সিদ্ধিরগঞ্জে বিএনপি নেতা রুহুল আমিনকে নিয়ে ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র, এলাকায় নিন্দার ঝড়

সিদ্ধিরগঞ্জ প্রতিনিধি :
নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে ৬নং ওয়ার্ড বিএনপির পরীক্ষিত নেতা রুহুল আমিনকে নিয়ে ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে একটি মহল৷ দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে একনিষ্ঠভাবে বিএনপি করা রুহুল আমিনকে হেয়প্রতিপন্ন করতে একের পর এক ষড়যন্ত্রের জাল বুঁনে যাচ্ছে আওয়ামী লীগের চিহ্নিত দোসর ওই মহলটি৷ দলের জন্য বছরের পর বছর ধরে প্রতিনিয়ত হামলা-মামলা, বাড়িছাড়া হয়ে এখনো হয়রানির শিকার হয়ে রীতিমতো হতবাক রুহুল আমিন। এমনকি গত ৬ মার্চ আদমজীতে দুই পক্ষের মারামারি চলাকালে জ্বালিয়ে দেয়া হয় রুহুল আমিনের কমপক্ষে ১২টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। এর নেপথ্যেও রয়েছে স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের দোসর সেই চিহ্নিত মহলটি। ফলে বিশাল আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন তিনি। ত্যাগী, নির্যাতিত ও পরীক্ষিত এই নেতার বিরুদ্ধে গভীর চক্রান্তের ফলে ক্ষোভে ফুঁসছে স্থানীয় জনসাধারণও৷ নারায়ণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক, স্বচ্ছ ও পরিশীলিত রাজনীতিবিদ অধ্যাপক মামুন মাহমুদের একনিষ্ঠ কর্মী রুহুল আমিনের জন্য যেকোনো কিছু করতে প্রস্তত এলাকাবাসী৷

এলাকাবাসী ও স্থানীয় বিএনপির দুর্দিনের নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ২০০০ সাল থেকে সরাসরি বিএনপির রাজনীতিতে ওতপ্রোতভাবে জড়িত রুহুল আমিন৷ শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের দেশপ্রেমের আদর্শে উজ্জীবিত, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার হাতকে শক্তিশালী করে স্বনির্ভর বাংলাদেশ গড়ার লক্ষে বিএনপির প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে ছিল তার সরব উপস্থিতি৷ দল থেকে কখনোই কোনো সুযোগ-সুবিধা না নেওয়া রুহুল আমিন বিএনপির শাসনামলের শেষ দিকেই বিদেশে পাড়ি জমান ।

তারা আরো জানান, বিদেশে থেঅঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের খোঁজ নিতেন রুহুল আমিন, আন্দোলন-সংগ্রামের জন্য বিদেশ থেকে নেতাকর্মীদের জন্য ফান্ড পাঠাতেন৷ ২০১২ সালে দেশে ফিরে এসে ফের অধ্যাপক মামুন মাহমুদের নেতৃত্বে আন্দোলন-সংগ্রাম, লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন তিনি৷ এরপরের ইতিহাস কেবলই ত্যাগ-তিতীক্ষা আর জীবন বাজি রেখে ফ্যাসিবাদ হটানোর৷ আওয়ামী আমলে একের পর মিথ্যা মামলায় জর্জরিত হয়েছেন রুহুল আমিন৷ তার বিরুদ্ধে আওয়ামী আমলের কমপক্ষে ১৮টি মামলা রয়েছে৷ একাধিকবার করা হয়েছে হামলা। বিগত ১৩ বছরে বাড়ি ছেড়ে দূরদূরান্তে আত্মগোপনে থাকতে হয়েছে। এরপরেও বিএনপির যেকোনো প্রোগ্রামে অধ্যাপক মামুন মাহমুদের নেতৃত্বে রুহুলের সহস্রাধিক নেতাকর্মী নিয়ে শতাধিকবার অংশগ্রহণের গল্প সবার মুখে মুখে৷ আর এতোকিছুর পরে, ফ্যাসিস্ট সরকারের বিদায়ের পরেও যেন শান্তি মিলছে না রুহুল আমিনদের মতো ত্যাগী নেতাকর্মীদের। দুঃসময়ের এসব সৈনিকদের যথাযথ মূল্যায়নের দাবি তাই সারাদেশের মতো সিদ্ধিরগঞ্জ থেকেও ধ্বনিত হচ্ছে বারংবার৷

এ বিষয়ে সিদ্ধিরগঞ্জের ৬নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি উকিল উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, রুহুল আমিন দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে বিএনপির রাজনীতিতে সরাসরি জড়িত৷ তিনি আমাদের দুঃসময়ের সৈনিক৷ বিএনপির প্রত্যেকটি সভা-সমাবেশ, মিছিল, আন্দোলনে হাজার হাজার নেতাকর্মী নিয়ে তিনি উপস্থিত থাকতেন৷ জেলা বিএনপির কাণ্ডারী অধ্যাপক মামুন মাহমুদ সাহেবের নেতৃত্বে ফ্যাসিস্ট হাসিনাবিরোধী আন্দোলনে রুহুল আমিনের ভূমিকা চিরস্মরণীয়৷ দলের দুঃসময়ে দেড় ডজন মামলা দিয়েছে তাকে স্বৈরাচারের দোসররা৷ এখন তারাই রুহুল আমিনকে নিয়ে ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রে লিপ্ত৷ আমি এর তীব্র নিন্দা জানাই৷

এ বিষয়ে বিএনপি নেতা রুহুল আমিন বলেন, আমি কখনোই ভোগের রাজনীতিতে বিশ্বাস করি না। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ ভাই আমার আলোর দিশারী৷ বিএনপির দুঃসময়ে মামলা-হামলায় জর্জরিত হয়েছি। বাড়িতে থাকতে পারিনি৷ এরপরেও বিএনপির যেকোনো প্রোগ্রামে মামুন মাহমুদ ভাইয়ের ডাকে হাজার হাজার নেতাকর্মী নিয়ে অংশ নিয়েছি৷ আমাদের নেতা জনাব তারেক রহমান নির্দেশ দিয়েছেন, জনকল্যাণমুখী কাজ করতে। আমাদের সকলের উচিত সেদিকে মনোনিবেশ দেয়া৷ আমাকে নিয়ে যারাই ষড়যন্ত্র করছেন, তাদেরকে বলবো, কল্যাণমুখী রাজনীতি করুন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের দেশপ্রেমে উজ্জীবিত হন৷ জনগণের ভোটে বিএনপিকে রাষ্ট্রক্ষমতায় নিতে আমাদেরকে আরো পরিচ্ছন্ন, সুন্দর ও গঠনমূলক রাজনীতি করতে হবে৷

অনুমতি মিলল তল্লার সেই মসজিদ খোলার

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি ॥
জমে থাকা গ্যাস বিস্ফোরণে ৩৪ জন প্রাণহানির ঘটনার প্রায় এক বছরের মাথায় খুলে দেয়া হচ্ছে ফতুল্লার তল্লা বায়তুস সালাত জামে মসজিদটি। রোববার জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে মসজিদ কমিটির সভাপতি মো. আব্দুল গফুরের কাছে মসজিদটি ব্যবহারের অনুমতিপত্র তুলে দেন জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ।

তবে মসজিদটি ব্যবহারের জন্যে কমিটিকে অনুমতিপত্রে লিখিতভাবে ছয়টি শর্ত দিয়েছে জেলা প্রশাসন। এসব শর্ত পূরণ হলেই কেবল ওই মসজিদে নিয়মিত নামাজের আয়োজন করা যাবে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক।

তিনি জানিয়েছেন, যেসব শর্ত দেয়া হয়েছে সেগুলো হলো- মসজিদে একাধিক দরজা রাখার ব্যবস্থা করতে হবে এবং আপাতত মসজিদটিতে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ (এসি) যন্ত্রের ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে। বিদ্যুতের প্যানেল বোর্ড মসজিদ ভবনের বাইরে অথবা বারান্দায় বসাতে হবে। প্রতি ৩ মাস পর পর অনুমোদিত প্রকৌশলী, এবিসি লাইসেন্সপ্রাপ্ত টেকনিশিয়ান দ্বারা পরীক্ষা করে রেজিস্টারে লিপিবদ্ধ করতে হবে। স্থানীয় বিদ্যুৎ বিভাগ কর্তৃক মসজিদের বিদ্যুৎ সংক্রান্ত সব কার্যক্রমের সঠিকতা নিশ্চিত করতে হবে। মসজিদের নিচে বা পাশে গ্যাস লাইন নেই অথবা গ্যাস লাইন সঠিক আছে মর্মে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ থেকে প্রত্যয়নপত্র নিশ্চিত করতে হবে। মসজিদের প্রতিটি তলায় পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপণ সরঞ্জামাদি রাখতে হবে। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড এবং তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন এ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে যথাযথভাবে মনিটরিং করাসহ এসব শর্তাবলি পালন নিশ্চিত করতে হবে।

জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ আরও বলেন, মসজিদ খোলার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরের চিঠি চাওয়া হয়েছিল। সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো এই বিষয়ে ইতিবাচক সুপারিশ করেছেন। পরিপ্রেক্ষিতে মসজিদ খোলার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। মসজিদ সংস্কার করে যেকোনো সময় মুসুল্লিরা নামাজের আয়োজন করতে পারবেন।

উল্লেখ্য, গত বছরের ৪ সেপ্টেম্বর রাতে এশার নামাজ চলাকালে উপজেলার পশ্চিম তল্লা এলাকায় অবস্থিত বাইতুস সালাত জামে মসজিদে ভয়াবহ গ্যাস বিস্ফোরণ ঘটে। এই ঘটনায় অগ্নিদগ্ধ ৩৪ জন মারা যান। আহত হন আরও কয়েকজন।

এই ঘটনায় জেলা প্রশাসন, ফায়ার সার্ভিস, তিতাস, ডিপিডিসসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থা একাধিক তদন্ত কমিটি গঠন করে। তদন্ত প্রতিবেদনে বিস্ফোরণের কারণ হিসেবে মসজিদের অবকাঠামো নির্মাণে ত্রুটি, অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ, তিতাসের গ্যাস লাইনে লিকেজের বিষয়টি উঠে আসে। মসজিদের অভ্যন্তরে জমে থাকা গ্যাস ও বিদ্যুতের শর্টসার্কিট থেকে সৃষ্ট স্ফুলিঙ্গ থেকেই এই ধরনের ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে বলে তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

এই ঘটনায় দায়ের করা পুলিশের মামলায় মসজিদ কমিটির সভাপতি, তিতাস ও ডিপিডিসির সংশ্লিষ্ট বেশ কয়েকজন গ্রেফতার হন। গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর এই মামলার অভিযোগপত্র (চার্জশিট) আদালতে দাখিল করে তদন্তকারী সংস্থা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

অভিযোগপত্রে মসজিদ কমিটির সভাপতি সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুল গফুরকে প্রধান করে ২৯ জনকে আসামি করা হয়। তবে সরকারি সংস্থার আসামিদের আসামি করার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের অনুমতি না পাওয়ায় এই মামলায় গ্রেফতার তিতাসের ৮ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে অভিযোগপত্রে আসামির তালিকায় সংযুক্ত করা হয়নি।

 

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম