সাত বছর পর লন্ডনে দেখা হচ্ছে মা-ছেলের

স্টাফ রিপোর্টারঃ

নতুন আবহে সাত বছর পর প্রবাসে মা ছেলের ’মহামিলন’ হচ্ছে আজ। লন্ডনে।

বাংলাদেশের অন্যতম জনিপ্রয় রাজনৈতিক দল বিএনপির নেতাকর্মী ও সমর্থকরা এমনটিই মন্তব্য করছেন।  সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ভোরের নীলাভ আলোতে মাইনাস তাপমাত্রা আর ঘন কুয়াশার চাদর ভেদ করে স্থানীয় সময় সকাল ৮টার দিকে (বাংলাদেশ সময় দুপুর ২টায়) হিথ্রো এয়ারপোর্টের ৪ নম্বর টার্মিনালের রানওয়েতে অবতরণ করবেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া।  তাকে গ্রহণ করতে প্রস্তুত লন্ডন অবস্থানরত তার ছেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।  সঙ্গে থাকবেন তারেক রহমানের পুরো পরিবার।

কাতার এয়ারওয়েজের এয়ারবাস এ ৩১৯ নামের বিশেষ ফ্লাইটটি থেকে নেমেই সরাসরি ব্রিটেনের অভিজাত দ্য লন্ডন ক্লিনিকে চিকিৎসা নিতে রওয়ানা দেবেন খালেদা জিয়া। হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স অথবা তারেক রহমানের গাড়িতে করে তিনি হাসপাতালে যাবেন। সেখানে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানোর পর প্রয়োজনে হাসপাতালে ভর্তি হবেন। চিকিৎসকদের অনুমতি পেলে তারেক রহমানের বাসায়ও প্রাথমিকভাবে তার যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। অথবা তিনি এয়ারপোর্ট থেকে নেমেই এই হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য চলে যাবেন।

এদিকে যুক্তরাজ্য বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বিমানবন্দর, তারেক রহমানের বাসা কিংবা হাসপাতালে কোনো ধরনের ভিড় করা যাবে না। যুক্তরাজ্য বিএনপির পক্ষ থেকে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। বিমানবন্দরে শুধু সপরিবারে তারেক রহমান ছাড়া যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালেক, সাধারণ সম্পাদক কয়সর এম আহমেদ ও বিএনপি নেতা কামাল আহমেদ উপস্থিত থাকবেন। তারাই বেগম খালেদা জিয়াকে বরণ করে নেবেন।

এর আগে চোখ ও পায়ের ফলোআপ চিকিৎসার জন্য ২০১৭ সালের ১৫ জুলাই সন্ধ্যায় এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে লন্ডনের উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করেছিলেন বেগম খালেদা জিয়া। সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে তিনি যাত্রাবিরতি করেন। ১৬ জুলাই বাংলাদেশ সময় দুপুর ১২টা ৫০ মিনিটের দিকে খালেদা জিয়া লন্ডনে পৌঁছান।

যুক্তরাজ্য বিএনপি সভাপতি ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এমএ মালেক জানান, আমরা ম্যাডামকে (খালেদা জিয়া) বরণ করতে প্রস্তুত রয়েছি। কিন্তু ম্যাডামের স্বাস্থ্যগত বিষয় চিন্তা করে বিমানবন্দরে যাতে লোকজন জড়ো না হয় সে বিষয়ে সবাইকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সার্বিক বিষয়টি সরাসরি দেখভাল করছেন আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

দোয়া কর্মসূচি 

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার লন্ডনে আগমন উপলক্ষে দোয়া ও মোনাজাত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে যুক্তরাজ্য বিএনপি। এ উপলক্ষে মঙ্গলবার বিকেলে ব্রিটেনের বাংলাদেশি অধ্যুষিত হোয়াইটচ্যাপেলের একটি রেস্তোরাঁর হলরুমে এক প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় খালেদা জিয়ার নিরাপদ যাত্রা ও রোগ মুক্তি কামনা করে সব মসজিদে মসজিদে দোয়া মোনাজাতের কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। যুক্তরাজ্য বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠন এ কর্মসূচি পালন করবে। সভায় অসুস্থ খালেদা জিয়ার জন্য দোয়া করা হয়। সভায় যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এমএ মালেক, সাধারণত সম্পাদক কয়সর এম আহমেদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আবুল হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

‘লন্ডন ক্লিনিক’ যে কারণে বিখ্যাত 

এই হাসপাতালের নিয়মিত রোগীদের তালিকায় আছেন রাজা তৃতীয় চার্লস যার প্রস্টেট চিকিৎসা ২০২৪ সালে এই হাসপাতালে হয়েছে, রাজার পুত্রবধূ ও রাজপুত্র উইলিয়ামের স্ত্রী ক্যাথরিন, রাজা তৃতীয় চার্লসের বাবা প্রিন্স ফিলিপ, চিলির সাবেক স্বৈরশাসক অগাস্টো পিনোচেট, রাজা তৃতীয় চার্লসের বোন প্রিন্সেস মার্গারেট, ডিউক অব উইন্ডসর প্রিন্স এডওয়ার্ড, বিখ্যাত অভিনেত্রী এলিজাবেথ টেইলর, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডিসহ আরো অনেকে। এমনকি সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন ১৯৬৬ সালের ৯ অক্টোবর এই হাসপাতালে জন্মগ্রহণ করেন। অভিজাত এই প্রাইভেট হাসপাতালটি অবস্থিত সেন্ট্রাল লন্ডনের মারলিবর্ন রোডের ডেভনশায়ার প্লেইসে। এটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে ১৯৩২ সালে স্থাপিত হয়। এই হাসপাতালটি ইংল্যান্ডের সবচেয়ে বড় প্রাইভেট হাসপাতাল।

এই হাসপাতালটি এনএইচএস ট্রাস্ট গঠনের আগে শুরু হয়। অত্যাধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা রয়েছে এই হাসপাতালে। এখানে বছরে প্রায় ২ লাখ রোগী চিকিৎসা করিয়ে থাকেন। বিশ্বের সবচেয়ে বড় বড় ডাক্তার, সার্জন এই হাসপাতালে অন কলে চিকিৎসা দিতে আসেন। প্রতিটি রুম অত্যন্ত প্রশস্ত ও আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্পন্ন।

এই হাসপাতালে ১৩টি ইন্টেনসিভ কেয়ার বিছানা, ১০টি অপারেশন থিয়েটার, নিজস্ব প্যাথলজিক্যাল ডিপার্টমেন্ট, ফাইভ স্টার ফ্যাসিলিটির ম্যাকমিলান ক্যান্সার সাপোর্ট সেন্টার, ৭৮০ জন দক্ষ সার্জন ও ফিজিশিয়ান, ১২০০ স্টাফ মেম্বার রয়েছে। ক্যান্সার চিকিৎসার জন্য বিখ্যাত এই হাসপাতালে অর্থোপেডিকস, স্পাইনাল সার্জারি, গ্যাস্ট্রোএন্ট্রালোজি, অপথালমোলজি, ইএনটি, নিউরো সার্জারি, রোবটিক সার্জারি করা হয়।

 

সবা:স:জু- ৬৯৫/২৫

লুটপাট আর টাকা পাচারে কারা এগিয়ে?

সাঈদুর রহমান রিমন:

দেশে লুটপাট আর বিদেশে টাকা পাচারের অপকর্মে কারা বেশি এগিয়ে? দুর্নীতিবাজ আমলা, সর্বগ্রাসী নেতা? নাকি ব্যাংক লুটেরা শিল্পপতি-ব্যবসায়িরা? সাম্প্রতিক সময়ে লুটপাট, অর্থবিত্তের সাম্রাজ্য গড়ে তোলা নিয়ে নানা কাহিনী প্রকাশ হতেই এ প্রশ্ন উঠেছে জনমনে।

আসলে নেতা, আমলা, ব্যবসায়িরা মিলেমিশে এদেশের সরকারি তহবিল, ব্যাংক, বীমা, বাণিজ্য সেক্টরগুলো ফোকলা বানিয়ে বিদেশে পাচার করছেন হাজার হাজার কোটি টাকা। তাদের অনেকেই স্বপ্নের দেশ ইউরোপ আমেরিকায় পেট্রোল পাম্প, বৃহৎ আকারের শপিংমল, এমনকি রিয়েল এস্টেট বাণিজ্যও খুলে বসেছেন। দুবাই ও নিউইয়র্ক শহরে কয়েকশ’ বাঙালি রীতিমত ডাকসাইটের ডেভেলপার বনেছেন, তারাই নির্মাণ করছেন বিশাল বিশাল দৃষ্টিনন্দন ভবন।

প্রজাতন্ত্রের একশ্রেণীর আমলা অনিয়ম, দুর্নীতি, ঘুষ বাণিজ্যের মাধ্যমে দেশে বিদেশে সহায় সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলছেন। অন্যদিকে রাজনীতিকে পুঁজি করে সরকার দলীয় নেতা-পাতি নেতার যতদূর চোখ যায় ততদূর পর্যন্তই দখলবাজি, চাঁদাবাজি, তদবিরবাজি, লুটপাটের মচ্ছব চালাচ্ছেন। শিল্পপতি-ব্যবসায়ি শ্রেণী ফোকলা করছে ব্যাংক-বীমা সেক্টর। এভাবেই রাষ্ট্রের তৃণমূল থেকে শীর্ষ পর্যায় পর্যন্ত সর্বত্রই চলছে বেশুমার লুটপাট। যে যেভাবে পারছে হাতিয়ে নিচ্ছে অর্থবিত্ত।

অতিসম্প্রতি এক অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রথম সারির কেন্দ্রীয় নেতাদের পাশাপাশি
দেশে জনপ্রতিনিধির চেয়ারে বসা চার শতাধিক ব্যক্তিও ইউরোপ আমেরিকার নাগরিকত্ব অর্জন করেছেন। এমনকি থানা পর্যায়ে গঠিত চতুর্থ শ্রেণীর পৌর মেয়রদেরও বেশিরভাগই মালয়েশিয়া নয়তো দুবাইয়ে সেকেন্ড হোম গড়েছেন।

একইভাবে সরকারের দপ্তর, অধিদপ্তরের কর্মকর্তা কর্মচারীদেরও বড় অংশ লুটপাটের মিছিলে শামিল হয়েছে। তারা সরকারি উন্নয়ন প্রকল্প থেকে শুরু করে সরকারের সকল তহবিল থেকে যেমন হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট করছে, তেমনি যে কোনো কাজের ক্ষেত্রে জনসাধারণের পকেট কেটে ঘুষ বাবদও হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা।

আলাদীনের চেরাগ পাওয়ার মতো রাতারাতি অবৈধ টাকার পাহাড় গড়ে তুলছেন তারা, বিত্ত বৈভবের অভাব নেই। দেশে চাহিদামাফিক সব সম্পদ গড়ে তোলার পর তাদের নজর বিদেশে বাড়ি, গাড়ি, সহায়-সম্পদ গড়ে তোলার দিকে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মচারী আফজাল ও তার স্ত্রী শুধু ঘুষ উপহারের টাকায় অষ্ট্রেলিয়ায় সেকেন্ড হোম ও দুবাই’র সারজাহতে থার্ড হোম গড়েছেন। এই দম্পত্তি অবকাশ যাপনের জন্য সর্বশেষ নেপালে গড়ে তোলেন ফোর্থ হোম। এমন ফোর্থ হোম মালিক বনেছেন আরো বহু বাংলাদেশি আমলা, নেতা, ব্যবসায়িরা।

সাম্প্রতিক সময়ে ওয়াশিংটন ভিত্তিক সংস্থা জিএফআইয়ের এক রিপোর্টে বলা হয়, অবৈধভাবে বাংলাদেশ থেকে বিদেশে টাকা পাচার বেড়েই চলছে। গত ১০ বছরেই পাচার হয়েছে ১১ লাখ কোটি টাকারও বেশি।

তবে বাংলাদেশ থেকে টাকা পাচারের বিষয়ে বরাবরই দলীয় নেতাদের নাম পরিচয় প্রচার হয়ে থাকে। সরকারি কর্মকর্তা পর্যায়ের কারো পরিচয় সহসা ফুটে ওঠে না। এ ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন দলের নেতা কর্মিদের বক্তব্য হচ্ছে, টাকা পাচারের বিবরণ ও পাচারকারীদের তালিকা তৈরি করেন সরকারি কর্মকর্তারা। তারা শুধু লুটেরা নেতাদের নাম পরিচয় তালিকাভুক্ত করে তা সরকারের উচ্চ পর্যায়ে পাঠিয়ে থাকেন। এ কারণে অনুসন্ধান ও তদন্ত প্রতিবেদনে লুটেরা কর্মকর্তাদের তালিকা থাকে না বললেই চলে।

সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন এর আগে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) আয়োজিত মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, রাজনীতিবিদেরা নন, বিদেশে বেশি অর্থ পাচার করেন সরকারি চাকুরেরা। পাশাপাশি শিল্পপতি, ব্যাংক মালিকানায় যুক্ত ব্যক্তিবর্গ এবং বেশ কিছু ব্যবসায়ির নামও আছে এ তালিকায়।

দেশের টাকা পাচার হয় যেভাবে
——–

টাকা পাচার ও কালো টাকার বিষয়াদি নিয়ে অর্থ-বাণিজ্য বিটের অভিজ্ঞ সাংবাদিকরা হয়তো বিশদ বর্ণনা দিতে পারবেন, তবে সীমিত জানা বুঝা একজন সংবাদকর্মি হিসেবে নিজের মতো করেই তুলে ধরার চেষ্টা এটা। টাকা পাচারের মাধ্যমেই দেশকে আর্থিকভাবে অচল করে দেওয়া হচ্ছে, পঙ্গু বানানো হচ্ছে। এই যে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয় তারা কি ব্যাগ ভরে টাকা নিয়ে যায়? না, পাচারকারীরা বিভিন্ন কায়দায় ব্যাংক এর মাধ্যমেই সিংহভাগ টাকা বিদেশে পাঠায়। এই কাজটি সরকারকে ফাঁকি দিয়ে করা যায় না। সরকারকে জানিয়েই করে। দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা এটা না ঠেকিয়ে, উল্টো সহায়তা করে।

বাংলাদেশ থেকে প্রধান দুটি উপায়ে অর্থ পাচার হয়ে যায়। একটা হল আমাদানি অন্যটা রপ্তানি। পণ্য আমদানির সময় কাগজপত্রে বেশি দাম উল্লেখ করে টাকা পাচার হয়, আবার পণ্য রপ্তানি করার সময়ও কাগজপত্রে কম দাম দেখিয়ে পাচার হয় টাকা। বিদেশে কাড়ি কাড়ি টাকা পাচারের প্রথাসিদ্ধ হুন্ডির পথ তো আছেই।

‘হুন্ডি কারবারিরা’ আগে বাসাবাড়িতে গিয়ে গিয়ে নগদ টাকা পৌঁছে দিত। এখন যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে তারা গ্রাহকের এমএফএস হিসাবের মাধ্যমে টাকা পৌঁছে দিচ্ছে। এই ব্যবস্থাকে ডিজিটাল হুন্ডি বলা যেতে পারে। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) সম্প্রতি বলেছে, বিকাশ-নগদ ও রকেটের মতো মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা (এমএফএস) প্রতিষ্ঠানগুলোর অন্তত পাঁচ হাজার এজেন্ট অবৈধ উপায়ে বিদেশ থেকে অর্থ আনা ও বিদেশে অর্থ পাঠানোয় জড়িত। তাদের মাধ্যমে চার মাসেই প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকার প্রবাসী আয় (রেমিট্যান্স) বিতরণ হয়েছে। এভাবে দেশ বছরে অন্তত ৭৫ হাজার কোটি টাকার রেমিট্যান্স থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। কারা এসব এমএফএস এজেন্টদের টাকা দিচ্ছে। তাদের থামাতে পারলেই বন্ধ হবে হুন্ডি। তারাই মূলত অর্থ পাচারকারী।

অর্থ পাচার ঠেকাতে সব ধরনের লেনদেনের ওপর নিবিড় তদারকি জোরদার করা সবচেয়ে বেশি জরুরি। এ ব্যাপারে মূল দায়িত্ব হচ্ছে অর্থ পাচার রোধে কাজ করা বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) এর। এখন দেখা দরকার ওই ইন্টেলিজেন্স ইউনিটে কর্মরতরা অর্থবিত্তে কেমন ফেঁপে উঠেছেন। তা থেকে সর্বনাশের পরিমাণ বুঝে নেওয়া আরো সহজ হবে।

আর ফিরে না কালোটাকা
——–
সুযোগ দিলে কালোটাকা মূলধারায় ফিরে আসে এমন কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্য বা গবেষণা নেই। এখন পর্যন্ত কালোটাকা বিনিয়োগ জমি, বাড়ি ও ফ্ল্যাট কেনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। তবে কালোটাকার গন্তব্য মূলত অন্য দেশ। সুইস ব্যাংকে জমা হয় কিছু অংশ, কানাডা বা যুক্তরাষ্ট্র অথবা অন্য কোনো ‘ট্যাক্স হেভেন’ নামের পরিচিত দেশে কোম্পানি গঠন বা সম্পত্তি কেনা হয়।

যেমন আলোচিত সিকদার গ্রুপ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, থাইল্যান্ড, আবুধাবি ও সিঙ্গাপুরে বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করেছে। কালোটাকা দিয়ে সিঙ্গাপুরে পাঁচ তারকা হোটেল বা বাণিজ্যিক জায়গা কেনার উদাহরণও আছে। মূল কথা হলো কালোটাকা দেশে থাকে কম, পাচার হয় বেশি।

স্বাধীনতার পর থেকে এ কালোটাকা সাদা করার জন্য অসংখ্য বার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু জরিমানাসহ বড়জোর ২৫/২৬ হাজার কোটি টাকা সাদা করা হয়েছে। তাহলে বিপুল পরিমাণ কালোটাকা কোথায় যায়? কালো টাকায় এখন দুবাই, মালয়েশিয়া এমনকি আমেরিকাতে ব্যবসা বাণিজ্য গড়ে তোলা যাচ্ছে। বিনিয়োগ হচ্ছে কানাডাতেও। তবে কালো টাকার বড় একটি অংশ জমা হয় সুইস ব্যাংকে। দেশে বক্তৃতা বিবৃতিতেও বিষয়টি বারবার তুলে ধরা হয়। কিন্তু এটা বন্ধ করা যাচ্ছে না কোনভাবেই।

ভারত এরইমধ্যে সুইস ব্যাংকে কালো টাকা জমা করার দৌরাত্ম্য নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়েছে। কিভাবে? সুইস ব্যাংকের সঙ্গে স্বয়ংক্রিয় তথ্য বিনিময় কাঠামো নামের একটি চুক্তি ভারত করেছে ২০১৬ সালে। এর প্রেক্ষিতে ২০১৯ সাল থেকে যাবতীয় তথ্যও পাচ্ছে দেশটি। ফলে ওই দেশের নাগরিকদের কেউ সুইস ব্যাংকে গোপনে অর্থ জমা করলেই তাদের তথ্য সরকারের কাছে চলে যাওয়ায় বেশ বিপাকে পড়েন তারা। ফলে ব্যাংকটিতে কালোটাকা জমার পরিমাণ আশাতীত ভাবে কমেছে। কিন্তু বাংলাদেশ অজ্ঞাত কারণে সুইস ব্যাংকের সঙ্গে স্বয়ংক্রিয় তথ্য বিনিময় কাঠামোর চুক্তিটি করেনি, করছে না।

দেশদ্রোহী লুটেরাদের শ্বেতপত্র হোক
——–
রাতারাতি শত শত কোটি টাকার মালিক বনে যাওয়া লুটেরা দুর্নীতিবাজরাই গিলে খাচ্ছে সোনার বাংলাদেশ। তারাই পাচার করছে দেশের কোটি কোটি টাকা।
ইউরোপ-আমেরিকা-দুবাই-কানাডায় গড়ে তুলেছে সেকেন্ড হোম, থার্ড হোম, ফোর্থ হোম। অতিদ্রুত এ লুটেরাদের ‘দেশদ্রোহী‘ ঘোষণা দিয়ে রাষ্ট্রীয়ভাবেই প্রকাশ করা হোক ‘শ্বেতপত্র’।

লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক
==========

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম