তুরাগে মানব পাচারকারী দলের সদস্য, দেহব্যবসায়ী ও ভয়াবহ এক প্রতারক চেক ডিজঅনার মামলায় গ্রেফতার

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

রাজধানীর তুরাগে মানব পাচারকারী দলের সক্রিয় সদস্য, দেহব্যবসায়ী ও ভয়াবহ এক প্রতারক নারীকে চেক ডিজঅনার মামলায় গ্রেফতার করেছে পুলিশ । গ্রেপ্তারকৃতের নাম ইসমত আরা ইতি (৩৩), সে দীর্ঘদিন যাবত তুরাগের ধউর এলাকায় বসবাস করে আসছে, প্রথম দিকে বিভিন্ন গার্মেন্টসে শ্রমিক হিসেবে কাজ করলেও ২/৩ বছর ধরে জড়িয়ে পড়েন দেহ ব্যাবসা, মানব পাচার, প্রতারণাসহ বিভিন্ন অপরাধ মূলক কর্মকাণ্ডে । বিভিন্ন এলাকার অসংখ্য লোকজনের কাছে নিজের নানা সমস্যার কথা বলে ও বিভিন্ন রকম প্রলোভন দেখিয়ে হাতিয়ে নিয়েছে লাখ লাখ টাকা ও মহিলাদের স্বর্ণলংকার । আর তার এইসব অপরাধ মূলক কর্মকাণ্ডে সার্বক্ষণিক সহয়তা করে থাকেন, তার আপন বোন লাকি ও তার ভাগনি পায়েলসহ নাম না জানা আরও কয়েকজন বলে অভিযোগ করেন কয়েক ভুক্তভোগী । গত প্রায় বছর খানেক পূর্বে উপরোক্ত ব্যক্তি দ্বয়ের সহয়তায় প্রতারক ইসমত আরা ইতি এক মহিলার কাছ থেকে প্রায় ৫লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় এবং কয়েক দিনের মধ্যে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিতে পারবে মর্মে ডাচ বাংলা ব্যাংকের তার নিজ নামনিয় অ্যাকাউন্টের এক খানা চেক প্রদান করেন । পরে যথা সময়ে ভুক্তভোগী উক্ত টাকা উত্তোলনের জন্য কয়েকবার ব্যাংকে চেক জমা দিলে তার অ্যাকাউন্টে কোন টাকা জমা না থাকায় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ উক্ত চেকটি ডিজঅনার করেন । পরে এই ঘটনা ভুক্তভোগী প্রতারক ইসমত আরা ইতিসহ তার সহযোগীদের জানালে তারা ভুক্তভোগীকে বিভিন্ন ধরনের হুমকি- ধামকি প্রদান করেন । তখন ভুক্তভোগী নিরুপায় হইয়া এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তি বর্গকে জানাইলে তারা বিষয়টি স্থানীয় ভাবে মীমাংসা করার চেষ্টা করেন, কিন্তু এই প্রতারক চক্র গণ্যমান্য ব্যক্তি বর্গের কথায় কোন কর্ণপাত না করিলে তারা ভুক্তভোগীকে আইনের আশ্রয় নিতে বলেন । পরে ঐ ভুক্তভোগী নিকটতম তুরাগ থানায় গিয়ে উপরোক্ত বিষয়টি জানাইলে থানা পুলিশ আদালতে যাওয়ার পরামর্শ দেন । তার পরে তিনি আদালতে গিয়ে প্রথমে একজন আইনজীবী নিযুক্ত করেন এবং ৩০ দিনের সময় দিয়ে উকিল নোটিস পাঠান প্রতারক ইসমত আরা ইতি বরাবর । প্রতারক উক্ত উকিল নোটিসটি গ্রহণ না করিয়া কৌশলে ফিরত পাঠিয়ে দেন । এরপর নিয়ম মাফিক এই প্রতারকের বিরুদ্ধে মহামান্য আদালতে চেক ডিজঅনার মামলা করেন ওই ভুক্তভোগী । আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে প্রথমে সমন জারি করেন । কিন্তু একই কায়দায় সমনটি গ্রহন না করিয়া কৌশলে ফিরত পাঠিয়ে দেন এই প্রতারক । এদিকে সমন ফিরত পাঠানোর কয়েকদিনের ভিতরেই কৌশলে বাসা পরিবর্তন করে ১লা জুন ২০২৪ইং তারিখ থেকে ধউর এলাকার জৈনক আজিজের বাড়িতে বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস শুরু করেন । এদিকে সমন ফিরত ও যথা সময়ে আদালতে উপস্থিত না হওয়ার কারনে ইতিমধ্যে মহামান্য আদালত গ্রেপ্তারী পরোয়ানা জারি করেন । পরে উক্ত গ্রেপ্তারী পরোয়ানা তুরাগ থানায় পৌছলে ৭ই জুন ২০২৪ইং তারিখ সন্ধ্যা আনুমানিক সাড়ে ৬টার দিকে তুরাগ থানা পুলিশের একটি চৌকস দল অভিযান চালিয়ে উক্ত প্রতারককে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হন । উত্তরা পশ্চিম থানার পুলিশ সূত্রে জানা যায়, এই প্রতারক ইসমত আরা ইতি ও তার দলের কয়েক সদস্যর বিরুদ্ধে দেহ ব্যবসা ও মানব পাচার আইনে পূর্বেরেও মামলা রয়েছে এবং সেই মামলায় কিছুদিন কারা বাসের পরে জামিনে মুক্তি পেয়ে বিভিন্ন রকম অপরাধ মুলক কর্মকাণ্ড আরও বাড়িয়ে দেন । বর্তমানে উক্ত মামলাটি আদালতে বিচারাধীন । গ্রেপ্তারকৃত প্রতারক ইসমত আরা ইতি, খুলনা জেলার, দৌলতপুর থানার, মহেশেরপাসা গ্রামের আঃ রহমানের মেয়ে । বর্তমানে তুরাগের ধউর এলাকার জৈনক আজিজের বাড়িতে ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করতো ।

বৃহস্পতিবার তারেক-বাবরের খালাসের বিরুদ্ধে আপিল শুনানি

ডেস্ক রিপোর্ট:

বহুল আলোচিত একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত তারেক রহমান ও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ সব আসামির খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের শুনানির জন্য আগামী বৃহস্পতিবার দিন ধার্য করেছেন আপিল বিভাগ।

মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে ৫ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

আদালতে বিএনপির আইনজীবীদের মধ্যে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, জয়নুল আবেদীন, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, অ্যাডভোকেট গাজী কামরুল ইসলাম সজল, অ্যাডভোকেট আমিনুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট মাকসুদ উল্লাহ, অ্যাডভোকেট জাকির হোসেন, অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান রায়হান বিশ্বাস, অ্যাডভোকেট সামসুল ইসলাম মুকুলসহ অনেকে।

রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান।

গত ১২ জানুয়ারি একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত তারেক রহমান ও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ সব আসামিকে খালাস দেন হাইকোর্ট। বিচারিক আদালতের রায় বাতিল করে বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন। রায়ে আদালত বলেন, একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার বিচার ছিল অবৈধ। আইনে এ বিচার টেকে না। রায়ে বলা হয়, যে চার্জশিটের ভিত্তিতে নিম্ন আদালত বিচার করেছিলেন তা আইনগতভাবে গ্রহণযোগ্য ছিল না।

হাইকোর্টের এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ।

উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা ও হত্যা মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনকে ফাঁসি এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, বিএনপি নেতা কাজী শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন কায়কোবাদসহ ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন বিচারিক আদালত।

নিম্ন আদালতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ১৯ আসামি

সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু, মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুর রহিম, হানিফ পরিবহনের মালিক মো. হানিফ, জঙ্গি নেতা মাওলানা তাজউদ্দীন, মাওলানা শেখ আবদুস সালাম, মাওলানা শেখ ফরিদ, মাওলানা আবু সাইদ, মুফতি মঈনউদ্দিন শেখ ওরফে আবু জান্দাল, হাফেজ আবু তাহের, মো. ইউসুফ ভাট ওরফে মাজেদ ভাট, আবদুল মালেক, মফিজুর রহমান ওরফে মহিবুল্লাহ, আবুল কালাম আজাদ ওরফে বুলবুল, মো. জাহাঙ্গীর আলম, হোসাইন আহমেদ তামিম, রফিকুল ইসলাম ওরফে সবুজ ও মো. উজ্জ্বল ওরফে রতন।

যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ১৯ আসামি

শাহাদাৎ উল্লাহ ওরফে জুয়েল, মাওলানা আবদুর রউফ ওরফের আবু ওমর, আবু হোমাইরা ওরফে পীরসাহেব, মাওলানা সাব্বির আহমদ ওরফে আবদুল হান্নান সাব্বির, আরিফ হাসান ওরফে সুজন ওরফে আবদুর রাজ্জাক, হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া, আবু বকর ওরফে সেলিম হাওলাদার, মো. আরিফুল ইসলাম ওরফে আরিফ, মহিবুল মোত্তাকিন ওরফে মুত্তাকিন (পলাতক), আনিসুল মুরছালিন ওরফে মুরছালিন (পলাতক), মো. খলিল (পলাতক), জাহাঙ্গীর আলম বদর ওরফে ওস্তাদ জাহাঙ্গীর (পলাতক), মো. ইকবাল (পলাতক), লিটন ওরফে মাওলানা লিটন (পলাতক), তারেক রহমান ওরফে তারেক জিয়া (পলাতক), হারিছ চৌধুরী (পলাতক), কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ (পলাতক), মুফতি শফিকুর রহমান (পলাতক), মুফতি আবদুল হাই (পলাতক) এবং রাতুল আহম্মেদ বাবু ওরফে বাবু ওরফে রাতুল বাবু (পলাতক)।

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। ওই হামলায় আওয়ামী লীগের মহিলা-বিষয়ক সম্পাদক আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন। আহত হন শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের কয়েকশ নেতা-কর্মী। তাদের অনেকে আজও শরীরে গ্রেনেডের স্প্লিন্টার নিয়ে দুঃসহ জীবনযাপন করছেন। অনেকে চিরতরে পঙ্গু হয়ে গেছেন।

 

 

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম