
আজিজুর রহমান বাবু। শরীয়তপুর প্রতিনিধি :
২০১৪ থেকে ২০২৪ এর ৫ ই আগষ্টের পূর্ব মূহুর্ত পর্যন্ত ক্ষমতাধর স্বৈরাচারী আওয়ামী রাজনীতির অন্যতম ধারক এবং বাহক বাংলাদেশের ছাত্র রাজনীতির তুখোড় বক্তা,সুযোগ সন্ধানী নেতা শরীয়তপুর – ২ আসনের এমপি সাবেক উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম।
বিশিষ্ট এই রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের ব্যর্থতার চিত্র গুলোর রয়েছে অসংখ্য তথ্য উপাত্ত ছড়িয়ে রয়েছে এই জনপদে।
এনামুল হক শামীম বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিত্ব করলেও মাঠ পর্যায়ে নড়িয়া- সখিপুরে আসনের সকল ইউনিয়ন এবং ওয়ার্ড পর্যায়ে ” শামীম লীগ ” এর উত্থান ঘটে।
মাঠ পর্যায়ে সত্যিকার সাংগঠনিক পরিচর্যা গড়ে উঠেনি। যার কারণে অজস্র নির্যাতিত সগোত্রীয় কর্মী এবং বিরোধী পক্ষের কাছে আতংকের বিষয়বস্তু হ’য়ে দাঁড়িয়ে ছিলো কথিত এই শামীম লীগ । বাদ যায়নি – আওয়ামী লীগের নিবেদিত কর্মীরাও। কারণ পুলিশ প্রশাসন ও কথিত চামচাদের চোখ রাঙ্গানিতে অনেকে মুখ খুলতে ভয় পেতো।
প্রতিটি ইউনিয়নে মুষ্টিমেয় তেলবাজ, চাঁদাবাজ অশিক্ষিত কর্মীদের নিয়ে গড়ে উঠেছিল ” সিন্ডিকেট “। এসব সিন্ডিকেটের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদদাতা হিসেবে অভিযোগের তীর তাঁর দিকেই প্রতিফলিত হয়েছে। প্রমাণিত সত্য হিসেবে জনগনের কাছে প্রতিফলিত হয়েছে। কেননা তিনি এইসব তথ্য সন্ত্রাসীদেরকে তিনি কঠোর হস্তে দমন করতে ব্যর্থ হয়েছেন। নিদেনপক্ষে চেষ্টা থেকেও বিরত থেকেছেন।
এনামুল হক শামীম মঞ্চে অথবা কোন সামাজিক অনুষ্ঠানের বক্তৃতায় যতই নীতি আদর্শের কথা বলেছেন ঠিকই কার্যতঃ কথায় কাজে বাস্তবায়নে তেমন উদ্যোগ দেখা যায়নি। ক্ষমতাকালিন সময়ে যুগান্তকারী কোন দৃষ্টান্ত স্হাপন করতে এলাকার জনগণ দেখেনি।
বিধায় ২০১৪ সালে যে আমজনতা বিশ্বাসী হয়ে তাকে আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতা বানিয়েছিলো আজ ২০২৪ সালে এসে মনে প্রাণে প্রত্যাখ্যান করেছে। এলাকায় স্বৈরাচারী কার্যক্রম এত বেশী প্রসার লাভ হয় যে অবকাঠামো উন্নয়নকে হার মানিয়ে ফেলে।
তাঁর জল-জলন্ত প্রমাণ ২০২৪ এর উপজেলা নির্বাচনে বিজয়ী ইন্জিনিয়ার ওয়াসেল কবির গুলফামের নিরংকুশ বিজয়ে। উপমন্ত্রীর বিশ্বস্ত সেনাপতি হিসেবে খ্যাত দু’বারের উপজেলা চেয়ারম্যান হুমায়ুন মোল্লার চরম পরাজয়ে। এই পরাজয় শুধু হুমায়ুন কবির মোল্লার একার ছিলো না । একেএম এনামুল হক শামীমের স্বেচ্ছাচারী সিদ্ধান্তের পরাজয় ছিলো। অত্র এলাকায় ” শামীম লীগ ” এর ঘৃণিত কার্যক্রমের প্রতি জনগনের নির্মম প্রতিবাদ ছিলো। বিগত নির্বাচনে এমন স্বতঃস্ফূর্ত মনোভাব জনগনের মধ্যে বিরাজ করছিলো জীবদ্দশায় এমন নির্বাচন এলাকার জনগণ কখনো অনুধাবন করেননি।
২০০৯ এর পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্র লীগের মধ্যে পরস্পরের যে সৌহার্দ্য পূর্ণ পরিবেশ বিদ্যমান ছিল। ” শামীম লীগ ” হওয়ার কারণে তাতে ফাটল ধরে ছিন্ন বিচ্ছিন্ন হয়েছে। নিবেদিত কর্মীদের মধ্যে প্রতিহিংসার বীজ রোপিত হয়েছে। তাতে কোন সন্দেহ নেই।
ছোট মানুষের ছোট ছোট ভুল হবে। আর বিশাল ব্যক্তিত্বপূর্ণ মানুষের বিশাল বিশাল ভুল হবে এটাই তো স্বাভাবিক। তারপরও রাজনৈতিক নেতাদের স্বেচ্ছাচারী সিদ্ধান্তের কুফল ভুক্তভোগী কর্মীরা কখনো ক্ষমা করবে না।
উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম শুধুমাত্র তাত্ক্ষণিক মেধার জোরে যতখানি জনগণের কাছাকাছি এসেছেন। তাঁর উগ্র আচরণ এবং বিশ্বস্ত অনুসারীদের দাম্ভিকতাপূর্ণ অশ্লীল ভাষা প্রয়োগের কারণে দূরে সরে গেছেন। তিনি যে প্রক্রিয়ায় উপমন্ত্রী এমপি হউন না কেন তাঁর ভারিক্কি বদ মেজাজের কারণে কর্মীরা দূরে সরে গিয়েছে। এরা কী কখনো ফিরে আসবে ?
নিজের দল ভারী করার জন্য ত্যাগী কর্মীদের সাইডলাইনে বসিয়ে হাইব্রিডদের স্হান পাকাপোক্ত করে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করেছেন। বাস্তবতায় কি লাভ হলো ? যাঁদের নিয়ে দলের চাকচিক্য বাড়াতে চেয়েছেন, আজ তাঁরা কই ? যে যার নিজ গৃহে প্রত্যাবর্তন করেছে। হাইব্রিড এসব কর্মীরা সংগঠনে এসে কেবল ব্যক্তিগত ভাবে লাভবান হয়েছে …. সংগঠনের দুই পয়সা লাভ হয়নি…. ব্যস এটুকুই !
নিশ্চয়ই মনে আছে – চরভাগা আওয়ামী লীগের পার্টি অফিস উদ্বোধন উপলক্ষে এনামুল হক শামীম বেশ জোরেশোরে বলেছিলেন – ” একটা অভিযোগ বাক্স থাকবে। অভিযোগ বাক্সের চাবি তাঁর নিয়ন্ত্রণে থাকবে। এলাকার মানুষ দূর্নীতি, অনিয়ম জানাবে। অভিযোগের বিষয় বস্তু কাগজে লিপিবদ্ধ করে বাক্সে প্রদান করবে। কিছুদিন পর পর সে বিষয়ে সমস্যার সমাধান করা হবে “… তাত্ক্ষণিক ভাবে উপস্হিত অনেক পাতি নেতার মুখ কালো হয়ে গিয়েছিল। তারপর অদৃশ্য চামচাদের নির্দেশনায় পন্ড হয়ে গেলো। সিন্ডিকেট সদস্যদের আমলনামা প্রকাশ হয়ে যাওয়ার আশংকায় এমন মহত্ উদ্যোগটি বাস্তবায়ন আর হলো না। এই উদ্যোগটি চালু থাকলে রাজনৈতিক ভাবে এনামুল হক শামীমের এলাকায় গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পেতো।
ইউপি নির্বাচনে এমপি এনামুল হক শামীমের সরাসরি হস্তক্ষেপ ছিল অগণতান্ত্রিক আচরণ যা স্হানীয় জনগনের মাঝে জনরোষের ক্ষেত্র তৈরিতে সহায়ক শক্তি হিসেবে চিন্হিত হয়। তিনি নির্বাচনী সভায় প্রায়শ বলতেন ” হাফপ্যান্ট পরা থেকে ছাত্র রাজনীতির সাথে জড়িত ” জনগণ বিশ্বাস করেছে কিন্তু এটা তিনি জানেন না শহুরে ছাত্র রাজনীতি আর ভিলেজ পলিটিক্স এক নয়।
কাঁচিকাটা ইউপি নির্বাচনে তাঁর মনোনীত প্রার্থী এবং যে তাঁর সম্মতি নিয়ে নির্বাচন করেছেন, তাঁকেও তা সমর্থন করে দ্বৈতনীতি প্রয়োগে যে নির্লজ্জের দৃষ্টান্ত স্হাপন করেছেন স্হানীয় জনগন বহুদিন মনে রাখবে। কী এমন প্রয়োজন ছিলো? যে সত্যিকার ভাবে বিজয় হওয়ার কথা ছিল তাঁকে ভোট ম্যাকানিজম করে হারিয়ে পছন্দের প্রার্থীকে বিজয়ী করলেন। এসব কী সত্যিকার নেতাসুলভ আচরণ ছিল নাকি স্বৈরাচারী শোষণ ছিল ?
নিজের স্বার্থ চরিতার্থ করতে গিয়ে ভুলে গিয়েছিলেন, যে আপনি শরীয়তপুরের- ২ আসনের অভিভাবক। লক্ষ জনতা আপনার ন্যায়পরায়ণতার স্বাক্ষর দেখতে চেয়েছিল…. আফসোস ! তা বাস্তবায়ন হয়নি ! রাজনীতির মাঠে একবার পেনাল্টি শট্ খেয়ে ফেললে সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়ানো বড্ড জটিল।