তারিখ লোড হচ্ছে...

সচিবের এতিমখানায় বরাদ্দ হয় ‘৮০ ভূতের’ নামে

 

স্টাফ রিপোর্টার:

মো. খায়রুল আলম সেখ। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে নিয়োগ পান গত বছরের অক্টোবরে। সচিব হওয়ার কয়েক মাসের মধ্যেই নিজ গ্রাম ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে মায়ের নামে প্রতিষ্ঠা করেন এতিমখানা। নাম ‘পশ্চিম চরবর্ণী নরীরন্নেসা এতিমখানা ও মাদ্রাসা’। মাদ্রাসাটির সরকারি অনুমোদন পায় চলতি বছরের মে মাসে। তবে নিজের প্রভাব খাটিয়ে প্রতিষ্ঠার পরপরই অর্থ বরাদ্দ নেন সচিব। এমনকি ওই সময় একজন এতিমও সেখানে পড়াশোনা করতেন না। বর্তমানে ওই মাদ্রাসায় একজনও এতিম নেই। যদিও ৮০ জন এতিমের পড়াশোনা এবং. থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা বাবদ সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে এতিমখানায় বরাদ্দ নেওয়া হয়েছে। স্থানীয় এক ব্যক্তি রসিকতা করে বলেছেন, ‘এখানে একজনও এতিম নেই। ওই ৮০ জন মনে হয় ভূত।’

শুধু এতিমখানায়ই নয়, সচিব হওয়ার দুই মাসের মধ্যেই বাবার নামে ‘আয়েন উদ্দিন সেখ মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশন’-এর নিবন্ধন নেন খায়রুল আলম। এরপর সেখানেও বরাদ্দ দেওয়া হয় সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে।

নথিপত্র বলছে, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব হওয়ার কয়েক মাসের মধ্যেই নিজের মায়ের নামে একটি এতিমখানা প্রতিষ্ঠা করেন খায়রুল আলম সেখ, যার নিবন্ধন নেওয়া হয় চলতি বছরের মে মাসে। নিয়ম অনুসারে নিবন্ধন নেওয়ার পরও কিছুদিন সমাজসেবা অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠান দেখভাল করে। এরপর সন্তোষজনক মনে হলে ওই প্রতিষ্ঠানের বিপরীতে অর্থ সহায়তা দেয়। তবে সচিবের প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের নিয়মনীতি মানা হয়নি। চলতি বছরের মে মাসে এই প্রতিষ্ঠান নিবন্ধন পেলেও সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে বরাদ্দ নেওয়া হয়েছে জানুয়ারি মাস থেকে।
সমাজসেবা অধিদপ্তরের নিয়ম অনুসারে, প্রত্যেক অর্থবছরে দুবার বেসরকারি এতিমখানার জন্য অর্থ ছাড় করা হয়, যাকে বলা হয় ক্যাপিটেশন গ্রান্ট। ন্যূনতম ১০ জন এতিম নিবাসী নেই, এমন কোনো এতিমখানার জন্য ক্যাপিটেশন গ্রান্ট বরাদ্দ দেওয়া যায় না। সমাজসেবা অধিদপ্তরের নিবন্ধন নেই অথবা এতিম শিশু নেই—এমন কোনো এতিমখানাকেও ক্যাপিটেশন গ্রান্ট বরাদ্দ দেওয়া যাবে না। অধিদপ্তরের নিয়মে আরও বলা আছে, যতজন এতিম শিশু থাকবে, তার ৫০ শতাংশের নামে বরাদ্দ দিতে পারবে সমাজসেবা অধিদপ্তর। প্রত্যেক শিশু মাসিক ২ হাজার টাকা বরাদ্দ পাবে।
তবে সচিবের মায়ের নামে হওয়া এতিমখানায় এতিম দেখানো হয়েছে ৮০ জনকে। সেই হিসাবে প্রতি মাসে ৪০ জনের নামে সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে টাকা তোলা হয়। সরেজমিন পশ্চিম চরবর্ণী নরীরন্নেসা এতিমখানা ও মাদ্রাসায় গিয়ে দেখা যায়, ছোট্ট একটি একচালা টিনের ঘরে চলছে মাদ্রাসার কার্যক্রম। পাশেই মাদ্রাসাটির সাইনবোর্ড রয়েছে, যেখানে প্রতিষ্ঠাকাল লেখা ২০২১ সাল। তবে এই মাদ্রাসায় আবাসিক কোনো ব্যবস্থা নেই। যদিও সমাজসেবা অধিদপ্তরের শর্ত অনুসারে এতিম থাকার পাশাপাশি মাদ্রাসায় আবাসিক ব্যবস্থা থাকতে হবে। অবশ্য মাদ্রাসার সামনেই একটি পাকা ভবনের নির্মাণকাজ চলছে।
এতিমখানা ও মাদ্রাসায় গিয়ে দেখা যায়, সেখানে ৭-৮ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। তাদের সবার বাড়িই চরবর্ণী গ্রামে। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বললে এরা প্রত্যেকেই জানায়, বেতন দিয়েই এই মাদ্রাসায় পড়াশোনা করে তারা। এর মধ্যে মাত্র একজন শিক্ষার্থী রয়েছে যার বাবা নেই।

মাদ্রাসা-সংশ্লিষ্ট কয়েকজন বলেন, মাদ্রাসাটি মাত্র দেড় বছর আগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এতিম শিশু নেই। বরাদ্দ আসার বিষয় তারা জানেন না। মাদ্রাসাটি পরিচালনা করেন সচিব খায়রুল আলম সেখের ভাগনে মিজানুর রহমান। পরিচালনা পর্ষদের বাকি সদস্যরাও তার স্বজন। কথা হয় স্থানীয় এক ব্যক্তির সঙ্গে। তিনি নাম প্রকাশ করতে চাননি। এই প্রতিবেদকের প্রশ্ন শুনেই তিনি হাসতে হাসতে বলেন, ‘এই এতিমখানায় সরকারি বরাদ্দ আসে না কি, জানতাম না তো! এখানে তো একজনও এতিম নাই। যেই ৮০ জন এতিমের কথা বললেন, তারা মনে হয় ভূত!’

অন্যদিকে মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার মাত্র দুই মাসের মধ্যেই খায়রুল আলম সেখ বাবার নামে প্রতিষ্ঠা করেন ‘আয়েন উদ্দিন সেখ মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশন’। সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে যার নিবন্ধনও মেলে প্রতিষ্ঠার পরপরই। এর কিছুদিনের মধ্যেই মন্ত্রণালয় অধিভুক্ত সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে ‘আয়েন উদ্দিন সেখ মেমোরিয়াল বিশেষায়িত হাসপাতাল স্থাপন’ শিরোনামে একটি প্রকল্প নেওয়া হয়, যেখানে ব্যয় ধরা হয়েছে ২৯ কোটি টাকা।
পশ্চিম চরবর্ণী এলাকায় কথা হয় স্থানীয় অনেকের সঙ্গে। তারা সবাই বলছেন, আয়েন উদ্দিন সেখ মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশন নামে কোনো প্রতিষ্ঠানের কথা তারা শোনেননি। যদিও সমাজসেবা অধিদপ্তরের নিয়ম অনুসারে যে কোনো প্রকল্প নেওয়ার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট এনজিওর সক্ষমতা বিবেচনা করা হয়। কারণ গ্রাম এলাকায় এ ধরনের প্রতিষ্ঠান গড়ার ক্ষেত্রে ৮০ শতাংশ অর্থ সরকার দিলেও বাকিটা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে দিতে হয়। এ ছাড়া যে ধরনের প্রতিষ্ঠান গড়া হবে, সে সংক্রান্ত পূর্ব-অভিজ্ঞতাও থাকতে হবে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের।

ভাইকে রোগী দেখিয়ে তোলা হয়েছে ৫০ হাজার টাকা:

সমাজসেবা অধিদপ্তর সূত্র এবং নথিপত্র বলছে, খায়রুল আলম সেখের আপন ছোট ভাই আব্দুল্লাহ আল মামুন। সমাজসেবা অধিদপ্তরের ফরিদপুর জেলা কার্যালয় থেকে এই নামে ৫০ হাজার টাকার চেক দেওয়া হয়। এতে বলা হয়, আব্দুল্লাহ আল মামুন জন্মগতভাবে হৃদরাগে আক্রান্ত। তবে তথ্য বলছে, আব্দুল্লাহ আল মামুনের বর্তমান বয়স ৫৫ বছর। জন্মগত রোগের ক্ষেত্রে ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত এ ধরনের সুবিধা পেতে পারেন। এ নিয়ে সমাজসেবা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, সচিব খায়রুল আলম সেখ নিজের প্রভাব খাটিয়ে ভাইয়ের নামে ৫০ হাজার টাকা দিয়েছেন।

অথচ পশ্চিম চরবর্ণী গ্রামের মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, খায়রুল আলম সেখের ভাই জন্মগত কোনো রোগে আক্রান্ত নন। এমনকি তিনি অসুস্থও নন। এ বিষয়ে ফের যোগাযোগ করা হয় সমাজসেবা কার্যালয়ে। তবে সেখানকার সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, শুধু সচিবের ভাই নন, আত্মীয়স্বজন এবং পরিচিতিজনের অনেকেই অসুস্থতা দেখিয়ে অর্থ বরাদ্দ নিয়েছেন।

সচিবের ইচ্ছাতেই বদলি-পদায়ন:

এদিকে সচিবের একক আধিপত্য তৈরি করতে নিজের পছন্দমতো কর্মকর্তাদের বদলি এবং পদায়নে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে সমাজসেবা অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। গত এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে সচিবের অপসারণ চেয়ে আন্দোলনও করছেন কর্মকর্তারা। এমনকি যেসব কর্মকর্তা আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তাদেরকেও বদলি করে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা বলছেন, একতরফা নির্বাচনের পরে গত ১১ জানুয়ারি টানা চতুর্থবারের আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পরপরই বদলি বাণিজ্য শুরু করেন সচিব খায়রুল আলম সেখ। একদিনেই বদলি করা হয় সাতজন কর্মকর্তাকে। এরপর নিজের আধিপত্য বাড়াতে আরও বেশ কয়েকজনকে বদলি এবং পদায়ন করেন তিনি। গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলেও বেপরোয়া আচরণ অব্যাহত রাখেন খায়রুল সেখ। অন্তত ১০ জন কর্মকর্তাকে দেশের বিভিন্ন স্থানে বদলি করা হয়। এ ছাড়া নিজের সিন্ডিকেটকে টিকিয়ে রাখতে পছন্দের লোকদের রাজধানী এবং গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোতে পদায়নের ব্যবস্থাও করছেন খায়রুল সেখ। প্রায় দেড় সপ্তাহ ধরে এ নিয়ে আন্দোলন করছেন কর্মকর্তারা।

যা বললেন সচিব:

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হয় সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. খায়রুল আলম সেখের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এর (অনিয়ম) সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। সবকিছু নিয়ম মেনেই হচ্ছে। মাদ্রাসাটি স্থানীয়রা করেছেন আমার মায়ের নামে। সেখানে ৪০-৫০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে।’ এতিম কতজন—জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সেটা তো আমি জানিও না।’ এরপর ভাইয়ের অনুদানের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমার ভাই অসুস্থ। হার্টের রোগী। হাজার হাজার মানুষ অনুদান পায়, সেভাবেই সে পেয়েছে।’ বাবার নামে হাসপাতালের বিষয়ে তার বক্তব্য—‘ওই প্রকল্পটি আমরা বাতিল করেছি।

 

 

 

অনিয়ম-দুর্নীতিতে ডুবছে সামসুল হক স্কুল অ্যান্ড কলেজ

স্টাফ রিপোর্টার॥
আওয়ামী সরকারের আমল থেকে শুরু করে নানা অনিয়ম আর দুর্নীতিতে ডুবতে বসেছে ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে অবস্থিত সামসুল হক স্কুল অ্যান্ড কলেজ। এসব কারণে দিনকে দিন কমছে শিক্ষার্থীর সংখ্যা। বেতন কমানোর পরিবর্তে নতুন করে বাড়ানোর প্রক্রিয়া চলছে। এমন পরিস্থিতিতে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন অভিভাবকরা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির জমিদাতাদের কোনো প্রতিনিধি না রাখায় এলাকাবাসীর মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির পেটের ভেতরে থাকা এক চিকিৎসকের বিশাল আয়তনের বহুতল একটি বাড়ি দখলে নানা যড়ষন্ত্র চলছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এলাকায় শিক্ষার আলো ছড়াতে ডেমরার কোনাপাড়ার বাসিন্দা বিশিষ্ট সমাজসেবক হাজী সামসুল হক খান স্কুল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন। তারই ধারাবাহিকতায় ১৯৮৯ সালে ঢাকার ডেমরা থানাধীন কোনাপাড়ায় নিজের ধানক্ষেতে টিনের ঘর তুলে প্রথমে প্রাথমিক বিদ্যালয় চালু করেন। স্কুলের শিক্ষক সংখ্যা ছিল মাত্র ১২ জন। শিক্ষার্থী ছিল প্রায় একশ’। তার নিরলস প্রচেষ্টায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি অল্প সময়ের মধ্যেই আলোকিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে সুনাম অর্জন করে। সমাজসেবক ও সরকারি হস্তক্ষেপে প্রতিষ্ঠানটির পরিধি বাড়তে থাকে। বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ সালাহউদ্দিন আহমেদের সার্বিক সহযোগিতায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বহুতল ভবন নির্মাণ থেকে শুরু করে অকাঠামোসহ নানা দিক দিয়ে উন্নত হয়। বর্তমানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি অন্তত ৪ বিঘা জমির উপর প্রতিষ্ঠিত। স্কুলেরই ৬টি বহুতল ভবন গড়ে তোলা হয়েছে। যার মধ্যে একটি ৫ তলা, ২টি ৬ তলা, ১টি ৭ তলা ও অপরটি ৮ তলা।

স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে, বর্তমানে স্কুল শাখায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৫ হাজারের বেশি। আর কলেজ শাখায় ছাত্রীর সংখ্যা প্রায় ২ হাজার। কলেজ শাখায় কোনো ছাত্র নেই। তবে স্কুল শাখায় ছাত্র-ছাত্রী উভয়ই আছে। ২০১৪ সালে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে বাংলার পাশাপাশি ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনা চালু হয়। প্রথম শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানো হয়। শিক্ষার্থীদের বেতন প্রায় হাজার টাকা থেকে শুরু করে দুই হাজার টাকার বেশি। তবে বাংলা ও ইংরেজি মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মাসিক বেতনে সামান্য কিছু পার্থক্য আছে।

অধিকাংশ অভিভাবকের অভিযোগ, এলাকা অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের বেতন তুলনামূলকভাবে বেশি। কারণ এলাকাটিতে নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষের বসবাস বেশি। মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত মানুষের বসবাসের হার তুলনামূলকভাবে অনেক কম। বিষয়টি বার বার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির কর্তৃপক্ষের নজরে আনার চেষ্টা করেও কোনো লাভ হয়নি। এমনকি বর্তমান বাজার পরিস্থিতি বিবেচনা করে শিক্ষার্থীদের বেতন মানবিক কারণে কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে একাধিকবার। কর্তৃপক্ষ বিষয়টি আমলেই নিচ্ছে না। কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, ভালো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াতে হলে বেশি টাকা বেতন গুনতে হবে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, হাজী সামসুল হক খান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি নিজের হাতে গড়ে তুলেছেন। জমি থেকে শুরু করে সব ধরনের সহযোগিতা করেছেন। শিক্ষকসহ স্থানীয়দের সহযোগিতায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি অনেক বড় হয়েছে। বর্তমানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে শিক্ষকের সংখ্যা ৩৭৫ জন। এছাড়া কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা ১২০ জন। এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে প্রতিষ্ঠাতাদের দরিদ্র আত্মীয়-স্বজন বা তাদের ঘনিষ্ঠদের পর্যন্ত চাকরি দেওয়া হয়নি। অনেককেই টাকার বিনিময়ে নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগও আছে আর তাতেই কতিপয় লোক আজ কোটি কোটি টাকার মালিক আরো অভিযোগ রয়েছে অনেক শিক্ষকের ফ্ল্যাট ও ফ্লট রয়েছে মাত্র শিক্ষক হয়ে এতো সম্পত্তির মালিক হলেন কিভাবে এমন প্রশ্ন সচেতন মহলের।
স্থানীয়রা বলছিলেন, সবচেয়ে পরিতাপের বিষয়, যাদের সহযোগিতায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি সৃষ্টি ও প্রসার ঘটেছে, তাদের কাউকেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির কার্যকরী কমিটির কোনো পদে রাখা হয়নি। এমনকি প্রতিষ্ঠানের অনুষ্ঠানেও তাদের দাওয়াত পর্যন্ত দেওয়া হয় না। তাদের দরিদ্র আত্মীয়-স্বজনদের প্রতিষ্ঠানটিতে চাকরি পাওয়া তো দূরের কথা, প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরতদের পর্যন্ত বেতন মওকুফ বা কমিয়ে দেওয়া হয় না। বিষয়টি নিয়ে এলাকাবাসীসহ প্রতিষ্ঠাতাদের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৬৫ নম্বর ওয়ার্ডে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির অবস্থান। সেই ওয়ার্ডের আহমদবাগের বাসিন্দা ঠিকাদার শাহ আলম প্রতিষ্ঠানটির ভবন নির্মাণ, মেরামত, পলেস্টার, রং করাসহ যাবতীয় কাজ করেন। এসব কাজে প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি টাকা ভাউচার করে তুলে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এমনকি ভুয়া বিল ভাউচার করে বিপুল টাকা প্রতিষ্ঠানের ফান্ড থেকে তুলে নেওয়ারও অভিযোগ আছে। পুরো প্রক্রিয়াটির সঙ্গে অধ্যক্ষ ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা ও প্রতিষ্ঠানটির গভর্নিং বডির সদস্যরা জড়িত বলে অভিযোগ আছে। প্রতিষ্ঠানটি থেকে কোটি কোটি টাকা হরিলুট হওয়ারও অভিযোগ আছে। সবচেয়ে বড় টাকার ভাগটি অধ্যক্ষের পকেটে যায় বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।

জানা গেছে, চলতি বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অধ্যক্ষ ড. মাহবুবুর রহমানের পদত্যাগের দাবি ওঠে। ওই সময় অধ্যক্ষ স্থানীয় প্রভাবশালীসহ সংশ্লিষ্টদের অনৈতিক সুবিধাসহ মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে ম্যানেজ করেছেন বলে অভিযোগ আছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ঢাকা শিক্ষা বোর্ড থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরে মোটা অঙ্কের টাকা খরচ করে টিকে রয়েছেন অধ্যক্ষ সে কারনে সে বলে বেড়ায় তাকে সরানো এতো সহজ না দরকার হলে তিনি নাকি ছাত্র আন্দেলনের স্বমন্বয়কদের কিনতে পারবেন।
অভিযোগ আছে, শেখ হাসিনার পতনের পর সরকারের নির্দেশনা থাকার পরেও অধ্যক্ষের একক সিদ্ধান্তে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি কৌশলে বন্ধ রাখা হয়েছিল। প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে সব ম্যানেজ করেছেন অধ্যক্ষ। বিগত শেখ হাসিনা সরকারের আমলে ওই আসনের সংসদ সদস্যসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের মোটা অঙ্কের টাকা দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে। সবশেষ অধ্যক্ষ স্থানীয় আওয়ামী লীগ সংসদ সদস্যকে ৩ কোটি টাকা দিয়েছেন বলে এলাকা জনশ্রুতি আছে। টাকা দিয়ে সব ম্যানেজ করার কারণে তার পদত্যাগ নিয়ে পরবর্তীতে আর কোনো হইচই হয়নি। বর্তমানে তিনি বহাল তবিয়তে আছেন। যদিও তিনি দীর্ঘ সময় ধরেই প্রতিষ্ঠানটিতে অধ্যক্ষ হিসেবে রয়েছেন। সুবিধা পেয়ে অধ্যক্ষ ড. মাহবুবুর রহমান মোলস্না ঠিকাদার শাহ আলমের শ্যালিকাকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন বলে স্থানীয়দের দাবি।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ঠিকাদার শাহ আলম শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির জন্য জমি কিনে দিয়েছেন। দালালি হিসেবে তিনি ছাড়াও অধ্যক্ষ এবং গভর্নিং বডির সদস্যরা জমি কেনা বাবদ কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। জমি বেচাকেনা আর ঠিকাদারি করে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন শাহ আলম। ভবন নির্মাণ থেকে শুরু করে যাবতীয় কর্মকান্ডে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) সংশ্লিষ্ট অসাধু কর্মকর্তারাও বাড়তি সুবিধা নিয়েছেন।

সূত্র বলছে, স্কুলের পেটের মধ্যে থাকা এক চিকিৎসকের অন্তত ১৫ কাঠা জমির উপর একটি ৬ তলা বাড়ি আছে। বাড়িটির সামনে ও দক্ষিণ দিক ছাড়া সব দিকেই স্কুলের ভবন। বাড়িটি নেওয়ার জন্য নানাভাবে গোপন ষড়যন্ত্র চলছে। বাড়িটি না পাওয়ার কারণে প্রতিষ্ঠানটির কলেজ শাখা স্কুল শাখা থেকে ৩০০ গজ দক্ষিণ দিকে আলাদাভাবে ভবন নির্মাণ করতে হয়েছে। বাড়িটি বা বাড়ির জায়গাটি পেলে সেখানেই কলেজ ভবন স্থাপনের কথা ছিল। এ নিয়ে নানাভাবে জল ঘোলা হয়েছে।

রানী ভিলা নামের ওই বাড়ির ভাড়াটিয়াসহ অনেকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, স্কুল লাগোয়া বাড়ি হওয়ায় সেখানে বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। শব্দের কারণে টেকা দায়। এসব কারণে ভাড়াটিয়ারা উঠলেও কিছু দিন যেতে না যেতেই বাসা বদল করে ফেলেন। এমন পরিস্থিতির কারণে প্রায় সারা বছরই বাড়ির সামনের গেটে ফ্ল্যাট ভাড়া দেওয়ার নোটিশ ঝুলে থাকে।

অভিযোগ আছে, অধ্যক্ষ ড. মাহবুবুর রহমান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি থেকে মোটা অঙ্কের টাকা সরিয়ে নিজের নামে স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছেন। ড. মাহবুবুর রহমান স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীদের আনা-নেওয়ার জন্য অন্তত ১০টি মিনি বাস আছে। বিশাল সেই প্রতিষ্ঠানটির মালিক হয়েও তিনি মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিতেই সামসুল হক স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এতে করে স্থানীয়দের মনে নানা সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে। সামসুল হক স্কুল অ্যান্ড কলেজের আয় বেশি হওয়ায় এবং বাড়তি বেশি সুবিধা পাওয়ার কারণেই তিনি নিজের প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব নেননি। যদিও তার প্রতিষ্ঠান তারই কথামতোই চলছে। দুটি প্রতিষ্ঠান থেকেই তিনি মোটা অঙ্কের টাকা পাচ্ছেন।

এ ব্যাপারে অধ্যক্ষ ড. মাহবুবুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম