রাজধানীতে টিআইদের বেপরোয়া চাদাঁবাজি

জাহিদ হাসান॥
রাজধানীর সায়েদাবাদ টার্মিনাল, গুলিস্তান বাসস্ট্যান্ডসহ রাজধানীর সর্বত্রই পরিবহন সেক্টর ঘিরে চাঁদাবাজির মহোৎসব চলছে। টার্মিনাল-সংশ্লিষ্টরা অভিযোগ করে জানিয়েছেন, সায়েদাবাদ থেকে দেশের পূর্ব-উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় জেলাসমূহের ৪৭টি রুটে চলাচলরত দুই সহ¯্রাধিক যানবাহন থেকে দৈনিক ফ্রিস্টাইলে পুলিশ চাঁদা আদায় করছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম, সিলেট, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চাঁদপুর, যশোর, খুলনা, বরিশাল, ফরিদপুরসহ ৩২টি রুটে প্রতিদিন এক হাজার ২০০ কোচ চলে। এছাড়া রাজধানীর গাবতলী টার্মিনাল, মহাখালী, উত্তরা, গাজীপুর, টঙ্গী, কালিগঞ্জ, শ্রীপুর, কাপাসিয়াসহ শহর ও শহরতলির অন্যান্য রুটে সহ¯্রাধিক বাস-মিনিবাসের চলাচল রয়েছে। যানবাহনের চালক, কন্ডাক্টর ও হেলপাররা জানান, কোনো রুটের যানবাহনই চাঁদামুক্ত নয়। বরং চলাচলকারী সব গাড়িকে প্রতি ট্রিপেই নির্ধারিত অঙ্কের চাঁদা পরিশোধের পর টার্মিনাল ছাড়তে দেয়া হয়। সে ক্ষেত্রে দূরপাল্লার কোচ থেকে ১২০০ টাকা পর্যন্ত চাঁদাবাজি দিতে হয় ট্রাফিক পুলিশকে এর মধ্যে যাত্রবাড়ীর টিআই মেনন, শনির আখড়ায মিদুল, জুরাইন এ বিপ্লব ও মুছা কালিমুল্লা। লোকাল সার্ভিসের প্রতিটি গাড়ি থেকে ট্রিপে আদায় করা হচ্ছে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা। বিভিন্ন রুটে চলাচলরত গাড়ির মালিক-শ্রমিকরা জানান, কমিটি দখল ও মাত্রাতিরিক্ত চাঁদাবাজির অত্যাচারে মালিকরা পথে বসতে চলেছেন। শ্রমিকদের আয়ও কমে গেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন মালিক বলেন, লাকসাম, কিশোরগঞ্জ, চাঁদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিভিন্ন রুটে এখন গাড়িপ্রতি ১২৫০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা দিতে হচ্ছে। পুলিশ ও স্থানীয় চাঁদাবাজরা মিলেমিশে এসব চাঁদার টাকা ভাগাভাগি করে। চাঁদাবাজির শিকার পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা প্রতিদিন চাঁদা প্রদানের বিস্তাারিত তালিকা তুলে ওই বাস মালিক জানান, পরিবহন-সংশ্লিষ্ট একটি কেন্দ্রীয় ফেডারেশনের নামে ৫০ টাকা, মালিক সমিতি ৮০ টাকা, শ্রমিক ইউনিয়ন ৪০ টাকা, টার্মিনাল কমিটিকে ২০ টাকা দিতে হয়। এর বাইরে পুলিশকে দিতে হয় ৫০০ টাকা করে।
ট্রাক থেকেই কোটি টাকা : বাংলাদেশে পণ্যবাহী ট্রাক থেকে প্রতিদিন গড়ে এক কোটি টাকা চাঁদা আদায় করে পুলিশ। বাংলাদেশ ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান মালিকরা জানান, সাংবাদিকদের এ বিষয়ে জানালে আরো অধিক হয়রানির শিকার হতে হয়। এর প্রতিবাদ করলে চাঁদার হার পুলিশ আরো বাড়িয়ে দেয়। দেশে প্রতিদিন ৯০ হাজার পণ্যবাহী ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান চলাচল করে। এর কোনোটিই পুলিশকে চাঁদা না দিয়ে চলতে পারে না। বাংলাদেশ ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতির কর্মকর্তারা জানান, সড়ক বা মহাসড়কে এই ট্রাক চলাচল করতে গিয়ে একেকটি স্পটে ৫০ থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা দিতে হয়। এই চাঁদা যেমন হাইওয়ে পুলিশ নেয়, তেমনি ট্রাফিক পুলিশও আদায় করছে।
রাজধানীর শতাধিক পয়েন্টে চলছে ট্রাফিক পুলিশের চাঁদাবাজি। একশ্রেণির পরিবহন শ্রমিক, চিহ্নিত সন্ত্রাসী, পুলিশ ও ক্ষমতাসীন মহলের আশীর্বাদপুষ্টদের সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে সম্মিলিত চাঁদাবাজ চক্র। তাদের কাছেই জিম্মি হয়ে পড়েছে যানবাহন চালক, মালিকসহ সংশ্লিষ্ট সবাই। ফলে বন্ধ হচ্ছে না ফিটনেসবিহীন যান চলাচল। ফিটনেসবিহীন যানবাহন থেকে ট্রাফিক সার্জেন্টরা টাকা তুলে মাসোহারা হিসেবে। তাই এগুলোর বিরুদ্ধে কোনো ধরনের ব্যবস্থাও নেয়া হচ্ছে না। ট্রাফিক পুলিশ রাজধানীর প্রবেশমুখগুলোতে বর্তমানে সবচেয়ে অধিক হারে চাঁদাবাজি করছে।
সায়েদাবাদ-গাজীপুর রুটে চলাচলকারী একাধিক মিনিবাস চালক বলেন, নানামুখী চান্দা-ধান্ধার কবলে চালক, মালিক, শ্রমিক সবার জীবনই অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। যাত্রীরা হচ্ছেন নানা দুর্ভোগের শিকার। মহাখালী, গাবতলী, সায়েদাবাদসহ সব বাস-ট্রাক টার্মিনালের অবস্থাই অভিন্ন। এসব স্থানে গাড়ি ঢুকতেও টাকা লাগে, বেরোতেও লাগে টাকা। সবচেয়ে ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছে পুলিশের চাঁদাবাজি। রাজধানীসহ সারাদেশের সড়ক-মহাসড়কের যত্রতত্র পুলিশের বিশেষ চেকিং আর মাসোহারা আদায়ের প্রতিযোগিতা বন্ধের সাধ্য যেন কারো নেই। রাজধানীর এক পাশ দিয়ে ঢুকে অন্য পাশ দিয়ে বেরিয়ে যেতে ট্রাকপ্রতি ৫০০-৬০০ টাকা গুনতে হয়।
ট্রাফিক পুলিশের টোকেন বাণিজ্যও থেমে নেই। তবে প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস এবং নামী-দামি ব্র্যান্ডের জন্য পুলিশের মাসিক টোকেন সংগ্রহ না করায় প্রতিদিনই তাদের নানা হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। কাগজপত্র দেখার নাম করে এসব গাড়ি ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটক করে রাখে, তারপর টাকার বিনিময়ে রফাদফা হলেই পুলিশ তা ছেড়ে দেয়।
এছাড়া সরেজমিন দেখা গেছে, রাজধানীর গুলিস্তান টার্মিনাল ছাড়ার আগেই গাজীপুর চৌরাস্তা রুটের আজমেরী ও ঢাকা পরিবহনের দুইটি বাসের জন্য চাঁদা দিতে হয় সাড়ে ৫শ’ টাকা করে। ট্রাফিক পুলিশের সহযোগী লাইনম্যানরা এ চাঁদা আদায় করছে। এর বাইরে সিটি কর্পোরেশনের ইজারাদার ও সিরিয়ালের জন্য দিতে হয় আরো একশ’ টাকা। সব মিলিয়ে সাড়ে ৬শ’ টাকা পরিশোধের পর এ রুটে একটি বাস রাস্তায় নামে। এছাড়া টার্মিনাল থেকে বের হয়ে গাজীপুর পর্যন্ত যেতে ৬টি স্থানে আরো তিনশ’ টাকা খরচ হয়। এই অর্থ ভাগাভাগি হয় সরকারি দল সমর্থিত বিভিন্ন মালিক-শ্রমিক সংগঠন, স্থানীয় পলিটিক্যাল ক্যাডার, পুলিশ ও সন্ত্রাসীসহ ৬ ধাপে। আর এ কারণে চাঁদা প্রদানকারী বাসচালকেরা দিনভর রাস্তার যেখানে-সেখানে গাড়ি থামিয়ে যাত্রী ওঠানামা করাতে পারে। পুলিশ কোনো ধরনের বাধার সৃষ্টি করে না বলে যাত্রীরা অভিযোগ করেছেন। ঢাকা-গাজীপুর ও মতিঝিল-মিরপুরসহ রাজধানীর মোট ২৮টি রুটেও প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার চাঁদা আদায় করছে ট্রাফিক পুলিশ। এছাড়া গুলিস্তান ও মতিঝিলসহ রাজধানীর গাবতলী, সায়েদাবাদ ও মহাখালী- এ পাঁচ টার্মিনাল থেকে প্রতিদিন ছেড়ে যায় প্রায় সাড়ে ৭ হাজার বাস। প্রতিটি বাস থেকে প্রতিদিন গড়ে ৫৫০ টাকা চাঁদা তোলা হয়। এ হিসাবে মাসে ১২ কোটি টাকার বেশি চাঁদা আদায় করছে পুলিশ ও স্থানীয় চাঁদাবাজরা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ট্রাফিক পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, এটি মিথ্যাচার। ট্রাফিক পুলিশের পক্ষ থেকে মালিক সমিতির কাছ থেকে কেউ টাকা নেয়ার প্রশ্নই ওঠে না। যদি কেউ এর প্রমাণ দিতে পারেন তবে তিনি ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

দুর্নীতির আতুর ঘর ইকুরিয়া বিআরটিএ অফিস কর্মকর্তারা দালালদের উপর নির্ভরশীল

সুমনা আক্তার :

ইকুরিয়া বিআরটিএ অফিসের সকল কর্মকর্তা দালালদের সাথে আতাত করে প্রতিমাসে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন বলে জানা যায়।

সহকারী পরিচালক বক্তিয়ার মেট্রো -২ এর পরীক্ষার্থী ও মালিকানা পরিবর্তন শাখার দায়িত্ব আছেন। তার অধীনে ডাটা বেজ অনলাইনে দরখাস্ত করে পাশ করলেও সকল পরীক্ষার্থীকে বিআরটিএ অফিসে ৩ হাজার টাকা ঘুষ দিতে হয়।সপ্তাহে কম করে হলেও মেট্রো ও জেলা ২ দিন করে পরীক্ষা নেওয়া হয় এবং দিনে ৫ শত পরীক্ষার্থী হলে মেট্রো ও জেলা মিলে প্রতি সপ্তাহে প্রায় ২ হাজার পরীক্ষার্থী অংশ নেন লার্নার কার্ড এর জন্য। তাহলে সপ্তাহে ২ হাজার পরীক্ষার্থীর নিকট থেকে ৩ হাজার টাকা করে ঘুষ নিলে সপ্তাহ শেষে একটি শাখা থেকেই ৬০ লক্ষ টাকা ঘুষ নেওয়া হয় দালাল ইলিয়াস, হোসেন ও সিলমেকার আলী, সিদ্দিকের মাধ্যমে। প্রত্যেকটা লার্নার কার্ড এর জন্য সহকারী পরিদর্শক জাকিরুল্লাহ এর সহযোগি দালাল সুমনকে দিতে হয় ৩ হাজার টাকা।মালিকানা পরিবর্তন ট্রাক/বাস ৫ হাজার টাকা, সিএনজি ২ হাজার টাকা ও মাইক্রো থেকে ১ হাজার ৫ শত টাকা ঘুষ নেন দালাল ওমর, নাসিম ও হায়দার এর মাধ্যমে।

 

এডি মুসা জেলা বোর্ডের সব কাজ করে। দালাল-আমজাদ, মাসুদ,রেজাউল নাম হাজী সাব, মনিরের মাধ্যমে লার্নার পাস হয়। প্রতিটা লার্নার থেকে ১ হাজার ৮ শত টাকা নেন মনির যার ১ হাজার ৫ শত টাকা দেন অফিসকে ও ৩ শত টাকা নেন মনির। মেট্রোর কার্ড বিতরণ করেন রেজাউল এবং তার সাথে ভাতিজা জিসানকে রাখেন এডি মুসার অধীনে। রুম নম্বর-১১৮ নাম্বার প্লেটের জন্য প্রতি কার্ডে ৩-৪ হাজার টাকা নেন কাইয়ুম ও মাজেদ।মেট্রো বোর্ডে কাজ করে দালাল জাকির ও তার সহকারি সুমন, তুষার।প্রতিদিন ৩ শত জন নবায়ন করলে মেট্রো ও জেলা মিলে সপ্তাহে ৪ দিনে ১২ শত জনকে নবায়ন করা হয়। সে হিসেবে একজনের নিকট থেকে ২ হাজার টাকা নিলে সপ্তাহে টাকার পরিমান দাঁড়ায় ২৪ লক্ষ টাকা।

সহকারি পরিচালক মোঃ নাদির ১১৬ – নং রুমে মেট্রো- বোর্ড -২ ফিটনেস এর দায়িত্বে আছেন। তাকে সহযোগিতা করেন সহকারী পরিচালকের ব্যক্তিগত সহকারি হারুন, রনি,সেন্টু, মনিষ, ওমর ও সবুজ। হল সহ মাঠে ছয় জন ৬ হাজার টাকা, যার ১ হাজার টাকা সহকারী পরিচালককে দিতে হয়।
৩য় তলা ৩০৯ নম্বর রুম জেলা মালিকানা বদলি শাখা এনায়েত প্রতিটা সিএনজি থেকে ৩ হাজার টাকা করে ঘুষ নেন দালাল ও সহযোগী ফারুক এর মাধ্যমে।
অনুসন্ধানে আরো জানা যায়,ইকুরিয়া বিআরটিএ অফিসের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী নাইট গার্ড মোঃ শামীম হোসেন ফিটনেস শাখা ১০৭ নম্বর রুমে বসে কম্পিউটারে কাজ করছেন। একজন নাইটগার্ড কি তাহলে দিনে ও রাতে ২৪ ঘন্টায় কাজ করেন? এমন প্রশ্নের সম্মুখীন হওয়ারই কথা। কিন্তু বাস্তব চিত্র ভিন্ন, কেননা নাইটগার্ড শামীম এর স্থানে নাইটগার্ড হিসেবে ডিউটি করছে দৈনিক ৩০০ টাকা মজুরিতে জলিল নামের এক ব্যক্তি । যে লোকটির হাজিরা বা মাসিক বেতন শামীম নিজেই বহন করে থাকেন বলে অনেকের কাছে শোনা যায়। এবিষয়ে সানাউলকে খুদেবার্তা প্রেরন করে কোন মন্তব্য পাওযা যায়নি।

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম