রাষ্ট্র সংস্কারে সহায়তা দিতে চান সাবেক সেনা কর্মকর্তারা

স্টাফ রিপোর্টার

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে নিজ নিজ অবস্থান থেকে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন অবসরপ্রাপ্ত সামরিক বাহিনীর সদস্যরাও। শেখ হাসিনার পতনের জন্য তারাও মিছিল-সমাবেশ করেছেন। চাকরিতে থাকা বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা ও সদস্যরাও ওই আন্দোলনে সহযোগিতা করেছেন। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর গঠিত বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনেও সহযোগিতা করতে চান তারা।

শনিবার রাজধানীর রাওয়া কমপ্লেক্সে রিটায়ার্ড আর্মড ফোর্সেস অফিসার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন (রাওয়া) আয়োজিত ‘জুলাই-আগস্ট ২০২৪ বিপ্লবে সশস্ত্র বাহিনীর অবদান এবং বিপ্লবোত্তর ভূমিকা’ বিষয়ক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। এ সেমিনারের সহযোগিতায় ছিল ‘রাওয়া রিসার্চ অ্যান্ড স্টাডি ফোরাম’ (আরআরএসএফ)।

অনুষ্ঠানে আরআরএসএফ’র রিসার্চ ডাইরেক্টর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. নাসিমুল গনি বলেন, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে দেশ গড়ার নতুন সুযোগ হয়েছে। কাঙ্ক্ষিত দেশ গড়তে দেশপ্রেমিক, নিবেদিত মানুষ এবং সঠিক তদারকি প্রয়োজন।

তিনি বলেন, এই বিপ্লবী সরকার ও ছাত্র-জনতা কী চাচ্ছে এটা পরিষ্কার করতে হবে এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে সাধারণ জনগণ, ছাত্র এবং সশস্ত্র বাহিনী কী ভূমিকা পালন করবে তা নিশ্চিত করতে হবে। এখন প্রয়োজন দেশপ্রেমিক নিবেদিত একদল মানুষ। সশস্ত্র বাহিনী গণমানুষের আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সম্পূর্ণভাবে সম্পৃক্ত হতে পারে।

দেশ সংস্কার কাজে চার জায়গা থেকে জনবল নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে জানিয়ে তিনি বলেন, সামরিক বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সদস্য, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি-বেসরকারি অফিসার, প্রবাসী এবং বিদেশ থেকে সংশ্লিষ্টদের দিয়ে সংস্কার কাজ করা সম্ভব।

অপরাধীদের বিচারের দাবি জানিয়ে মো. নাসিমুল গনি বলেন, বিগত সরকার সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা বাহিনীও ধ্বংস করে দিয়ে গেছে। সশস্ত্র বাহিনীসহ সব জায়গায় মেধাহীন নিয়োগ দিয়ে নৈরাজ্য তৈরি করেছে। অনেক সংকট ও ৪০ লাখ মামলা রেখে গেছে। এখনো প্রতিবিপ্লবের জন্য টাকা ছড়ানো হচ্ছে। চিহ্নিত অপরাধীদের ভাসানচর নিয়ে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।

গণঅভ্যুত্থানের সশস্ত্র বাহিনীর ভূমিকা অগ্রভাগে ছিল বলে দাবি করে লে. কর্নেল মোশাররফ বলেন, সাবেক ও বর্তমান সৈনিক থেকে সব স্তরের কর্মকর্তারা এই সফলতার অংশীদার। অথচ অভ্যুত্থানের এক মাস অতিবাহিত হওয়ার পরও আমরা অবহেলিত।

লে. কর্নেল মোশাররফ বলেন, সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা গণঅভ্যুত্থানে দুভাবে ভূমিকা রেখেছেন। অবসরপ্রাপ্তরা সরাসরি মাঠে নেমেছেন এবং চাকরিরতরা চূড়ান্ত সময়ে অবদান রেখেছেন। আবু সাইদ হত্যার পর সেনাবাহিনীর সব স্তরের সদস্যরা মাঠে নামেন। ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে তারা প্রতিবাদ ও জনসংযোগ শুরু করেন। ১৮ জুলাই মিরপুর ডিওএইচএস থেকে প্রতিবাদের সূচনা হয়। এটাই সর্বপ্রথম সশরীরে আন্দোলন।

সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক মাহবুবউল্লাহ বলেন, বিগত সময়ে সামরিক বাহিনীকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য বহু চেষ্টা হয়েছে। এর মধ্যে একটা হচ্ছে, বিডিআরের ঘটনা। ৫৭ জন অফিসার ও তাদের পরিবারের সদস্যদের হত্যা করা হয়েছে। তার বিচার করা হয়নি। আয়না ঘরের বিচার শুরু করা হয়নি। এগুলো কিন্তু করতে হবে। এইসব মহা অপরাধের বিচার যদি না হয় এবং যারা এর সঙ্গে জড়িত, কুশীলব যারা ছিল, তাদের যদি বিচারের আওতায় আনা না যায় এবং প্রাপ্য শাস্তি যদি না দেওয়া যায় তাহলে বারবার আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিপদগ্রস্ত হতে থাকবে।

অধ্যাপক ড. শহীদুজ্জামান বলেন, আমার মনে হয় এটা আল্লাহতায়ালার অশেষ মেহেরবানি যে ভারতীয় বাহিনী বাংলাদেশের ভেতরে প্রবেশ করে একটা স্থায়ী উপস্থিতি ঘটাবার আগে আমরা আমাদের বাস্তবতায় ফিরে আসতে পেরেছি। তিনি আরও বলেন, আমি যখনই টিভি টকশোতে যাই, আমি কখনো বলি না আওয়ামী লীগ সরকার। আমি সব সময় বলি টেরোরিস্ট রেজিম। টেরোরিজমের যে সংজ্ঞা সেখানে আওয়ামী লীগ পুরোপুরি মিলে যায়। তারা কোনো রাজনৈতিক দল নয়, তারা একটি টেরোরিস্ট অর্গানাইজেশন। তারা তিনবার টেরোরিস্ট কায়দায় ক্ষমতা দখল করেছিল।

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে ঠিক করার ওপর গুরুত্বারোপ করে লেফট্যানেন্ট (অব.) আবু রুশদ বলেন, আমাদের কয়েকশ অফিসার বিনা কারণে, রাজনৈতিক কারণে চাকরিচ্যুত হয়েছে, তাদের মধ্যে ট্রেনিংপ্রাপ্ত এবং অভিজ্ঞ অনেক অফিসার আছেন। তাদের বিভিন্ন জায়গায় চুত্তিভিক্তিক নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে। তারপর ধীরে ধীরে অন্যদের ট্রেনিং দিয়ে এইসব জায়গায় বসান। তাহলে হয়তো আমরা এই নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঠিক করতে পারব।

ডা. জাহেদ উর রহমান বলেন, আপনাদের বিপ্লবোত্তর ভূমিকা নিয়ে যেটা বলেছেন, আমি অবশ্যই তার সঙ্গে একমত। এই বড় ওয়ার্কফোর্স যারা আছেন, অফিসার্স, জেসিও সৈনিকসহ যারা সক্ষম তাদের কাজে লাগাতে হবে। এবং আমাদের এটা করতে হবে। পরিকল্পিতভাবে সেনাবাহিনীকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র ছিল মন্তব্য করে তিনি আরও বলেন, আমি মনে করি আমাদের অত্যন্ত পাওয়ারফুল একটা আর্মড ফোর্সেস থাকতে হবে। এটা না হলে এই সময় ও ভবিষ্যতের পৃথিবীতে আমরা বড় বিপদে থাকবো। এক্ষেত্রে রাওয়া গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে।

লে. কর্নেল (অব.) মনীষ দেওয়ানের সঞ্চালনায় জুলাই-আগস্ট ২০২৪ বিপ্লবে শাহাদাতবরণকারী সব শহিদ ছাত্র-জনতার আত্মার মাগফিরাত কামনা এবং দোয়া মোনাজাতের মাধ্যমে অনুষ্ঠানটি শুরু হয়। এতে সশস্ত্র বাহিনীর ঊর্ধ্বতন সাবেক অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানের শেষের দিকে তাদের মধ্যে থেকে বেশ কয়েকজন আগামী দিনের করণীয় বিষয়ে নিজেদের প্রতিক্রিয়া ও নানা দাবি জানান।

আফগানিস্তানের কাছে টানা দ্বিতীয় ওয়ানডে সিরিজ হারলো বাংলাদেশ

খেলা ডেস্ক:

আফগানিস্তানের কাছে টানা দ্বিতীয় ওয়ানডে সিরিজ হারলো বাংলাদেশ। গুরবাজের সেঞ্চুরিতে ম্লান হয়ে গেল মাহমুদউল্লাহ’র অনবদ্য ৯৮ রানের ইনিংস। তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে টাইগারদের ৫ উইকেটে হারিয়ে আফগানরা সিরিজ জিতলো ২-১-এ।

শারজায়, গত ম্যাচে টস জিতে ম্যাচ জিতেছিল বাংলাদেশ। এদিন চোটের কারণে নিয়মিত অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত না থাকলেও, টস জেতেন ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মেহেদি হাসান মিরাজ, হেটেছেন শান্তর পথেই। বাংলাদেশের তেরতম ক্রিকেটার হিসেবে এটি ছিল মিরাজের শততম ওয়ানডে ম্যাচ।

ব্যাটিংয়ে দেখে-শুনে শুরুর পর গতি বাড়িয়েছেন দুই টাইগার ওপেনার। সৌম্য-তানজিদের উদ্বোধনী জুটিতে আসে ৫৩ রান। ভালো শুরু পেয়েও সৌম্য ফেরেন ২৪ করে। এরপরই ছন্দপতন।

একে একে ড্রেসিংরুমে ফিরে যান তানজিদ, জাকির, তাওহিদ। বিনা উইকেটে ৫৩ থেকে ৪ উইকেটে ৭২। প্রথম ওয়ানডের মতো ধ্বংস তখন চোখ রাঙাচ্ছে। সেখান থেকে দলের রানের চাকা ঘোরান মিরাজ ও মাহমুদউল্লাহ।

আগের তিন ইনিংসে রান না পাওয়া মাহমুদউল্লাহ এদিন খেলেছেন হাতখুলে। ৬৩ বলে তুলে নেন ক্যারিয়ারের ২৯তম ফিফটি। অন্যদিকে মিরাজ ছিলেন ধীরস্থির। ১০৬ বলে বাংলাদেশের ইতিহাসের দ্বিতীয় মন্থর ফিফটি করেন তিনি।

মিরাজ ৬৬ করে ফিরলেও, শেষ পর্যন্ত দলের হাল ধরে রাখেন মাহমুদউল্লাহ। শেষ বলে রানআউট হয়ে সেঞ্চুরি থেকে দুই রান দূরে থেমেছেন অভিজ্ঞ ব্যাটার। বাংলাদেশ পায় ৮ উইকেটে ২৪৪ রানের পুঁজি।

রান তাড়ায়, দেখে-শুনে শুরু করে আফগানিস্তান। দলীয় ৪১ রানে আফগানদের উদ্বোধনী জুটি ভাঙ্গেন অভিষিক্ত পেসার নাহিদ রানা। দুই অঙ্কের ঘরে যাওয়ার আগেই রহমত শাহ ও হাশমতউল্লাহ শহিদীকে ফেরান মোস্তাফিজুর রহমান।

বোলিংয়ে এদিন তাসকিনের অনুপস্থিতি ভালোই ভুগিয়েছে বাংলাদেশকে। সেই সুযোগটা ভালোভাবেই নিয়েছেন আফগান ওপেনার রহমানউল্লাহ গুরবাজ। প্রথম দুই ওয়ানডেতে রান না পেলেও, এ ম্যাচে বারকয়েক জীবন পেয়ে তুলে নেন ক্যারিয়ারের অষ্টম সেঞ্চুরি।

১০১ রান করে মিরাজের বলে আউট হন গুরবাজ। ততক্ষণে আফগানদের জয়ের পথটাও মসৃণ হয়ে গেছে। শেষদিকে ওমরজাইয়ের ফিফটিতে অনায়াসেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় আফগানরা।

সবা:স:জু-৯১/২৪

 

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম