গুলশানে স্পার আড়ালে শাহ আলমের রমরমা দেহ ব্যবসা

স্টাফ রিপোর্টার॥

রাজধানীর অভিজাত এলাকা হিসেবে পরিচিত গুলশান স্পার আড়ালে চলছে নানারকম অনৈতিক কর্মকান্ড। অভিযোগ রয়েছে, রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে কম বয়েসী মেয়েদের চাকরির প্রলোভন দিয়ে ডেকে এনে আটকে রেখে পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করেন স্পা ব্যবসায়ীরা। পতিতাবৃত্তি, মাদকসেবন, ব্ল্যাকমেইলসহ নানা অপরাধ সংগঠিত করার জন্য অপরাধীদের অভয়ারন্যে পরিনত হয়েছে এসব এসব স্পা সেন্টার।

তার মধ্যে অন্যতম স্পা ব্যবসায়ী শাহ আলম পরিচালিত স্পা সেন্টারটি। রাজধানীর গুলশান-০১ এ অবস্থিত রবি টাওয়ারের পাশের বিল্ডিং এনসিসি ব্যাংকের উপরে লিফটের ৫ এ নেমে এক সিঁড়ি নিচে গেলেই দেখা মিলবে কেঁচি গেটসহ মজবুত কাঠের দরজা লাগানো এই স্পা সেন্টারের। ভেতরে থাকা সিসি ক্যামেরা দিয়ে বাইরের পরিবেশ পর্যবেক্ষণ করেন শাহ আলমের কর্মচারীরা। দরজায় নক করলে খদ্দের নিশ্চিত হলে তারপর ভেতরে প্রবেশ করানো হয়। তবে ভেতরে নানা রংয়ের আলোর ঝলমলে পরিবেশ হলেও বাইরে থেকে বোঝার কোন উপায়ই নেই। কেবল ভেতরে গেলেই চোখে পড়বে স্কুল-কলেজ ও ভার্সিটি পড়ুয়া তরুণীদের আনাগোনা। পরিচয় গোপন রাখার শর্তে স্থানীয় কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, রাতারাতি আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার আশায় স্পা ব্যবসার আড়ালে কম বয়েসী তরুণীদের দিয়ে পতিতাবৃত্তির কাজ করাচ্ছেন শাহ আলম ও তার সঙ্গীরা। পতিতা ব্যবসার পাশাপাশি মাদক সরবরাহেরও অভিযোগ রয়েছে শাহ আলমের বিরুদ্ধে।

সিটি করপোরেশন থেকে সেলুন, বিউটি পার্লার, ব্যায়ামাগার, ফিটনেস সেন্টার কিংবা ক্ষুদ্র ব্যবসার লাইসেন্সের আড়ালে রাজধানীর অভিজাত এলাকা হিসেবে পরিচিত গুলশান-বনানীতে স্পার নামে গড়ে উঠেছে অসংখ্য পতিতালয়। স্পার আড়ালে দেহ ব্যবসা পরিচালনাকারী এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে রয়েছে মাদক বিক্রির অভিযোগ। উঠতি বয়েসী তরুণীদের দিয়ে গ্রাহকদের স্পা করানোর নামে অশ্লীল কর্মকাণ্ডসহ স্বল্প পোশাকে সেবা দেয়ার সময়ের ছবি গোপনে ধারণ করে পরবর্তীতে ব্ল্যাকমেইল করা হয় বলেও জানা যায়।

জানা যায়, বিভিন্ন জায়গায় নিয়মিত মাসিক মাসোয়ারা দিয়ে নির্বিঘ্নে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে শাহ আলম। কম বয়েসী তরুণীদের দিয়ে অনৈতিক ম্যাসেজ পার্লার ও দেহ ব্যবসা চালানোর অভিযোগ থাকা স্বত্তেও তার বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। বরং নিয়মিত অবৈধ লেনদেনের বিনিময়ে নির্বিঘ্নে এ ধরনের অনৈতিক কর্মকাণ্ড চলছে। অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী পরিবারের উঠতি বয়সের কিশোর-যুবক থেকে শুরু করে সব বয়েসি মানুষ শাহ আলমের স্পা সেন্টারের (পতিতালয়) সেবা গ্রহীতা। এসব ধনীর দুলালদের সেবা দেয়ার জন্য স্কুল, কলেজ থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া তরুণীদের ভাড়া করে আনা হয় শাহ আলমের কথিত এই স্পা সেন্টারে।

গুলশান-০১ এর স্থানীয় কয়েকজন ব্যবসায়ী পরিচয় গোপন রাখার শর্তে জানান, ব্যবসার নামে এসব অপকর্ম বন্ধ করতে বললে বিভিন্নভাবে বিভিন্নজনকে দিয়ে হুমকি দেন শাহ আলম ও তার লোকজন। অনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য ঐ ভবনের আশপাশে সব সময়ই পাহারায় থাকে শাহ আলমের লোকজন। স্থানীয়রা জানান, এই স্পা সেন্টারটিতে (পতিতালয়) কখনই অভিযান পরিচালনা করেনি সিটি কর্পোরেশন এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থা। স্পা সেন্টারটিতে অনৈতিক কাজের জন্য রয়েছে ছোট ছোট বেশকিছু কেবিন। স্কুল-কলেজের উঠতি বয়েসি ছেলেরাসহ যুব সমাজের একটি বড় অংশই খদ্দের হিসেবে যাতায়াত করে এখানে।

খদ্দেরদের আকর্ষণ বাড়াতে ফেসবুকে চটকদার বিজ্ঞাপনসহ বিভিন্নভাবে প্রচারণা চালানো হয়। যদিও আমাদের দেশে এমন অনৈতিক উপায়ে স্পা ব্যবসা পরিচালনার জন্য বৈধ কোন অনুমতি নেই। সিটি কর্পোরেশন থেকেও এমন কোন অনুমতি দেয়া হয়না। তবে সিটি করপোরেশনের কাছ থেকে হোটেল, বিউটি পার্লার, সেলুন কিংবা ব্যায়ামাগারের কথা বলে ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে লাইসেন্সের নীতিমালা ভঙ্গ করে চলছে এই অনৈতিক ব্যবসা।

শাহ আলমের স্পা সেন্টারে অত্যাধুনিক ডিজিটাল গোপন ক্যামেরা দিয়ে ধনী ব্যবসায়ীসহ উচ্চ পদস্থ খদ্দেরদের ব্ল্যাকমেইল করা হয় বলেও অভিযোগ রয়েছে। পরিবার কিংবা পরিচিতজনদের কাছে গোপন ক্যামেরায় ধারন করা ঐসব ভিডিও ছড়িয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়।

গুলশানে বিএনপির নাম ভাঙ্গিয়ে চাঁদাবাজি, নেপথ্যে আলমগীর-লিটন সিন্ডিকেট

স্টাফ রিপোর্টার॥

রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশানে দিন দিন বেড়ে চলেছে চাঁদাবাজির ঘটনা। স্থানীয় ব্যবসায়ী, ঠিকাদার থেকে শুরু করে রেস্তোরাঁ মালিকরাও এখন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। তদন্তে জানা গেছে, এ সমস্ত ঘটনার নেপথ্যে রয়েছেন আলোচিত আলমগীর, লিটন ও তার প্রভাবশালী সিন্ডিকেট। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কড়া নির্দেশনা সত্বেও থেমে নাই বিএনপির কর্মীদের চাঁদাবাজি। গুলশান-১ ডি এন সি সি কাঁচা ও পাকা মার্কেটের আশেপাশে, নিকেতন গেইট থেকে আজাদ মসজিদ, গুদারাঘাট এলাকায় অবৈধভাবে দোকানপাট বসিয়ে নিয়মিত চাঁদাবাজি করে যাচ্ছেন এই আলমগীর-লিটন সিন্ডিকেট। ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন ভয়-ভীতি প্রদর্শন ও হুমকি দিয়ে নিয়মিত ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করছে এই সিন্ডিকেট। অনুসন্ধানে জানা যায় গুলশান -১ ডিএনসিসি ইউনিটের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন আলমগীর এবং ১৯ নং ওয়ার্ড বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন লিটন। ৫ ই আগস্ট পতিত স্বৈরাচার সরকারের পদত্যাগের পর এই সিন্ডিকেটের আতঙ্কে ব্যবসায়ীরা দিশেহারা। ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সভাপতি ও সদস্য সচিবের নির্দেশনাকে কোন রকম পাত্তা না দিয়ে সব অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। অনুসন্ধান আরও জানা যায়,গুলশান -১ ডিএনসিসি মার্কেট এর লাগেজ চোরাকারবারির সাথে জড়িত এই চক্র।লাগেজ চোরাকারবারি মাধ্যমে অবৈধ টাকার মালিক হয়েছেন তারা।
ব্যবসায়ীদের চাপে রাখছে চক্র : গুলশানের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী জানান, নতুন কোনো ব্যবসা শুরু হলে প্রথমেই আলমগীর ও লিটনের লোকজন হাজির হয়। প্রাথমিকভাবে তারা শুভেচ্ছা জানালেও অল্পদিনের মধ্যেই মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করে। টাকা না দিলে নানা অজুহাতে হয়রানি, ভাঙচুর কিংবা ভীতিপ্রদর্শনের ঘটনা ঘটে।
প্রভাব খাটিয়ে কার্যক্রম : স্থানীয় সূত্র বলছে, আলমগীর ও লিটন রাজনৈতিক পরিচিতি ও প্রভাবশালী মহলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক কাজে লাগিয়ে এ এলাকায় তার দাপট বজায় রেখেছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের আগাম খবরও নাকি তাদের কাছে পৌঁছে যায়। ফলে ব্যবসায়ীরা প্রকাশ্যে মুখ খুলতে ভয় পান।
পুলিশের একজন সদস্যের ভাষ্যমতে, গুলশান এলাকায় চাঁদাবাজির অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এ ব্যাপারে কিছু চক্রের নামও পুলিশের কাছে আছে। তবে ব্যবসায়ীরা লিখিত অভিযোগ না করায় কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। তবুও সাম্প্রতিক সময়ে আলমগির লিটনকে ঘিরে যে অভিযোগ উঠছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম