ → ২৮৮.৪৮ কোটি টাকা। Rangpur Metal Industries Ltd. – ১১২টি কাজ → ৭৭১.৩৯ কোটি টাকা।

মোট ২১৩টি ওয়ার্ক অর্ডারে অর্থের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১,০৬০ কোটি টাকা। কোম্পানির মালিকানা, পরিচালনা পর্ষদ ও ঠিকানা এক হলেও ভিন্ন BIN ও TIN ব্যবহার করা হয়েছে।

গণপূর্ত কর্মকর্তাদের অব্যাহত সহযোগিতা:

সিন্ডিকেটের মূল সদস্যরা হলেন, মাসুম বিল্লাহ (এসডিই, শের-ই-বাংলা নগর ৩ নং উপবিভাগ) টেন্ডার অনুমোদন ও বিল পাসে সরাসরি সুবিধা প্রদান, মিজানুর রহমান (নির্বাহী প্রকৌশলী, ঢাকা জোন) ভুয়া শিপমেন্ট যাচাই না করে অনুমোদন, রফিকুল ইসলাম (নির্বাহী প্রকৌশলী, চট্টগ্রাম জোন) – UL listed নয় এমন Fire Pump গ্রহণে সহযোগিতা, আলমগীর হোসেন (নির্বাহী প্রকৌশলী, সদর দপ্তর) একই প্রতিষ্ঠানের দুটি নামের টেন্ডার অংশগ্রহণ বৈধতা, তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে কোটি টাকার কমিশন ও ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ রয়েছে।

আরইবি’র চেকেও ফাঁকি:
Rangpur Metal Industries Ltd. বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (REB) কে ৬০০ কিলোমিটার D-27 কন্ডাক্টর সরবরাহের সময় ৭৫০টি খালি কন্ডাক্টর ড্রাম পাঠিয়েছে। প্রাক-পরিদর্শন ও গুদাম পরিদর্শনে দেখা গেছে, ৪০৪ নম্বর ড্রামে কোনো কন্ডাক্টর ছিল না। এছাড়া ২৯৯টি ড্রামের মধ্যে আরও কিছু খালি থাকতে পারে। আরইবি কর্তৃপক্ষ বিষয়টি পুনঃপরীক্ষার উদ্যোগ নিয়েছে। পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তাদের চিঠি দিয়ে বিষয়টি জানানো হয়েছে।

ইউরোপীয় পণ্যের নামে ভারতীয় পণ্য সরবরাহ এবং ফাঁকি দিয়ে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। নকল Fire Pump ব্যবহার, কম মানের লিফট, নিম্নমানের কন্ডাক্টর সরবরাহ করা কারনে জননিরাপত্তা ঝুঁকি রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। একই প্রতিষ্ঠানের দুটি নাম ব্যবহার, e-GP সিস্টেমে স্বচ্ছতার অভাবে সরকারি ক্রয় ব্যবস্থার দুর্বলতার চিত্র ফুটে উঠেছে।

প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান আহসান খান চৌধুরী ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অনুমোদন ছাড়া এই ধরনের প্রতারণা সম্ভব নয়। অভিযোগ রয়েছে যে, সিন্ডিকেটের মাধ্যমে তারা সরকারি ক্রয় ব্যবস্থার দুর্বলতা কাজে লাগিয়ে রাষ্ট্রীয় অর্থ আত্মসাৎ করছে।

সর্বপরি, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ ও গণপূর্ত অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের এই দুর্নীতি শুধু অর্থনৈতিক নয়, জনগণের জীবন ও নিরাপত্তার জন্যও বিপজ্জনক। সরকারি প্রকল্পে মানহীন যন্ত্রপাতি সরবরাহ ও টেন্ডারবাজি বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা প্রয়োজন।

জলবায়ু অর্থায়নে আঞ্চলিক ন্যায্যতা বিবেচনায় আসেনি: সিপিআরডি’র গবেষণা

দৈনিক সবুজ বাংলাদেশ ডেক্স॥

দেশের উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের খরাপ্রবণ এলাকাগুলোতে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবিলায় পর্যাপ্ত অর্থায়ন করা হচ্ছে না বলে এক গবেষণায় উঠে এসেছে। শনিবার (৫ অক্টোবর) ঢাকার গুলশানে সিক্স সিজন হোটেলে সেন্টার ফর পার্টিসিপেটরি রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (সিপিআরডি) আয়োজিত এক সেমিনারে এ গবেষণার ফলাফল তুলে ধরা হয়।
গবেষণায় দেখা যায়, দেশের খরাপ্রবণ উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড থেকে বরাদ্দ পাওয়া প্রকল্পের সংখ্যা এবং অর্থের পরিমাণ তুলনামূলকভাবে কম। খরাপ্রবণ এলাকায় মাত্র ১৪৩টি প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে, যেখানে উপকূলীয় চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগে প্রকল্পের সংখ্যা ২৮১। ২০২২-২৩ অর্থবছরে জাতীয় জলবায়ু বাজেট থেকে মাত্র ৬৩টি প্রকল্প বরাদ্দ দেয়া হয়েছে উত্তরাঞ্চলে, যা স্পষ্টতই জলবায়ু অর্থায়নে আঞ্চলিক ন্যায্যতার ঘাটতি প্রকাশ করছে।গবেষণাটি পরিচালিত হয় সিপিআরডি ও হেক্স/ইপিইআর-এর সহযোগিতায়। গবেষণার অংশ হিসেবে দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ ও কুড়িগ্রামে মাঠ পর্যায়ে তথ্য সংগ্রহ করা হয়।
গবেষণার ফলাফলে বলা হয়, ২০০৯-১০ অর্থবছর থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছর পর্যন্ত জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ডের ৫০ শতাংশের বেশি বরাদ্দ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যয় করা হয়েছে, যার আর্থিক মূল্য ২০৯৫ দশমিক ৪১ কোটি টাকা। অথচ ধীরগতির দুর্যোগ, যেমন খরা মোকাবিলায় পর্যাপ্ত বরাদ্দ দেয়া হয়নি। পাশাপাশি বরাদ্দকৃত প্রকল্পগুলোর মান নিয়ন্ত্রণ এবং পর্যবেক্ষণ যথাযথভাবে না হওয়ায় নির্মিত অবকাঠামোগুলো নতুন ঝুঁকি তৈরি করছে।
সিপিআরডি’র প্রধান নির্বাহী মো. শামছুদ্দোহা সেমিনারে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড এবং জাতীয় জলবায়ু বাজেট বরাদ্দে প্রয়োজনীয় ন্যায্যতা নিশ্চিত করতে হবে। বিশেষত প্রানিÍক জনগোষ্ঠী ও আদিবাসীদের জন্য পৃথক অভিযোজন পরিকল্পনা তৈরি ও বাস্তবায়ন করা জরুরি।
সেমিনারের বিশেষ অতিথি সুইজারল্যান্ড দূতাবাসের ডেপুটি হেড অব মিশন করিন হেনচোজ পিগনানি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি মানুষের কল্যাণকেও সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। একক কোনো সমাধান নেই, স্থানীয় সমাধানগুলোকে গুরুত্ব দিয়ে জলবায়ু ন্যায্যতা অর্জন করতে হবে।
পিকেএসএফ-এর উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. ফজলে রাব্বি সাদেক আহমেদ বলেন, জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় স্থানীয় চাহিদার ভিত্তিতে সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। সাবেক সংসদ সদস্য রানা মোহাম্মদ সোহেল বলেন, জলবায়ু অর্থায়নের ক্ষেত্রে প্রতিটি এলাকার সুনির্দিষ্ট প্রয়োজনীয়তাকে গুরুত্ব দিতে হবে এবং প্রকল্প পরিকল্পনা তৈরিতে স্থানীয় সরকারের দক্ষতা বাড়াতে হবে।
সেমিনারে আরো বক্তব্য রাখেন পিকেএসএফ-এর উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. ফজলে রাব্বি সাদেক আহমেদ, পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক মো. জিয়াউল হক, সাবেক সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারীসহ বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা।

 

সবা:স:জু-৪৩/২৪

language Change
সংবাদ শিরোনাম