রাজধানীর মোহাম্মদপুরে সরকারি খাল দখল করে বহুতল ভবন নির্মাণ

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে সরকারি খাল দখল করে বহুতল ভবন নির্মাণ

মাহ্তাবুর রহমান:

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে সরকারি খাল দখল করে গড়ে উঠছে একাধিক বহুতল ভবন। মোহাম্মদপুরের নবীনগর হাউজিং এ নির্মাণাধীন এমনই একটি ভবন যা ১৮ তলা হবে হবে জানা গেছে। অনুসন্ধান করে জানাগেছে এই ভবনে ৮৫ জন অংশীদার রয়েছেন। এই অংশীদারদের মধ্যে কয়েকজন আবার সরকারি চাকুরিজীবী।

ভবনটির বিষয়ে অনুসন্ধান করে জানা গেছে এটি ঢাকা জেলার রামচন্দ্রপুর মৌজার সিএস দাগ নং  ৪৬৬, আরএস ৫৬০,৫৬১, সিটি জরিপ ১০৭৯০, ১০৭৯১ দাগে নির্মিত হওয়ার কখা থাকলেও ভবনটি নির্মাণকালে সরকারি খালের জমি সিএস ৪৬৭, আরএস ৫২৫, সিটি জরিপ ১০৭৯২ এর মধ্যে ৮ফুট ⅹ ২০০ফুট দখল করে ভবনটি নির্মাণ করা হয়েছে

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে সরকারি খাল দখল করে বহুতল ভবন নির্মাণ

ভবন মালিকদের বিষয়ে অনুসন্ধান করতে গিয়ে প্রথমেই আসে নাজিম উদ্দিন তালুকদারের নাম। তার সাথে কথা বলতে তার মুঠোফোনে কল দেয়া হলে সে সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে ধমকের সুরে প্রতিবেদককে প্রশ্ন করেন আপনি আমাকে চিনেন? প্রতিবেদক সরকারি খালের জমি দখল করে ভবনের অবৈধ দখলের বিষয়ে বিস্তারিত বললে তিনি বলেন এটার মালিক আমি একা নয় আপনি অন্যদের সাথেও কথা বলেন। আমার থেকেও তারা ভালো বলতে পারবে।

অন্য অংশীদারদের বিষয়ে অনুসন্ধান করতে গিয়ে সামনে আসে ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজ এর যুক্তিবিদ্যা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ নুরুন্নবী এর নাম। তার সাথে কথা বলার জন্য ২০ এপ্রিল রবিবার মুঠোফোনে কল করা হলে তিনি বলেন আমি সিলেট আছি ঢাকা এসে কথা বলবো। আজ ২৬ এপ্রিল তাকে মুঠোফোনে কল করে এই ভবনের বিষয়ে জানতে চাইলে চা খাওয়ার আমন্ত্রন জানান এবং তার হয়ে তার এক প্রতিনিধি প্রতিবেদকের সাথে কথা বলবেন বলেন।

এরপরে হোয়াটসঅ্যাপে ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজ এর গনিত প্রদর্শক জোবায়ের হোসেন কল করে প্রতিবেদককে জিজ্ঞেস করেন সরকারি খাল দখল করে অবৈধ ভবনের বিষয়ে অনুসন্ধান করার অনুমতি প্রতিবেদককে সরকার দিয়েছে কিনা। এ যেন বাংলা প্রবাদ চোরের মায়ের বড় গলা। জোবায়ের হোসেন আক্রমণাত্মক স্বরে জিজ্ঞেস করেন আপনাদের পত্রিকার নাম কি প্রতিবেদক পত্রিকার নাম দৈনিক সবুজ বাংলাদেশ বললে তিনি বলেন এই নাম তো আগে শুনিনি তখন প্রতিবেদক জিজ্ঞেস করেন আপনি কয়টি পত্রিকার নাম শুনেছেন? এই প্রশ্নের তিনি সঠিক উত্তর না দিয়ে পত্রিকা দেখতে চান। সরকারি কর্মকর্তারা যেখানে বেতন-ভাতা বৃদ্ধির দাবি তোলেন সেখানে মোহাম্মদপুরের মতো জায়গায় ভবনের মালিক হন কি করে? তার অর্থের উৎস কি?

সরকারি খাল দখল করে ভরাট পরবর্তী রাজউক অনুমোদন না নিয়ে বহুতল ভবন নির্মানের বিষয়ে রাজউক পরিচালক (জোন-৫) মোঃ হামিদুল ইসলাম বলেন বর্তমানে অবৈধ ভবন উচ্ছেদ অভিযান চলমান রয়েছে।

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ বলেন সরকারি জমি ও খাল উদ্ধারে আমাদের অভিযান চলমান আছে। লোকবলের অভাবে যতটা দ্রুত অভিযান পরিচালনা করা দরকার ততটা না পারলেও আমরা প্রতিনিয়ত আমাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। আপনাদের দেয়া তথ্য নোট করলাম, সরকারি খাল অবশ্যই উদ্ধার করে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে নিতে আমরা কাজ করছি।

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোঃ মাসুম এর কাছে সরকারি খাল দখলের বিষয়ে আইনগত ব্যাখ্যা জানতে চাইলে তিনি বলেন সরকারি সম্পত্তি আত্মসাৎ সু-স্পস্ট অপরাধ, সরকারি খাস জমি অবৈধভাবে দখল বা কোনো অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করলে এক বছরের বিনাশ্রম কারাদন্ড বা অনধিক পাঁচ লাখ টাকা অর্থদন্ড অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত করার বিধান রয়েছে। ভবন নির্মাণের অনুমোদন গ্রহণ না করা মূলত ইমারত নির্মাণ আইন, ১৯৫২ এর ৩ (১) ধারা ও ইমারত নির্মাণ বিধিমালা, ১৯৯৬ এর ৩ উপবিধির লঙ্ঘন। অনুমোদনের বাইরে ভবন করলে নির্মাণ আইন, ১৯৫২ এর ১২ ধারা অনুযায়ী অভিযুক্ত ব্যক্তির সাত বছর পর্যন্ত কারাদন্ড হতে পারে। এই আইনটি মোবাইল কোর্ট আইন, ২০০৯ এর তফসিলভুক্ত হওয়ায় মোবাইল কোর্টেও এই আইনের অধীনে অপরাধ বিচার্য হবে।
তিনি বলেন মহানগরী, বিভাগীয় শহর ও জেলা শহরের পৌর এলাকাসহ দেশের সকল পৌর এলাকার খেলার মাঠ, উন্মুক্ত স্থান, উদ্যান এবং প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইন, ২০০০ সনের ৩৬ নং আইন, ৮(১) কোন ব্যক্তি এই আইনের কোন বিধান লঙ্ঘন করিলে অনধিক ৫ বছরের কারাদন্ডের বিধান রয়েছে (২) ধারা ৫ এর বিধান অনুযায়ী খেলার মাঠ, উন্মুক্ত স্থান, উদ্যান এবং প্রাকৃতিক জলাধার হিসাবে চিহ্নিত জায়গার শ্রেণী পরিবর্তন করা যাইবে না বা উক্তরূপ জায়গা অন্য কোনভাবে ব্যবহার করা যাইবে না বা অনুরূপ ব্যবহারের জন্য ভাড়া, ইজারা বা অন্য কোনভাবে হস্তান্তর করা যাইবে না।
তিনি আরও বলেন, ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন, ২০২১ এর ২২ ধারায় বলা হয়েছে যদি কোনো ব্যক্তি, সরকারি খাসজমি বা অন্য কোনো সরকারি, বেসরকারি, স্বায়ত্বশাসিত বা সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন ভূমি বেআইনিভাবে দখল করেন বা উহাতে অবৈধ অবকাঠামো নির্মাণ করেন, তাহা হইলে তাহার অনুরূপ কার্য হইবে একটি অপরাধ এবং তজ্জন্য তিনি অনধিক দুই বৎসরের কারাদন্ড, বা অনধিক চার লক্ষ টাকা অর্থদন্ড, বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হইবেন। ইহা জামিন অযোগ্য অপরাধও বটে।

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম