তারিখ লোড হচ্ছে...

বিআইডব্লিউটিএ দুর্নীতি সংবাদ প্রকাশ করায় কন্ঠরোধের অপচেষ্টা!

স্টাফ রিপোর্টার:

৫ আগস্টের পট পরিবর্তনের পর দেশের গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে ঘাপটি মেরে থাকা দুর্নীতিবাজ, সাবেক স্বৈরশাসকের দোসররা গণমাধ্যমের টুটি চেপে ধরার জন্য এখনো কাজ করে চলেছে। তৎকালীন পতিত স্বৈরাচারী সরকারের হয়ে কাজ করতে দেখা যেত দেশের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার অতি উৎসাহী কিছু কর্মকর্তার। পতিত আওয়ামী সরকারের স্বৈরাচারী হয়ে উঠার পেছনে তাদের অবদান কোন অংশেই কম নই বলে অনেক বিশিষ্টজনেরা মনে করেন। যার ধারাবাহিকতা এখনো চলমান আছে। সে সময় দেখা যেত সরকারি দপ্তরগুলোর দুর্নীতি, কুকর্ম সম্পর্কিত কোন তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে অথবা সংবাদ প্রকাশিত হলে সরাসরি হস্তক্ষেপ করা হতো তাদের পক্ষ থেকে। বাধ্য হয়ে জীবন বাঁচানোর তাগিদে বেশিরভাগ সাংবাদিককে হয় গোপনে দেশ ত্যাগ করতে হতো অথবা সংবাদ প্রকাশে বিরত থাকতে হতো। ওই আমলে সাগর-রুনিসহ বেশ কয়েকজন সাংবাদিককে দুনিয়া ছেড়ে বিদায়ও নিতে হয়েছে। সে সময়ের জনপ্রিয় জাতীয় পত্রিকা আমার দেশ, চ্যানেল ওয়ান, দিগন্ত টিভিও বন্ধ করে দেয়া হয়। এছাড়াও নাম না জানা অসংখ্য সংবাদকর্মী হামলা মামলার শিকার হয়ে আজ অবধি মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এখন পর্যন্ত বেশিরভাগ দপ্তরে সাবেক স্বৈরশাসকের লোকেরাই বহালতবিয়তে আছে। যে কারণে কোন না কোনভাবে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বা বিপ্লবী মনা সরকারের বেশিরভাগ কর্মকর্তা কর্মচারীরা তাদের কাছে কোনঠাসা অবস্থায় আছে। সে সুযোগে দুর্নীতির গতি আরো বাড়িয়ে দিয়েছে তারা। কোনক্রমেই থামানো যাচ্ছেনা তাদের। অনেকে আবার একই পদে একই দপ্তরে ব্যক্তি স্বার্থ হাসিলের লক্ষ্যে বছরের পর বছর থাকার কারনে পুরো অফিসকে নিজের পৈতৃক সম্পত্তি মনে করে ইচ্ছেমত লুটপাট করে খাচ্ছেন । এমনও কথা শোনা যাচ্ছে, এই দপ্তর, পদ ঠিক রাখা ও পদোন্নতি পাওয়ার লক্ষ্যে কোটি কোটি টাকা লগ্নিও করেছেন তারা। শত অপরাধের পরও ইতিমধ্যে অনেকেরই শাস্তির বদলে পদোন্নতিও হয়েছে। দেশে যে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর আছে তার মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর হলো বিআইডব্লিউটিএ। দৈনিক সকালের সময়ে বিআইডব্লিউটিএ’র দুর্নীতি নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশের জের ধরে ইতিমধ্যে সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থার উর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা (নামটা গোপন রাখা হলো) সংবাদ প্রকাশ না করার জন্য প্রতিবেদক ও সম্পাদককে হুমকি, ধামকি অব্যহত রাখছেন। বিশিষ্টজনেরা মনে করেন, গত স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার পতনের অন্যতম কারণই হলো সংবাদ মাধ্যমেের কন্ঠরোধ করে সমাজের দুর্নীতি ও অনিয়ম সম্পর্কে জনগণকে জানতে না দেওয়া এবং ততকালীন সরকারের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টির বাহিরে রাখা। সে সময় জনগণকে ধোকা দিয়ে বোকা বানানোর চেষ্টা আওয়ামিলীগকে আজ নিশ্চিহ্ন করার পথকে সুগম করেছে। তারই ধারাবাহিকতায় সে সময়ের পতিত স্বৈরাচারী আওয়ামী দোসররা বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বিপদে ফেলতে ও প্রশ্নবিদ্ধ করতে তাদের মত করে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে বিআইডব্লিউটিএতে দুর্নীতি নিয়ে আরিফ ও সাইদুর রহমানের বিরুদ্ধে গত ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ পর্ব-১, ডিসেম্বরের ১ তারিখে পর্ব-২, ৫ তারিখে পর্ব-৩, ডিসেম্বরের ৮ তারিখে পর্ব-৪, ও ৫ জানুয়ারী ২০২৫ পর্ব-৫ প্রকাশিত হয়। তারই সুত্র ধরে প্রতিবেদক, সম্পাদক ও অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আছে চরম হুমকিতে।
শুধু তাই নয়, তাদের বিপক্ষে যারা দুর্নীতির খবর প্রকাশ করছে- তাদের (মিডিয়া) ক্ন্ঠ রোধ করার জন্য সরকারী একটি গোয়েন্দা সংস্থাকে ব্যবহার করছে।

একেএম আরিফ উদ্দিন:
অভিযোগের অন্ত নেই। বিআইডাব্লিউটিএ-র সাবেক যুগ্ম-পরিচালক, বর্তমান পরিচালক (বন্দর) এ.কে.এম.আরিফ উদ্দীন ওরফে আরিফ হাসনাতের বিরুদ্ধে। গত ২৮-০৮-২৪ বুধবার মোঃ জাকির হোসেন নামক জনৈক ব্যক্তি বাদী হয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন বরাবর অভিযোগ দাখিল করেন। অভিযোগে উল্লেখ করেন এ.কে.এম.আরিফ উদ্দিন ওরফে আরিফ হাসনাত, পিতা-করিম হাজি, গ্রাম-রায়পুরা, থানা-সুজানগর, জেলা-পাবনা। বর্তমানে, অতিরিক্ত পরিচালক বন্দর ও পরিবহন শাখা।
অতিরিক্ত পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ল্যান্ড এ্যান্ড এস্টেট বিআইডব্লিউটিএ প্রধান কার্যালয়, ঢাকা। সে গত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ক্ষমতার অপব্যবহার করে ঘুষ দুর্নীতি ও সেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা মূল্যের সম্পদ অর্জন করেন। এছাড়াও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থ আওয়ামীলীগের এজেন্ডা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ছাত্রদের কোটাবিরোধী আন্দোলনে ব্যবহার করেছে। যা সঠিকভাবে তদন্ত করলে বের হয়ে আসবে। নিম্নে তার সম্পদের সামান্য কিছু বিবরণ তুলে ধরা হলো-

১. নারায়নগঞ্জ পোর্টে ৪ বছর চাকুরি করে ২০০ কোটি টাকা সম্পদ অর্জন।
২. স্ত্রীর নামে কর্ণফুলি শিপইয়ার্ড নারায়নগঞ্জের শেয়ার রয়েছে।
৩. স্ত্রীর নামে নারায়ণগঞ্জ পোর্টে রয়েছে ডকইয়ার্ড।
৪. সদরঘাট পোর্টে চাকুরিকালীন সময়ে কয়েকশো কোটি টাকা লোপাট।
৫. দুই স্ত্রীর নামে রয়েছে এলিফ্যান্ট রোডে ৫ তলা কমার্শিয়াল বিল্ডিং, বসুন্ধরায় জমি, ফ্ল্যাটসহ শত কোটি টাকার সম্পদ। ভাইয়ের নামে বিপুল সম্পদ।
৬. ঢাকার নদী উদ্ধারের নামে কয়েকশো কোটি টাকা ঘুষ নেয়ার অভিযোগ।

৭. দুই স্ত্রী ছাড়াও অসংখ্য গার্লফেন্ড।

৮. ব্রিটেনে বাড়ি এবং বিপুল অর্থ পাচার করেছে।

৯. কয়েক হাজার কোটি টাকার মালিক।

১০. ছেলে-মেয়েদের লন্ডনে পড়াশোনার পিছনে বছরে কোটি টাকা খরচ করে।

১১. পাবনা সদর, স্কয়ার রোড, শালগাড়িয়া, পাবনাতে ৬ তলা বাড়ি।
১২. পাবনা সদর, কাচারী পাড়ায় ৫ তলা বাড়ি।
১৩. পাবনা সদর, সাধুপাড়ায় ৪ তলা বাড়ি।
১৪. আলিশান বাড়ি ক্রয়: মালিকের নাম নাদিরা, বাড়ি নং ৩৭,রোড নং -৪, ব্লক-সি, ওয়ার্ড -৩০, মনসুরাবাদ হাউজিং মোহাম্মদপুর, ঢাকা।

১৫. ফ্ল্যাট নং- ৪৭/৫৫
রোড- ২/এ
ব্লক- সি, ৩৬০০ স্কয়ার ফিট।
বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা, ঢাকা, বর্তমান এখানে বসবাস করছেন।
১৬. বাড়ি নং ৩০১, মুল্য ২২ কোটি টাকা। এলিফেন্ট রোড, ঢাকা। এই বাড়িটি স্ত্রীর নাম ক্রয় করেছেন।

১৭. বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় একটি বিল্ডিং এ ৮ টি ফ্ল্যাট ক্রয় করেছেন। ব্লকঃ বি-হোল্ডিং নং-৪৭,৪৮,৫২,৪১।

১৮. নিজ জেলা পাবনা সুজা নগর মৌজা-বনখোলা,ঘেতুপাড়া, রামপুর, হাটখালি, খেতুপাড়া এলাকায় জমি কিনেছেন প্রায় ২০০ বিঘা।
১৯. তিনি যেখানে অফিস করেন সেখানে তিনটি রুম ডেকোরেশন করে এসি লাগিয়েছেন। খরচ করেছেন ২৪/২৫ লক্ষ টাকা। অথচ: সেখানে তিনি বসেন না।
এছাড়াও ঢাকার নদী সংলগ্ন বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দাদের স্থাপনা উচ্ছেদের ভয়ভীতি দেখিয়ে হাজার কোটি টাকা আয় করেন আরিফ হাসনাত।

সাইদুর রহমান:
অপরদিকে, সাইদুর রহমান সাবেক অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ড্রেজিং বিভাগ, বর্তমান উপ-প্রধান প্রকৌশলী বিআইডব্লিউটিএ ঢাকা, ড্রেজিং বিভাগ। তার বিরুদ্ধে কোন এক অদৃশ্য কারনে নিরব ভূমিকা পালন করছে কর্তৃপক্ষ। যা নিয়ে জনমনে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন? কেন টনক নড়ছেনা কর্তৃপক্ষের। সরকারের কোটি কোটি টাকা মেরে এখনো কিভাবে বহাল তবিয়তে থাকতে পারে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা। এ জন্যই কি ৫ আগষ্ট হয়েছিলো। শত শত মানুষ কেনইবা শহীদ হয়েছিলো আর কেনইবা হাজার হাজার মানুষ আহতসহ জেল জুলুমের শিকার হয়েছিলো। দপ্তরটিতে এ নিয়ে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। অভিযোগ আছে, ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকারের অন্যতম ঘনিষ্ঠ সহযোগী বঙ্গবন্ধু পরিষদের সহ-সভাপতি বিআইডব্লিউটিএর ড্রেজিং বিভাগের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী সাইদুরের নেতৃত্বে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট গত ১৫ বছর যাবৎ দুর্নীতির স্বর্গরাজ্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। জানা গেছে, এই চক্রের সিন্ডিকেট ভেংগে দেশকে দুর্নীতি মুক্ত করার জন্য অন্তর্বর্তীকালিন সরকারের প্রচেষ্টা বিফলের সর্বাত্মক চক্রান্তে লিপ্ত রয়েছে তারা। ইতিমধ্যে দৈনিক সকালের সময়ে বিআইডব্লিউটিএর কিছু দুর্নীতিবাজ অসাধু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে রিপোর্ট করায় মোটা অংকের অর্থ লগ্নি করে নামধারী কয়েকটি পত্রিকায় তাদের পক্ষে সংবাদ পরিবেশন করতে দেখা যাচ্ছে। যা নিয়ে দপ্তরটিতে দেখা দিয়েছে নানা মুখরোচক আলোচনা। অত্র দপ্তরে কর্মরত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা কর্মচারীদের দাবি নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা যেন এই সিন্ডিকেটকে জবাবদিহিতার আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকারের ঘনিষ্ঠ সহযোগী, দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা বঙ্গবন্ধু পরিষদের সহ-সভাপতি হিসাবে পরিচিত বিআইডব্লিউটিএর অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (ড্রেজিং) সাইদুর রহমান দীর্ঘ ১২ বছর যাবত একই স্থানে থাকায় এখনো ড্রেজিং বিভাগের হাজার হাজার কোটি টাকা প্রকল্পের কাজসহ গুরুত্বপূর্ণ কাজের দায়িত্বে বহাল তবিয়তে আছেন। সরকারী চাকরি বিধি অনুযায়ী এক‌ই স্থানে ৩ বছরের অধিক সময় থাকার কোন নিয়ম না থাকলেও তিনি বছরের পর বছর বহাল তবিয়তেই আছেন। জানা গেছে ঘাপটি মেরে থাকা সাবেক স্বৈরশাসকের বেশ কিছু দোসর ও দপ্তর সংশ্লিষ্ট কতিপয় অসাধু উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের যোগসাজশে আওয়ামী সরকারের অবৈধ ক্ষমতার অপব্যবহার করে সাইদুরের দুর্নীতির অভিযোগ ধামাচাপা দিয়ে রেখেছিলেন। তবে বিধি বাম, গত ৫ জুলাই ছাত্র আন্দোলনে স্বৈরাচারি আওয়ামী সরকারের পতন হওয়ায় বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় আসার কারণে এখন আর আগের মতো বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাগনকে যেমন খুশি তেমন করে বুঝাতে পারছেনা তারা। যে কারণে তাদের মধ্যে অস্থিরতা বিরাজ করছে। এমনও শোনা যাচ্ছে, কর্তৃপক্ষের কোন জবাব দিহিতার মুখোমুখি হওয়ার আগেই দেশ ত্যাগ করারও সম্ভাবনা আছে অনেকের।
সুত্র বলছে, এই সিন্ডিকেটের কাছেই ড্রেজিংয়ের কাজ না করা একাধিক প্রকল্পের ঘুষ বানিজ্যের শত শত কোটি টাকা গোপনে রক্ষিত আছে। অবৈধ টাকার জোরে ফ্যাসিবাদী সরকারের ঘনিষ্ঠ সহযোগী এই কর্মকর্তারা বিআইডব্লিউটিএর সাধারণ কর্মকর্তা -কর্মচারীদের জিম্মি করে রেখেছে বলে অভিযোগ আছে। এমনও অভিযোগ আছে, এদের বিরুদ্ধে কোন কর্মকর্তা -কর্মচারী প্রতিবাদ করলে তাদেরকে চাকুরি হারাতে হয় অথবা বাহিরের মাস্তান বাহিনী দিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে মারপিট করে বিভিন্নভাবে হয়রানি করা হয়। বিআইডব্লিউটিএর নিরীহ কর্মকর্তা -কর্মচারীরা সাবেক স্বৈরশাসকের দোসরদের হাত থেকে মুক্তি পেতে চায়। সাধারণ কর্মকর্তা কর্মচারীদের দাবি বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারই পারবে নিরীহ কর্মকর্তা -কর্মচারীদের বাস্তব সম্মত রুজি রোজগার করার জায়গাটা রক্ষা করতে। সুত্রে জানা গেছে, সাইদুর নিজ পরিবার ও সন্তানদের শপিং ও স্কুলে যাতায়াত করার জন্য একটি পাজেরো জিপ গাড়ি এবং নিজে অফিসে যাতায়াত করার জন্য আলাদা একটি পাজেরো জিপ গাড়ী ব্যবহার করেন। এমনও অভিযোগ আছে, অধিনস্ত পিডিদের ভয়ভীতি দেখিয়ে নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করেই অবৈধভাবে বিভিন্ন প্রকল্পের এ গাড়ি ব্যবহার করে্ন তিনি। একাধিক ভুক্তভোগীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, সাইদুর বিআইডব্লিউটিএ অফিসার্স ক্লাবের বিনাভোটের সভাপতি।
জানা গেছে, সাইদুরের চাকরি জীবন শুরু হয়েছিলো এলজিইডিতে। সেখানে দুর্নীতির কারণে এলজিইডি কর্তৃপক্ষ চাকুরি হতে বরখাস্ত করে। পরবর্তীতে আবারও তথ্য গোপন করে ২০০৩ সালে পুনরায় বিআইডব্লিউটিএতে চাকুরিতে যোগদানের অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। শোনা যায়, তার এইচএসসি এবং ইঞ্জিনিয়ারিং সার্টিফিকেট জাল। দপ্তরটির ততকালীন উর্ধতন কর্মকর্তা, বিআইডব্লিউটিএর পরিচালক ওয়াকিল ন‌ওয়াজ এবং বিষয়টি যাতে কেউ না জানে এমন কিছু সাংবাদিকদের ম্যানেজ করে তিনি চাকুরিতে অদ্যবধি বহাল আছেন।
ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকারের ঘনিষ্ঠ সহযোগী দীর্ঘ প্রায় ১৬ বছর যাবত এক‌ই স্থানে কর্মরত থেকে সিন্ডিকেট করে টেন্ডার, নিয়োগ, বদলি বাণিজ্যসহ ড্রেজিং কাজে নানারকম অনিয়ম দুর্নীতি করে শত শত কোটি টাকা আত্মসাৎ কারী বিআইডব্লিউটিএর ড্রেজিং বিভাগের দুর্নীতি বাজ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অনতিবিলম্বে বদলি/অপসারণের ব্যবস্থা নেয়ার জন্য কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন জানিয়েছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা কর্মচারীদের দাবি বিআইডব্লিউটিএর উচ্চ পদস্থ কিছু অসাধু কর্মকর্তা এই চিহ্নিত দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের পৃষ্ঠপোষকতা এখনো চলমান রেখেছেন। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ঘোষিত দুর্নীতি দমনে জিরো টলারেন্স নীতি বাস্তবায়নে বিআইডব্লিউটিএ’র যে ক’জন দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা থোড়াই কেয়ার করছেন- তাদেরই একজন ড্রেজিং শাখার অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. সাইদুর রহমান। একই শাখার ট্রুথ কমিশনে আত্মস্বীকৃত দুর্নীতিবাজ চারজন নির্বাহী প্রকৌশলী ও তাদের পরিবারবর্গ সাইদুর রহমানের ছত্রচ্ছায়ায় বহাল তবিয়তে আছেন বলে জানা গেছে। এমনকি তার সহযোগিতায় অনেকেই পদোন্নতিসহ দেদারসে ঘুষ বাণিজ্য এবং ক্ষমতার অপব্যবহারসহ সব ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতির সাথে সম্পৃক্ত আছেন বলেও জনশ্রুতি আছে। শুধু তাই নয়, এই সংঘবদ্ধ চক্র বিভিন্ন প্রকল্পের শত শত কোটি টাকা আত্নসাৎ করে নিজেদের নামে-বেনামে বাড়ি-ফ্ল্যাট, মার্কেট, গাড়ির শো-রুমসহ প্রচুর ধন সম্পদের মালিক বনে গেছেন। প্রত্যেকেই বিআইডব্লিউটিএ’তে টাকার মেশিন হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন। তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে দুদকে মামলা চলমান। শোনা যাচ্ছে, দুদকের কিছু অসাধু কর্মকর্তা তাদের কাছ থেকে মোটা অংকের ঘুষ নিয়ে অভিযুক্তদের সম্পদ বিবরণী এবং বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে জ্ঞাত আয়ের সঠিক হিসাব না পাওয়ার কথা বলে মামলাগুলো ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছেন বা আমলে না নিয়ে ধামাচাপা দিয়ে যাচ্ছেন। অন্যদিকে, অভিযুক্তরা দুদকের অনুসন্ধানী টিমকে চ্যালেঞ্জ এবং বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে মামলা থেকে রক্ষা পেতে বিভিন্ন তদবিরে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন বলেও জানা যাচ্ছে। আবার তারা এটাও বলে বেড়াচ্ছেন যে, দুদকের অনুসন্ধানী টিমকে তাদের সম্পদের হিসাব বিবরণী জমা দিয়েছেন। কিন্তু কোন এক অদৃশ্য কারনে দুদক মামলা গুলো শেষ করতে গড়িমসি করছে যা নিয়ে আছে ব্যপক আলোচনা সমালোচনা। দুদকের অনুসন্ধান টিমের একজন কর্মকর্তা বলেন,অভিযুক্ত আসামীরা তাদের সম্পদ এবং জ্ঞাত আয়ের যে তথ্য দিয়েছেন তাতে অনেক গড়মিল পাওয়া গেছে। অনেকেই নিজেদের পৈত্রিক অবস্থার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন যে, তাদের পারিবারিক অবস্থা আগ থেকেই স্বচ্ছল। এমন তথ্যই বেশি দিয়েছেন তারা। কিন্তু অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসছে তাদের ভয়াবহ দুর্নীতির চিত্র। দুদকের ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, আসামীরা অধিকাংশ সম্পদ এবং ব্যাংক ব্যালেন্স নিজের নামে না করে বেনামে করেছেন। কেউ আবার তার কোন আত্নীয় দেশের বাইরে থাকলে তাদের নামে সম্পদ এবং ব্যাংক একাউন্টে টাকা রেখেছেন। সেক্ষেত্রে দুর্নীতিবাজরা তাদের সাথে আলাদা কোন ডকুমেন্ট করে নিজেদের সম্পদ রক্ষা করার চেষ্টা করছেন। অনুসন্ধানে জানা যায়, বিআইডব্লিউটিএ’র ড্রেজিং শাখার অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী সাইদুর রহমান দুদকের মামলা থেকে দায়মুক্তি পেতে মরিয়া হয়ে উঠছেন। তার বিরুদ্ধে ১৩৪ কোটি টাকার আত্মসাতের অনুসন্ধানটি ধামাচাপা দিয়ে মামলা থেকে অব্যহতি পেতে মোটা অংকের টাকাও খরচ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তিনি মামলা থেকে রেহাই পেতে নানা কৌশল অবলম্বন করেছেন। বিশেষ করে ভোগাই ও কংস নদ খননের নামে টাকা আত্নসাতের অনুসন্ধান এবং রেকর্ডপত্র স্থগিত করার জন্য জোর চেষ্টা চালিয়েছেন সাইদুর। এজন্য তিনি দুদকের অনুসন্ধানী টিমকে ম্যানেজ করার জন্য নানাভাবে প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। সূত্রমতে, বিআইডব্লিউটিএ’র ড্রেজিং বিভাগের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী সাইদুর রহমান বিআইডব্লিউটিএ’র ১৩৪ কোটি টাকা আত্নসাতের মাস্টারমাইন্ড ছিলেন। দুদকের অনুসন্ধানী টিমের অনুসন্ধানে সঠিক এ তথ্য বেরিয়ে আসছে বলেও জনশ্রুতি আছে। প্রাপ্ত রেকর্ডপত্র যাচাই বাছাই, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিক, কাজের দায়িত্বে থাকা দুই নির্বাহী প্রকৌশলী ও মাঠ পর্যায়ের প্রকৌশলীকে জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে দুদকের অনুসন্ধানী টিম অনুসন্ধান করে সাইদুর রহমানের ভয়াবহ দুর্নীতির চিত্র পেয়েছে। তবে এ বিষয়ে তদন্ত কর্মকর্তারা মুখ খুলতে চাননা। অজ্ঞাত কারণে মামলাটির কার্যক্রম থেমে আছে। যে কারণে সাইদুর রহমানের সম্পদ বিবরণীর যাচাই বাছাইয়ের কাজ এখনো শেষ হয়নি। শুধু চিঠি ইস্যুর মধ্যেই সময় ক্ষেপণ করা হচ্ছে। একের পর এক তদন্ত কর্মকর্তা বদল করা হচ্ছে। দুদক শেষ পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিবেনা এবং মামলা থেকে অব্যহতি পাবেন এই আত্মবিশ্বাসে বিআইডব্লিউটিএ’র অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী সাইদুর রহমান বেপরোয়া হয়ে উঠছেন। তিনি একক আধিপত্য বিস্তার করছেন ড্রেজিং বিভাগে। তার ঈশারায় চলছে ড্রেজিং বিভাগের সব টেন্ডার বাণিজ্য। তার সিন্ডিকেট এতোই শক্তিশালী যে, সেখানে নির্ধারিত ঠিকাদার ছাড়া অন্য ঠিকাদার কাজ পাওয়ার সুযোগ নেই। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০২০ সালে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী সাইদুর রহমান, তার স্ত্রী শামিমা আক্তার এবং বিআইডব্লিউটিএ’র উপ-পরিচালক (প্রশাসন) মো. সিরাজুল ইসলাম ভুঁইয়ার সম্পদ বিবরণী চাওয়া হয়। চার বছরেও তাদের হিসেব বিবরণীর কাজ শেষ হয়নি। মামলা থেকে দায়মুক্তি প্রদানের অদৃশ্য ইঙ্গিত থাকায় দুদক সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ সাইদূর রহমানুষের মামলার তারিখ দীর্ঘ সময় দিয়ে কালক্ষেপণ করছেন। আবার তারিখ পড়লেও বেশি মামলা থাকায় তার শুনানি হয়না। এমন সব অযুহাতে ঝুলে আছে সাইদুর রহমানের মামলার তদন্ত কার্যক্রম। অপর একটি সুত্রমতে, সাইদুর রহমান ও তার স্ত্রী শামিমা আক্তার তাদের সম্পদের হিসাব বিবরণী দিয়েছেন। সেগুলো যাচাই বাছাই চলছে। তবে সাইদুর রহমান উত্তরাধিকার সূত্রে বিপুল সম্পদের মালিক দেখিয়েছেন বিষয়টি দুদকের অনুসন্ধানে মিথ্যা ও জালিয়াতি হিসাবে ধরা পড়েছে। তিনি দুদকের দায়ের করা মামলা থেকে বাঁচতে ২০১৭ সালে তার জীবিত বাবাকে মৃত দাবি করেন। তিনি জীবিত পিতাকে মৃত দেখিয়ে উত্তরাধিকার সূত্রে বাবার সম্পদের মালিক দাবি করেছিলেন। তার এই মিথ্যা অপকৌশল এবং জঘন্য অপরাধ শুধু নিজে ভালো থাকার জন্য বেছে নিয়েছিলেন। তার বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ আছে বিআইডব্লিউটিএ-র নদী খনন প্রকল্পে কাজ না করে অর্থ লোপাটের। যেখানকার মাটি রয়েছে সেখানেই। খনন হয়নি নদী। বরং বালু ও পলির প্রলেপে ভরাট হয়ে গেছে নদীর পেট। স্থানীয়দের দাবি কোনো উপকারেই আসেনি প্রকল্পটি। অথচ ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের বরাদ্দের টাকা গেছে প্রকৌশলী ঠিকাদার ও বালুদস্যুদের পেটে। নিজেরাই ভাগাভাগি করে নিয়েছেন প্রকল্পের নামে বরাদ্দ হওয়া ১৩৪ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। বলা চলে নদী খননে হয়েছে সাগর চুরি। আর বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)-এর এই দুর্নীতির সঙ্গে যুক্তদের দায়মুক্তি দিতে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কর্মকর্তারা মরিয়া। তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) নেত্রকোণার কংস ও ভোগাই নদীর ১৫৫ কিলোমিটার খনন প্রকল্প হাতে নেয়। ম্যাকানিজম করে এ কার্যাদেশ পায় ৫টি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। বসুন্ধরা ইনফ্রাস্টাকচার ডেভলপমেন্ট লি:, সোনালী ড্রেজার লি: বিডিএল-এসআরডিসি (জেবি), এস এস রহমান, মাতৃবাংলা (জেবি) ও নবারুন ট্রেডার্স লি:। টেন্ডারের অনুযায়ী, নদী দু’টির প্রশস্ত ৮০ থেকে ১০০ ফুট। শর্ত ছিল, ড্রেজিংয়ের পর গভীরতা অনুসারে শঙ্ক মৌসুমে নদীতে ৮ থেকে ১০ মিটার পানি থাকতে হবে।
অভ্যন্তরীণ নৌ-পথের ৫৩টি রুটে ক্যাপিটাল ড্রেজিং (১ম পর্যায়ে ২৪টি নৌ-পথ) শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ভোগাই এবং কংস নদীর মোহনগঞ্জ থেকে নালিতাবাড়ি পর্যন্ত নৌপথ খনন প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হয়। সংশ্লিষ্ট উপজেলা চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে গঠিত ড্রেজিং ব্যবস্থাপনা কমিটির সমন্বয়ে প্রতিষ্ঠানগুলো নদীর খনন কার্যক্রম ভাগ করে নেয় ৫টি পয়েন্টে। প্রতিষ্ঠানগুলো নদী থেকে ১ কোটি ঘনমিটার বালু উত্তোলনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ শুরু করে। কাগজ-কলমে সেই কাজ ‘শেষ’ ও হয়েছে। ঠিকাদাররা পেয়ে গেছেন সমুদয় বিল। কিন্তু যেমন নদী তেমনই রয়ে গেছে। কোথাও কোথাও হয়েছে আগের চেয়ে বেশি ভরাট। ড্রেজিংয়ের নামে ভয়াবহ এই দুর্নীতির কোনো তল খুঁজে পাচ্ছে না দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। প্রাপ্ত তথ্য মতে, ভোগাই-কংস নদী খনন প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী বিআইডব্লিটিএ’র (ড্রেজিং) আবু বকর সিদ্দিক ও নির্বাহী প্রকৌশলী (পুর) দিদার এ আলমের বিরুদ্ধে দুদকে একটি অভিযোগ জমা পড়ে। তাতে নদী খনন না করেই বরাদ্দকৃত ১৩৪ কোটি ৬৪ লাখ টাকা আত্মসাতের তথ্য ছিল। অভিযোগ অনুসন্ধানে দুদকের ময়মনসিংহ সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের (সজেকা)’র উপ-পরিচালক মো: আবুল হোসেন এবং একজন উপ-সহকারী কর্মকর্তার সমন্বয়ে একটি টিম মাঠে নামে। অনুসন্ধান প্রক্রিয়ায় প্রকল্প সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র সংগ্রহ করা হয়। তাতে অভিযোগের অধিকাংশ তথ্যেরই সত্যতা মেলে। প্রথমত : দুর্নীতির প্রথম দফায় প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত ড্রেজিং এস্টিমেট ধরা হয়। দ্বিতীয় দফায়: দরপত্র অনুযায়ী, ড্রেজার দিয়ে খনন, এস্কেভেটরের সাহায্যে খনন এবং কোদাল দিয়ে মাটি স্থানান্তরের পৃথক ৩ ধরনের কার্যাদেশ ছিল। বাস্তবে এস্কেভেটর দিয়ে খননের প্রমাণ মেলেনি। বর্ষার পানি নেমে গেলে খননস্থলে ৮/১০ মিটার গভীর পানি থাকা দূরের কথা-বিভিন্ন জায়গায় জমেছে পলির স্তর। যাতে প্রতীয়মান হয়, কোনো ধরনের খনন কাজই হয়নি। অর্থাৎ কোনো ধরনের খনন না করেই পরস্পর যোগসাজশে তুলে নেয়া হয়েছে বরাদ্দের অর্থ।
তথ্য মতে, বিআইডব্লিটিএ’র কার্যাদেশ পাওয়া মাত্র স্থানীয় বালুদস্যুরা ভলগেট দিয়ে কংস ও ভোগাই নদী থেকে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনে লেগে যায়। এ বালু বিক্রির মাধ্যমে পকেটস্থ করে কোটি কোটি টাকা। এর ভাগ পান বিআইডব্লিটিএ’র সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা। এ হিসেবে, নদী খননে বরাদ্দকৃত কোনো অর্থই খরচ হওয়ার কথা নয়। অথচ ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানগুলো ভুয়া বিল ভাউচার দাখিল করে তুলে নিয়েছে বরাদ্দের অর্থ। এই অর্থ ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে ততকালিন স্বৈরশাসকের দোসর প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা, বিআইডব্লিউটিএ’র মাঠ পর্যায়ের প্রকৌশলী, নির্বাহী প্রকৌশলী, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (ড্রেজিং) এবং প্রতিষ্ঠানটির প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের মধ্যে। সে সময় দুদক সূত্র জানিয়েছিলো, ভোগাই ও কংস নদ খননের নামে অর্থ আত্মসাতের অনুসন্ধানে বিভিন্ন রেকর্ডপত্র হস্তগত হয়। প্রাপ্ত রেকর্ডপত্রের ভিত্তিতে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিক, বিআইডব্লিটিএ’র মাঠপর্যায়ের প্রকৌশলী, দুই নির্বাহী প্রকৌশলীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তখন। সর্বশেষ এটি খননের মাটি পরিমাপের পর্যায়ে রয়েছে। সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের মতো পর্যাপ্ত তথ্য-প্রমাণও এখন দুদকের হাতে। কিন্তু কোন এক অদৃশ্য ইশারায় দুর্নীতিবাজ এই কর্মকর্তাদের পক্ষে চলছে দায়মুক্তি প্রদানের প্রস্তুতিও। উদ্দেশ্য হাসিলে অবলম্বন করা হচ্ছে অভিনব কৌশল।
সূত্রটি জানায়, বিআইডব্লিউটিএ’র সবচেয়ে দুর্নীতিপ্রবণ সেক্টর ড্রেজিং বা খনন। ৫৩টি নৌপথের ড্রেজিং প্রকল্পটিও বাস্তবায়ন করছে এ বিভাগ। ড্রেজিংয়ের দায়িত্বে রয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির অতিরিক্ত প্রকৌশলী (ড্রেজিং) মো: ছাইদুর রহমান। বিআইডব্লিউটিএ ১৩৪ কোটি টাকা আত্মসাতের মাস্টারমাইন্ডও তিনি। ড্রেজিং বিভাগের দুর্নীতিমাত্রই সংশ্লিষ্টতা মেলে এই প্রকৌশলীর। দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণকারী প্রতিষ্ঠান দুদকের কয়েকজন প্রভাবশালী কর্মকর্তা তার শুভাকাংঙ্খী। তারাই তাকে শেল্টার দেন। এ কারণে চূড়ান্তভাবে তার বিরুদ্ধে দুদক কিছুই করবে না এমন আত্মবিশ্বাস থেকে দুর্নীতিতে তিনি বেপরোয়া। ছাইদুর রহমান, তার স্ত্রী শামিমা আক্তার, বিআইডব্লিটিএ’র উপ-পরিচালক (প্রশাসন) সিরাজুল ইসলাম ভুইয়ার অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধানের ফাইলটি তিনি ঘুম পাড়িয়ে রেখেছেন দীর্ঘদিন। মামলার যথেষ্ট উপকরণ হাতে আসা সত্ত্বেও দুদক তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরে কুণ্ঠিত। ‘অনুসন্ধান চলছে’, ‘সম্পদ বিবরণী এখনও যাচাই চলছে’ এমন দাবি করার জন্য মাঝেমধ্যেই অনুসন্ধান কর্মকর্তারা ইস্যু করছেন চিঠি। অনুসন্ধানের নামে একের পর এক বদল হচ্ছেন কর্মকর্তা। ছাইদুর রহমান দম্পতির বিরুদ্ধে ৮ বছর ধরে পড়ে থাকা এই অনুসন্ধানের সঙ্গে এবার ১৩৪ কোটি টাকা আত্মসাতের অনুসন্ধানটি একীভূত করে এখন প্রস্তুতি চলছে- মূল বিষয়টি আড়াল করে চলছে ছাইদুর রহমান গংদের দায়মুক্তির প্রক্রিয়া।
সূত্রমতে, ছাইদুর রহমান গংদের অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধানটি পরিচালিত হচ্ছে দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে। অন্যদিকে ১৩৪ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগটির অনুসন্ধান করছেন ময়মনসিংহ সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো: আবুল হোসেনের নেতৃত্বে দুই সদস্যের একটি টিম। ঢাকার নথিটি অনুসন্ধান করছেন উপ-পরিচালক মো: আব্দুল মাজেদ। এর আগে উপ-পরিচালক জালালউদ্দিন আহমেদ, উপ-পরিচালক মো: সালাহউদ্দিন পর্যায়ক্রমে এটি অনুসন্ধান কর্মকর্তা নিযুক্ত হন। তবে উভয় নথির সর্বশেষ অগ্রগতি সম্পর্কে কোনো কর্মকর্তাই মুখ খুলতে রাজী হননি। তবে সূত্র বলছে, ২০২০ সালে প্রকৌশলী মো: ছাইদুর রহমান, তার স্ত্রী শামিমা আক্তার, বিআইডব্লিটিএ’র উপ-পরিচালক (প্রশাসন) মো: সিরাজুল ইসলাম ভুইয়ার সম্পদ বিবরণী চাওয়া হয়।
দুদক পরিচালক (বিশেষ) আক্তার হোসেন আজাদ তাদের সম্পদ বিবরণীর নোটিশ (স্মারক নং-০০.০১.০০০০.৫০১.০১.০৪০.২০২০) দেন। এ প্রেক্ষিতে তারা সম্পদ বিবরণী দাখিলও করেন। তবে তিন বছরেও শেষ হয়নি সম্পদ বিবরণী যাচাই। এর মধ্যে ২০২০ সালের ১০ সেপ্টেম্বর বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যানের মাধ্যমে প্রকৌশলী ছাইদুর রহমানের কিছু রেকর্ডপত্র চাওয়া হয়। ওই বছর ১৬ সেপ্টেম্বর জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় তাকে। কিন্তু দায়মুক্তি প্রদানের অদৃশ্য ইঙ্গিত থাকায় সংশ্লিষ্ট দুদক কর্মকর্তাগণ ছাইদুর রহমানের বেনামী সম্পদের বিষয়টি এড়িয়ে যান বলে জানা গেছে। প্রায় বিনা আপত্তিতে ‘গ্রহণ’ করে নিয়েছেন আয়কর নথিতে প্রদর্শিত সম্পদের অবিশ্বা স্য বিবরণী। রেকর্ড বিশ্লেষণে দেখা যায়, প্রকৌশলী ছাইদুর রহমান শুধু মিথ্যা তথ্যই দেননি। জীবিত পিতাকে ‘মৃত’ দেখিয়ে নিজেকে উত্তরাধিকারসূত্রে সম্পদের মালিক দাবি করেছেন। ২০১৭ সালে পিতাকে ‘মৃত’ দাবি করা হলেও তিনি মাত্র কয়েক মাস আগে ইন্তেকাল করেছেন বলে জানা যায়। উত্তরাধিকার আইন অনুযায়ী পিতা জীবিত থাকতে সন্তান পিতার সম্পত্তির মালিকানা দাবি করতে পারেন না। অনেকেই মনে করেন নিজের অবৈধ অঢেল সম্পদ বৈধ করার অপচেষ্টা হিসেবে এ কৌশল অবলম্বন করার বৃথা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন সাইদুর। এসকল বিষয়ে তার মুঠোফোনে কল করে সাড়া পাওয়া যায়নি।

এতিমের বাড়ি জবরদখল : হোটেল কর্মচারী থেকে হাজার কোটি টাকার মালিক ভূমিদস্যু মুজিবুল

মোঃ সোহাগ :

মৃত শাহ আলম মিয়া পালিতপুত্র হয়ে বেড়ে ওঠেন রাজধানী ঢাকার কল্যাণপুর এলাকায় কাশেম মাতবরের পরিবারে। এলাকার পুরোনো বাসিন্দাদের সবার জানা ঘটনা, কাশেম মাতবরের সংসারে পরপর দুটি সন্তানের জন্মের পরই মারা যাওয়ার কারণে তারা শাহ আলম মিয়াকে পালিতপুত্র হিসেবে গ্ৰহন করে। শাহ আলম মিয়াকে দত্তক নেয়ার পরবর্তী সময়ে অবশ্য কাশেম মাতবরের সংসারে একটি ছেলে সন্তান ও তিনটি কন্যা সন্তান জন্ম নেয়। তারা হলেন- মোঃ আলী আমজাদ খোকন (৪৫); মোসাঃ রেহেনা বেগম (৪৭); মোসাঃ শাহানা বেগম (৪২) এবং মোসাঃ জোছনা বেগম (৪০)।

সংসারের বড় সন্তান হিসেবে শাহ আলম মিয়া সবসময়ই ছিলেন অত্যন্ত দায়িত্বশীল ও নিষ্ঠাবান। সে যথারীতি সময় মতো কাশেম মাতবরের সংসারের হাল ধরেছেন যেভাবে তা একজন অত্যন্ত ভালো মানের মানুষের পক্ষেই সম্ভব হয়। সবাইকে নিয়ে ভালো থাকার স্বপ্নে শাহ আলম তার একজীবনে ইরাকে প্রবাসীশ্রমিক‌ও ছিলেন প্রায় বছর পাঁচেক।

প্রবাসজীবন শেষে দেশে ফিরে শাহ আলম তার নিজ-নামে ২৪/৩, শহীদ মিনার রোড, কল্যাণপুর -এই হোল্ডিং নাম্বারের ৯(নয়) শতাংশের একটি প্লট ক্রয় করেন, পরবর্তীতে যেখানে সে ১১টি রুম-সম্বলিত একটি টিনসেট বাড়িও করেন। এরপর একপর্যায়ে পরিবারের সম্মতিক্রমেই শাহ আলম বিয়ে করেন মিরপুরের ঐতিহ্যবাহী দেওয়ান পরিবারের মোসাঃ হাজেরা বেগম শিল্পী নামের একটি মেয়েকে।

বিয়ের ২(দুই) বছর পরে তাদের ঘর আলোকিত করে জন্ম নেয় একটি ছেলে কিন্তু নিয়তির নিষ্ঠুরতায় মাত্র ৩৫(পয়ত্রিশ) বছর বয়সে হঠাৎ হার্ড এ্যাটাকে মারা যান শাহ আলম মিয়া। তার মৃত্যুর সময়ে একমাত্র পুত্র মোঃ স্বজলের বয়স ছিলো মাত্র ৪ বছর।

এদিকে শাহ আলম মিয়ার মৃত্যুর এক বছর অতিক্রম হতে না হতেই তার রেখে যাওয়া কল্যাণপুরের বাড়িটার উপরে লোভী শকুনীচক্ষু পরে যায়। জানা যায়, প্রতিবেশী খাজা মুজিবুল হক, বিভিন্ন সময়ে নানা কৌশলে শাহ আলম মিয়ার বিধবা স্ত্রীর নিকট বাড়িটা খরিদ করার আশা নিয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে প্রস্তাব পাঠানো শুরু করে।

এহেন প্রস্তাবে বিধবা হাজেরা বেগম বাড়ি বিক্রি করতে কোনো ভাবেই রাজি না হলে খাজা মজিবুল হক বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করা শুরু করে। সে বাড়ির লোভে তৈরি করা শুরু করে একের পর এক ভয়ংকর পরিকল্পনা। কখনও ভয়ভীতি প্রদর্শন, কখনও টাকার প্রলোভন, কখনওবা হুমকি, কোনো ভাবেই থামায় না প্রতিবেশী মুজিবুল হক তার শয়তানী।

একদা সে এলাকার সাবেক কমিশনার দেলোয়ারের মাধ্যমেও বাড়ি ক্রয়ের প্রস্তাব পাঠায় হাজেরা বেগম শিল্পীর কাছে।

মৃত শাহ আলম মিয়ার অসহায় বিধবা স্ত্রী শিল্পীই এসব তথ্য নিশ্চিত করেন এবং তিনি আরও জানান, সকল প্রচেষ্টায় ব্যর্থ হলে মুজিবুল শুরু করে কুটনীতির নোংরা চাল। সে উক্ত এলাকার এক ভূমিদস্যু ইনসান চৌধুরীর সাথে সলাপরামর্শ করে মৃত শাহ আলম মিয়ার পিতা অর্থাৎ হাজেরা বেগম শিল্পীর শশুর কাশেম মাতবরকে বুদ্ধি দেয় কোর্টে মামলা করার। তাদের পরামর্শ মতে, দত্তক নেয়া মৃত শাহ আলম মিয়ার রেখে যাওয়া একমাত্র পুত্র মোঃ স্বজলের লিগ্যাল গার্ডিয়ান হতে চান কাশেম নিজেই। কেননা আদালতের রায় পেয়ে যদি কাশেম মাতবর শিশু স্বজলের লিগ্যাল গার্ডিয়ান হতে পারে তাহলে তো শাহ আলম মিয়ার রেখে যাওয়া একমাত্র বাড়িটিও থাকবে তার‌ই দায়িত্বে নিঃসন্দেহে, -এটাই ছিলো তাদের মতলব।

এমন একটা কু-পরামর্শে উপনিত হয়ে মুজিবুল কাশেম মাতবরকে দিয়ে কোর্টে মামলা করায়। ওদিকে মামলা চলাকালীন সময়েই কাশেম মাতবরকে টাকার প্রলোভোন দেখিয়ে শেয়ালের চেয়েও অধিক চতুর ভূমিদস্যু খাজা মুজিবুল হক সবার অগোচরে তার বোন নাহার বেগমের নামে বাড়িটা ক্রয় করার প্রস্তাব‌ও দেয় কাশেম মাতবরকে।

মুজিবুলের এমন প্রস্তাবটি পেয়ে কাশেম মাতবরের কু-বুদ্ধি আরোও বেগবান হয়। সে তার পালিত পুত্র মৃত শাহ আলমের বাড়িটির উত্তরাধিকারী শিশু মোঃ স্বজল ও শিশুটির মা হাজেরা বেগম শিল্পীকে কিছু না বলে কয়ে গোপানে, অবৈধভাবে বাড়িটি মাত্র ১২,০০০০/-(বার লক্ষ) টাকা দাম নির্ধারন করে খাজা মুজিবুলের কাছ থেকে মাত্র ২০০০০০/- (দুই লক্ষ) টাকা নিয়ে মুজিবুলের বোন মোসাঃ নাহার বেগমের নামে একটি বায়না দলিল করে দেয়। যা সম্পুর্ন অনধীকার চর্চা ও প্রতারণা তো বটেই।

এদিকে আদালতে কাশেম মাতবরের দায়ের করা মামলার রায় ঘোষণা হয় শিশু স্বজলের গর্ভধারীনি মা হাজেরা বেগম শিল্পীর পক্ষে। ফলে একই সাথে আইন মোতাবেক মৃত শাহ আলম মিয়ার রেখে যাওয়া সকল স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির মালিক‌ও হয়ে যায় হাজেরা বেগম শিল্পী ও তার পুত্র মোঃ স্বজল।

মামলায় হেরে গিয়ে‌ও খাজা মুজিবুল হক খান্ত হয় না, সে বাড়িটির জন্য এরপর একটি জালদলিল তৈরি করে, আর সেই জাল দলিলের উপর ভিত্তি করে আবার আরেকটি মামলা দায়ের করে আদালতে। পাশাপাশি চলে পেশীশক্তির প্রয়োগ এবং অবশেষে বাড়িটি দখল করে নেয় তারা।‌ আর দখলের পর থেকে আজ অবধি মুজিবুল ওই বাড়িতে বহলতবিয়্যতে আছেন।

এছাড়াও খোঁজ খবর নিয়ে আরও জানা যায়, এলাকার দাপুটে ভূমিদস্যু খাজা মুজিবুল হয় ও ইনসান চৌধুরী উল্লেখ্য এলাকায় একই প্রকৃয়ায়‌ আরও কয়েকটি বাড়ি দখল করে এখন তারা হাজার কোটি টাকার মালিক।

এ বিষয়ে হাজেরা বেগম শিল্পী বিভিন্ন দফতরে দফতরে দরখাস্ত দিয়েও কোন প্রতিকার না পেয়ে অবশেষে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়-এ ধন্না দিলে তার প্রতি মানবিক মায়ার জন্ম হয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। অতঃপর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর দফতর থেকে এবিষয়ে ব্যবস্থা নিতে একটি আদেশ পেয়ে স্থানীয় প্রশাসন পদক্ষেপ নিয়ে বাড়িটি পুনরুদ্ধার করে সঠিক মালিক তথা হাজেরা বেগম ও তার সন্তানের কাছে হস্তান্তর করে কিন্তু অবৈধ কালো টাকার কাছে আবারও হার মেনে যায় সত্য! আবারও ঘর ছাড়া হয় বিধবা হাজেরা বেগম ও তার শিশু পুত্র।

হাজেরা বেগম জানান, তৎকালীন কমিশনার দেলোয়ার ও প্রশাসনের দুর্নীতিবাজ মহলে মোটা অংকের টাকা খরচ করে আবারও রাতারাতি বাড়িটি জবরদখল করে নেয় খাজা মুজিবুল হক, যার পেছনের প্রধান মদদ দাতা ইনসান চৌধুরী।

অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে, একজন সরকার দলীয় বড় মাপের নেতার অদৃশ্যে থেকে শেলটার দেওয়ার কারণেই খাজা মুজিবুল হক এসব জঘন্য কর্মকান্ড চালিয়ে মেতে সক্ষম হয়েছে।

শুধু তাই নয় কালো টাকার প্রভাব খাটিয়ে কোর্ট থেকে একটি একতরফা রায়‌ও নিয়ে আসে খাজা মুজিবুল হক, যেখানে উল্লেখ করা রয়েছে যে মৃত শাহ আলমের বাড়ির দলিলটি ভূয়া এবং বিবাদী হাজেরা বেগম শিল্পী অনুপস্থিত থাকার কারনে এহেন একতরফা রায় প্রদান করা হয়েছে।

এবিষয়ে পারিবারিক জজ আদালতে আপিল করেছেন মৃত শাহ আলম মিয়ার স্ত্রী হাজেরা বেগম শিল্পী, যা এখনও চলমান আছে।

অপরদিকে ২০১১ইং সাল পর্যন্ত যদিও ২৪/৩ শহীদ মিনার রোড, কল্যানপুর -এই হোল্ডিং নাম্বারের খাজনা পরিশোধ করেছেন হাজেরা বেগম শিল্পীই কিন্তু ২০১২ইং-এর খাজনা পরিশোধ করতে গেলে মীরপুর ভূমি অফিস হাজেরা বেগম শিল্পীকে জানায় যে তার নামের উপরে ২৪/৩ হোল্ডিং নম্বরের জমিটি বাবদ আর কোনো খাজনা নেয়া হবে না। ভূমি অফিস তাকে আরও জানায়, জমির মালিকানা নাকি পরিবর্তিত হয়ে খাজা মুজিবুল হকের বোন নাহার বেগমের নামে হয়ে গেছে। এমনকি গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির বিলেও ভৌতিক ভাবে রাতারাতি শাহ আলমের নামের জায়গায় নাহার বেগমের নাম হয়ে যায়। তিতাস গ্যাস, ডেসকো এবং ওয়াসার অফিসে খোঁজ নিয়ে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

অপরদিকে অনুসন্ধানে খাজা মুজিবুল হককে মদদ দেয়ার কারণ‌ও উদঘাটিত হয়েছে। জানা গেছে, জবরদখল ও জালিয়াতিতে ইনসান চৌধুরীর ভূমিকার মূলকারণ, ২৪/৩ নাম্বার হোল্ডিং নম্বরের পাশের প্লটটি ইনসান চৌধুরীর। তাছাড়া খাজা মুজিবুল হককে জবরদেখলে সহোযোগিতা করার বিনিময়ে ইনসান চৌধুরী প্রায় ২ কাঠা জমিও গুন্ডামীর খেরাজ বাবদ খাজা মুজিবুল হকের কাছ থেকে পেয়েছে। যেখানে বর্তমানে চলছে বহুতলা ভবন নির্মানের কাজ, যার ৬ষ্ঠ তালার ছাদ‌ও ঢালাই-করা হয়ে গেছে।

‘কার যায়গায় কে বাড়ি নির্মান করছে এটা বোঝা বড় দায় কিন্তু বলার কোন উপায় নাই’, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই এলাকার এক বাসিন্দা আফসোস করে এম‌ন‌ই মন্তব্য করেন।

অনুসন্ধানী দল কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়ে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে যাওয়া‌ ইনসাফ চৌধুরীর পুত্র ইয়েনহুয়া চৌধুরীর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি স্বীকার করেন যে ২৪/৩ হোল্ডিং নাম্বারের বাড়িটি প্রকৃত পক্ষে শাহ আলম মিয়ারই। এমনকি তাদের প্লটটিতেও শাহ আলমের প্রায় ২কাঠা জমিও যে যোগ হয়েছে -এবিষয়টিও তিনি স্বীকার করেন অকপটে।

২৪/৩ শহীদ মিনার রোড কল্যাণপুর, -হোল্ডিং নম্বরের তথ্য অনুসন্ধানে গিয়ে আমাদের অনুসন্ধানী দলের কাছে মিলেছে নৈতিকতার চরমতম বিপর্যয় এবং তাদের কাছে সৃষ্টি হয়েছে নীম্নলিখিত প্রশ্নসমুহঃ

১। কোন কাগজের বলে তিতাস, ডেসকো এবং ওয়াসা বাড়িটির বিল মালিকানা পরিবর্তন করতে সক্ষম হয়েছে?
২। এক তরফা রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল চলাকালীন মিরপুর ভূমি সাবরেজিস্টার অফিস কোন আইনের বলে জমিটির খাজনা খারিজ নাম পরিবর্তন করতে সক্ষম হয়েছে?
৩। সামান্য হোটেলে চাকরি করা মুজিবুল কিভাবে রাতারাতি বনে গেলেন হাজার কোটি টাকার মালিক খাজা মুজিবুল হক?
৪। প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশে স্থানীয় প্রশাশন যে বাড়িটি অবৈধ দখল থেকে উদ্ধার করে বিধবা হাজেরা বেগম শিল্পী ও তার পুত্র মোঃ স্বজলের কাছে বুঝিয়ে দিয়েছে পরে আবারও কোন সেই অদৃশ্য ক্ষমতা (যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চেয়েও শক্তিশালী) যার ছত্রছায়ায় পুনরায় রাতারাতি বাড়িটি খাজা মুজিবুল হকের অবৈধ দখলে নিয়ে যাওয়ার ক্ষমতার দেখিয়ে দিয়েছে?
৫। নাহার বেগমের নামে সকল প্রকার বিল এবং জমির খাজনা খারিজ থাকা সত্তেও কোন রহস্যে সেই বাড়ির সামনে লাগানো সাইনবোর্ডে লেখা, ‘এই জমির মালিক খাজা মুজিবুল হক’?
৬। যেহেতু বাড়িটির সামনের সাইনবোর্ডে মালিকের নামের জায়গায় লেখা খাজা মুজিবুল হকের নাম, তাহলে আবার কি করে তা ২( দুই লক্ষ) টাকা দিয়ে বায়না দলিল করা যায় নাহার বেগমের নামে?

তাহলে বাড়িটির প্রকৃত মালিক কে?

এসমস্ত প্রশ্নের উত্তর পেতে এবং ভূমিদস্যু খাজা মুজিবুল হকের মুখোশ উন্মোচনবাদ আসল রূপ দেখতে, চোখ রাখুন আগামী পর্বের দিকে।

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম