সাংবাদিক হাসান মেহেদীর মৃত্যুর তদন্ত ও বিচার দাবি রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারসের

স্টাফ রিপোর্টার:
কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত  ঢাকা টাইমসের সিনিয়র রিপোর্টার হাসান মেহেদীর মৃত্যুর ঘটনা তদন্ত করে দায়ীদের বিচারের দাবি জানিয়েছে রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস—আরএসএফ।

গত ১৮ জুলাই রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে সাংবাদিক হাসান মেহেদীর মৃত্যুর পরদিন ১৯ জুলাই বিশ্বজুড়ে সংবাদমাধ্যম ও সাংবাদিকদের নিয়ে কাজ করা এ আন্তর্জাতিক সংগঠনটি এক বিবৃতিতে এই দাবি জানায়।

বিবৃতিতে আরএসএফ বলেছে, সরকারি চাকরিতে কোটা পুনর্বহাল করার হাইকোর্টের সিদ্ধান্তের ফলে শুরু হওয়া আন্দোলন গত ১৫ জুলাই থেকে সহিংস রূপ নেয়। এসময় পুলিশ, ছাত্র এবং সরকার সমর্থকদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এমন পরিস্থিতিতে সংবাদ সংগ্রহের সময় ১৮ জুলাই ঢাকা টাইমসের সাংবাদিক হাসান মেহেদী নিহত হন।

হাসান মেহেদীর মৃত্যুর ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে আরএসএফ বাংলাদেশ সরকারের কাছে এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দায়ীদের বিচারের দাবি জানায়।

আরএসএফ বলেছে, ১৮ জুলাই পর্যন্ত আরও ৩০ জন সাংবাদিক লাঞ্ছিত ও আহত হন। এরমধ্যে কয়েকজন পুলিশের মারধর বা গুলির শিকার হয়েছেন। কেউ কেউ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের আক্রমণের শিকার হয়েছেন।

বিবৃতিতে আরএসএফের দক্ষিণ এশিয়া ডেস্কের প্রধান সেলিয়া মার্সিয়ার বলেন, ‘বিক্ষোভ কভার করার সময় একজন সাংবাদিকের মৃত্যু হওয়া খুবই আতঙ্কজনক। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে একাধিক সহিংস আক্রমণ দেখা অগ্রহণযোগ্য।’

কর্তৃপক্ষকে অবিলম্বে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা ও তথ্যের অধিকার নিশ্চিত করার তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, ‘আরএসএফ মিডিয়া পেশাদারদের ওপর যে নৃশংস সহিংসতা ঘটেছে সেসবের নিন্দা এবং পাশাপাশি এসব ঘটনায় দোষীদের চিহ্নিত করার দাবি জানায়।

প্রসঙ্গত, গত ১৮ জুলাই বিকাল সাড়ে পাঁচটার দিকে যাত্রাবাড়ীর মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারে টোল প্লাজার ওপরের অংশে গুলিবিদ্ধ হন ঢাকা টাইমসের সিনিয়র রিপোর্টার হাসান মেহেদী।

সেখানে থাকা প্রত্যক্ষদর্শী সাংবাদিক দৈনিক বাংলাদেশের আলোর স্টাফ রিপোর্টার ইমাম হোসেন ইমন জানান, গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর প্রায় ১০ মিনিট সড়কে পড়ে থাকার পর হাসান মেহেদীকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে দায়িত্বরত চিকিৎসক তার মৃত্যু নিশ্চিত করেন।

ইমাম হোসেন ইমন জানান, ওইদিন অন্য সাংবাদিকদের সঙ্গে থেকে পুলিশের পাশে দাঁড়িয়েই সংবাদ সংগ্রহ করেন হাসান মেহেদী। বিকালে পুলিশের একটি এপিসি থেকে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে টিয়ারশেল ও গুলি ছোড়া হচ্ছিল। এসময় হাসান মেহেদী গুলিবিদ্ধ হন। তার মুখ, গলা ও বুকে শরীরে অসংখ্য ছররা গুলির চিহ্ন দেখা যায়।
এদিকে গত শুক্রবার সকালে সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত শেষে হাসান মেহেদীর মরদেহ আনা হয় রাজধানীর রমনার ইস্কাটন গার্ডেনের ঢাকা টাইমস অফিস প্রাঙ্গণে। এসময় সহকর্মীরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। সেখানেই তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।

ঢাকা টাইমসের সিনিয়র রিপোর্টার হাসান মেহেদী দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বিটে কর্মরত ছিলেন। ঢাকায় তিনি কেরাণীগঞ্জ এলাকায় পরিবারসহ থাকতেন। তার সাত মাস ও চার বছর বয়সী দুই কন্যা শিশু রয়েছে।

হাসান মেহেদীর গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালী জেলার বাউফল উপজেলার হোসনাবাদ গ্রামে। গত শনিবার দুপুরে সেখানে দ্বিতীয় জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

প্রবাসীর স্ত্রীকে ধর্ষণ করে ভিডিও ছড়ানোর হুমকির দায়ে যুবলীগ নেতা গ্রেফতার

অনলাইন ডেস্কঃ

ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলার মাতুভূঞা ইউনিয়নের উত্তর আলীপুর এলাকায় প্রবাসীর স্ত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে ৫নং ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেনের (৩০) বিরুদ্ধে। সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারি) বিকালে পুলিশ দেলোয়ারকে গ্রেফতার করে।

পুলিশ জানায়, গত চার বছর আগে আলীপুর এলাকার জসিম উদ্দিন দুলালের ছেলে দেলোয়ার হোসেন প্রতিবেশী এক প্রবাসীর স্ত্রীকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে ভিডিও ধারণ করে। ওই ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়ার ভয় দেখায়। এমনকি দুই সন্তানসহ পরিবারের সদস্যদের হত্যার হুমকি দিয়ে চার বছর ধরে ধর্ষণ করে আসছিল। দুই সন্তানের ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে বিষয়টি গোপন রাখার চেষ্টা করে অনেক কিছু নীরবে সয়ে যান ওই নারী।

ভুক্তভোগী গৃহবধূ জানান, ভিডিওর ভয় দেখিয়ে শুধু ধর্ষণ নয়, নানা অজুহাতে বেশ কয়েকবার মারধরও করেছে আমাকে। গত দু’মাস আগে প্রবাস ফেরত স্বামীর কাছেও বিষয়টি গোপন রাখার চেষ্টা করি। পরে বাধ্য হয়ে স্বামী ও ইউপি চেয়ারম্যানসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের বিষয়টি জানায়।

ভুক্তভোগী নারী আরও বলেন, আমার স্বামী প্রবাসে থাকায় ঘরে আমার শাশুড়ি ও দুই সন্তান নিয়ে বসবাস করে আসছি। একদিন দেলোয়ার ঘরে ঢুকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। পরে তাকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করে পারিনি। এরপর থেকে নিয়মিত ফেসবুকে ছবি ছড়িয়ে দেয়ার ভয় ও পরিবারের সবাইকে হত্যার হুমকি দেয়। প্রতিবাদ করলে মারধর করতো। সম্প্রতি আমার স্বামী দেশে আসলে আবারও উৎপাত শুরু করলে বিষয়টি স্বামীকে জানাই। রাতের বেলায় ঘরের আশেপাশে দেলোয়ার ঘুরাফেরা করে। তার প্রস্তাবে রাজি না হলে স্বামীকে মেরে আমাকে বিধবা করার হুমকি দেয়।

প্রবাস ফেরত স্বামী জানান, দেশে চাকরি পাই না জীবন বাঁচানোর তাগিদে বিদেশ গিয়েছি। পুরা জীবন ধ্বংস করে দিচ্ছে এসব কুলাঙ্গাররা। রাতের বেলায় কয়েকবার তাকে ধাওয়া করেছি। পরিবার-পরিজন নিয়ে আতঙ্কিত অবস্থায় রয়েছি।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, গৃহবধূ নির্যাতনের ঘটনাটি ভুক্তভোগীর পরিবার আমাকে জানিয়েছে। সত্যতা পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ ক্ষেত্রে বিন্দুমাত্র ছাড় দেয়া হবে না।

দাগনভূঞা থানার ওসি মো. হাসান ইমাম ধর্ষণের ঘটনায় আসামিকে গ্রেফতারের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, এ বিষয়ে যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার দরকার আমরা সেটি করবো। অপরাধী যে দলের রাজনৈতিক পরিচয় দিক না কেন, ছাড় দেয়া হবে না।

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম