নিজেই মাদকাসক্ত মাদক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা; মাসে মাসোহারা আদায় ৭লাখ!

 

নিজস্ব প্রতিবেদক;
দুর্নীতি, অনিয়ম, মাসোহারা, ঘুষ বাণিজ্য, সাধারণ মানুষকে হয়রানি, জুয়া, নারীবাজীসহ অন্তহীন অভিযোগে অভিযুক্ত কুমিল্লা জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিদর্শক শরিফুল ইসলাম।
মোটা অংকের টাকা ও আওয়ামীলীগের তৎকালীন প্রভাবশালী এক মন্ত্রীর তদবিরে ডিএনসির চাকরী জীবনের শুরু সহকারী প্রসিকিউটর হিসেবে। এরপর কর্মজীবনে সেই মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রভাব খাটিয়ে ভালো ভালো জায়গায় পোস্টিং নিয়ে হয়েছেন আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ। এছাড়াও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক জামাল উদ্দিনের স্ত্রীকে ভার্সিটির বড় বোন ডেকে সখ্যতা তৈরি করেন। কর্মক্ষেত্রে সেই প্রভাব বিস্তারসহ নানান অনিয়মের মাধ্যমে কামিয়েছেন বেসুমার। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় পোস্টিং নিয়ে বেপরোয়া দুর্নীতি ও নির্দোষ মানুষকে হয়রানিসহ নানা ভাবে অবৈধ অর্থ অর্জনের সীমাহীন অভিযোগ রয়েছে কুমিল্লা ডিএনসিতে কর্মরত এই শরিফুল ইসলামের বিরুদ্ধে। মাদকপ্রবন জেলা ফেনী, মৌলভীবাজার, চুয়াডাঙ্গার কেরু এন্ড কোং, ব্রাহ্মণবাড়ীয়া ও বর্তমান কুমিল্লাসহ যেখানই চাকরি করেছেন সেখানেই বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন শরিফুল। আওয়ামী দোসর শরিফুল বিগত সময়ে সহকর্মীদের সাথে অসদাচরণের কারনেও নানা ভাবে সমালোচিত হন বহুবার। সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন রেষ্ট হাউজ ও আবাসিক হোটেলে তার নারীবাজীর চিত্রও উঠে এসেছে অনুসন্ধানে।
জানা যায় ক্ষমতার অপব্যবহার ও তদবিরে সহকারী প্রসিকিউটর হিসেবে যোগদান করলেও, মোটা অঙ্কের টাকা খরচ করে এখনো পরিদর্শক হিসেবে চাকুরীর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন শরিফুল ইসলাম। এছাড়া মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম নিজেই মাদকাসক্ত বলেও জানা গেছে অনুসন্ধানে।

দীর্ঘ অনুসন্ধানে জানা যায়, তার কর্মজীবন নানান অনিয়ম, দুর্নীতি ও অপকর্মে ভরপুর। তিনি যখনই যে কর্মস্থলে ছিলেন সেখানেই জড়িয়ে পড়েন নানাবিধ অপকর্মে। কুমিল্লায় বর্তমান কর্মস্থলে যোগদান করার পরেই তিনি বিভিন্ন মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে নানা ভাবে সখ্যতা গড়ে তোলেন। নগরীর ধর্মপুরের নারী মাদক ব্যবসায়ী নার্গিসের কাছ থেকে প্রতি মাসে ত্রিশ হাজার, একই এলাকার সাফিয়ার কাছ থেকে বিশ হাজার, বাদশা মিয়ার বাজারের অবৈধ চোলাই মদ ব্যবসায়ী লাল চাঁন মিয়ার স্ত্রী’র থেকে প্রতি মাসে পয়তাল্লিশ হাজার টাকা মাসোহারা নেন। এছাড়াও জেলার ব্রাহ্মণপাড়া, বুড়িচং, সদর দক্ষিণ, চৌদ্দগ্রামসহ বিভিন্ন মাদকের স্পট ও সীমান্তের চিহ্নিত মাদক কারবারিদের থেকে মাসে অন্তত পাঁচ থেকে ৭ লক্ষাধিক টাকা মাসোহারা আদায় করেন। এসব মাসোহারা আদায়ে তার অন্যতম সহযোগী হিসেবে রয়েছে সহকারী উপপরিদর্শক কামরুল হাসান।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, তিনি প্রায়ই বিভিন্ন নারী ও জেলার সুন্দরী নারী মাদক কারবারিদের নিয়ে কুমিল্লাস্থ বিভিন্ন আবাসিক হোটেল ও সরকারি গেস্ট হাউজে স্ত্রী পরিচয় দিয়ে রাত্রি যাপন করেন। গেলো কদিন আগেও কুমিল্লা শাসনগাছা এলাকায় কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউটের গেস্ট হাউজে কথিত স্ত্রী পরিচয়ে এক নারীকে নিয়ে রাত্রি যাপন করেন। এর আগে গত ফেব্রুয়ারীর মাঝামাঝি সময়ে আলেখারচর এলাকায় একটি আবাসিক হোটেলে অপর নারীকে নিয়েও রাত্রি যাপনের তথ্য প্রমাণ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

একাধিক নারীর সাথে অবৈধ সম্পর্ক ও এসব নারী ঘটিত কার্যকলাপ তার বিবাহিত স্ত্রী টের পেয়ে এসবের প্রতিবাদ করায় দীর্ঘদিন ধরেই সংসারেও চলছে অশান্তি। পরনারীতে আসক্ত শরিফুল প্রায়শই তার বিবাহিত স্ত্রী’কে মানসিক ও শারীরিকভাবে নির্যাতন করেন। স্ত্রী নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে গত বছট ৬ জুলাই কুমিল্লার কোতয়ালী মডেল থানায় লিখিত অভিযোগও দায়ের করেন। তবে তৎকালীন আওয়ামী এই দোসর শরিফুল সরকারের ক্ষমতা ও টাকার জোরে ধামাচাপা দিয়ে ম্যানেজ করেন থানার তদন্ত কর্মকর্তাকে। এসব নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করলে ভুক্তভোগী স্ত্রী’কে তালাক হত্যা ও তার বাবাকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে দমিয়ে রেখেছেন শরিফুল। জামালপুরে কর্মরত কালীন সময়েও স্ত্রীকে শারিরীক নির্যাতনের কারণে তার শশুর অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা তৎকালীন ময়মনসিংহ বিভাগীয় অতিরিক্ত পরিচালকের কাছেও অভিযোগ দায়ের করেন। তবে অদৃশ্য কারণে বিচার চেয়েও বিচার পাননি ভুক্তভোগী।

বিশ্বস্ত সূত্রের তথ্য মতে, তিনি প্রায়ই মাদক সেবন করে তার স্ত্রীর উপর অমানুষিক শারিরীক নির্যাতন চালান। বিভিন্ন স্পট ও মাদক কারবারিদের থেকে মাসোহারা নেয়ার পাশাপাশি মাদকও গ্রহণ করেন শরিফুল।
এছাড়াও জানা যায় শরিফুল ঢাকার বিভিন্ন ক্লাবে ও কুমিল্লার বিভিন্ন স্থানে নিয়মিত জুয়া ও ক্যাসিনোর আসরে বসেন।

আওয়ামী দোসর পরিদর্শক মো: শরিফুলের ক্ষমতার দাপটে তার বিগত ২১ সালে ১২ অক্টোবর মৌলভীবাজার জেলার বিজ্ঞ আদালত কর্তৃক তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রুজু করার নির্দেশ প্রদান করলেও অদ্যাবধি তার বিরুদ্ধে কোন বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। বিষয়টি নিয়ে অধিদপ্তরের বেশকিছু কর্মকর্তা/কর্মচারীদের মধ্যেও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়ে আছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শরিফুল মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করেছেন। আর এসব কথা তিনি নিজেই সহকর্মীদের কাছে গর্ব করে প্রকাশ করেন।

অভিযোগ রয়েছে, তিনি মাদকাসক্ত মানসিক বিকারগ্রস্ত ও মাদকাসক্ত একজন মাদক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা। কর্মক্ষেত্রে মাঝে মাঝেই তিনি উশৃংখল আচরণ করেন। তিনি কাউকেই সম্মান করে কথা বলেন না। ফেনিতে কর্মকালীন তিনি বিজ্ঞ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের’কে তুমি ও ভাই বলে সম্বোধন করতেন। এর ফলে বিজ্ঞ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটগণ তৎকালীন জেলা প্রশাসক বরবার নালিশ করলে জেলা প্রশাসক তাকে ডেকে নিয়ে তিরস্কার ভৎর্সনা করেন। এর ফলে সেখানে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সাথে জেলা প্রশাসনের দুরুত্ব তৈরি হলে মাদক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হয় বলেও জানা যায়।

সম্প্রতিক সময়ে অনুসন্ধানে শরিফুলের নানা অনিয়মের তথ্য প্রমাণ সাংবাদিকদের সামনে এলে ঢাকা বা পুরোনো অন্য কর্মস্থলে বদলীর জন্য জোর তদবির চালাচ্ছেন বলেও জানা গেছে।
এদিকে, মাদকাসক্ত দুর্নীতিবাজ স্বেচ্ছাচারী পরিদর্শক শরিফুল ইসলামের অনিয়ম, ঘুষ বাণিজ্য, মাসোহারা ও মাদক কারবারিদের সাথে সখ্যতাসহ নানা কারনে কুমিল্লা জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্যক্রমে নেমে এসেছে স্থবিরতা। বেপরোয়া হয়ে উঠেছে মাদক কারবারিরা। তার এসব অপকর্মের বিষয়ে জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর কুমিল্লা কার্যালয়ের কর্মকর্তা কর্মচারীদের মোটামুটি সকলেই অবগত থাকলেও ভয়ে তার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কথা বলেতে রাজি নয় কেউই। জেলাজুড়ে মাদক কারবারিদের সাথে শরিফুলের সখ্যতায় দীর্ঘদিন ধরেই জেলায় মাদক বিরোধী কর্মকাণ্ড নেই বললেই চলে।

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কুমিল্লা জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিদর্শক শরিফুল ইসলাম বলেন, সব অভিযোগ সত্যি নয়। এছাড়া সংবাদটি প্রকাশ না করার শর্তে তিনি প্রতিবেদককে ভিন্ন উপায়ে ম্যানেজের চেষ্টাও করেন।

নির্বাহী প্রকৌশলী নাসিম আহমেদ টিটোর বিরুদ্ধে ঘুষ বাণিজ্য ও দুর্নীতির অভিযোগ

স্টাফ রিপোর্টার॥
চাঁদপুর গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী নাসিম আহমেদ টিটোর বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণ, প্রকল্প অর্থ আত্মসাৎ এবং সরকারি ক্ষমতার নগ্ন অপব্যবহারের ভয়াবহ অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে। এসব অনিয়মের প্রেক্ষিতে ক্ষুব্ধ হয়ে চাঁদপুরের প্রথম শ্রেণির ঠিকাদার ফেরদাউস মোর্শেদ জুয়েল গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলীর বরাবর লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। অভিযোগপত্রটি দাখিলের তারিখ ২০২৫ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি হলেও বিষয়টি সম্প্রতি প্রকাশ্যে আসার পর তীব্র চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

অভিযোগপত্রে নির্বাহী প্রকৌশলী নাসিম আহমেদ টিটোকে ‘ঘুষখোর, দুর্নীতিবাজ ও জঘন্য চরিত্রের অফিসার’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। অভিযোগে বলা হয়, চাঁদপুরে যোগদানের অল্পদিন পরই তিনি ৫% হারে ঘুষ আদায়ের অপসংস্কৃতি চালু করেন। নির্দিষ্টভাবে হিসাব সহকারী আনোয়ার হোসেনকে ঘুষ আদায়ের দায়িত্ব দিয়ে, ঘুষ না দিলে কোনো বিলেই স্বাক্ষর না করার হুমকি দিয়ে ঠিকাদারদের কার্যত জিম্মি করে তোলেন।

ঘুষ বাণিজ্যের পাশাপাশি প্রকৌশলী টিটোর বিরুদ্ধে ২০ লাখ টাকার বেশি ভুয়া কোটেশন তৈরি করে প্রকল্প ছাড়াই অর্থ আত্মসাতের অভিযোগও উঠেছে। চাঁদপুর সার্কিট হাউজের গেট সংস্কারের নামে ২৫ লাখ টাকার বরাদ্দ গ্রহণ করলেও, বাস্তবে কাজ হয়েছে মাত্র দুই থেকে তিন লাখ টাকার। এ ছাড়া সদর হাসপাতালে তার নামে ২২ লাখ টাকার কার্যক্রম চলমান রয়েছে, যার স্বচ্ছতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।

ঠিকাদার হাবিব নামের এক ভুক্তভোগী ভিডিও বক্তব্যে বলেন, “নাসিম আহমেদ টিটো বেপরোয়া। তার ঘুষের শিকার হয়ে আমরা লাভের চেয়ে ক্ষতির মুখ দেখি। সরকারি কর্মকর্তার ছায়ায় থেকে তিনি নিজেই ঠিকাদারি করেন। আগে ঘুষের টাকা আনোয়ার হোসেনকে দিয়ে তারপরই বিলের ছাড়পত্র মেলে।”

এমন অভিযোগে ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন আরও অনেক ঠিকাদার। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান, “টিটোর অধীনে কাজ করতে হলে প্রথম শর্তই ঘুষ—তা না দিলে কাজ বন্ধ, বিল আটকে যায়।”

উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, গত বছরের ৫ আগস্টের কিছুদিন আগে এই প্রকৌশলী নিজেই অফিসের নিচতলায় বঙ্গবন্ধু কর্নার নির্মাণ করেন এবং নিজেই এর উদ্বোধন করেন, যা আদর্শগত শিষ্টাচার ভঙ্গের নজির। এরপর এখন দেখা যাচ্ছে তিনি রাজনৈতিক পরিচয় পাল্টে নিজেকে বিএনপি পরিবারের সদস্য দাবি করার প্রয়াস চালাচ্ছেন।

প্রশ্ন উঠছে—একজন সরকারি কর্মকর্তা কীভাবে প্রশাসনিক দায়িত্বে থেকে নিয়মিত ঘুষ আদায়, ভুয়া প্রকল্পে অর্থ আত্মসাৎ এবং রাজনৈতিক পরিচয় বদলে ফেলার মতো গর্হিত কাজ করতে পারেন, অথচ তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি?

চাঁদপুরবাসী ও সৎ ঠিকাদার মহল আজ একটাই প্রশ্ন রাখছে—এই দুর্নীতির দায়ভার কে নেবে? প্রশাসন কী এবারও নীরব দর্শকের ভূমিকায় থাকবে?

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম