ছাত্রদলকে রুখে দেওয়ার ক্ষমতা বাংলাদেশে কারও নেই: রাকিবুল

ডেস্ক রিপোর্ট:

জুলাই গণ অভ্যুত্থানের প্রথম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে রাজধানীর শাহবাগে শুরু হয়েছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল আয়োজিত গণসমাবেশ। রোববার (৩ আগস্ট) বেলা আড়াইটার দিকে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলামের বক্তব্যের মধ্য দিয়ে এ সমাবেশ শুরু হয়। সূচনা বক্তব্যে রাকিবুল ইসলাম বলেন ছাত্রদলকে রুখে দেওয়ার ক্ষমতা বাংলাদেশে কারও নেই। দেশকে যারা অস্থিতিশীল করতে চায়, ছাত্রদল চাইলে সেই ষড়যন্ত্রকারীদের বিষদাঁত উপড়ে ফেলতে পারে। ছাত্রদলের সাংগঠনিক অভিভাবক তারেক রহমান যদি নির্দেশ দেন, নেতাকর্মীরা সারা দেশ অবরোধ করে দিতে পারে।

সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চ্যুয়াল বক্তব্য দেওয়ার কথা রয়েছে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের। বিশেষ অতিথি হিসেবে থাকছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ ছাড়া বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারাও সমাবেশে বক্তব্য দেবেন। শাহবাগ চত্বরে টিএসসি মুখী মঞ্চে এখন পর্যন্ত উপস্থিত রয়েছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামলসহ ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় ও সাবেক নেতারা।

সমাবেশে সভাপতিত্ব করছেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম এবং সঞ্চালনায় রয়েছেন সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন। সকাল থেকেই ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির পাশাপাশি রাজধানীর বিভিন্ন ইউনিট এবং দেশের নানা জেলা-উপজেলা থেকে সংগঠনের নেতাকর্মীরা সমাবেশস্থলে এসে জড়ো হন। অনেকেই কপালে ও মাথায় জাতীয় এবং দলীয় পতাকা বেঁধে, ব্যান্ড পরিহিত অবস্থায় অংশ নেন সমাবেশে। হাতে ছিল ছাত্রদল ও বিএনপির পতাকাও। সমাবেশস্থলে নেতা কর্মীদের কণ্ঠে বারবার উঠে আসে স্লোগান মা মাটি ডাকছে তারেক রহমান আসছে তারেক রহমান বীরের বেশে, আসবে ফিরে বাংলাদেশে তারেক রহমানের ভয় নাই রাজপথ ছাড়ি নাই।

সাঈদীর পক্ষে সাক্ষ্য দিতে গিয়ে যেভাবে গুম হয়েছিল সুরঞ্জন

স্টাফ রিপোর্টার:

মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পক্ষে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দিতে গিয়ে নিখোঁজ হয়ে যাওয়া সুরঞ্জন বালি কিভাবে ভারতের কারাগারে পৌঁছেন তার এক লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছেন তিনি।

ঘটনাটি ঘটে ২০১২ সালের ৫ নভেম্বর সকালে। অপহৃত হওয়ার পর তার সাথে কী কী ঘটেছে তার বিশদ বর্ণনা তুলে ধরেন সুখরঞ্জন বালি।

সুখরঞ্জন বালি বলেন, ‘২০১২ সালের নভেম্বর মাসের ৫ তারিখে আমি ঢাকায় কোর্টে গিয়েছিলাম।

আমার সাথে দুজন ব্যারিস্টার ও দুইজন উকিল ছিলেন। আমাদের গাড়ি দেখে কোর্টের গেটে আটকে ফেলা হয়, তখন আমার সাথে থাকা আইনজীবীদের সাথে গেটের লোকদের তর্ক-বিতর্ক চলছিল। আমি গাড়িতে দুজন ব্যারিস্টারের মাঝে বসা ছিলাম, এ সময় কিছু সাদা পোশাকের লোক আমাকে নামিয়ে টানাটানি করতে লাগল।’

‘তারা বলছিল, যার জন্য গাড়ি থামানো হয়েছে সেই লোক ইনি।

একেই আমাদের দরকার। সেই লোকরা আমাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে টেনে হিঁচড়ে পাঁচ-ছয় হাত দূরে অপর একটি গাড়িতে তুলে আমার চোখ বেঁধে ফেলে এবং একটু পরে গাড়িটি ছেড়ে দেওয়া হয়।’

‘প্রায় আধঘণ্টা গাড়িটি চালানোর পরে সাদা পোশাকের লোকেরা আমাকে হাঁটাতে থাকে। এ সময় আমি নিচের দিকে নামার মতন অনুভব করি।

কিছুদূর হাঁটিয়ে একটা দরজা খুলে অন্ধকার জায়গায় আমাকে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। কোনো আলো সেখানে ছিল না, অথচ তখন সকাল ১০টা-১১টা বাজে।’

সুখরঞ্জন বালি বলেন, ‘আমাকে একটি খালি রুমে আটকে দেওয়া হয়। বাইরে কোনো শব্দ ছিল না ঘরে কোনো জানালা বা কোন ফাঁকা ছিল না যা দিয়ে কোনোরকম আলো ভেতরে আসতে পারে। তখন আমাকে মাঝে মাঝে অল্প করে খাবার দেওয়া হতো।

সেখানে কিছু লোক ছিল যারা আমাকে খাবার দিত বা পাহারায় আসত তারা নীল রংয়ের পোশাক পরা থাকত।

তিনি বলেন, ‘এর দুদিন পর আমাকে সেই রুম থেকে বের করে অন্য একটি রুমে নেওয়া হয়। সেখানে আমাকে নিয়ে তারা জোর করে সাঈদী হুজুরের বিরুদ্ধে স্বীকারোক্তি নিতে চায়। সে রুমে অনেকগুলো ক্যামেরা লাগানো ছিল আমি দেখতে পাই। আমার ভাইয়ের হত্যায় সাঈদী হুজুর জড়িত কি না জানতে চাইলে আমি যখন অস্বীকার করি এবং বলি যে যারা আমার ভাইকে হত্যা করেছে তাদের আমি চিনি। তাদের বিরুদ্ধে আমি সাক্ষ্য দিতে পারব, কিন্তু তারা বারবার আমাকে সাঈদী হুজুরের বিরুদ্ধে সাক্ষী দিতে বলে এবং এক পর্যায়ে তারা আমাকে মারধরসহ কারেন্টের শক দেয়, নির্যাতন করে।’

সুখরঞ্জন বালি বলেন, ‘তারা আমাকে একপর্যায়ে টাকা দিয়ে লোভ দেখানোর চেষ্টা করে এরপরও রাজি না হলে তারা অমানবিক নির্যাতন চালায়। সেখানে টানা কয়েকদিন ছিলাম। তারা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ঘরে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতো। তখন তিন-চারজন লোক জিজ্ঞাসাবাদ করতো।’

সুখরঞ্জন বালি বলেন, ‘তাদের অত্যাচারে আমি অসুস্থ হয়ে যাই। কয়েকদিন সেখানে থাকার পর তারা একদিন সকাল ৭টা কি ৮টার দিকে আমাকে চোখ বেঁধে তারা গাড়িতে তোলে। আয়নাঘর থেকে যখন গাড়িতে ওঠানো হচ্ছিল। তখন আমি ভয়ে ভয়ে জানতে চাই আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন? জবাবে তারা বলেছিল, আমরা তোকে তোর দেশে নিয়ে যাব। বল কোথায় নামিয়ে দিলে তুই তোর বাড়ি চিনে যেতে পারবি। তখন বলি, বাগেরহাটে নামিয়ে দিলে আমি আমার বাড়িতে যেতে পারবো। সারাদিন ধরে গাড়ি চালানোর পর মাঝে একবার ফেরিতে ওঠানো ও নামানো হয় সেটা আমি অনুভব করতে পারি।’

তিনি বলেন, ‘এক পর্যায়ে আবার গাড়ি চলতে শুরু করে দীর্ঘক্ষণ চালানোর পর দুইজন লোক গাড়িতে ওঠে। এর কিছুক্ষণ পর ১০-১২ মিনিটের মতো হবে গাড়িটি চলতে চলতে থেমে যায়। এ সময় গাড়ি থেকে আমাকে নামানো হয় ও চোখ খুলে আমাকে সামনে আগাতে বলা হয়।

একজন ভারতীয় নাগরিক কারাগারে সুখরঞ্জন বালির বক্তব্য নেন, যেখানে বালি বলেন যে তাকে বাংলাদেশ পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ অপহরণ করে এবং পরবর্তীতে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিএসএফ-এর কাছে তুলে দেয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের বশিরহাটের স্বরূপনগর থানায় সুখরঞ্জন বালির বিরুদ্ধে যে এফআইআর (ফার্স্ট ইনফরমেশন রিপোর্ট) দাখিল করা হয়, তার কোথাও এমন কথা উল্লেখ নেই যে তাঁকে কেউ অপহরণ করেছিলেন বা বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ তাঁকে ভারতের হাতে তুলে দিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের উত্তর-চব্বিশ পরগণা জেলার স্বরূপনগর থানায় সুখরঞ্জন বালির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্রটি দাখিল করেন বিএসএফ-এর ১৫২ নম্বর ব্যাটালিয়নের এ কোম্পানির অধিনায়ক বি পি সিং।

সুখরঞ্জন বালি ভারতের কারাগারে বন্দী থাকার বিষয়ে প্রকাশিত তথ্য, কারামুক্ত হওয়ার পর সুখরঞ্জন বালির বক্তব্য এবং গুম কমিশনের ‘আনফোল্ডিং দ্য ট্রুথ’ শিরোনামে অন্তর্বর্তী প্রতিবেদনের তথ্য একই চিত্র ফুটে উঠেছে।

দেশের অন্যতম ইসলামিক স্কলার দুই বারের সংসদ সদস্য জামায়াতের তৎকালীন নায়েবে আমীর মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছিল। পরে এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিলে তাকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয়া হয়। সাজা ভোগকরাকালীন ২০২৩ সালের ১৪ আগস্ট কারা হেফাজতে হাসপাতালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে বিচার প্রক্রিয়া ও ট্রাইব্যুনালের বৈধতা ও সাজা নিয়ে প্রশ্ন তুলেন বিভিন্ন দল সংগঠন ও শ্রেণীপেশার মানুষ। তবে তৎকালীন কর্তৃপক্ষ এটি আমলে নেয়নি।

সবা:স:জু- ৫৩৯/২৪

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম