অবশেষে আইসিবি’র ভবন নির্মানে গনপূর্তের উদ্যোগে আশার সঞ্চার

স্টাফ রিপোর্টারঃ

দীর্ঘ ১৩ বছর ধরে ঝুলে থাকার পর গনপূর্ত অধিদপ্তরের বর্তমান প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ শামীম আখতারের দৃঢ় পদক্ষেপে গতি পেতে যাচ্ছে ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) এর বহুতল ভবনের নির্মান কাজ।

অর্থ মন্ত্রনালয়ের আওতাধীন ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) এর রাজারবাগস্থিত নিজস্ব জমিতে প্রধান কার্যালয়ের জন্য একটি বহুতল ভবন নির্মানের জন্য ২০১০ সালে গণপূর্ত অধিদপ্তরকে দায়িত্ব দেয়া হয়।

আইসিবি’র নিজস্ব ভবন নির্মানের কাজটি মতিঝিল গণপূর্ত বিভাগের করার কথা থাকলেও বর্তমানে গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ শামীম আখতার ঢাকা গণপূর্ত বিভাগ-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী আতিকুল ইসলামকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজটি দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য দায়িত্ব দেওয়ার উদ্যোগ গ্রহন করেছেন।

 

মূলত গনপূর্ত অধিদপ্তরের তৎকালীন প্রধান প্রকৌশলীর যথাযথ তদারকির অভাব এবং নিজ বলয়ের প্রকৌশলীকে দিয়ে কাজ করানোর চেষ্টা, মতিঝিল গণপূর্ত বিভাগের কর্মকর্তাদের অযোগ্যতা, অদক্ষতা, কাজটি বাস্তবায়নে অনীহা, সময়ক্ষেপণের কারনেই গনপূর্ত অধিদপ্তরের বর্তমান প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ শামীম আখতার বাধ্য হন কাজটি অন্য বিভাগে হস্তান্তর করার জন্য।

গণপূর্ত অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (সংস্থাপন) মো: খোরশেদ আলম স্বাক্ষরিত স্মারক নং- ৫প-৪/২০১০(অংশ)/৩৬৩০-সশা-১ তারিখ: ২১ ডিসেম্বর, ২০১০ খ্রি: তারিখে ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) এর বহুতল ভবন নির্মান কাজের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগের প্রস্তাবপত্র মূল্যায়নের জন্য কারিগরী উপ কমিটিতে গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রতিনিধি হিসেবে মতিঝিল গণপূর্ত বিভাগ, ঢাকা এর নির্বাহী প্রকৌশলীকে মনোনয়ন প্রদান করা হয়।

দীর্ঘ ১৩ বছর ধরে মতিঝিল গণপূর্ত বিভাগ, ঢাকা এর নির্বাহী প্রকৌশলী পরীক্ষা নিরীক্ষা করেই সময়ক্ষেপন করেন। তার এবং তার অন্য প্রকৌশলীদের অযোগ্যতার কারনেই এতটা দীর্ঘ সময় বিলম্ব হয়।

অবশেষে ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো: আবুল হোসেন গত ৬ মার্চ, ২০২৩খ্রি: তারিখে নং: ৫৩.১৩.০০০০.০৫৫.৩৩.০০৩.২৩/৩২২৩ স্মারকে স্বাক্ষরিত আবেদনে গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলীকে আইসিবি ভবন নির্মাণ প্রকল্পটি সঠিকভাবে বাস্তবায়নের নিমিত্তে প্রকল্পের পূর্ত কাজসমূহ সম্পাদনের প্রস্তাবটি অর্থমন্ত্রী অনুমোদন প্রদান করেছেন বলে জানান।

অর্থমন্ত্রীর অনুমোদন এবং আইসিবি’র ব্যবস্থাপনা পরিচালকের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতেই গনপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ শামীম আখতার আইসিবি’র ভবন নির্মানের কাজটি দ্রুততম সময়ে সম্পন্ন করার উদ্দেশ্যে একজন চৌকস ও অভিজ্ঞ নির্বাহী প্রকৌশলী আতিকুল ইসলামকে দায়িত্ব দেয়ার উদ্যোগ গ্রহন করেছেন।

আওয়ামীলীগ নেতার পুত্র গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলী স্বর্ণেন্দু শেখর মন্ডল এখনো বহাল তবিয়তে ঢাকায়!

স্টাফ রিপোর্টার:
আওয়ামীলীগ নেতার পুত্র গণপূর্ত অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী স্বর্ণেন্দু শেখর মন্ডল চাকুরী জীবনের শুরু থেকেই ঢাকায় অবস্থান করছেন । প্রতি বছরে শতশত প্রকৌশলীকে সারাদেশে বদলী করা হলেও অজ্ঞাত কারণে তাকে ঢাকার বাইরে কোন জেলায় বদলী করা হয় না। এ যেন বাপ দাদার জমিদারি। কি রহস্য লুকিয়ে আছে এর নেপথ্যে? সে রহস্য উদঘাটনে অনুসন্ধান চালিয়ে পাওয়াগেছে চমকপ্রদ তথ্য। জানাগেছে তিনি খুলনা জেলার একজন আওয়ামী লগি নেতার পুত্র। আর সে কারণেই গোটা আওয়ামী লীগ আমলে অসীম ক্ষমতা প্রদর্শন করেছেন। তিনি সাবেক গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এর ক্যাশিয়ার ছিলেন। এ ছাড়া দেশ আলোচিত মাফিয়া ঠিকাদার জিকে শামীম সিন্ডিকেটের ঘণিষ্ট প্রকৌশলী হিসাবে স্বীকৃত। কেরাণীগঞ্জ জেলখানা (ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার) নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতি করার দায়ে অভিযুক্ত।
জানাগেছে,তার মরহুম পিতা অর্ধেন্দু শেখর মন্ডল খুলনা জেলার পাইকগাছা উপজেলার গড়াইখালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রিয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক ব্যারিষ্টার বিপ্লব বড়ুয়ার স্বাক্ষরিত একটি শোকপত্রে এ তথ্য জানা যায়। তিনি ২০০৪ সালে গণপূর্ত অধিদপ্তরে সহকারি প্রকৌশলী পদে চাকুরী লাভ করেন। এরপর তিনি এক মন্ত্রীর সুপারিশে ঢাকাতেই পোষ্টিং পান। অত:পর দলীয় লবিং মেইনটেন করে ভালো ভালো জায়গায় পোষ্টিং বাগিয়ে নেন। ্এক পর্যায়ে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের দাপুটে বিদায়ী সচিব শহীদুল্লাহ খন্দকারের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলে লোভনীয় বিভাগ ও জোনে পদায়ন নিয়ে বিগত ৭ বছর ধরে দু’হাতে অবৈধ অর্থ উপার্জন করেছেন। বনে গেছেন গণপূর্র্তের সুপারম্যান। আওয়ামী শাসনামলে তিনি সব থেকে বড় দলীয় সুবিধা ভোগ করেছেন। বর্তমানে তিনি এক হাজার কোটি টাকার মালিক বলে প্রচারণা রয়েছে।
উপসহকারি প্রকৌশলী,সহকারি প্রকৌশলী,নির্বাহী প্রকৌশলী,তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীদের বদলী ও পদায়নে তিনি সিদ্ধহস্ত হয়ে ওঠেন। শুরু করেন সীমাহীন বদলী বাণিজ্য। এছাড়া বড় বড় ঠিকাদারদের নিয়ে গড়ে তোলেন শক্তিশালী একটি মাফিয়া সিন্ডিকেট। তিনি কমিশন নিয়ে ঠিকাদারদের মধ্যে কোটি কোটি টাকার উন্নয়ন ও মেরামত কাজ বন্টনে মুখ্য ভুমিকা পালন করেন। এ পথে তিনি অল্প দিনেই শত কোটি টাকার মালিক বনে যান।সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা যায়, গত প্রায় ২ বছর পুর্বে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অতিপ্রিয় সাবেক সচিব শহীদুল্লাহ খন্দকারের ইচ্ছায় ঢাকা নগর গণপূতের্র নির্বাহী প্রকৌশলী পদে যোগদান করেন। ঢাকা জোনের সবগুলো বিভাগের মধ্যে ঢাকা নগর গণপূর্ত বিভাগ হলো সব থেকে লোভনীয় স্থান। এই পদে পদায়ণ পেতে কোটি টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করতেও নির্বাহী প্রকৌশলীরা দিধা করেন না। লোভনীয় এই ঢাকা সিটি ডিভিশনে যোগদান করেই তিনি বরাদ্দের চেয়ে কয়েকগুন অতিরিক্ত অর্র্থের টেন্ডার আহবান করে সরকারি টাকা লুটপাটের আয়োজন করেন।২০২৩/২৪ অর্থ বছরে তার ডিভিশনে বরাদ্দ ছিল ৩০ কোটি টাকা। কিন্তু তিনি ৬০/৬৫ কোটি টাকার টেন্ডার আহবান করে ঠিকাদার নির্বাচন ,কাজ বন্টন ও চুক্তিবদ্ধ করে ২০%৩০% কমিশন গ্রহন করেন।এছাড়া মেরামত কাজের ক্ষেত্রে কোন প্রকার কাজ না করেই কেবলমাত্র খাতা কলমে সব ঠিক রেখে ঠিকাদারদের সাথে ৫০/৫০ ভাগাভাগি চুক্তিতে বরাদ্দকৃত টাকার সিংহভাগ টাকাই নিজ পকেটে পুরেছেন। গত ২/৩ অর্থ বছরের মেরামত কাজের টেন্ডার ফাইলগুলো নীরিক্ষা করলেই এসব অপকর্মের প্রমাণ মিলবে মর্মে দাবী করেছেন বেশ কয়েকজন ঠিকাদার।
গণপূর্ত অধিদপ্তরের বেশ কিছু প্রকৌশলীর সাথে কথা বলে জানাগেছে, সাবেক সচিব শহীদুল্লাহ খন্দকার দায়িত্বে থাকাকালে ঢাকা নগর গণপূতের্র নির্বাহী প্রকৌশলী স্বর্ণেন্দু শেখর মন্ডল প্রায় সময়ই সচিবালয়ে অবস্থান করতেন। তাকে বেশিরভাগ সময়েই নিজ অফিসে পাওয়া যেতো না। সচিবের একান্ত লোক হিসাবে তার সুপরিচিতি ছিলো। তিনি তদবীর নিয়েই সব সময় ব্যস্ত থাকতেন। তিনি গণপূর্র্তের প্রধান প্রকৌশলীকেও পাত্তা দিতেন না। নিজের ইচ্ছা খুশি মত অফিসে আসতেন আবার বেরিয়ে যেতেন। দায়িত্ব পালনে অবহেলা ও অনিয়ম,দুর্নীতির কারণে প্রধান প্রকৌশলী তাকে বহুবার মৌখিক সতর্ক করেছেন কিন্তু তিনি তা কর্ণপাত করেন নি।প্রধান প্রকৌশলীর দপ্তর থেকে তদন্ত করে দেখা যায়, গত অর্থ বছরে তিনি প্রায় ২০ কোটি সরকারি টাকা ভুয়া বিল ভাউচারে আত্মসাৎ করেছেন।সুত্রগুলো আরো জানায়, নির্বাহী প্রকৌশলী স্বর্ণেন্দু শেখর মন্ডল তার বন্ধু ও সতীর্থ মহলে নিজেকে ভারতীয় রাষ্ট্রিয় গোয়েন্দা সংস্থা “র” এর লোক বলে পরিচয় দেন। এই সংস্থার মাধ্যমে যে কোন ব্যক্তিকে তিনি মুহুর্তের মধ্যেই শায়েস্তা করতে পারেন বলে দম্ভোক্তি করেন। তার এমন ভীতকর কথায় সকলেই আতংকে থাকেন। গণপূর্ত বিভাগ থেকে অনিয়ম,দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা লোপাট করে তিনি সে সব টাকা কি করেছেন ? কোথায় রেখেছেন ? এমন প্রশ্নের জবাব খুঁজতে গিয়ে জানাগেছে, তিনি তার অর্জিত সব টাকাই হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে পাচার করেছেন। বিশেষ করে ভারতে তার বাড়ী,গাড়ি,ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ অগাধ সম্পদ রয়েছে। তিনি অবৈধ পথে উপার্জিত অর্থে দাপটে ঢাকা অফিসার্স ক্লাব ও ইঞ্জিনিয়ার ইনষ্টিটিউট অব বাংলাদেশ (আইইবি) এর ২০২০ সালের নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে কয়েক কোটি টাকা খরচ করেছেন। দুদকের মাধ্যমে অনুসন্ধান করলেই তার থলের বিড়াল বেরিয়ে আসবে।

কিভাবে তিনি চাকুরী জীবনের শুরু থেকেই ঢাকাতেই অবস্থান (চাকুরী) করছেন সে বিষয়ে জানতে চাইলে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, সরকারি সার্ভিস রুলস অনুযায়ী একজন প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা বা প্রকৌশলী বছরের পর বছর একই জেলায় বা একই বিভাগে কর্মরত থাকতে পারেন না। বিধিগত ভাবেই তাকে দেশের বিভিন্ন জেলা বা বিভাগীয় কার্যালয়ে দায়িত্ব পালন করতে হবে। সার্ভিস রুলস ভংগ করে কোন কর্মকর্তা যদি দীর্ঘ সময় একই জেলা বা বিভাগে কর্র্মরত থাকেন তবে তিনি বিভাগীয় শাস্তির মুখোমুখি হবেন। এমন কি তার চাকুরীও চলে যেতে পারে।এ বিষয়ে কথা বলার জন্য নির্বাহী প্রকৌশলী স্বর্ণেন্দু শেখর মন্ডলের সেল ফোনে বারবার কল করেও তার সাড়া পাওয়া যায়নি।

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম