জয় বাংলাদেশের

ক্রীড়া প্রতিবেদক॥
কি এক দুর্দান্ত লড়াই-ই না উপভোগ করলেন কেটপ্রেমীরা! মিরপুরে টি-টোয়েন্টির মারকাটারি ব্যাটিং দেখতে না পারার আক্ষেপে যারা এতদিন পুড়ে মরছিলেন, তাদের জন্যই যেন বিনোদনের সব পসরা সাজিয়ে বসেছিল ম্যাচটি।

যে ম্যাচে শেষ বল পর্যন্ত ছিল টানটান উত্তেজনা। জয়ের সম্ভাবনা ছিল বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড দুই দলেরই। এমনই এক রুদ্ধশ্বাস লড়াইয়ে শেষ হাসি হেসেছে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দল। ঘরের মাঠে অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠা টাইগারদের কাছে ৪ রানে হার মানতে হয়েছে কিউইদের।

শেষ দুই ওভারে নিউজিল্যান্ডের দরকার ছিল ২৮ রান। হাতে ৫ উইকেট। ৪০ বলে ৫২ রান নিয়ে উইকেটে সেট ব্যাটসম্যান টম ল্যাথাম। ১৯তম ওভারে মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের হাতে বল তুলে দেন রিয়াদ। অধিনায়কের আস্থার প্রতিদান দিয়েছেন সাইফউদ্দিন, ওই ওভারে খরচ করেন মাত্র ৮ রান।

ফলে শেষ ওভারে ২০ দরকার পড়ে নিউজিল্যান্ডের। দলের প্রধান বোলিং অস্ত্র মোস্তাফিজুর রহমান করবেন শেষ ওভারটি। টাইগার ভক্তরা তাই নিশ্চিত জয়ই ধরে নিয়েছিলেন।

কিন্তু নাটকের তো তখনও অনেক বাকি। প্রথম ৪ বলে ৭ রান দেন মোস্তাফিজ। কিন্তু ওভারের চতুর্থ ডেলিভারি করে বসলেন বিমার। যে ‌‘নো’ বলটি আবার ব্যাটে লাগিয়ে বাউন্ডারিও পেয়ে যান ল্যাথাম। ২ বলে তখন দরকার ৮, তার মধ্যে আবার ফ্রি-হিট। একটি ছক্কা তো হতেই পারতো।

তবে এই মোস্তাফিজই পরের দুটি ডেলিভারি দিলেন মাথা ঠান্ডা রেখে। ফ্রি-হিট বলটি প্যাডে লাগিয়ে বাই ২ রান নেন ল্যাথাম। শেষ বলটি অফস্ট্যাম্পে করেন মোস্তাফিজ, লাথাম চালিয়ে খেললেও বাউন্ডারি বের করতে পারেননি। আসে মাত্র এক রান। ততক্ষণে বিজয় উল্লাস শুরু হয়ে গেছে টাইগার শিবিরে।

শেরে বাংলায় সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে শেষ বলের রুদ্ধশ্বাস এই জয়ে পাঁচ ম্যাচ সিরিজে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল স্বাগতিকরা। বাকি তিন ম্যাচের একটি জিতলেই সিরিজ পকেটে পুরবে তারা।

১৪২ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে এবারও শুরুতেই ধাক্কা খেয়েছে নিউজিল্যান্ড। ইনিংসের তৃতীয় ওভারে বল হাতে নিয়েই সাফল্য পান সাকিব আল হাসান। তার শর্ট ডেলিভারি জায়গা করে খেলতে গিয়ে বোল্ড হন রাচিন রবীন্দ্র (৯ বলে ১০)।

পরের ওভারে আর এক উইকেট। এবার শেখ মেহেদিকে ডাউন দ্য উইকেটে খেলতে গিয়ে পরাস্ত টম ব্লান্ডেল (৮ বলে ৬)। বল ধরে অনেকটা সময় পান নুরুল হাসান সোহান, স্ট্যাম্প ভাঙতে কষ্ট হয়নি।

তবে তৃতীয় উইকেটে বেশ প্রতিরোধ গড়ে তুলেন কিউই অধিনায়ক টম ল্যাথাম আর উইল ইয়ং। শেষ পর্যন্ত তাদের ৪৬ বলে ৪৩ রানের জুটিটি এগারতম ওভারে এসে ভেঙেছেন সাকিব। তার ঘূর্ণিতে ইয়ং (২৮ বলে ২২) ব্যাট চালালে আউটসাইড এজ হয়ে বল চলে যায় থার্ডম্যানে, ডাইভ দিয়ে দারুণ ক্যাচ নেন সাইফউদ্দিন।

এরপর আরেকটি ছোট জুটি। ১৫তম ওভারে কলিন ডি গ্র্যান্ডহোমকে (১০ বলে ৮) ফিরিয়ে জুটি ভাঙেন নাসুম আহমেদ। ডিপ স্কয়ার লেগ বাউন্ডারিতে দুইবারের চেষ্টায় ক্যাচ নেন মুশফিকুর রহীম।

পরের ওভারে আরও এক উইকেট। এবার শেখ মেহেদিকে সুইপ করতে গিয়ে ধরা হেনরি নিকোলস (৬)। ৯২ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে নিউজিল্যান্ড।

মাথার ওপর রানের চিন্তা বাড়তে থাকে অন্যদিকে। তবে লড়াইটা বাঁচিয়ে রেখেছিলেন কিউই অধিনায়ক টম ল্যাথাম। দারুণ এক ইনিংস উপহার দিয়েছেন তিনি। তবে শেষ পর্যন্ত আর বিজয়ীর বেশে মাঠ ছাড়তে পারেননি। ৪৯ বল ৬৫ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি। ৫ উইকেটে ১৩৭ রানে থামে নিউজিল্যান্ডের ইনিংস।

টাইগার বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে সফল ছিলেন শেখ মেহেদি। ৪ ওভারে মাত্র ১২ রান দিয়ে ২টি উইকেট নেন এই অফস্পিনার। সাকিবেরও শিকার ২টি, তবে ৪ ওভারে খরচ করেন ২৯ রান। ৩ ওভারে ১৭ রানের বিনিময়ে একটি উইকেট পান নাসুম।

এর আগে টস জিতে ব্যাটিং বেছে নেয় বাংলাদেশ। দুই ওপেনার নাইম শেখ আর লিটন দাসের দারুণ উদ্বোধনী জুটির পর শেষদিকে মাহমুদউল্লাহর দায়িত্বশীল ইনিংসে ৬ উইকেটে ১৪১ রানের পুঁজি গড়ে টাইগাররা।

ব্যাটিংয়ে নেমে দেখেশুনে শুরু করেন নাইম-লিটন। মারমুখী ভূমিকা না নিয়ে পিচের চরিত্র বুঝে এগিয়েছেন তারা। ফলে প্রথম ৬ ওভারের পাওয়ার প্লে’তে কোনো উইকেট না হারিয়ে ৩৬ রান তুলে বাংলাদেশ।

উইকেটে সেট হয়ে হাত খুলতে খেলতে যাচ্ছিলেন লিটন। দশম ওভারে কিউই স্পিনার রাচিন রবীন্দ্রকে স্লগ সুইপে মিডউইকেটের ওপর দিয়ে ৮৪ মিটার ছক্কাও হাঁকান ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান।

কিন্তু ওই ওভারেই বোকার মতো কাজ করে বসেন। অফস্ট্যাম্পের বাইরের বল আলতো খোঁচায় টেনে এনে ভাঙেন স্ট্যাম্প। ২৯ বলে ৩ বাউন্ডারি আর এক ছক্কায় লিটনের ৩৩ রানের ইনিংসটির অপমৃত্যু তাতেই, ভাঙে ৫৯ রানের ওপেনিং জুটি।

পরের বলে আবারও বিপদ বাংলাদেশের। এবার মুশফিকুর রহীম টার্ন বুঝতে না পেরে পা কিছুটা এগিয়েছিলেন, নিমিষেই স্ট্যাম্প ভেঙে দেন উইকেটরক্ষক টম ল্যাথাম। গোল্ডেন ডাকে ফিরতে হয় টাইগার দলের ব্যাটিং ভরসাকে।

উইকেটে এসে সাকিব আল হাসান শুরু থেকেই চালিয়ে খেলছিলেন। দারুণ দুটি বাউন্ডারিও হাঁকান। কিন্তু ৭ বলে ১২ করে ফিরতে হয় তাকেও। ৫৯ থেকে ৭২, ১৩ রানের ব্যবধানে ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে স্বাগতিকরা।

সেখান থেকে ২৮ বলে ৩৪ রানের জুটি নাইম আর মাহমুদউল্লাহর। ৩ বাউন্ডারিতে বল সমান ৩৯ করা নাইমকে ফিরিয়ে এই জুটিটি ভাঙেন রবীন্দ্র। পায়ের বল ক্লিয়ার করতে গিয়ে লংঅনে টম ব্লান্ডেলের হাতে ধরা পড়েন টাইগার ওপেনার।

বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি আফিফ হোসেন ধ্রুব। উইকেটে এসেই ডাউন দ্য উইকেটে বড় শট খেলতে গিয়ে লংঅনে ক্যাচ হন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান (৩ বলে ৩)।

তবে অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ খেলেছেন অধিনায়কের মতোই। দায়িত্ব নিয়ে একদম শেষ ওভার পর্যন্ত ব্যাটিং করেছেন। সঙ্গে ছিলেন নুরুল হাসান সোহান। তাদের ২২ বলে ৩২ রানের জুটিতেই মূলত ১৪১ পর্যন্ত গেছে টাইগাররা।

সোহান ইনিংসের একদম শেষ বলে আউট হন ৯ বলে ১৩ করে। মাহমুদউল্লাহ ৩২ বলে ৫ বাউন্ডারিতে অপরাজিত থাকেন ৩৭ রানে।

কিউই বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে সফল বাঁহাতি স্পিনার রাচিন রবীন্দ্র। ৪ ওভারে ২২ রান খরচায় ৩টি উইকেট নেন তিনি।

 

আফগানিস্তানের কাছে টানা দ্বিতীয় ওয়ানডে সিরিজ হারলো বাংলাদেশ

খেলা ডেস্ক:

আফগানিস্তানের কাছে টানা দ্বিতীয় ওয়ানডে সিরিজ হারলো বাংলাদেশ। গুরবাজের সেঞ্চুরিতে ম্লান হয়ে গেল মাহমুদউল্লাহ’র অনবদ্য ৯৮ রানের ইনিংস। তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে টাইগারদের ৫ উইকেটে হারিয়ে আফগানরা সিরিজ জিতলো ২-১-এ।

শারজায়, গত ম্যাচে টস জিতে ম্যাচ জিতেছিল বাংলাদেশ। এদিন চোটের কারণে নিয়মিত অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত না থাকলেও, টস জেতেন ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মেহেদি হাসান মিরাজ, হেটেছেন শান্তর পথেই। বাংলাদেশের তেরতম ক্রিকেটার হিসেবে এটি ছিল মিরাজের শততম ওয়ানডে ম্যাচ।

ব্যাটিংয়ে দেখে-শুনে শুরুর পর গতি বাড়িয়েছেন দুই টাইগার ওপেনার। সৌম্য-তানজিদের উদ্বোধনী জুটিতে আসে ৫৩ রান। ভালো শুরু পেয়েও সৌম্য ফেরেন ২৪ করে। এরপরই ছন্দপতন।

একে একে ড্রেসিংরুমে ফিরে যান তানজিদ, জাকির, তাওহিদ। বিনা উইকেটে ৫৩ থেকে ৪ উইকেটে ৭২। প্রথম ওয়ানডের মতো ধ্বংস তখন চোখ রাঙাচ্ছে। সেখান থেকে দলের রানের চাকা ঘোরান মিরাজ ও মাহমুদউল্লাহ।

আগের তিন ইনিংসে রান না পাওয়া মাহমুদউল্লাহ এদিন খেলেছেন হাতখুলে। ৬৩ বলে তুলে নেন ক্যারিয়ারের ২৯তম ফিফটি। অন্যদিকে মিরাজ ছিলেন ধীরস্থির। ১০৬ বলে বাংলাদেশের ইতিহাসের দ্বিতীয় মন্থর ফিফটি করেন তিনি।

মিরাজ ৬৬ করে ফিরলেও, শেষ পর্যন্ত দলের হাল ধরে রাখেন মাহমুদউল্লাহ। শেষ বলে রানআউট হয়ে সেঞ্চুরি থেকে দুই রান দূরে থেমেছেন অভিজ্ঞ ব্যাটার। বাংলাদেশ পায় ৮ উইকেটে ২৪৪ রানের পুঁজি।

রান তাড়ায়, দেখে-শুনে শুরু করে আফগানিস্তান। দলীয় ৪১ রানে আফগানদের উদ্বোধনী জুটি ভাঙ্গেন অভিষিক্ত পেসার নাহিদ রানা। দুই অঙ্কের ঘরে যাওয়ার আগেই রহমত শাহ ও হাশমতউল্লাহ শহিদীকে ফেরান মোস্তাফিজুর রহমান।

বোলিংয়ে এদিন তাসকিনের অনুপস্থিতি ভালোই ভুগিয়েছে বাংলাদেশকে। সেই সুযোগটা ভালোভাবেই নিয়েছেন আফগান ওপেনার রহমানউল্লাহ গুরবাজ। প্রথম দুই ওয়ানডেতে রান না পেলেও, এ ম্যাচে বারকয়েক জীবন পেয়ে তুলে নেন ক্যারিয়ারের অষ্টম সেঞ্চুরি।

১০১ রান করে মিরাজের বলে আউট হন গুরবাজ। ততক্ষণে আফগানদের জয়ের পথটাও মসৃণ হয়ে গেছে। শেষদিকে ওমরজাইয়ের ফিফটিতে অনায়াসেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় আফগানরা।

সবা:স:জু-৯১/২৪

 

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম