এসআইয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা মিলেছে!

রায়হান হোসাইন, চট্টগ্রামঃ- 

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড থানার এক এসআইয়ের বিরুদ্ধে আসামির স্ত্রীকে লাথি মেরে হেনস্তা ও কাগজপত্র লুটের সত্যতা পেয়েছেন সীতাকুণ্ড সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আশরাফুল করিম।

 

এসব তথ্য উল্লেখ করে গত ১৮ এপ্রিল চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার বরাবর তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন তিনি। তদন্ত প্রতিবেদনে আসামির স্ত্রীকে লাথি দেয়া, অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ, ঘরের দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ ও মূল্যবান কাগজপত্র লুটের অভিযোগ সত্য বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

 

তবে টাকা ও স্বর্ণালংকার লুটের সত্যতা মেলেনি বলে উল্লেখ করা হয় তদন্ত প্রতিবেদনে।

 

এর আগে গত ১৭ এপ্রিল সীতাকুণ্ড থানায় কর্মরত এসআই মাহবুব মোরশেদের বিরুদ্ধে লাথি মেরে আঘাত, অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ, অপমান, দরজা ভেঙে ঘরের ভেতরে প্রবেশ, মূল্যবান কাগজপত্র, ১ লক্ষ ৪২ হাজার টাকা, ৮ আনা স্বর্ণ ও ২ টি স্মার্টফোন লুটের অভিযোগ তুলে পুলিশ সুপার চট্টগ্রাম বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন খালেদা আক্তার নামে এক নারী। ওই নারীর স্বামী নুরুল আলম ইরান একটি মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি।

 

অভিযোগে খালেদা আক্তার উল্লেখ করেন, গত ১৬ এপ্রিল শনিবার দুপুরে সঙ্গীয় ফোর্স ও একজন সোর্স নিয়ে সীতাকুণ্ডের মুরাদপুর ইউনিয়নের মধ্যম ভাটেরখীলস্থ নুর আহম্মদের নতুন বাড়িতে তার স্বামী ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি মো. নুরুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করতে যান এসআই মাহবুব মেরশেদ। কিন্তু তার স্বামীকে না পেয়ে এসআই মাহবুব মোরশেদ খালেদাকে

তাদের প্রতিবেশীর সাথে চলা জমি সংক্রান্ত মামলার জামিন আছে কিনা জানতে চান।

 

খালেদা আক্তার আদালত থেকে জামিনে আছেন জানালে এসআই মাহবুব মোরশেদ তাকে জামিনের কপি দিতে বলেন। এসময় খালেদা আক্তার জামিনের কপি তার দেবরের কাছে আছে এবং তিনি আসলে দেখাবেন বলে জানালে এসআই মাহবুব মোরশেদ ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। একপর্যায়ে এসআই মাহবুব মোরশেদ খালেদাকে তার ঘরের আলমারির চাবি দিতে চাপ প্রয়োগ করেন। এসময় খালেদা আক্তার চাবি দিতে অস্বীকৃতি জানালে এসআই মাহবুব মোরশেদ তাকে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করেন এবং ২ বার তাকে লাথি দেন। পরে ভয়ে ও নির্যাতন থেকে বাঁচতে আলমারির চাবি দিয়ে দিলে মাহবুব মোরশেদ আলমারি খুলে নগদ ১ লক্ষ ৪২ হাজার টাকা, আট আনা স্বর্ণ, ২টি স্মার্টফোন ও বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র লুট করে নিয়ে যায়।

 

তিনি আরও উল্লেখ করেন, নগদ ১ লক্ষ ৪২ হাজার টাকা তাদের গরু বিক্রি টাকা যা বসতঘরে গচ্ছিত ছিল। তার ছেলে রিফত হোসেন জনি (১৭) এসআই মাহবুব মোরশেদ ও সোর্স নুরুজ্জামানকে বাধা দিলে তারা তাকেও মারধর করেন এবং মাথায় বন্দুক তাক করে পরিবারের সবাইকে প্রাণনাশের হুমকি দেয় এবং ব্যাংকের, জন্মনিবন্ধনসহ গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র লুট করে নিয়ে যায়। অভিযোগে ৩ জন পুরুষ ও ৪ নারীসহ মোট ৭ জনকে স্বাক্ষী করেন খালেদা আক্তার।

 

গত ১৭ এপ্রিল পুলিশ সুপার বরাবর অভিযোগ দেয়ার পরই অভিযোগের তদন্ত শুরু হয়। একইসাথে ওইদিন রাতেই এসআই মাহবুব মোরশেদকে সীতাকুণ্ড থানা থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়।

 

অভিযোগের তদন্ত করে ১৮ এপ্রিল পুলিশ সুপারের কাছে প্রতিবেদন জমা দেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আশরাফুল করিম। পুলিশের সেই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এসআই মাহবুব মোরশেদ আসামি নুরুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করতে গিয়ে দরজা ভেঙে ঘরে প্রবেশ করেন। পরে তাকে আধা কিলোমিটার ধাওয়া করে ধরতে ব্যর্থ হলে দরজা খুলতে দেরি হওয়ার বিষয় নিয়ে তার স্ত্রী খালেদা আক্তারের সঙ্গে বাকবিতন্ডা হয়। এসময় খালেদা আক্তারকে লাথি মারেন এসআই মাহবুব মোরশেদ এবং তার ও তার ছেলের সাথে অশোভন আচরণ করেন।

 

শুধু তাই নয়, ছেলের মাথায় বন্দুক তাক করে প্রাণনাশের হুমকি ও ভয় দেখিয়ে আলামরি থেকে কাগজপত্র লুট করেন এসআই মাহবুব মোরশেদ। এসব অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে মর্মে প্রতিবেদনে বলা হয়। অন্যদিকে টাকা ও স্বর্ণালংকার লুটের অভিযোগের উপযুক্ত ও নির্ভরযোগ্য সাক্ষ্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি এবং খালেদা আক্তার দুটি গরু বিক্রি করে পুনরায় দুটি গরু ক্রয় করেন বলে উল্লেখ করা হয়। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, অভিযানে এসআই মাহবুব মোরশেদের সঙ্গীয় অফিসার এএসআই হাবিবুর রহমান সম্পর্কে বাদী ও বাদীর মানিত স্বাক্ষীদের বক্তব্য পর্যালোচনায় বিরূপ কোন তথ্য পাওয়া যায়নি।

 

উক্ত প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, পুলিশ বাহিনীর একজন প্রশিক্ষিত অফিসার হয়েও কর্তব্য-কর্মে স্বেচ্ছাচারিতা, অসদাচরণ ও শৃঙ্খলা পরিপন্থী পরিলক্ষিত হয়, যা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। প্রতিবেদনে অভিযুক্ত এসআই মাহবুব মোরশেদের বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়।

 

অন্যদিকে এসআই মাহবুব মোরশেদ এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তিনি আসামি নুরুল ইসলামকে ধরতে গিয়েছিলেন। তবে আসামি পালিয়ে যান। আসামির স্ত্রী ও ছেলেকে মারধর করার অভিযোগ সঠিক নয় বলে তার দাবি।

ব্যক্তিগত আক্রোশে সাংবাদিক কে মামলা দিয়ে হয়রানি

স্টাফ রিপোর্টারঃ

আদালতের মাধ্যমে মিথ্যা মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন গাজীপুর সদর উপজেলা প্রেসক্লাবের সদস্য মামুন হোসেন। গত ২ নভেম্বর উভয়পক্ষের বক্তব্য, দীর্ঘ যুক্তিতর্ক শুনানি ও ফরেনসিক রিপোর্ট পর্যালোচনার শ্রবণান্তে ঢাকা সাইবার ট্রাইব্যুনাল (৭৫৮/২১) এর বিজ্ঞ বিচারক এ.এম জুলফিকার হায়াত এ আদেশ দেন।

সূত্রেমতে জানা যায়, মামুন হোসেন এম.এ. ২০২০ সালের ৩০ জুন অনলাইন “সাপ্তাহিক সামাল” পত্রিকার প্রকাশিত সংবাদ “গাজীপুরে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে যৌন হয়রানির অভিযোগ” শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করে বাদীরমান-সন্মান ক্ষুন্ন করে ২০১৮ সালের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৫/২৯/৩১ ধারার অপরাধ করেছে।

পরে ব্যক্তিগত আক্রোশে ওই সালের ১৮ জুলাই, সাংবাদিক মামুন এম.এ. কে একমাত্র আসামী করে শ্রীপুর থানায় মামলা (৫৩) করে রাজেন্দ্রপুর বাজারে আর.এন.আর এন্টারপ্রাইজের সত্ত্বাধীকারী এবং রাজাবাড়ী ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সভাপতি ও বর্তমানে গাজীপুর জেলা বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতা পরিষদের সিনিঃসহ সভাপতি নোয়াগাঁও গ্রামের মৃত আ: করিম এর ছেলে আবু সাঈদ কামাল ওরফে এস এ কামাল।

তদন্ত কর্মকর্তা আদালতে অভিযোগ পত্র দিলে মামলাটি অভিযোগ গঠনের জন্য ২০২১ সালের ১২ অক্টোবরে গাজীপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রিট আমলী আদালত থেকে ঢাকা সাইবার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর হয়। ২০২২ সালের ২ নভেম্বর অভিযোগ গঠনের ধার্য্য তারিখে উভয় পক্ষের দীর্ঘ যুক্তিতর্ক ও শুনানি পর্যালোচনা শেষে অভিযুক্ত সাংবাদিক কে বিজ্ঞ আদালত মিথ্যা অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেন। এর আগে মামুনের আইনজীবী মিথ্যা অভিযোগ থেকে অব্যাহতি চেয়ে আবেদন করেন।

সাংবাদিক মামুন এর আইনজীবী বলেন- আবারও বিজ্ঞ আদালতে প্রমাণ হয়ে গেলো- “সাংবাদিকের কলম-ক্যামেরা কারো কাছে মাথা নত করেনা”

এবিষয়ে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম