তারিখ লোড হচ্ছে...

উলিপুরে বিভিন্ন বিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্পে অনিয়ম

 

মোহাইমিনুল ইসলামঃ

কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় স্কুল লেভেল ইমপ্রুভমেন্ট প্ল্যান (স্লিপ) ফান্ডের টাকা সহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত ২০২১-২০২২,২০২২-২০২৩,২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে উপজেলার ২৬৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রত্যেকটিতে প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণির জন্য ১০ হাজার টাকা, রুটিনের মেইনটেইন এর ৪০ হাজার টাকা, স্লিপ প্রকল্পের জন্য ৫০-৭০ হাজার টাকা করে গত তিন অর্থ বছরে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

এর মধ্যে কিছু কিছু প্রাথমিক বিদ্যালয় কোন কাজ না করেই পুরো টাকায় তুলে নিয়ে শতভাগ কাজ বাস্তবায়ন দেখিয়েছে। এবং কয়েকটি প্রতিষ্ঠান নামমাত্রই কাজ করেছে। এবং ভাউচার ছাড়াই টাকা উত্তোলন করার ঘটনাও ঘটেছে কিছু প্রতিষ্ঠানে।এই সব বিষয়ে ধারাবহিক অনুসন্ধানে ১ম পর্বে উঠে এসেছে কিছু প্রতিষ্ঠানের অনিয়মের চিত্র।

এর মধ্যে , রামদাস ধনিরাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় গত তিন অর্থ বছরে শুধু স্লিপ ফান্ডের মোট ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা, দক্ষিন বিষ্ণুবল্লব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা, পূর্ব কালুডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ২ লক্ষ ১০ হাজার টাকা বরাদ্দ সহ, রুটিন মেইনটেইন, প্রাক-প্রাথমিকের টাকা পেলেও সেগুলো সঠিকভাবে বাস্তবায় না করেই বিল তুলে নেয়া সহ শতভাগ বাস্তবায়িত দেখিয়েছে প্রতিষ্ঠান গুলো।

সরেজমিন এসব প্রতিষ্ঠান ঘুড়ে দেখা যায়, রামদাস ধনিরাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শতভাগ কাজ করেছে দাবী করলেও তিনি কাজের কোন ভাউচার দেখাতে পারেন নি। এবং নামমাত্রই কিছু কাজ করেই শতভাগ কাজ বাস্তবায়ন দেখিয়েছেন।
দক্ষিন বিষ্ণুবল্লব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েও গিয়ে গত দুই অর্থবছরের ভাউচার দেখাতে পারলেও ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরের কোন ভাউচার দেখাতে পারেন নি। এবং উন্নয়নকৃত কোন কাজও দেখাতে পারেন নি তিনি।

পূর্ব কালুডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে উন্নয়ন মূলক কোন কাজ নজরে পরে নি। জরাজীর্ণ ভবন, ভাঙ্গা দরজা- জানালা অপরিষ্কার টয়লেট এরকম নাজেহাল অবস্থায় চলতেছে পাঠদান কার্যক্রম।
তবে প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক নুর-নাহার বেগম দাবি করে বলেন, আমরা প্রতিবছর স্লিপ ফান্ডের ৫০ হাজার করে টাকা পাই, ৭০ হাজার করে পাই না। এই অর্থ বছরের ৫০ হাজার টাকা গতবছর তুলেছি কিন্তুু এখন পর্যন্ত কোন কাজ করিনি। কিন্তুু ৭০ হাজার বরাদ্দ থাকলেও কেন ৫০ হাজার টাকা পেলেন এই বিষয়ে তিনি বেশি কিছু জানেন না, এটিও স্যার ভালো বলতে পারবে।

তবে সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, এই প্রতিষ্ঠানে স্লিপ ফান্ডের ৭০ হাজার টাকা করে গত তিন অর্থবছরে বরাদ্দ পেয়েছে। এই ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরে ৭০ হাজার টাকার পুরো উন্নয়ম মূলক কাজের শতভাগ বাস্তবায়ন করেছে প্রতিষ্ঠানটি এরকমই রিপোর্ট উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস থেকে জানা গেছে। তবে কোন কাজ না করেই কিভাবে শতভাগ বাস্তবায়নের রিপোর্ট দেয়া হয়েছে জিজ্ঞেস করলে তিনি এই বিষয়ে কিছু জানেন না বলে জানান। এবং এখন এই ৫০ হাজার টাকার কাজ এখন শুরু করবেন বলে জানান।

এই বিষয়ে উক্ত ক্লাস্টারের দয়িত্বে থাকা উপজেলা সহকারি প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ফরহাদ হোসেন বলেন, আমি ঐ স্কুলগুলোতে পরিদর্শনে গিয়ে সরেজমিন যা দেখবো তার ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য উর্ধতন কর্মকর্তাকে সুপারিশ করবো।

উপজেলা ভারপ্রাপ্ত প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নার্গিস ফাতিমা তোকদার বলেন,এই সব অনিয়মের বিষয়ে শীঘ্রই তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

২য় পর্ব শীঘ্রই আসছে……….

পরীক্ষার ফি দিতে না পেরে মাহফুজ, লাবণীদের আত্মহত্যা কেন

স্টাফ রিপোর্টার:

আবারও শুনলাম অষ্টম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা দিতে গেছে রংপুরের পীরগাছার মাহফুজুর রহমান। পাঁচটা বিষয়ে পরীক্ষা দেওয়ার পর একসময় স্কুল কর্তৃপক্ষের মনে হলো, মাহফুজ তো পরীক্ষার ফি দেয়নি। হয়তো আগেও তাকে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। পরীক্ষার ফি দিতে হবে।

কোত্থেকে পরীক্ষার ফি দেবে, মাহফুজ যে গরিব বাবার ছেলে। দেউতি স্কুল অ্যান্ড কলেজের পরীক্ষার রুম থেকে তাকে বের করে দেওয়া হয়। বাড়ি ফিরে এসে ছেলেটা আত্মহত্যা করে।

মাহফুজের বাবা হাফিজুর রহমান আলুখেতে কাজ করেন। পরীক্ষার ফি জোগাড় করার জন্য তিনি পরিশ্রম বাড়িয়ে দিয়েছিলেন।

পরীক্ষার ফি দিতে না পেরে স্কুলের শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার ঘটনা এই প্রথম নয়।

চাঁদপুর বাগাদি গণি উচ্চবিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী সাথী আক্তারকে স্কুলের বেতন আর পরীক্ষার ফি মিলিয়ে ৪০০ টাকা দিতে হবে। সে ৩২০ টাকা দিতে পেরেছিল। ৮০ টাকা বাকি। স্কুলে যাওয়ার আগে সেই টাকা মা-বাবার কাছ থেকে চেয়ে সে পায়নি। এ জন্য স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক তাকেসহ আরও কয়েকজনকে রোদের মধ্যে এক ঘণ্টা দাঁড় করিয়ে রাখেন। পরদিন সাথী মায়ের কাছে ৮০ টাকা চায়। মা টাকা জোগাড় করতে বেরিয়েও ছিলেন। এরই ফাঁকে সাথী আত্মহত্যা করে।

‘টেস্ট পরীক্ষার ফি পরিশোধ না করতে পারায় শিক্ষকের বকাঝকা শুনে এবং পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে না পেরে অভিমানে আত্মহত্যা করেছে তন্ময় চক্রবর্তী (১৫) নামে দশম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী। গত সোমবার (৯ অক্টোবর) দুপুরে উপজেলার দশমিনার আরোজবেগী এসএ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।’

‘জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে স্কুলছাত্রী লাবনী আক্তারের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তারাকান্দি গ্রাম থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এদিকে ওই স্কুলছাত্রীর পরিবারের অভিযোগ, বিদ্যালয়ের পাওনা টাকা পরিশোধ করতে না পারায় লজ্জা থেকে বাঁচতে সে আত্মহত্যা করেছে।’

‘পরীক্ষার ফিসহ পাওনাদি পরিশোধের জন্য কলেজ কর্তৃপক্ষ অপমান করায় পূজা রানী (১৮) নামে এক ছাত্রী আত্মহত্যা করেছেন বলে জানা গেছে। পূজা বগুড়ার সুখানপুকুর নতুনপাড়া এলাকার প্রদীপ চন্দ্র সূত্রধরের মেয়ে এবং স্থানীয় সৈয়দ আহম্মদ কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী ছিলেন।’

‘নড়াইলে বার্ষিক পরীক্ষার ফি ও কোচিংয়ের বকেয়া টাকা দিতে না পারায় আত্মহত্যা করেছে অষ্টম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী।’

‘ফতুল্লায় পরীক্ষার ফি দিতে না পেরে লামিয়া (১৫) নামে এক শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে।’

‘স্কুলের বেতন ও পরীক্ষার ফি বাবদ ১ হাজার ৬৩০ টাকা না দিতে পারায় পান্না তার মা-বাবার সাথে অভিমান করে আত্মহত্যা করেছে।’

এই রকম আরও অনেক খবর আছে। অর্থাৎ পরীক্ষার ফি দিতে না পেরে পরীক্ষার হল থেকে বিতাড়িত হয়ে বা শিক্ষকদের বকা খেয়ে আত্মহত্যা এই দেশে প্রায়ই ঘটছে। তার সব খবর নিশ্চয়ই আসে না। আর আত্মহত্যা না করে লড়াই করে টিকে থাকে যারা, পরীক্ষার হল থেকে বেরিয়ে এসে যারা লেখাপড়া ছেড়ে দেয় বা অতি কষ্টে গরিব সংসারে চাপ দিয়ে ফি জোগাড় করে যারা টিকে যায়, তাদের কথা তো আর আমরা সংবাদমাধ্যমে পাই না।

আমাদের দেশে ৯৮ ভাগের বেশি ছেলেমেয়ে স্কুলে যায় বলে প্রচারিত আছে। জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে প্রায় ৪ কোটি ১৭ লাখ মানুষ চরম দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে এবং ৬ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষ চরম ও ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি। এই ৪ কোটি মানুষের পরিবার থেকে আসা ছেলেমেয়েরা কীভাবে পরীক্ষার ফি দেবে?

হ্যাঁ, আমাদের দেশে প্রাথমিক শিক্ষা বিনা বেতনে দেওয়া হয়। ওপরের ক্লাসেও যারা বৃত্তি পায় বা উপবৃত্তি পায়, তাদের জন্য স্কুল-কলেজের মাসিক বেতন মওকুফ করা হয়। উপবৃত্তি দেওয়া হয় পরিবারের আর্থিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে। সমস্যা হয় সেশন ফি, পরীক্ষার ফি আর ফরম ফিলআপের সময়।

‘সম্প্রতি ২০২৫ শিক্ষাবর্ষে “শিক্ষার্থী ভর্তির নীতিমালা” প্রকাশ করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সে নীতিমালা অনুযায়ী ঢাকা মহানগর এলাকার এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির ক্ষেত্রে ৫ হাজার টাকার বেশি আদায় করা যাবে না, আংশিক এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বাংলা মাধ্যমে সর্বোচ্চ ৮ হাজার টাকা এবং ইংরেজি মাধ্যমে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা নেওয়া যাবে। উন্নয়ন খাতে কোনো প্রতিষ্ঠান ৩ হাজার টাকার বেশি আদায় করতে পারবে না।’

ওই আবেদনে দরিদ্র মানুষের কথা বিবেচনায় নিয়ে সরকারকে নীতিমালা পুনর্বিবেচনা করে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষাকে অবৈতনিক করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ঘোষিত ভর্তি নীতিমালা পুনর্বিবেচনা করে অন্যান্য ফি হ্রাস করারও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

এই আবেদনের পাশাপাশি আরেকটা করণীয় আছে, তা হলো পরীক্ষার ফি ও সেশন ফির যন্ত্রণা থেকে দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীদের রক্ষা করা। গরিব পরিবারের শিক্ষার্থীর জন্য পরীক্ষা ফি ও সেশন ফি মওকুফ করতে হবে। আমাদের শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে। এমন ব্যবস্থা করতে হবে যে দরিদ্র শিশু-কিশোরেরা যেন একেবারেই নিখরচায় পড়তে পারে। উপবৃত্তির টাকার পরিমাণও খুব কম। এটা বাড়াতে হবে।

অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস স্বপ্ন দেখেন দারিদ্র্যমুক্ত পৃথিবীর। এখন আমাদের চার কোটি দরিদ্র মানুষের পরিবারের শিক্ষার্থীরা ভর্তি ফি, পরীক্ষার ফির ফাঁদে পড়ে কষ্ট পাচ্ছে। কেউবা আত্মহত্যা করছে। আত্মহত্যা করছে না; কিন্তু লেখাপড়া ছেড়ে দিচ্ছে কত শিক্ষার্থী! এটা আর চলতে দেওয়া যায় না।

সবা:স:জু- ৩১২/২৪

language Change
সংবাদ শিরোনাম