তারিখ লোড হচ্ছে...

সরমান’ সিন্ডিকেটে জিম্মি যমুনা লাইফ!

স্টাফ রিপোর্টার:

চতুর্থ প্রজন্মের বিমা কোম্পানি যমুনা লাইফ ইন্স্যুরেন্সকে ধ্বংসের পাঁয়তারা করছেন কোম্পানির অর্থ ও হিসাব বিভাগের ইভিপি মোজাম্মেল হক সরমান। অবৈধভাবে কোম্পানির কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ, ভ্যাট ও ট্যাক্স ফাঁকি, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে সিন্ডিকেটসহ নানা অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। বীমা উন্নয়ণ ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) চেয়ারম্যান বরাবর ‘সরমান সিন্ডিকেটের অপসারণ’ চেয়ে আইডিআরএ চিঠি দিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্থ গ্রাহকরা।

গত পহেলা অক্টোবর আইডিআরএতে দেয়া চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, যমুনা লাইফ ইনসিওরেন্স কোম্পানির মালিক পক্ষ- সবাই সদ্য বিদায়ী স্বৈরশাসক আওয়ামী সরকারের হেভি ওয়েট এমপি ও মন্ত্রী ছিলেন। কোম্পানীর চেয়ারম্যান বদরুল আলম খান ও পরিচালক মোঃ সালাহউদ্দিন চৌধুরী দু’জন হলেন, সাবেক মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী প্রতিনিধিত্বকারী। ভাইস চেয়ারম্যান সামিয়া রহমান ও পরিচালক আয়েশা সুলতানা- এরা দু’জন হলো সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের নাতনী ও তার স্ত্রী। পরিচালক মোঃ মাইদুল ইসলাম হলেন সাবেক মন্ত্রী মোঃ তাজুল ইসলামের ছেলে। বাকি সব পরিচালকরা হলেন- কুলিয়ার চর সি ফুডস লিমিটেড এর মালিক মরহুম মোঃ মুছা মিয়ার স্ত্রী ও সন্তান। এরা সবাই আওয়ামী পরিবারের লোক

প্রভাবশালী আওয়ামী এমপি ও মন্ত্রীদের ব্যবহার করে যমুনা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের কিছু কর্মকর্তা কোম্পানির থেকে সুকৌশলে কোটি কোটি টাকা আত্নসাৎ করেছেন। বর্তমানে পরিচালকরা সবাই আত্মগোপনে থাকার কারনে একটি চক্র আইডিআরএ থেকে অপসারিত ব্যক্তি ডক্টর বিশ্বজিৎ মন্ডল কে সিইও হিসাবে নিয়োগ দিয়েছে। চক্রটি কোম্পানির কোটি কোটি টাকা বিভিন্ন মাধ্যমে বের করে ফেলেছে। যমুনা লাইফে ৬ টি উপায়ে অর্থ লোপাট হয়- চিঠিতে এমন তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। আর কোম্পানির এই অর্থ আত্নসাতের মাস্টার মাইন্ড হলেন- অর্থ ও হিসাব বিভাগের ইনচার্জ মোঃ মোজাম্মেল হক সরমান, ইভিপি (অর্থ ও হিসাব) সহকারী ম্যানেজার মোঃ জিয়া এবং গ্রুপ বিমার ইনচার্জ ও এসইভিপি মোঃ হারুন অর রশিদ। গত কয়েক বছর ধরে তারা সুকৌশলে কোম্পানি থেকে অবৈধভাবে টাকা নিয়েছে এবং বর্তমানে সিইও আসার পরও তা অব্যহত রয়েছে।

আইডিআরএ পাঠানো এই চিঠিতে উল্লেখ করেন, যমুনা লাইফের অর্থ ও হিসাব বিভাগের ইনচার্জ মোজাম্মেল হক সরমান দীর্ঘদিন যাবত সরকারি কোষাগারে কোন ধরনের ভ্যাট এবং ট্যাক্স জমা দেন নাই। যার কারনে অডিটে প্রায় থেকে ২ কোটি টাকা জরিমানা হয়েছে। তখন ঘুস বানিজ্য করে ২ কোটি টাকার বিপরীতে ১ কোটি টাকা ঘুষ দিলে ২ কোটি টাকা মাফ পাবে বোর্ডকে এমন কাহিনি বলে। বোর্ড তাতে রাজি হয়। ভ্যাট ও ট্যাক্সের টাকা ফাঁকি দিতে ঘুষ হিসেবে কোম্পানি থেকে ১ কোটি টাকা বের করা হয়। এই টাকা থেকে সরমান ২০ লক্ষ টাকা খরচ করে ৮০ লক্ষ টাকা আত্নসাৎ করেন। বর্তমানে ভ্যাট ও ট্যাক্স এখনো মামলা চলমান আছে।

এছাড়াও পরিবহন বিভাগের ইনচার্জ এর মাধ্যমে সব চেয়ে বেশি টাকা বের করছেন সরমান সিন্ডিকেট। বিভিন্ন ভুয়া বিলের মাধ্যমে হাজার হাজার টাকা লুটপাট করেন।

অভিযোগে বলা হয়েছে, যমুনা লাইফে সরমান সিন্ডিকেট প্রাধান কার্যালয়ের ক্যাশিয়ার মো জিয়ার মাধ্যমে প্রায় ৮ কোটি টাকা বের করে নিয়েছে। সরমান সারা দেশের ক্যাশিয়ারদের কাছ থেকে প্রিমিয়ামের টাকা সংগ্রহ করে এবং ব্যাংকে জমা না করে বিল সমন্বয়ের কথা বলে টাকা হাতিয়ে নেয়। এরপর প্রিমিয়ামের টাকা নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে। পরে, বছর শেষে ঐ টাকা বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মীর নামে ডিউ দেখিয়ে আত্মসাৎ করে। গ্রুপ বীমার ইনচার্জ হারুন অর রশিদ এবং হিসাব বিভাগের ইনচার্জ মোজাম্মেল হক সরমান- এরা গ্রুপ বীমাসহ বিভিন্ন মাধ্যমে লুটপাট করছে।
এমনকি যমুনা লাইফ বাংলাদেশের অন্যসব বীমা কোম্পানির চেয়ে কম রেটে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রুপ বিমা গ্রহন করে। যার রেটিং কোন একচ্যুয়ারির অনুমোদন নেই। ফলে গ্রুপ বিমা সবসময় লসে থাকে এবং লসের টাকা একক বীমার টাকা থেকে খরচ করা হচ্ছে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘুস ও গিফট এবং কমিশন প্রদানের নাম করে হাজার হাজার টাকা লুটপাট করতেছে সরমান ও হারুন সিন্ডিকেট। এভাবেই সাধারণ বীমা গ্রাহকের টাকা অন্য দিকে চলে যাচ্ছে এবং কোম্পানির বীমার মেয়াদ শেষে গ্রাহকের টাকা না পাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

শুধু তাই নয়, কোম্পানির বার্ষিক সম্মেলনের মাধ্যমে সরমান লক্ষ লক্ষ টাকা নিজের পকেটে ভারি করেছে। প্রতি বছর কোম্পানির বার্ষিক সম্মেলন করা হয় কক্সবাজারে। সেখানে ডেক্স ও উন্নয়ন কর্মীসহ প্রায় ৩৫০ থেকে ৪০০ বীমা কর্মী-কর্মকর্তা অংশগ্রহণ করেন। তাদের জন্য হোটেল ভাড়া, হল রুম ভাড়া, খাবার খরচ পরিবহন ব্যবস্থা- সবগুলোর দায়িত্বে থাকেন সরমান। এখানে ১৫ লক্ষ খরচ হলে সরমান বিল করেন ৩০ লক্ষ টাকা।

অনিয়ম, দূনীর্তি ও লুটপাটের পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক শৃংঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগও রয়েছে এই কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে। সরমান ও হারুন যমুনা লাইফের পরিচালকদের ম্যানেজ করে আইডিআরএ থেকে অপসারণকৃত ব্যাক্তি ড. বিশ্বজিৎ মন্ডল কে সিইও হিসেবে কোম্পানিতে নিয়ে আসেন। তাদের সাথে মন্ডলের চুক্তি হয়েছে, ‘আর্থিক ভাবে পূর্নবাসন করার এবং সেই ধারাবাহিকতায় ২৫ সেপ্টেম্বর সরমান, হারুন ও জাহিদকে পদোন্নোতি দেন মন্ডল। একইসঙ্গে ৩০ হাজার থেকে বাড়িয়ে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা বেতন বৃদ্ধি করেছেন। এই দুই কর্মকর্তাকে গাড়ি সুবিধাও দেয়া হয়েছে। সেখানে গড় খরচ দেড় লাখ টাকা। যেখানে কোম্পানির লাইফ ফান্ড নেগেটিভ- সেখানে সরমান এতো টাকা কিভাবে খরচ করে। বর্তমানে কোম্পানির নাজুক অবস্থায় পদোন্নতিও প্রশ্নবৃদ্ধ।
কেউ প্রতিবাদ করলে কোম্পানি থেকে বহিষ্কার করার হুমকি দেয়া হয়। কিছু দিন আগেও দুই কর্মকর্তা প্রতিবাদ করায় তাদের বহিষ্কার করা হয়। সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও কোম্পানীর প্রিমিয়ামের টাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইডিআরএকে যমুনা লাইফে প্রশাসক নিয়োগের দাবী জানানো হয়।

এ বিষয়ে কথা বলতে মোজাম্মেল হক সরমানের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও সাড়া মেলেনি এবং ক্ষুদে বার্তা পাঠানোর পর কোন উত্তর আসেনি।

এমকি চেয়ারম্যান ও সিইওকে ফোন দেয়া হলেও কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

এই বিষয়ে আইডিআরএ পরিচালক (আইন) আব্দুল মজিদ বলেন, বীমা খাতে কোন অন্যায় মেনে নেয়া হবেনা। কোন ব্যক্তি বা কোম্পানির বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

টেকসই সবুজ প্রকল্পে বিনিয়োগ বেড়েছে

টেকসই সবুজ প্রকল্পে বিনিয়োগ বেড়েছে

ডেস্ক রিপোর্ট:

২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চ তিন মাসে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর টেকসই ও সবুজ প্রকল্পে বিনিয়োগ বেড়েছে এক হাজার ৮২২ কোটি ৫২ লাখ টাকা। এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবিলায় দেশে টেকসই ও পরিবেশবান্ধব প্রকল্পে অর্থায়ন ক্রমেই বাড়ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য বলছে, ২০২৪ সালের ডিসেম্বর শেষে এই খাতে মোট বিনিয়োগ ছিল এক লাখ ৫৬ হাজার ৭৬০ কোটি টাকা। চলতি ২০২৫ সালের মার্চ শেষে যা বেড়ে এক লাখ ৫৮ হাজার ৫৮২ কোটি ৫২ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে। শুধু টেকসই প্রকল্পেই মার্চ প্রান্তিকে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সম্মিলিত অর্থায়ন হয়েছে এক লাখ ৪৯ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা। আগের প্রান্তিকে যা ছিল এক লাখ ৪৮ হাজার ১১৫ কোটি টাকা। সে হিসাবে তিন মাসে টেকসই প্রকল্পে অর্থায়ন বেড়েছে এক হাজার ৭০৪ কোটি টাকা। এ সময়ে ব্যাংকগুলো এককভাবে টেকসই খাতে বিনিয়োগ করেছে এক লাখ ৪৬ হাজার ৮৫১ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো অর্থায়ন করেছে ২ হাজার ৯৬৭ কোটি ২৯ লাখ টাকা।

নারী কর্মীদের ছোট হাতা ও দৈর্ঘ্যের পোশাক ও লেগিংস বাদ দিতে বলল বাংলাদেশ ব্যাংক । একদিনের ব্যবধানে ফের বাড়ল স্বর্ণের দাম
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাসটেইনেবল ফাইন্যান্স পলিসি অনুযায়ী, ব্যাংকগুলো ১১ ক্যাটাগরির আওতায় ৬৮ পণ্যে ঋণ দিতে পারে, যার অধিকাংশই সবুজ অর্থায়নের আওতায় পড়ে। এসব প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে কৃষি, সিএমএসএমই, পরিবেশবান্ধব কারখানা এবং সামাজিকভাবে দায়বদ্ধ প্রকল্প। পরিবেশবান্ধব প্রকল্পের মধ্যে সৌরবিদ্যুৎ, বর্জ্য শোধনাগার (ইটিপি) এবং পরিবেশবান্ধব ইট উৎপাদন অন্যতম। বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালায় এসব প্রকল্পে মোট মেয়াদি ঋণের ৫ শতাংশ অর্থায়নের শর্ত রয়েছে। সবুজ প্রকল্পেও বিনিয়োগ বেড়েছে সামান্য।

২০২৪ সালের ডিসেম্বর শেষে এ খাতে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সম্মিলিত অর্থায়ন ছিল ৮ হাজার ৬৪৫ কোটি টাকা। ২০২৫ সালের মার্চ শেষে যা ৮ হাজার ৭৬৩ কোটি ৪৭ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে। তিন মাসে প্রবৃদ্ধি ১১৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ ছিল ৭ হাজার ৯২৭ কোটি ২৮ লাখ টাকা। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিনিয়োগ ৮৩৬ কোটি ১৯ লাখ টাকা। তবে টেকসই কৃষি খাতে অর্থায়ন কমেছে। ডিসেম্বর শেষে যেখানে বিনিয়োগ ছিল ৮ হাজার ৭৩১ কোটি টাকা। মার্চ শেষে তা নেমে এসেছে ৭ হাজার ৯২৪ কোটি ৯৭ লাখ টাকায়। ফলে এ খাতে ৮০৭ কোটি টাকার অর্থায়ন কমেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে টেকসই অর্থায়নে উৎসাহিত করতে প্রতিবছর ‘সাসটেইনেবল রেটিং’ প্রকাশ করে আসছে। জলবায়ু সহনশীলতা ও সবুজ প্রবৃদ্ধি অর্জনে এই ধারা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

language Change
সংবাদ শিরোনাম