১৫ বছর নিজেদের সুবিধার প্রকল্পগুলোতে বাংলাদেশকে ঋণ দিয়েছে ভারত

স্টাফ রিপোর্টার: 

সড়ক ও রেলপথসহ বাংলাদেশের যেসব প্রকল্পে ভারতের সুবিধা আছে সেগুলোতেই বিগত ১৫ বছর ঋণ দিয়েছে দেশটি। এসব প্রকল্প তেমন কোন কাজে লাগেনি বরং ঋণের চাপে পড়েছে বাংলাদেশ।

শনিবার (৩০ নভেম্বর) অর্থনীতির শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটিসূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের সরকার পরিচালনা পদ্ধতিই ছিল দুর্নীতি সহায়ক। বিগত ১৫ বছর আওয়ামী লীগ সরকার যেভাবে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়েছে সেই পদ্ধতি ছিল দুর্নীতি ও অনিয়মকে উৎসাহিত করার। ফলে এসব কর্মকাণ্ডে এতো বেশি দুর্নীতি ও অনিয়ম হয়েছে।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্রে জানা গেছে, তিনটি লাইন অব ক্রেডিট (এলওসি) মিলিয়ে দিল্লি ঢাকাকে ৭৩৬ কোটি ডলার ঋণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ভারতীয় এক্সিম ব্যাংকের মাধ্যমে গত অক্টোবর পর্যন্ত ছাড় হয়েছে মাত্র ১৮৬ কোটি ডলার। এখন পর্যন্ত প্রথম এলওসির ৩৭ কোটি ডলারের মতো পরিশোধ হয়েছে। তিনটি এলওসিতে সড়ক ও রেল যোগাযোগ, জ্বালানি, রাস্তাঘাট নির্মাণসহ অবকাঠামো খাতে এ পর্যন্ত ৪০টি প্রকল্পের মধ্যে ১৫টি শেষ হয়েছে। আটটি চলমান এবং বাকিগুলো পরামর্শক ও ঠিকাদার নিয়োগ কিংবা প্রকল্প প্রস্তাবনা তৈরির পর্যায়ে রয়েছে।

এ বিষয়ে ইআরডির একাধিক কর্মকর্তা বলেন, গত ১৫ বছরে নিজেদের সুবিধার প্রকল্পগুলোতেই ঋণ দিয়েছে ভারত। এসব প্রকল্পের কাজ ভারতের ঠিকাদারদের দিয়েই হয়েছে। তারা ঋণের টাকা বাংলাদেশে না এনেই ভারত থেকেই নিজেদের খুশিমতো বিল তৈরি করে পরিশোধ করেছে। কিন্তু এখন আমাদের বৈদেশিক মুদ্রাই পরিশোধ করতে হবে। প্রকল্পগুলোতে ভারতের ঋণ ছাড়ে জটিলতা প্রকল্পগুলোতে দীর্ঘসূত্রতা তৈরি করেছে। শুধু বন্ধুত্ব ধরে রাখার জন্যই তাদের থেকে ঋণ নিয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার।

প্রতিবেদনসূত্রে আরও জানা গেছে, গত ১৫ বছরে প্রশাসন রাজনৈতিকভাবে জিম্মি ছিল। অর্থ লুটপাটের জন্য প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নেও রাজনৈতিক প্রভাব ছিল। সেই জিম্মি দশা কাটানোর জন্য কোনো উদ্যোগ ছিল না কর্মকর্তাদেরও। তাদের মধ্যে অনেকে রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষার ছিল। অনেক ক্ষেত্রে প্রকল্প নেওয়া ও প্রস্তুত করার ক্ষেত্রে উন্নয়নের রাজনৈতিক প্রভাবে সরকারি কর্মকর্তারা প্রভাবিত হয়েছেন। সেই প্রকল্প পরবর্তী সময়ে একাধিকবার সংশোধিত হয়েছে, অর্থায়নের পরিমাণ বেড়েছে, সময় বেড়েছে। একই অবস্থা ছিল সচিবদেরও ফলে কিছুর পরিবর্তন আনা সম্ভব হয়নি।

প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, দেশের রাজনীতি ঠিক না থাকে তাহলে আমলাতন্ত্র এখান থেকে মুক্ত হবে না। রাজনৈতিক জায়গাটাতে গণতন্ত্র চর্চাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসনামলে দেশ থেকে প্রতি বছর গড়ে প্রায় ১৪ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে।

কমিটিসূত্রে জানা গেছে, শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি, সরকারি নথি ও বৈশ্বিক প্রতিবেদন ব্যবহার করে অর্থ পাচারের চিত্র তুলে ধরেছে। তবে তবে সময় স্বল্পতার কারণে অর্থ পাচারের প্রকৃত পরিমাণ নির্ধারণ করা যায়নি। প্রতিবেদনটি রোববার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে হস্তান্তর করা হবে এবং পরদিন জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হবে।

 

সবা:স:জু-২৩৫/২৪

এনবিআরকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ভ্যাট ফাঁকির মহোৎসবে বাংলা কিচেন

স্টাফ রিপোর্টার:

রাজধানী ঢাকার এমন কোনো অলিগলি নেই, যেখানে রেস্টুরেন্ট পাওয়া যাবে না। ঢাকা এখন রীতিমতো রেস্টুরেন্টের নগরীতে পরিণত হয়েছে। বেইলি রোড, ধানমন্ডি, খিলগাঁও, মোহাম্মদপুর উত্তরা এলাকা যেন রেস্টুরেন্ট হাব। রাস্তার দুই পাশে আবাসিক ভবনে গড়ে উঠেছে ছোট-বড় অংসখ্যা হোটেল-রেস্তোরাঁ। যথাযথ মনিটরিং ও সক্ষমতার অভাবে এসব রেস্টুরেন্ট থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) যৎসামান্য ভ্যাট আদায় করতে পারছে। যদিও এ খাতে ভ্যাট আদায়ের বিপুল সম্ভাবনা আছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) মোট দেশ উৎপাদন বা জিডিপিতে হোটেল-রেস্টুরেন্ট খাতের অবদান জানতে ২০২৩ সালে একটি জরিপ চালায়। জরিপের তথ্য মতে, ২০০৯-১০ সালে যেখানে দেশে হোটেল-রেস্টুরেন্টের সংখ্যা ছিল ২ লাখ ৭৫ হাজার, সেখানে ২০২৩ সালে সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ৫ লাখ। এক দশকে জিডিপিতে মূল্য সংযোজন বেড়ে হয়েছে আট গুণ।

ভ্যাট আইন অনুযায়ী, পণ্য ও সেবার বিপরীতে গ্রাহকদের কাছ থেকে ভ্যাট আদায় করে প্রতি মাসে সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়া হোটেল-রেস্টুরেন্টগুলোর দায়িত্ব। কিন্তু অনেক রেস্টুরেন্ট ভ্যাট আদায় করলেও সরকারি কোষাগারে জমা দেয় না। এনবিআর ভ্যাট ফাঁকি রোধে রাজধানীজুড়ে নিয়মিত অভিযান চালালে নামিদামি অনেক রেস্টুরেন্টের ভ্যাট ফাঁকির চাঞ্চল্যকর তথ্য জনসমক্ষে আসে। গুলশানের পূর্ণিমা রেস্টুরেন্ট, মাদানি অ্যাভিনিউ’র শেফস টেবিল, ধানমন্ডির স্টার রেস্টুরেন্ট, গুলশানের খানা খাজানা, দ্য মিরাজ, র’ ক্যানভাসের মতো রেস্টুরেন্টকে জরিমানা করা হয়। বর্তমানে সেই অভিযান কার্যক্রম ঝিমিয়ে পড়েছে। ভ্যাট ফাকির তালিকায় নতুন নাম লিখিয়েছে বাংলা কিচেন, যারা রাজধানী জুড়ে অর্ধশতাধিক শাখা নিয়ে অনিয়মের উচ্চে অবস্থান করছে।

সরেজমিনে মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি ও মালিবাগ এলাকার কয়েকটি রেস্টুরেন্ট ঘুরে দেখা গেছে, এসব এলাকার অধিকাংশ রেস্টুরেন্টে ভ্যাট নেওয়া হয় না। আবার অনেক রেস্টুরেন্ট নিজস্ব সফটওয়্যারের মাধ্যমে ভ্যাট আদায় করছে। সেই ভ্যাট সরকারি কোষাগারে জমা দিচ্ছে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। ভ্যাট আদায়ের দায়িত্বে সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে ব্যবসা চালাচ্ছে। বাংলা কিচেনের অধিকাংশ শাখায় ভ্যাট আদায় করা হয় না। কোন শাখায় হাতের লেখা কাগজ না দিয়েই ভোক্তাদের কাছ থেকে বিল আদায় করা হয়। এমনকি বিক্রির তথ্য গোপন করতে মোবাইল ব্যাংকিং বা ডেবিট-ক্রেডিট কার্ডে বিল নেওয়া হয় না।

সার্বিক বিষয়ে বাংলা কিচেনের এজিএম হাফিজুর রহমান এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তার বক্তব্য প্রকাশে অস্বীকৃতি জানান।

অনুসন্ধান চলমান পর্ব-১

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম