বিদেশে নেতিবাচক প্রচারণা বন্ধে ‘অভিবাসী কূটনীতি’ অধিশাখার প্রস্তাব

বিদেশে নেতিবাচক প্রচারণা বন্ধ ও ইতিবাচক প্রচারণার জন্য ‘অভিবাসী কূটনীতি’ নামে নতুন অধিশাখা সৃষ্টির প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনকূটনীতি অনুবিভাগের আওতায় ওই শাখা কাজ করবে। এ ছাড়া, মন্ত্রণালয় নতুন একটি শাখাও খুলছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

মঙ্গলবার (১৩ সেপ্টেম্বর) জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে উত্থাপিত প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, দেশবিরোধী নেতিবাচক প্রচারণা মোকাবিলার পাশাপাশি ইতিবাচক প্রচারণায় আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে সম্মানী দিয়ে কলাম লেখানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ জন্য ভালো কলামিস্টও খোঁজা হচ্ছে। ভালো কলামিস্টদের সন্ধান থাকলে তা মন্ত্রণালয়কে জানানোর জন্য সংসদীয় কমিটির সদস্যদের অনুরোধ জানানো হয়েছে।

ওই প্রতিবেদনে প্রবাসী/অভিবাসী বাংলাদেশীদের অনেকেই সরকারের বিরুদ্ধে নেতিবাচক প্রচারণায় লিপ্ত হন এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ অন্যান্য মিডিয়ায় তাদের সরব উপস্থিতি ও দেশ বিরোধী আপত্তিকর মন্তব্য, বক্তব্য ও প্রচারের জন্য বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে উল্লেখ করে বলা হয়, স্বাগতিক দেশের নানাবিধ আইনি বাধ্যবাধকতার কারণে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া অনেক ক্ষেত্রে দুরূহ হয়ে পড়ে।

তাই বাংলাদেশের ইতিবাচক দিকগুলো বিশ্ববাসীর কাছে ব্যাপকভাবে তুলে ধরা এবং বাংলাদেশ বিরোধী নেতিবাচক প্রচার-প্রচারণা মোকাবিলার জন্য স্থায়ী কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী মন্ত্রণালয়ের জনকূটনীতি অনুবিভাগে ‘অভিবাসী কূটনীতি’ নামে একটি অধিশাখা সৃষ্টি করে একজন পরিচালকসহ ২ জন সহকারী সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তা পদায়নের করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

অধিশাখা সৃজন করার জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও অর্থ বিভাগসহ অন্যান্য অংশীজনের কাছে প্রস্তাব পাঠানোর কাজ শুরু করা হয়েছে।

কমিটি সূত্র জানায়, কমিটির আগের বৈঠকে বিদেশে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নানা নেতিবাচক প্রচারণার বিষয় আলোচনা হয় এবং এগুলো বন্ধে মন্ত্রণালয়কে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়। সুপারিশে এসব কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণের লক্ষ্যে একটি আলাদা সেল গঠনেরও কথা বলা হয়।

ওই বৈঠকে দেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, বিশ্বের অর্থনৈতিক মন্দাকে পুঁজি করে সরকার বিরোধীরা দেশের ভেতরে ও বাইরে নানা ধরেনর নেতিবাচক প্রচারণা ব্যাপকভাবে চালিয়ে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ বিরোধী প্রচারণার বিষয়টি মন্ত্রণালয় থেকে গুরুত্বের সাথে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। দেশের ভাবমূর্তি উজ্জল করে এমন কোন কলাম কারো কাছে থাকলে তা ওয়াটসঅ্যাপে শেয়ার করলে সেটি বিভিণ্ন মিশনে প্রচারের কথা বলেন সিনিয়র সচিব।

ওই বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বিভিন্ন তথ্য দিয়ে কলাম বা প্রবন্ধ লেখার মত দক্ষ জনবল না থাকায় সম্মানী দিয়ে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে কলামিস্টদের দিয়ে বাংলাদেশ সম্পর্কে ইতিবাচক লেখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিন্তু ভালো কলামিস্টের সংখ্যাও খুব কম। আগামী দেড় বছর বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে বিরোধী শক্তিগুলো সোচ্চারভাবে সমালোচনায় মেতে উঠতে পারে।

বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে এলে বিদেশিরা নানাভাবে হয়রানির শিকার হন বলে সংসদীয় কমিটির একাধিক সদস্য মন্তব্য করেছেন। এ কারণে তারা বিনিয়োগ না করে ফিরে যাচ্ছে বলেও উল্লেখ করা হয় তারা।

কমিটির বৈঠকে পররাষ্ট্র মন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, অনেক কষ্ট করে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার কথা বলে বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য আনা হলেও তারা বিভিন্ন সংস্থা ও দপ্তরে গিয়ে হয়রানি শিকার হয়ে ফিরে যাচ্ছে এবং অন্যদেরও বাংলাদেশে বিনিয়োগে নিরুৎসাহিত করছে। এ ছাড়া অনেক প্রবাসী বাঙালি দেশে বিনিয়োগ করতে চাইলেও তাদের জমি দখল, বাড়ি দখল থেকে শুরু করে নানাভাবে হয়রানি করা হয়। ফলে তারাও দেশে বিনিয়োগ করতে চাচ্ছে না।

বাংলাদেশের ব্যাংকিং সেক্টর বিশ্বে ১৬৮তম স্থানে অবস্থান করলে উল্লেখ করে পররাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এই প্রতিবন্ধকতাগুলো এখন মারাত্মক আকার ধারণ করছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটাতে না পারলে দেশে কোন বিনিয়োগ হবে না বলে মন্ত্রী উল্লেখ করেন।

কমিটির সদস্য নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, দেশে বিনিয়োগের কোনো পরিবেশ নেই। বিনিয়োগ করতে গেলে বিভিন্ন সেক্টরে ধরনা দিতে হয়। বৈদেশিক বিনিয়োগকারীদের অধিকাংশই এখানে বিনিয়োগ না করে বাধ্য হয়ে তাদের দেশে ফিরে যাচ্ছেন।

এ বিষয়ে কমিটির সভাপতি মুহম্মদ ফারুক খান বলেন, দেশে প্রচুর বিনিয়োগের সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে বিনিয়োগের লক্ষ্যে সরকার ও ব্যক্তিপর্যায়ের উদ্যোগগুলো ব্যর্থতায় পর্যবসিত হচ্ছে।

চলতি বছরের শেষ নাগাদ ঢাকা-নিউইয়ার্ক ফ্লাইট চালু করা যাবে বলে সংসদীয় কমিটিতে অবহিত করেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব। ঢাকা-নিউইয়র্ক ফ্লাইপ চালুর বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ঢাকা বিমানবন্দরে সাদা চামড়ারা বিশেষ করে নিউইয়র্ক থেকে নিরাপত্তার বিষয়ে পরিদর্শনে আসা ব্যক্তিদের তেমন কোনো চেক না করে ছেড়ে দেওয়ায় তারা ঢাকা বিমানবন্দরের নিরাপত্তা বিষয়ে বিরূপ প্রতিবেদন দিয়েছে। অপর দিকে প্রবাসী বাঙালি শ্রমিকরা দেশে আসলে বিমান বন্দরে তাদের বিভিন্ন রকমের হয়রানি করা হয়। যে কারণে ঢাকা নিউইয়র্ক ফ্লাইট চালুর ক্ষেত্রে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে।

একটি করে প্রাণহীন দেহ প্রতি ১০ মিনিটে উদ্ধার হচ্ছে

আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ

স্মরণকালের বিধ্বংসী ভূমিকম্পে বিপর্যস্ত তুরস্ক-সিরিয়ায় এখন চলছে শোকের মাতম। সোমবার ভোরের দিকে রিখটার স্কেলে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পে তুরস্ক ও সিরিয়ায় মৃতের সংখ্যা ইতোমধ্যে দেড় হাজার ছাড়িয়ে গেছে। এখনও অসংখ্য মানুষ ধসে যাওয়া হাজার হাজার ভবনের নিচে চাপা পড়ায় মৃতের সংখ্যা কয়েক হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার প্রতিনিধি সুহাইব আল-খালাফ সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল থেকে বলেছেন, উদ্ধারকারীরা মরিয়া হয়ে ধ্বংসস্তূপ থেকে লোকজনকে বের করার চেষ্টা করছেন।

সুহাইব আল-খালাফ বলেন, ‘উদ্ধারকারীরা প্রত্যেক ১০ মিনিটে একটি করে মরদেহ বের করে আনছেন।’ সিরিয়াজুড়ে অসংখ্য ভবন ধসে পড়েছে। তিনি বলেন, এসব ভবনের ধ্বংসস্তূপের নিচে শত শত মানুষ আটকা পড়েছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

‘মরদেহ বের করে আনার পর আমরা ধ্বংসস্তূপের ওপরে মানুষের আর্তনাদ দেখছি; তারা (উদ্ধারকারীরা) একটি শিশু পেয়েছে; সে জীবিত বলে মনে হচ্ছে। পরে তাকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।’

আল-জাজিরার এই প্রতিনিধি বলেন, সিরিয়ার দীর্ঘদিনের যুদ্ধের কারণে স্থানীয় চিকিৎসাসেবা খাত আগে থেকেই বিপর্যস্ত। ভূমিকম্পের কারণে হাজার হাজার মানুষ আহত হওয়ায় এখন সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলো।

তিনি বলেন, লোকজনকে হাসপাতাল, এমনকি হাসপাতালের বারান্দায়ও চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। রক্তের প্রচুর সংকট দেখা দিয়েছে।

সোমবার স্থানীয় সময় ভোর ৪টা ১৭ মিনিটে আঘাত হানা ভূমিকম্পে এখন পর্যন্ত তুরস্ক ও সিরিয়ায় প্রাণহানির সংখ্যা ১ হাজার ৬০০ জন ছাড়িয়ে গেছে। দুই ভূমিকম্পে বিপর্যস্ত তুরস্ক-সিরিয়ায় হাজার হাজার বাড়িঘর ধ্বংস হয়েছে।

ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে লোকজনকে উদ্ধারের তৎপরতা আগামী কয়েক দিন ধরে চলতে পারে বলে সিরিয়া ও তুরস্কের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। তবে বৈরী আবহাওয়ার কারণে উদ্ধার তৎপরতা চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে।

প্রথম ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল তুরস্কের গজিয়ানতেপের চারপাশে ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাষ দেওয়া হয়েছে। আগামী কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সেখানকার তাপমাত্রা দিনে ৩-৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং রাতে হিমাঙ্কের নিচে থাকবে বলে দেশটির আবহাওয়া বিভাগ জানিয়েছে।

পাশাপাশি গজিয়ানতেপে প্রায় ৩ থেকে ৫ সেন্টিমিটার তুষারপাতের পূর্বাভাষও দেওয়া হয়েছে। এছাড়া গজিয়ানতেপের উত্তরের শহরগুলোতে ভারী তুষারপাত হতে পারে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।

এছাড়া দেশটির পার্বত্য অঞ্চলে আগামী কয়েক দিন তাপমাত্রা একেবারে হিমাঙ্কের নিচে থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে। যার অর্থ ওইসব এলাকায় ৫০ থেকে ১০০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত তুষারপাত হতে পারে।

তুরস্কের সরকারি তথ্য বলছে, সোমবার ভোরের প্রথম ভূমিকম্পে দেশটিতে অন্তত ২ হাজার ৮০০টি ভবন ধ্বংস হয়ে গেছে। এর ফলে দেশটিতে হাজার হাজার মানুষকে খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নিতে হতে পারে।

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম