মতিঝিলে চলছে মিনি ক্যাসিনো নেপথ্যে কাউন্সিলর মোজাম্মেল

 

ইসমাইল হোসেন,

: দেশব্যাপী ঝড় উঠেছিল ক্যাসিনো কাণ্ডে। ক্যাসিনোতে জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যক্ষ নির্দেশনায় অভিযান চালানো হয়। রাজধানীসহ সারাদেশে। সে সময় ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন ৯নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সাঈদের সম্পৃক্ততায় রাজধানীতে গড়ে ওঠে অবৈধ জুয়ার আসর ক্যাসিনো। -পুলিশের র‍্যাব-৭ সাঁড়াশি অভিযানে গ্রেফতার করা হয় রাঘব-বোয়ালদের। বিদেশে পালিয়ে যায় ৯নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সাঈদ ক্যাসিনো সাঈদের এলাকাতেই আবার নতুন করে অবৈধ ক্যাসিনো চালানোর অভিযোগ ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন ৯ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোজাম্মেল হকের বিরুদ্ধে। অনেকেই এখন তাকে ‘ক্যাসিনো মোজাম্মেল’ বলছেন। অতি সম্প্রতি মতিঝিলের আবাসিক হোটেল থেকে মিনি ক্যাসিনোতে পুলিশি অভিযান চালিয়ে ৯নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোজাম্মেল হকের সহযোগীকে গ্রেপ্তার করে।

রাজধানী ঢাকার আবাসিক হোটেল জোনাকিতে অনেকদিন থেকেই “মিনি ক্যাসিনো চালিয়ে আসছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৯নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোজাম্মেল হক’র তিন সহযোগী। মতিঝিল থানা পুলিশের অভিযানে কাউন্সিলর মোজাম্মেল হকের ৩ সহযোগী মজিবুল হক সোনা। হক খোকন, আনোয়ার হোসেন মাখন ও মতিঝিল থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি মান্নান হাওলাদারসহ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে মতিঝিল থানা পুলিশ।

ত্রাণ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন ৯ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোজাম্মেল হকের বিরুদ্ধে। প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া ত্রাণ দলীয় নেতা-কর্মী ও গরিব দুঃখী অসহায় মানুষের মাঝে না দিয়ে নিজের ও আত্মীয় স্বজনের বাসায় ভ্যান গাড়ি করে পাঠিয়ে দিয়েছেন কাউন্সিলর মোজাম্মেল হক। এই ঘটনায় এলাকার সাধারণ জনগণের মাঝে

ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। দল চালাতে হলে ক্যাডার পালতে হয় এই নীতিতে চলছেন কাউন্সিলর মোজাম্মেল হক- বলছেন তার কাছের লোকজন। জানা যায় মোজাম্মেল হকের ক্যডার বাহিনীর চাঁদাবাজী আর নির্যাতনের শিকার হয়ে ভুক্তভোগীরা বলছেন— এমনই যদি হবে তাহলে সাঈদের দোষ কি ছিল। মোজাম্মেল এখন সাঈদকেও হার মানাচ্ছে।

কাউন্সিলর মোজাম্মেলের ক্যাডার টোকাই নুরু: টোকাই নুরুর চাঁদাবাজি বন্ধ করার ক্ষমতা কারোই নাই, কারন নুরু চাদা একা খায় না, চাঁদার টাকা ভাগবণ্টন হয়ে অনেক উপর তলা পর্যন্ত। আর এসবের দায়িত্বে আছেন কাউন্সিলর মোজাম্মেল। জানা যায়, তার এলাকায় বছরে শত কোটি টাকার উপরে চাঁদা আদায় করা হয়। ভুক্তভোড়ীরা বলছেন, নূরুর চাঁদাবাজী থেকে তাদেরকে যে রক্ষা করবে সেইতো তাকে শেল্টার দিচ্ছে। আর নুরু সিন্ডিকেটকে পেছন থেকে শেল্টার দিয়ে চাঁদাবাজির কোটি কোটি টাকার ভাগবন্টন বুঝে নিচ্ছে ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোজাম্মেল হক। কাউন্সিলর মমিনুল হক সাঈদের যুগে মতিঝিল দিলকুশা এলাকার নিয়ন্ত্রণ ছিলো নুরু ও তার সাঙ্গপাঙ্গদের হাতে। কিন্তু মোজাম্মেল হক কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ার পরে পুরো ৯নং ওয়ার্ড অর্থাৎ মতিঝিল দিলকুশা আরামবাগ ফকিরাপুল এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছে কাউন্সিলর মোজাম্মেল হক। জনশ্রুতি আছে মোজাম্মেল হক কাউন্সিলর নির্বাচনের সময় নুরুর কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকা ‘নির্বাচনে খরচ’ নিয়েছে। একারণেই মোজাম্মেল হক ৯নং ওয়ার্ডের নিয়ন্ত্রন নুরুর হাতে ছেড়ে দিয়েছেন।

চাঁদা আদায়ের জন্য নুরু রয়েছে একটি লাইনম্যান বাহিনী। দৈনিক বাংলা থেকে মোহামেডান ক্লাব পর্যন্ত লাইনম্যান নুর ইসলাম, টয়োটা বিল্ডিং থেকে বাংলাবানী পর্যন্ত হেলাল, হোটেল পূর্বানী থেকে অগ্রণী ব্যাংক ভবন পর্যন্ত পবন চন্দ্র দাস ও রঞ্জিত, ইউনুছ সেন্টার থেকে বঙ্গভবন গেইট পর্যন্ত তাজু, অগ্রনী ব্যাংক থেকে সোনালী ব্যাংক চক্রাকারে আমির হোসেন প্রতিদিন এই চাঁদা আদায় করে থাকে লাইনম্যানরা বলেন, দৈনিক কালেকশন দৈনিক নুরু ভাইয়ের কাছে জমা দিলে আমাদেরকে একটি হাজিরা দেয়া হয় ফুটপাতের দোকান থেকে চাঁদা আদায়, সরকারী জায়গা দখল করে দোকান বসিয়ে বিক্রি ও ভাড়া আদায়, নিরাপত্তার নামে নাইটগার্ড নামক চাঁদা আদায়, ওয়াসার পানি বিদ্যুৎ চুরি করে বিক্রি, মাদক ব্যবসায়ীদের শেল্টার দিয়ে মাসিক চাঁদা আদায়সহ ময়লা পরিষ্কারের সাইনবোর্ডে নুরুর চাঁদা আদায়ের রশিদ পৌছে গেছে বাসা-বাড়ী, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে অফিস আদালত পর্যন্ত। কোন কিছুতেই বন্ধ হচ্ছে না এই চাঁদাবজি। একাধিক পত্রপত্রিকায় এসব চাঁদাবাজির সংবাদ প্রকাশ বা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে অভিযোগ দিয়েও সুরাহা

হচ্ছে না। ভুক্তভোগিদের দেয়া তথ্যসূত্রে জানা গেছে, মতিঝিল ৯নং ওয়ার্ড এলাকার রাস্তা দখল করে চায়ের দোকান, ফলের দোকান, কাপড়ের দোকান, শাকসব্জির দোকান, আল-সালাদিয়া হোটেলসহ হরেক রকমের অন্তত ১৫ হাজারের উপরে ক্ষুদ্র দোকান ব্যবসায়ী প্রতিটি দোকান থেকে দৈনিক বিদ্যুৎ বিল, বর্জ্য বিল, নেতা বিল, পুলিশ বিল সব মিলিয়ে দৈনিক গড়ে অন্তত ৩শ টাকা হারে বছরে ১৫০ কোটি টাকার উপরে চাঁদা আদায় করা হয়ে থাকে। আর এই চাঁদার ভাগ কালেকশনকারী লাইনম্যান থেকে শুরু করে নূরুর হাত ধরে কাউন্সিলর মোজাম্মেলের কাজ।

সুত্র জানায়, ফুটপাতের প্রতি দোকান বাবদ নুরুর লাইনম্যান আদায় করে আড়াইশ টাকা এই টাকা থেকে স্থানীয় পুলিশের জন্য দেড়শ টাকা আর ১শ টাকা নুরু ও কাউন্সিলর মোজম্মেলের মধ্যে ভাগভাগি হয়ে থাকে। বর্জ বিল বাবদ পুরো ৯নং ওয়ার্ড জুড়ে ফুটপাতের প্রতি দোকান থেকে নেয়া হয় দৈনিক ২০ টাকা হারে। কিন্তু এই ২০ টাকার জন্য কোন রশিদ দেয়া হয় না। জানতে চাইলে নুরুর লোকেরা বলেন, তারা সিটি কর্পোরেশন থেকে বর্জ্য পরিষ্কারের টেন্ডার পেয়েছে। কিন্তু সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের জিজ্ঞেস করলে জানায়, বর্জ্যাব্যবস্থাপনার নামে ফুটপাত থেকে টাকা উঠানোর কোন টেন্ডার হয় নাই।

টোকাই নুরু বিদ্যুতের খুটি থেকে ফুটপাতের দোকানে সরাসরি বিদ্যুতের চোরাই লাইন সংযোগ দিয়ে বিল বাবদ ৪০ টাকা হারে দৈনিক আদায় করে থাকে। এই টাকার একটি অংশ নুরুর হাত ধরে চলে যায় স্থানীয় বিদ্যুত অফিসের কর্মকর্তাদের পকেটে। একই ভাবে ওয়াসার পানি চোরাই পথে বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা আদায় করে ওয়াসার কর্মকর্তাদেরও মাসোয়ারা দিয়ে ম্যানেজ করে থাকে।

মতিঝিল ক্যাসিনো ক্লাবপাড়ায় রাস্তা দখল করা আল-সালাদিয়া হোটেলের মালিক সিয়াম রানা বলেন, প্রতিদিন নুরু ভাইকে বিদ্যুতের চোরাই লাইন থেকে দেয়া বিদ্যুতের জন্য ১৫০ টাকা, ময়লা ফালানোর জন্য ২০০ টাকা, পুলিশের জন্য ২০০ টাকা, নেতার বিল ২০০ টাকা হারে মোট ৭৫০ টাকা চাঁদা দিতে হয়। দোকান চালু থাকুক বা বন্ধ থাকুক, প্রতিদিনই এই চাঁদা দিতে হয়। টাকা না দিলে মতিঝিল এলাকায় দোকান করা যাবে না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিদ্যুতের বিল উত্তোলনকারী এক লাইনম্যান বলেন, ফুটপাতের দোকান গুলোতে বিদ্যুতের খুটি থেকে চোরাই পথে অবৈধভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে প্রতি লাইট বাবদ প্রতিদিন ৫০-৬০ টাকা হারে আদায় করা হয়, যদি কেউ লাইট না জ্বালায় তাহলে তাকেও টাকা দিতে হয়। এটাই নুরুর নিয়ম।

রাজধানীর বাণিজ্যিক এলাকা দিলকুশায় প্রকাশ্যে ওয়াসার লাইনে পাম্প লাগিয়ে পানি বোতলজার, ড্রাম ও গ্যালন ও ভর্তি করে হোটেল, রেঁস্তোরা, অফিস, আদালত, বাণিজ্যিক অফিস ও ফুটপাতের দোকানগুলোতে নগদ দামে বিক্রি করে হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা। এটি এখন নুরুর পাম্প নামে পরিচিত হয়ে গেছে

পূর্বানী হোটেলের পিছনের জায়গা অবৈধভাবে দখল করে অন্তত ৩০টি দোকান ঘর নির্মান করে ভাড়া দিয়ে রেখেছে নুরু প্রতি মাসে ৫ থেকে ৬ লাখ টাকার উপরে ভাড়া আদায় করে থাকে। এই জায়গায় রাব্বানী হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্ট নামে একটি স্থায়ী স্থাপনা নির্মান করে খাবারের হোটেল বানিয়ে মাসিক আড়াই লাখ টাকায় ভাড়া দিয়ে রেখেছে। একটি সুত্রে জানা গেছে এই হোটেল মালিকের থেকে নুরু ২০ লাখ টাকা এডভান্স নিয়েছে।

ঢাকা দক্ষিন সিটি কর্পোরেশনের কোষাগারে ১২ লাখ টাকা জমা দিয়ে এসডি মিশনের নামে ঠিকাদার মান্নান হাওলাদার ৯নং ওয়ার্ডের বর্জ্য পরিষ্কারের অনুমোদন পায়। কিন্তু কাউন্সিলর মোজাম্মেল হক এই কাজটি নুরুর নামে আনার জন্য জোড় তদ্বির চালায় মেয়রে কার্যালয়ে য়। নুরু বিএনপি থেকে যুবলীগে অনুপ্রবেশকারী হওয়ায় কাউন্সিলর মোজাম্মেলের সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয় এবং মেয়রের কাছে তার ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন হয়। তবে কাউন্সিলর মোজাম্মেলের কাছে আত্মসম্মানের চেয়ে টাকাই অনেক বেশী গুরুত্বপূর্ন। মোজাম্মেলের মাধ্যমে নুরু, থোকন সালাউদ্দিন রতন ৭০ লাখ টাকার মাধ্যমে মান্নানের নিকট থেকে উক্ত ইজারা সাব-ক্রয় করেন। বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশকারী এই খোকনের নামে ১০% শেয়ার, বিএনপি সমর্থক রতন মেটালের মালিক সালাউদ্দিন রতনের নামে ১০%শেয়ার এবং বাকী ৮০% শেয়ার পেয়েছে নিয়েছে কাউন্সিলর মোজাম্মেল সহ নুরু ও তার বাহিনী। যদিও বর্জ্য পরিষ্কারের কাজ যেই ঠিকাদার পাবে, তাকেই সেই কাজ করতে হবে, তানাহলে চুক্তি বাতিল বলে গণ্য হওয়ার বিধান রয়েছে। বর্জ্য বাণিজ্য থেকে বছরে কোটি কোটি টাকা আয় করবে নুরু বাহিনী। এমন কথাই বলে আসছে সংশ্লিষ্টরা। কারন ৯নং ওয়ার্ডের বাসাবাড়ী, ফুটপাতের দোকানদার, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন প্রকারের অফিস সহ সব মিলিয়ে ৫০ হাজারের অধিক বর্জ্যারে পয়েন্টে রয়েছে। যেখান থেকে কমপক্ষে মাসিক ১শ টাকার বিনিময়ে নুরু বাহিনী তাদের বর্জ্যা-ময়লা পরিষ্কার করবে কিন্তু নুরু বাহিনী সিটি কর্পোরেশনের নির্ধারন করা নিয়ম নীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে শুধুমাত্র জোড়জবস্তি, দাঙ্গা-হাঙ্গমা চালিয়ে দৈনিক ও মাসিক ভিত্তিতে তাদেরই ইচ্ছে মাফিক টাকা আদায় করছে। বর্জ্য নিষ্কাশন মুল্য সর্বোচ্চ ১শ টাকা হলেও ফ্ল্যাট প্রতি বর্জ্য্যরে রেট ধরা হয়েছে মাসিক ১শ থেকে ৫শ আর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের রেট ৫শ থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত। তবে ফুটপাতের দোকান থেকে দৈনিক ২০ টাকা হারে মাসিক ৬শ টাকা পর্যন্ত আদায় করাও নতুন নিয়ম করেছে মোজাম্মেলের ‘কাছের মানুষ নুরু’ কাউন্সিলর মোজাম্মেলের সাথে একাধিকবা যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

চিহ্নিত রাজাকার থেকে মুক্তিযোদ্ধা বনে যায় আলাউদ্দিন নাসিমের বাবা সালেহ উদ্দিন চৌধুরী

নিজস্ব প্রতিবেদক:

চিহ্নিত রাজাকার থেকে মুক্তিযোদ্ধা বনে যান ফেনী-১ আসনের এমপি আলাউদ্দিন আহম্মদ চৌধুরী নাসিমের বাবা সালেহ উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী। রাজাকার থেকে মুক্তিযোদ্ধা বনে যাওয়া বাবার ছেলে কিভাবে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে এমপি হয়েছেন এ নিয়ে ক্ষোভ অসন্তোষ দেখা দিয়েছে খোদ সরকারি দলে। বহিষ্কার হওয়ার ভয়ে প্রকাশ্যে কেউ মুখ না খুললেও বিষয়টি নিয়ে চরম বিব্রত স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা।

আলাউদ্দিন নাসিমের বাবা একাত্তরের রাজাকার ছিল। ২০১৩ সালে তার নাম মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় ঢোকানো হয়। ২০২০ সালের ২৬ জুলাই মুক্তিযোদ্ধা নামধারী রাজাকার সালেহ উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী মারা গেলে তাকে রাষ্ট্রীয় সম্মান দিয়ে দাফন করা হয়!

পজির উদ্দিন আহমেদ চৌধুরীর ছেলে সালেহ উদ্দিন আহমেদ চৌধুরীর গ্রামের বাড়ি ফেনীর পশুরাম উপজেলা উত্তর গুথুমা গ্রামে। ১৯৭১ সালের ২০ আগস্ট ফেনী মহকুমা পিস কমিটির চেয়ারম্যান প্রকাশিত ০৯ সদস্য বিশিষ্ট পাকিস্তান বাহিনীর সহযোগীদের তালিকায় ০৭ নম্বর নামটি ছিলো আলাউদ্দিন আহম্মদ চৌধুরী নাসিমের বাবা সালেহ উদ্দিন আহমেদ চৌধুরীর। কালের বিবর্তনে ৪২ বছরের ব্যবধানে এই রাজাকার ০৮/০৪/২০১৩ ইং তারিখে সরকারের গেজেট ভুক্ত বীর মুক্তিযোদ্ধার তালিকাভুক্ত হয়ে যায়। যার গেজেট নং- ২৩৬১।

সালেহ উদ্দিন আহমেদ চৌধুরীকে মুক্তিযোদ্ধার তালিকা থেকে বাদ দিতে ২০১৯ সালের ২০ জুলাই জাতীয় সম্মিলিত মুক্তিযোদ্ধা ফাউন্ডেশনের মহাসচিব জি কে বাবুল মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীর কাছে আবেদন করেন। বিষয়টি আমলে নিয়ে তদন্তের জন্য জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) মহাপরিচালককে নির্দেশ দেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ.ক.ম মোজাম্মেল হক। এই তদন্তের নির্দেশ ধামাচাপা দেয়া হয়। যা এখনও আলোর মুখ দেখেনি।

এদিকে, সম্প্রতি আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিদের নামে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) চেয়ারম্যান বরাবর অভিযোগ দাখিল করেছেন ফেনীর আবদুল হাই নামে এক ব্যক্তি। তিনি অভিযোগে উল্লেখ করেছেন, সাবেক সরকারী কর্মকর্তা নাসিম এখন হাজার কোটি টাকার মালিক। যদিও দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে হলফনামায় নাসিম ও তার স্ত্রী ডা. জাহানারা আরজু বর্তমানে ১০৮ কোটি ৩৭ লাখ ৪১ হাজার ৮৪৫ টাকার সম্পদ দেখিয়েছেন।

স্থানীয়দের মতে এমপি ও তার পরিবারের সদস্যদের দেশ-বিদেশে নামে-বেনামে রয়েছে হাজার কোটি টাকার অর্থ-সম্পদ। এ ছাড়াও কানাডায় রয়েছে বাড়ি-গাড়ি। মেয়ে রাকা চৌধুরী এখনও কানাডায় অবস্থান করছেন। এমপি হওয়ার আগেও তিনি পরিবার নিয়ে প্রায়ই কানাডায় থাকতেন।

স্থানীয়দের প্রশ্ন-একজন সাবেক আমলা এত অর্থ-সম্পদ ও ব্যবসার মালিক হন কীভাবে? এসব অর্থ-সম্পদ অবৈধভাবে গড়ে তুলেছেন বলেও অভিযোগ তাদের অনেকের। অন্যদিকে প্রভাবশালী এই এমপির কারণে দলের অনেক প্রবীণ নেতাকর্মীও কোণঠাসা হয়ে আছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ফেনী আওয়ামী লীগেও রয়েছে চরম অসন্তোষ।

সম্প্রতি জমা দেওয়া অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, ফেনী-১ আসনের সংসদ সদস্য আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম তার স্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডা. জাহানারা আরজু নির্বাচনের হলফনামায় ১০৮ কোটি ৩৭ লাখ ৪১ হাজার ৮৪৫ টাকার সম্পদের মালিক হিসেবে স্বীকার করলেও বাস্তবে তারা হাজার কোটি টাকার মালিক। নামে-বেনামে তাদের রয়েছে শত শত বিঘা জমি। ঢাকায় রয়েছে অসংখ্য ফ্লাট ও বিলাসবহুল গাড়ি। একজন সরকারি কর্মকর্তা থেকে বনে গেছেন বিলিয়নিয়ার।

অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, দুর্নীতি দমন কমিশন সন্দেহভাজনদের দুর্নীতির তালিকা প্রকাশের পরে সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব পদের চাকরি তিনি ছেড়ে দেন। তালিকা প্রকাশের পর সম্পদের হিসাব চেয়ে চিঠি দেয় দুদক। তারপর অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মতিঝিল থানায় মামলা করা হয়। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার প্রভাব বিস্তার করে সেই মামলা থেকে অব্যাহতি নেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।

অভিযোগে আরও বলা হয়, সরকারের বিভিন্ন দফতরে কাজ পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে ২০ পার্সেন্ট কমিশন নিয়ে থাকেন। এ ছাড়াও ফেনী বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের মানুষের কৃষিজমি জিম্মি করে কাউকে দিয়েছেন স্বল্পমূল্য আবার কেউ জমি লিখে দিতে না চাইলে সেই জমি তিনি দখল করে নিয়েছেন।

স্থানীয় সূত্র জানায়, ২০ বিঘার ওপরে গড়ে তোলা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পুকুর রয়েছে ৪টি।

আবদুল হাই নামে ওই ব্যক্তির অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সাবেক সদস্য ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিমের বিরুদ্ধে রয়েছে পদ বাণিজ্যের অভিযোগ। চট্টগ্রাম বিভাগের যেখানেই আওয়ামী লীগ ও সহযোগী অঙ্গসংগঠনের কমিটি করা হয়, সেখানেই তিনি হস্তক্ষেপ করেন। নিজের পছন্দের ব্যক্তিকে পদে বসাতে শুরু করেন তার নানা অপপ্রচার। তাকে মাসোয়ারা না দিলে কাউকে তিনি শান্তিতে রাজনীতি করতে দেন না। নাসিমের শ্বশুর আবু তাহের চৌধুরীর বিরুদ্ধেও রয়েছে সেন্ট্রাল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে বিনিয়োগকারীদের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ।

নাসিমের জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অনুসন্ধান করে তাকে আইনের আওতায় আনতে প্রধানমন্ত্রী ও দুদক চেয়ারম্যানের হস্তক্ষেপ কামনা করেন আবদুল হাই।

এ ব্যাপারে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আকতারুল ইসলাম বলেন, অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে মামলা করা হবে।

দুদকের একজন পরিচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশনে বিপুলসংখ্যক অভিযোগ জমা পড়ছে। সব অভিযোগ যাচাই-বাছাই করে অনুসন্ধানের কাজ চলছে। ফেনী-১ আসনের এমপির বিরুদ্ধে করা অভিযোগটিরও যাচাই-বাছাইয়ের কাজ চলছে।

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম
বিদেশ থেকে যতটুকু স্বর্ণ আমদানি করলে দিতে হবে না ভ্যাট প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎতে যাচ্ছেন বিএনপির মহাসচিব ফকরুল বাংলাদেশে ইতিহাস গড়ল উইন্ডিজ দুর্নীতির মাধ্যমে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন রাজউক ইমারত পরিদর্শক শামীম রাশিয়া ইউক্রেনের যুদ্ধে কে জিতবে, তা নিয়ে পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের প্রস্তুতি নিচেছ ট্রাম্প নাসার চন্দ্র মিশনে স্পেসএক্স জুলাই যোদ্ধা স্বীকৃতি পেতে নতুন করে দেড় হাজারের বেশি আবেদন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফেরাতে আপিল শুনানি শুরু প্রধান প্রকৌশলীর আস্থাভাজন ইএম ২ এর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী কায়কোবাদ সম্পদের পাহাড় জানানো যাচ্ছে অভিযোগ, থানায় বসলেই ভিডিওকলে হাজির এসপি