তারিখ লোড হচ্ছে...

বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান, তরুণীকে হত্যার পর যুবকের আত্মহত্যা

স্টাফ রিপোর্টার:

বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় এক তরুণীকে হত্যা করেছেন এক যুবক। পরে ওই যুবক নিজেও আত্মহত্যা করেছেন। নিহত তরুণীকে ওই যুবক পছন্দ করতেন এবং গত এক বছর ধরে তাকে রাজি করানোর চেষ্টা করছিলেন বলে জানা গেছে।

চাঞ্চল্যকর এই ঘটনাটি ঘটেছে ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য কর্নাটকের বেলাগাভিতে।

মঙ্গলবার (৪ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।

সংবাদমাধ্যমটি বলছে, কর্ণাটকের বেলাগাভিতে বিয়ে করতে অস্বীকার করার পরে এক তরুণীকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে এক যুবক। এরপর ঘটনাস্থলেই আত্মহত্যা করেন অভিযুক্ত। নিহত ওই তরুণীর নাম ঐশ্বরিয়া মহেশ লোহার। ২০ বছর বয়সী এই তরুণী নাথ পাই সার্কেলের কাছে একটি বাড়িতে থাকতেন এবং সেখানেই খুন হন।

অন্যদিকে অভিযুক্ত যুবকের নাম প্রশান্ত কুন্দেকার। বেলাগাভি তালুকের ইয়েলুর গ্রামের ২৯ বছর বয়সী এই যুবক ঐশ্বরিয়াকে ভালোবাসতেন এবং এক বছরেরও বেশি সময় ধরে তাকে অনুসরণ করছিলেন বলে পুলিশ জানিয়েছে।

প্রশান্ত কুন্দেকার চিত্রশিল্পী হিসেবে কাজ করতেন এবং হত্যাকাণ্ড গটনানোর আগে তিনি তার মায়ের কাছে গিয়েছিলেন এবং ওই তরুণীকে বিয়ে করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। তবে তার মা তাকে প্রথমে আর্থিকভাবে স্থিতিশীল হওয়ার দিকে মনোনিবেশ করার পরামর্শ দিয়েছিলেন বলে বেশ কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে।

মঙ্গলবার প্রশান্ত বিষের বোতল নিয়ে ঐশ্বরিয়ার খালার বাড়িতে যায়। সেসময় বিযে করার জন্য তিনি আবারও ঐশ্বরিয়াকে জোর করেন। কিন্তু বিয়ে করতে অস্বীকার করলে প্রশান্ত তাকে বিষ পান করতে বাধ্য করার চেষ্টা করে। এতে ওই তরুণী বাধা দিলে প্রশান্ত তার পকেট থেকে ছুরি বের করে তাকে গলা কেটে হত্যা করে।

মূলত অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে ঐশ্বরিয়া মারা যান। এরপর প্রশান্ত একই ছুরি ব্যবহার করে নিজের গলা কেটে ফেলে এবং ঘটনাস্থলেই মারা যায়। সিটি পুলিশ কমিশনার ইয়াদা মার্টিনসহ ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা এই ঘটনায় আরও তদন্ত করছেন বলে জানানো হয়েছে।

 

দাবানল থেকে পালিয়ে আসার ‘নারকীয় অভিজ্ঞতা’

সবুজ বাংলাদেশ ডেস্কঃ

লস অ্যাঞ্জেলেসের ইতিহাসে এ ধরনের দাবানল আগে আর ঘটেনি। আগ্রাসী আগুনে জ্বলে পুড়ে ছারখার হাজার হাজার ঘরবাড়ি ও বিষয়-সম্পত্তি। আগুনে সব নিঃশেষ হয়ে যেতে দেখাই শুধু নয়, লেলিহান শিখা থেকে বাঁচতে যানজট, প্রকট ধোঁয়ায় শ্বাসরুদ্ধ হয়ে আসাসহ নানা কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হচ্ছে সেখানকার বাসিন্দাদের।

এবারের দাবানল পুরো লস অ্যাঞ্জেলেসকে যেন তছনছ করে ফেলেছে। বাংলাদেশ সময় শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত ১ লাখ ৮০ হাজারের বেশি মানুষ তাদের বাড়িঘর ছেড়েছেন। দাবানলে এখন পর্যন্ত ১১ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা হয়েছে।

তবে আগুন, ধোঁয়া ও ধ্বংসাবশেষের মাঝেও অন্য যে প্রসঙ্গটি বারবার উঠে এসেছে, তা হলো- উদ্ধার তৎপরতা ও বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি।

দাবানলের ঘটনায় লস অ্যাঞ্জেলেস কর্তৃপক্ষ সতর্কতা জারির পাশাপাশি বাড়িঘর ছেড়ে নিরাপদে যাওয়ার আদেশ জারি করলে বাসিন্দারা দ্রুত সাড়া দেন।

অনেকে সরকারি আদেশ পাওয়ার আগেই ঘরবাড়ি ছেড়ে যান। তবে তারা খুব বেশি দূর যেতে পারেননি। তারা যখন এলাকা ছেড়ে নিরাপদে সরে যাওয়ার চেষ্টা করেন, তখন রাস্তায় তাদের গতি খুবই ধীর ছিল।

বুধবার প্যাসিফিক প্যালিসেডস এলাকার বাসিন্দারা যখন পালাচ্ছিলেন, তখন মালিবুর দিকে যাওয়া প্রধান সড়ক প্যাসিফিক কোস্ট হাইওয়ে যানজটের কবলে পড়ে। অনেক মানুষ রাস্তায় তাদের গাড়ি রেখেই সামনে হেঁটে হেঁটে আগুন থেকে বাঁচার চেষ্টা করেন।

আবার, অগ্নিনির্বাপক কর্মীরা ঘটনাস্থলে যাওয়ার পথে সেই পরিত্যক্ত গাড়ির জটে পড়লে তারা রাস্তা ফাঁকা করতে বুলডোজার ব্যবহার করেন।

একজন বাসিন্দা বিবিসিকে জানান, প্যালিসেডসের আগুন থেকে বাঁচতে তিনি দুই ঘণ্টা ধরে যানজটে আটকে ছিলেন।

প্যাসিফিক প্যালিসেডস কমিউনিটি কাউন্সিলের সাবেক চেয়ারম্যান মারিয়াম জার জানান, আগুনের কারণে বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় এই গাড়িগুলোর বাধার মুখে পড়ি। প্রায় আধ ঘণ্টা ধরে কেউই চলাচল করতে পারেনি এবং আমি ৪৫ মিনিট ধরে রাস্তায় আটকে ছিলাম।

২৪ ঘণ্টার মধ্যে তিনবার তাকে সরে যেতে হয়েছিল। প্রবল বাতাসের কারণে আগুন দাউ দাউ করে জ্বলছিল এবং আশপাশের এলাকায় ভয়াবহ গতিতে আগুন ছড়িয়ে পড়েছিল। ‘এটি সম্পূর্ণ ধ্বংসযজ্ঞ, এক নারকীয় পরিস্থিতি,’ বলেন তিনি।

জার আরও জানান, সেখানকার সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থাও সংকটের আরেকটি কারণ। তার কথায়, সেখানে প্রধান সড়ক দুটি, আর সরু আরেকটি রাস্তা। এই তিনটি পথ ধরেই আপনাকে প্যালিসেডস থেকে বের হতে হবে। যেকোনো সময় যানজট লেগে সড়ক বন্ধ হয়ে যাবে আর আগুন আমাদের শেষ করে দেবে এটা আমাদের চিরাচরিত ভয়।

তবে ওই এলাকা থেকে সবাইকে বৃহস্পতিবারের মধ্যেই সরানো সম্ভব হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

কেন এত দ্রুত ছড়ালো দাবানল:
লস অ্যাঞ্জেলেসে গত কয়েক দশক ধরে খরা, এরপর সাম্প্রতিক বছরগুলো ভারী বৃষ্টিপাত, পরে শরৎ ও শীতকালের শুষ্ক পরিস্থিতিতে ফিরে আসা সবই আগুনের জ্বালানি হিসেবে কাজ করেছে।

শক্তিশালী স্যান্টা আনা বাতাস গাছপালাগুলো শুকিয়ে ফেলে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে দিয়েছে। স্যান্ট আনা বাতাস হলো শক্তিশালী, শীতল, শুষ্ক, ঝড়ো বাতাস, যাকে কখনো কখনো ডেভিল উইন্ডসও বলা হয়। এই উচ্চ-চাপ বায়ু যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিমাঞ্চলের গ্রেট বেসিন এলাকা যা মূলত নেভাডা, ইউটাহ, আইডাহো ও দক্ষিণ-পূর্ব ওরেগনের উসর মরুভূমি অঞ্চল থেকে উৎপন্ন হয় এবং ক্যালিফোর্নিয়ার দিকে প্রবাহিত হয়।

বৃহস্পতিবার হলিউডেও প্যালিসেডসের মতো একই ধরনের বিশৃঙ্খল দৃশ্য দেখা দেয়। দাবানলের আগুন ছড়িয়ে পড়লে অনেক রাস্তা যানজটে আটকে যায়। হাজার হাজার মানুষ তখন একসাথে বের হওয়ার চেষ্টা করছিল।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জরুরি পরিস্থিতিতে লস অ্যাঞ্জেলেস থেকে পালানো সহজ নয়। লস অ্যাঞ্জেলেসের রাস্তাগুলো সংকীর্ণ, আঁকাবাঁকা যা সেখান থেকে দ্রুত সরে যাওয়ার পথে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।

লস অ্যাঞ্জেলেসে অগ্নিনির্বাপণ ও দুর্যোগ মোকাবিলায় কাজ করে অলাভজনক সংস্থা ‘মাইসেইফ: এলএ’। এই সংস্থার তথ্য কর্মকর্তা ক্রিস নেভিল বলেন, প্যালিসেডসে আসা-যাওয়ার জন্য খুব বেশি রাস্তা নেই এবং এর ফলে প্রচুর সমস্যা দেখা দিয়েছে, একদম জগাখিচুড়ি অবস্থা।

লস অ্যাঞ্জেলেসে অনেক রাস্তাই বেশ আগে তৈরি করা, তখন পরিবারগুলো ছোট গাড়ি ব্যবহার করতো। সেসময়ে পাহাড়ি এসব এলাকায় এখনকার মতো বড় বড় গাড়ি চলতো না।

তিনি আরও জানান, ঝুঁকি রয়েছে জেনেও মানুষ এমন জায়গায় থাকতে চায়, যেখানে তারা প্রকৃতির সংস্পর্শ পাবে। দাবানলও এসব ঝুঁকির একটি অংশ।

যুক্তরাষ্ট্রে টেকসই উন্নয়নের জন্য কাজ করা সংস্থা ‘বিল্ডস্ট্রং আমেরিকার’ নির্বাহী পরিচালক নাটালি এনক্লেইড বলেছেন, জরুরি অবস্থার কারণে সড়ক নেটওয়ার্ক তীব্র চাপের মুখে পড়েছিল।

‘যখন ১০ হাজারেরও বেশি বাসিন্দা তড়িঘড়ি করে একসঙ্গে পালানোর চেষ্টা করেন, তখন প্রধান সড়কগুলোয় তীব্র যানজট দেখা দেয়। এই যানজট উদ্ধারকাজের গতিকে ধীর করে দেয়, যার ফলে আরও বেশি জীবন ঝুঁকির মধ্যে পড়ে।’

তবে ক্যালিফোর্নিয়ার শহরগুলো থেকে লোকজন সরিয়ে নেওয়ার চ্যালেঞ্জ নতুন কিছু নয়।

এনক্লেইড জানান, ২০১৮ সালে ‘ক্যাম্প ফায়ার’ দাবানলে যখন উত্তর ক্যালিফোর্নিয়ার এলাকাগুলো ধ্বংস হয়ে যাচ্ছিল, তখনো যোগাযোগ ব্যবস্থায় বাধা তৈরি হয়। লোকজনকে সরিয়ে নেওয়ার প্রচেষ্টা সেসময় বাধার মুখে পড়ে।

সরঞ্জাম ও জনবল সংকট:
এবারের মতো এতো বিশাল দাবানল ঠেকানোর মতো যথেষ্ট সরঞ্জামের অভাব রয়েছে বলে জানান এনক্লেইড। তিনি বলেন, স্থানীয় সংস্থাগুলো তাদের সীমিত সরঞ্জাম নিয়ে বিশাল ও দ্রুত গতিতে ছড়িয়ে পড়া দাবানল ঠেকাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে।

লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টির ফায়ার চিফ বুধবার বলেছেন, এই দাবানল মোকাবিলার মতো যথেষ্ট দমকলকর্মী তাদের নেই।

লস অ্যাঞ্জেলেসের রাস্তাগুলোয় সাধারণ দিনেও যানজট থাকে। কিন্তু যখন সবাই ভূমিকম্প বা দাবানলের সময় পালানোর চেষ্টা করেন, তখন একেবারে অন্যরকম পরিস্থিতি দেখা দেয়, বলেন ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়ার (ইউএসসি) আরবান প্ল্যানিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জিওফ বোয়িং।

লস অ্যাঞ্জেলেসের অনেক রাস্তায় আটকে যাওয়ার মতো কতগুলো পয়েন্ট তৈরি হয়েছে বলেও তিনি জানান। এর কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটি ভৌগোলিক পরিস্থিতির কারণে হতে পারে বা নান্দনিকতার কারণেও। বিশেষ করে নিয়ন্ত্রিত আবাসিক এলাকাগুলোয় চলাচলের রাস্তা মূলত একটিই।

২০২৪ সালে জিওফ বোয়িং ও তার সহকর্মীরা একটি গবেষণায় দেখেছেন, রাস্তার নেটওয়ার্ক একটি শহরের দুর্যোগ মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

গবেষণায় ১৭৮টি দেশের আট হাজার শহরের যান চলাচল পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। এসব জায়গায় বন্যা, ভূমিকম্প ও পরিকল্পিত হামলার মতো ঘটনাগুলোও যাচাই করা হয়েছে।

জিওফ বোয়িং জানান, ভালো সংযোগের মানে হলো প্রতিটি রাস্তার মোড়ে আরো কতগুলো রাস্তা যুক্ত আছে। যেখানে ত্রিমুখী চত্বর আছে বা কেবল একটি পথ খোলা আছে, এ ধরনের সড়ক পথচারীর বিকল্প পথ বেছে নেওয়ার সুযোগ কমিয়ে দেয়।

 

সবা:স:জু- ৭৪৪/২৫

language Change
সংবাদ শিরোনাম