রাজধানীর চকবাজারে বাসা থেকে ব্যবসায়ীর হাত-পা বাধা মরদেহ উদ্ধার

স্টাফ রিপোর্টার: 

রাজধানীর চকবাজারের একটি বাসা থেকে নজরুল ইসলাম (৪৬) নামে এক ব্যবসায়ীর হাত-পা বাধা ও গলায় কাপড় প্যাঁচানো মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে চকবাজার ইসলামবাগ আরএনডি রোডের ৬৬/১ নম্বর বাসার পঞ্চম তলার একটি রুম থেকে মরদেহটি উদ্ধার করে পুলিশ। পরে ময়নাতদন্তের জন্য আজ বুধবার সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠায়।

চকবাজার থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জিল্লুর রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, রাতে খবর পেয়ে ইসলামবাগের বাসা থেকে ওই ব্যক্তির মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। এ সময় ওই ব্যক্তির হাত-পা, মুখ বাধা ও গলায় কাপড় প্যাঁচানো অবস্থায় ছিল। ধারণা করা হচ্ছে, ২ ডিসেম্বর থেকে ৩ ডিসেম্বরের মধ্যে যে কোনো সময় কে বা কারা তাকে হত্যা করেছে। বিস্তারিত তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

নিহত নজরুল ইসলামের ছোট ভাই তৌহিদুল ইসলাম তাপস জানান, ইসলামবাগ মাদ্রাসা গলিতে তার ভাইয়ের নজরুল ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এ ছাড়া শেয়ারে প্লাস্টিকের আরও একটি ব্যবসা রয়েছে। গত শুক্রবার স্ত্রী সুমি আক্তার, দুই ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে গ্রামের বাড়ি নরসিংদীতে বেড়াতে যান। এরপর থেকে ওই বাসায় একাই ছিলেন নজরুল। সোমবার রাত দশটার দিকে তার ওয়ার্কশপ থেকে বের হয়েছিলেন। এরপর গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে তাকে ফোন করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায় এবং তার বাসায় গিয়েও বাইরে থেকে তালাবদ্ধ দেখা যায়। পরে ঘটনাটি ফোনে গ্রামে থাকা তার ছেলে এবং স্ত্রীকে জানানো হয়।

তাপস আরও জানান, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তার ছেলে সুমিত ঢাকায় আসে। তার কাছে থাকা চাবি দিয়ে ঘরে ঢুকে একটি রুম থেকে বাবার এনআইডি কার্ড নিয়ে চকবাজার থানায় যান নিখোঁজের জিডি করতে। তবে পুলিশ জিডি নেয়নি। পরে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করে রাত দেড়টার দিকে বাসায় ফেরেন। বাসায় ঢোকার পর অন্য একটি রুমে গিয়ে দেখতে পায় বিছানার ওপর তার বাবা রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছেন। পরে খবর পেয়ে তাপসও ওই বাসায় গিয়ে দেখেন হাত-পা ও মুখ বাধা এবং পুরুষাঙ্গ কাটা অবস্থায় বিছানায় পরে আছে। পরে তারা থানায় খবর দেন।

তাপস জানান, ওই বাসার দারোয়ানকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, সোমবার রাত ১২টার দিকে নজরুল বাসায় ঢুকেছেন। মঙ্গলবার সকালেই তার গাজীপুরে যাওয়ার কথা ছিল। তবে তিনি তাকে আর পরে দেখেননি। এরপর বাসায় কে বা কারা ঢুকেছে তিনি কিছুই বলতে পারেন না।

সবা:স:জু-১৭৯/২৪

পুলিশ খুন করেনি? তাহলে কে খুন করেছে ঢাকা টাইমসের সাংবাদিক মেহেদীকে?

স্টাফ রিপোর্টার:
ঢাকা টাইমসের সাংবাদিক হাসান মেহেদীকে পুলিশ গুলি করেনি বলে দাবি করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। তাহলে তাকে গুলি করল কে? কার গুলিতে প্রাণ ঝরল ঢাকা টাইমসের এই মেধাবী সাংবাদিকের?

গত ১৮ জুলাই বিকাল সাড়ে পাঁচটার দিকে যাত্রাবাড়ীর কাজলায় মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের টোল প্লাজার ওপরের অংশে পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় পুলিশের ছোরা গুলিতে গুলিবিদ্ধ হন সাংবাদিক মেহেদী। প্রায় ১০ মিনিট পড়ে থাকার পর তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেলে আনা হলে তার মৃত্যু নিশ্চিত করেন দায়িত্বরত চিকিৎসক।

ওই ঘটনার ১৭ দিন পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দাবি করলেন, ‘পুলিশের গুলিতে কোনো সাংবাদিক মারা যায়নি।’ এমনকি তিনি এও বলেছেন, ‘আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে কেউ মারা যায়নি।’

সচিবালয়ে শনিবার রাতে সমসাময়িক বিষয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকের প্রশ্নে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এমন দাবি করেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এই বক্তব্যের পর সঙ্গত কারণেই বেশ কিছু প্রশ্ন সামনে আসে ।

তাহলে কার গুলিতে সাংবাদিক নিহত হলেন? দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে তার এখন এটাও জানানো উচিত, পুলিশ গুলি না করলে কে গুলি করল মেহেদী হাসানকে।

নিহত সাংবাদিক হাসান মেহেদীর বুকে-পিঠে অসংখ্য ছররা গুলির চিহ্ন। সাধারণত আন্দোলন-সংগ্রামে এই গুলি ব্যবহার করে পুলিশ। ছররা গুলি পুলিশ ছাড়া আর কেই-বা ব্যবহার করে? এই জবাবও তো তার কাছ থেকেই আসতে হবে।

এমনকি হাসান মেহেদী গুলিবিদ্ধ হওয়ার সময় প্রত্যক্ষদর্শী অন্য সাংবাদিকদের বয়ানেও পুলিশের গুলি করার কথা উঠে এসেছে নানা মাধ্যমে।

এ ছাড়া ছাত্র আন্দোলন ঘিরে হত্যা ও সহিংসতার ঘটনা তদন্তে বিচারবিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। এ রকম গুরুত্বপূর্ণ কমিটির তদন্তাধীন বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জনসমক্ষে কোনো পক্ষে মন্তব্য করতে পারেন কি?

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এই বক্তব্যকে অমূলক বলছেন বিশ্লেষকরা। কোনো হত্যার ঘটনায় তিনি এভাবে আগেভাগে মন্তব্য করতে পারেন না। তিনি এর মধ্য দিয়ে মূলত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বা পুলিশকে বাঁচানোর দায়িত্ব নিলেন। তা না হলে সাংবাদিক হত্যায় পুলিশের পক্ষে এভাবে সাফাই গাইলেন কেন?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ও সাবেক চেয়ারম্যান আসিফ নজরুল বলেন, সরকার এভাবে সব সময় নিজেদের দায়মুক্ত রেখে দেশকে আজ এই অবস্থায় নিয়ে এসেছে। সাংবাদিক হত্যা নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ওই বক্তব্য সম্পূর্ণ অমূলক।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরেকজন বিশ্লেষক বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যদি কোনো ধরনের তদন্ত ছাড়াই এভাবে সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে দেন, তাহলে পুলিশের পক্ষে এর সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত করা সম্ভব হবে না। পুলিশের কী সাধ্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের বাইরে গিয়ে তদন্ত রিপোর্ট তৈরি করে?

তার মন্তব্য প্রত্যাহার করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিক হাসান মেহেদীসহ সব হত্যার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য নির্দেশ দেবেন, এবং প্রকৃত অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনবেন বলে আশা করেন বিশ্লেষকরা।

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম