যেসব কারণে কাটা তরমুজ ফ্রিজে রেখে খাওয়া উচিত নয়

স্টাফ রিপোর্টার:

বাজার থেকে বড় একটি তরমুজ কিনে আনার পর পুরোটা একেবারে খাওয়া হয়। সেক্ষেত্রে কিছুটা খেয়ে বাকিটা ফ্রিজে রেখে দেন অনেকে। তাছাড়া ফ্রিজের ঠান্ডা তরমুজ অনেকের প্রিয় খাবারের তালিকায় রয়েছে। কিন্তু এই অভ্যাসটি কি ভালো? না কি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর?

কাটা তরমুজ ফ্রিজে রাখা উচিত নয়। এর নানা ক্ষতিকর প্রভাব রয়েছে। চলুন বিস্তারিত জেনে নিই-

ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি
কাটা তরমুজ ফ্রিজে রাখলে তাতে ব্যাকটেরিয়া জন্মানোর আশঙ্কা থাকে, যা খাদ্য বিষক্রিয়ার ঝুঁকি বাড়ায়। ফ্রিজের ঠান্ডা পরিবেশে ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি ধীর হলেও, কাটা ফলের উন্মুক্ত পৃষ্ঠে ব্যাকটেরিয়া দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে।

পুষ্টিগুণের হ্রাস

ফ্রিজে তরমুজ রাখলে কমে যায় এর পুষ্টিগুণ। গবেষণায় দেখা গেছে, ঘরের তাপমাত্রায় রাখা তরমুজে অ্যান্টি অক্সিডেন্টের মাত্রা বেশি থাকে। ফ্রিজে রাখলে এই উপকারী উপাদানের পরিমাণ হ্রাস পায়, যা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়।

ফ্রিজে রাখলে তরমুজের স্বাদ, রং এবং গুণগত মান পরিবর্তিত হতে পারে। ফ্রিজের ঠান্ডা পরিবেশে তরমুজের প্রাকৃতিক মিষ্টতা এবং রসালো ভাব কমে যেতে পারে। ফলে তরমুজ খেলে আসল স্বাদ পাওয়া যায় না।

তরমুজ সংরক্ষণের সঠিক পদ্ধতি

গোটা তরমুজ সংরক্ষণ

তরমুজ গোটা অবস্থায় ঘরের তাপমাত্রায় রাখা উচিত নয়। এটি ১০ থেকে ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করা ভালো। এতে তরমুজের পুষ্টিগুণ ও স্বাদ বজায় থাকে। বিশেষজ্ঞদের মতে, তরমুজ কাটার ২-৩ ঘণ্টার মধ্যে খাওয়া ভালো।

কাটা তরমুজ সংরক্ষণ

কাটা তরমুজ দ্রুত খাওয়া উচিত। এরপরও যদি সংরক্ষণ করতেই হয়, তবে পরিষ্কার পাত্রে ঢেকে ফ্রিজে রাখুন এবং ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তা খেয়ে ফেলুন। তবে কাটা তরমুজ ফ্রিজে না রাখাই শ্রেয়।

তরমুজ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। এতে প্রায় ৯০% পানি থাকে, যা শরীরকে হাইড্রেটেড রাখতে সহায়তা করে। চোখের জন্যও উপকারী এই ফল। দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে সাহায্য করে। তরমুজের সঠিক পুষ্টি পেতে দীর্ঘক্ষণ ফ্রিজে রেখে না খাওয়াই ভালো।

রামগড় পাহাড়ের প্রান্তে এক সম্ভাবনাময় জনপদ

মোঃমাসুদ রানা,খাগড়াছড়ি জেলা প্রতিনিধিঃ

বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব প্রান্তে, খাগড়াছড়ি জেলার দক্ষিণে অবস্থিত একটি ছোট্ট উপজেলা রামগড়। এখানকার প্রকৃতি পাহাড়ি, অথচ সমতলের ছোঁয়াও আছে। সীমান্তবর্তী এই জনপদের একদিকে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য, অন্যদিকে বাংলাদেশের ফেনী জেলা। পাহাড় আর সীমান্ত ঘেরা এই জনপদের পরিচয় যেন বহুমাত্রিক ভৌগোলিক, ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক এবং অর্থনৈতিক সম্ভাবনার এক অনবদ্য মিশেল।
রামগড় উপজেলা গঠিত হয় ১৯৮৩ সালে, কিন্তু তার ইতিহাস অনেক পুরনো। এখানকার ভূপ্রকৃতি ও জনজীবন প্রাচীনকাল থেকেই ভিন্নধর্মী। পাহাড়ি জনগোষ্ঠী চাকমা, ত্রিপুরা, মারমা সমতলের বাঙালি বসতি মিলে রামগড়ে তৈরি হয়েছে এক বিচিত্র সামাজিক বিন্যাস। ফেনী নদী রামগড়কে বিভক্ত করে রেখেছে বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ড ও ত্রিপুরার সঙ্গে, আর সেই নদীর বুকেই এখন গড়ে উঠছে এক আন্তর্জাতিক স্থলবন্দর।

রামগড়ের জনসংখ্যা প্রায় ৭০ হাজার, এখানকার অধিকাংশ মানুষ কৃষিজীবী। পাহাড়ি জমিতে আনারস, আদা, হলুদ আর জুম চাষ হয় বছরের বড় একটি সময়জুড়ে। অন্যদিকে সমতলের মানুষ ধান চাষ আর হাট বাজার ভিত্তিক ব্যবসা-বাণিজ্যে নিয়োজিত। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে, এত সম্ভাবনার পরও রামগড়ের অর্থনৈতিক অবস্থা বেশ দুর্বল। শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে ঘাটতি, সড়ক যোগাযোগের সমস্যা এবং সীমান্তবর্তী ঝুঁকি—সব মিলিয়ে রামগড় এক ধরনের উন্নয়ন বঞ্চনার চিত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে।

রামগড়ের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য তার সীমান্ত ঘেঁষা চরিত্র। এখান থেকে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সাবরুম শহর মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরে। দুই দেশের মধ্যে একসময় ছিল মানুষের যাতায়াত, পারস্পরিক বাজার, আত্মীয়তার সম্পর্ক। এখন সীমান্তের কাঁটাতার সবকিছু আলাদা করে দিয়েছে। তবুও এখান থেকে স্থলবন্দর গড়ে ওঠার সম্ভাবনা অনেক দূর এগিয়েছে। ২০১৭ সালে রামগড়-সাবরুম স্থলবন্দরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। এটি পুরোপুরি কার্যকর হলে দুই দেশের মধ্যে একটি নতুন বাণিজ্যিক দ্বার খুলে যাবে।

রামগড় শুধু সীমান্ত নয়, এটি এক ধরনের সংস্কৃতি ও সম্প্রীতির কেন্দ্র। এখানকার পাহাড়ি-বাঙালি সহাবস্থান অনেকটা অনন্য। যদিও অতীতে কিছু সহিংস ঘটনা ঘটেছে, কিন্তু বর্তমানে সামাজিক সম্পর্ক স্বাভাবিক এবং শান্তিপূর্ণ। ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের ‘গরিয়া পূজা’ হোক বা বাঙালি মুসলমানদের ঈদ, কিংবা মারমাদের ‘ওয়াগেইন উৎসব’—সবই রামগড়ে মিলেমিশে উদযাপিত হয়।

তবে রামগড়ের সবচেয়ে বড় অভাব হলো অবকাঠামো ও সেবাব্যবস্থার উন্নয়ন। বিদ্যুৎ, স্বাস্থ্য, পানীয়জল এবং শিক্ষার অভাবে মানুষ প্রতিনিয়ত কষ্ট করছে। সীমান্তবর্তী এলাকার বিশেষ চাহিদা থাকলেও জাতীয় নীতিমালায় সেগুলো বারবার উপেক্ষিত। ফলে রামগড়ের মানুষ প্রতীক্ষায় থাকে—কখন উন্নয়নের ছোঁয়া তাদের পাহাড়ি জনপদে এসে পৌঁছাবে।

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম