ডিএসসিসি চালাচ্ছে তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী রফিক!

নিজস্ব প্রতিবেদক:
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) এর আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের রাতের ভোটে নির্বাচিত পলাতক সাবেক মেয়র তাপসের ঘনিষ্ঠ সহোচর রফিকুল ইসলাম এখনো দাপটের সাথে বহাল তবিয়তে আছেন। তৃতীয় শ্রেণীর এই কর্মচারীর ক্ষমতার দাপটের কাছে প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তারা অসহায় বোধ করছেন। তার ক্ষমতার ভয়ে ঠিকাদাররা তটস্থ।
জানাগেছে, রফিকুল ইসলাম ডিএসসিসির সহ সচিব প্রশাসন -১ হিসেবে চলতি দায়িত্বে আছেন। তার মূল পদ হচ্ছে বাজার সুপারভাইজার। ১৪ গ্রেডের কর্মচারী ৯ম গ্রেডের কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করছেন। প্রশাসন -২ এ সহ সচিব এর দায়িত্ব পালনকারী আরেক তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী বাবর আলী কে কতৃপক্ষ সম্প্রতি অপসারণ করেছে। এখন প্রশাসন ১ ও ২ উভয় শাখার সহ সচিব এর দায়িত্ব পালন করছেন তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী সাবেক মেয়র তাপসের আত্মীয় রফিকুল ইসলাম। অথচ প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তারা বিনা কাজে বসে আছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রফিকুল ইসলাম এর উত্থান এর পিছনে রয়েছেন ডিএসসিসির আরেক আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর সচিব বাসিরুল হক ভূঁইয়া। বাসিরুল হক ভূঁইয়া ভান্ডার বিভাগের দায়িত্বে থাকাকালে খিলগাঁও জোনের বাজার সুপারভাইজার রফিকুল ইসলাম কে তার পি এ হিসেবে নিয়ে আসেন। ভান্ডার বিভাগের সকল ক্রয় দরপত্র রফিক নিয়ন্ত্রণ করতেন। অনিয়ম দুর্নীতির বিশেষজ্ঞ হিসেবে খ্যাতি থাকার কারণে বাসিরুল হক ভূঁইয়া রফিকুল ইসলাম কে পিএ বানিয়ে নিয়ে আসেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ঠিকাদার বলেন, আওয়ামী লীগের শাসনামলে রফিক মেয়র তাপসের আত্মীয় পরিচয় দিতেন। একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পুরো দরপত্র তিনি নিয়ন্ত্রণ করতেন। এমনকি তিনি নিজে বেনামে ঠিকাদারি কাজ করছেন।
সূত্র জানায়, ৫ আগষ্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ভোল পাল্টানো আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর সচিব বাসিরুল হক ভূঁইয়া দুর্নীতিতে সিদ্ধহস্ত রফিকুল ইসলাম কে সহ সচিব এর দায়িত্ব প্রদান করেন। সহ সচিব এর দায়িত্ব পেয়ে রফিক এখন কেবল দরপত্র নিয়ন্ত্রণ নয়, ডিএসসিসির নিয়োগ, বদলী, পদোন্নতি সব নিয়ন্ত্রন করছেন। হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডিএসসিসির একজন পদস্থ কর্মকর্তা বলেন, প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তারা বিনা কাজে বসে আছেন। অথচ তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী রফিক কে দিয়ে প্রশাসন চালাচ্ছেন। ক্ষমতার দম্ভে তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী রফিক এখন প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তাদের তোয়াক্কা করছেন না। অফিসের চেইন অব কমান্ড ভেঙে পড়েছে।
তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী রফিক কে সহ সচিব পদ থেকে অপসারণ এবং দরপত্র প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি, নিয়োগ,বদলী ও পদোন্নতি বাণিজ্যে তার সংশ্লিষ্টতা তদন্ত করার জন্য এলজিআরডি মন্ত্রণালয় ও দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ডিএসসিসির সাধারণ কর্মকর্তা কর্মচারীগণ।
এবিষয়ে বক্তব্য নেয়ার জন্য রফিকুল ইসলাম ও বাসিরুল হক ভূঁইয়ার মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

রাজধানীর পল্লবীতে সন্ত্রাসী আসলাম-আশরাফের হত্যা ও চাঁদাবাজীর রাজত্ব

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক:
রাজধানীর পল্লবী এলাকায় সন্ত্রাসী আসলামের চাচা আশরাফ আলী গাজী হত্যা ও চাঁদাবাজীর রামরাজত্ব কায়েম করেছে। বাউনিয়াবাদ এলাকায় এই চাচা-ভাতিজার হত্যাকান্ডের ঘটনা ও চাঁদাবাজীতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে এলাকাবাসী। অপরদিকে এসব ঘটনার তথ্য জেনেও আইন প্রয়োগ কারী সংস্থা রয়েছে নিরব। এতে করে হত্যা মামলার বাদী ও স্থানীয় এলাকাবাসী নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে বলে জানা গেছে।
জানা যায়, পল্লবীসহ মিরপুর এলাকায় দীর্ঘ দিনযাবত সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালিয়ে আসছে আসলাম গাজী। এছাড়াও ফারজানা নামের এক এনজিওকর্মীকে হত্যার নারকীয় ঘটনায় জড়িত রয়েছে সে। তার নির্দেশেই সাভার থেকে ওই গর্ভবতী ও এক সন্তানের জননী ফরজানাকে প্রথমে অপহরণ ও পরে পল্লবীর বাউনিয়াবাদ এলাকার একটি বাসায় আটকে রেখে দুই দিন পাশবিক নির্যাতন চালিয়ে তাকে হত্যা করে আসলামের সহযোগী সন্ত্রাসীরা। ওই গৃহবধূকে পরিকল্পিতভাবে অপহরণ ও আসলাম গাজীর নির্দেশে তার সন্ত্রাসী বাহিনীর সহযোগীরা নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করে। ঘটনার দুই দিন পর ফারজানার মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। বিষয়টি জানাজানি হতেই পুরো এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। এদিকে, নিহত ফরজানার পরিবারের পক্ষ থেকে পল্লবী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নেয়া হলেও ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা না নিতে স্থানীয় প্রভাবশালী ও একটি মহল পুলিশের কাছে তদবির চালায়। এছাড়াও মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে পুলিশের কতিপয় দুর্নীতিগ্রস্ত সদস্য মামলাটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করে।
আরও জানা যায়, সন্ত্রাসী আসলাম গাজী বহু বছরযাবত স্থানীয় এলাকায় বিভিন্ন অপরাধের সাথে জড়িত। তার বিরুদ্ধে রয়েছে চাঁদাবাজি, জমি দখল, অস্ত্র ও মাদক ব্যবসা এবং হত্যাকান্ডের অভিযোগ। গৃহবধূ ফরজানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনা তার অপরাধচক্রের ভয়াবহতা প্রকাশ করেছে। এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের বিচার যেন দ্রুত সম্পন্ন হয় এবং আসলাম গাজীর মত সন্ত্রাসীরা যেন কোনো প্রভাবশালীর ছত্রছায়ায় থেকে পার পেতে না পারে তার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় সাধারণ মানুষ।
এদিকে, ফারজানা হত্যা মামলার বাদী নিহতের ভাই মো. রকি তার অভিযোগে জানান, তার বোন একটি বেসরকারি এনজিওতে চাকুরি করতো। ওই এনজিওতে গ্রাহকরা টাকা রাখলে বেশি টাকা পাওয়া যায় বলে স্থানীয় লোকজন তার বোনের এনজিওতে টাকা সঞ্চয় করতে থাকে। এনজিওটির লেনদেন ভাল থাকায় মানুষ সেখানেই টাকা গচ্ছিত রাখেন। সম্প্রতি ওই এনজিওতে সমস্যা দেখা দেয়ায় স্থানীয় আমানতকারীরা তাদের টাকার জন্য ফারজানাকে চাপ দিয়ে আসছিল। এরই জের ধরে ৩০ মে রাতে সন্ত্রাসী রনি, মামুন, মুক্তার, সম্রাট, আক্তার হোসেন, মোকসেদ আলী, ওমর, জনি, সোহেল বেপারী, আসলাম গাজী, জয়, শাকিল, লাল চাঁন ও রাকিবসহ আরও ১০/১২ জন তার মা রাবেয়া বেগমকে ১১ নম্বর সেকশনের কমিউনিটি সেন্টারে নিয়ে আটক রেখে নির্যাতন চালায়। পরবর্তীতে ৩১ মে তার বোন ফারজানাকে সাভার থেকে তুলে এনে আটক রেখে তার উপর পাশবিক নির্যাতন চালায়। নির্যাতন ও মারধরের এক পর্যায়ে ফারজানার মৃত্যু হয়। পরবর্তীতে গত ৪ জুন বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ফারজানার মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তখন দেখা যায় তার সারা শরীরে নির্যাতনের ছাপ। বিষয়টি এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। পরবর্তীতে এ ঘটনায় তিনি পল্লবী থানায় মামলা করতে গেলে আসামী পক্ষের তদ্বিরের কারণে প্রথমে মামলা নিতে পুলিশ গড়িমসি করলেও পরবর্তীতে মামলা গ্রহণ করে (মামলা নং- ১৫, তারিখ: ০৫/০৬/২০২৫ ইং)।
তিনি আরও জানান, বর্তমানে হত্যাকান্ডের ঘটনায় মামলা করা হলেও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা আসামীদের গ্রেপ্তারে টালবাহানা করছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজধানীর বৃহত্তর মিরপুর ও পল্লবী এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী হিসেবে আসলাম গাজী পরিচিত। পল্লবীর চাঞ্চল্যকর রফিক হত্যার সাথে প্রত্যক্ষভাবে সে জড়িত থাকলেও চার্জশীটে তার নাম না থাকায় এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। দীর্ঘ দিনযাবত আসলাম মিরপুর এলাকায় জমি-বাড়ি দখল, চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছে। এছাড়াও পুলিশের কিছু অসাধু কর্মকর্তার ছত্র-ছায়ায় সে মিরপুরে গড়ে তুলেছে অপরাধ সাম্রাজ্য।
আরও জানা যায়, আসলাম বর্তমানে একাধিক বাণিজ্যিক ভবনের মালিক হলেও তার অধিকাংশ সম্পত্তি অবৈধভাবে দখল করা। কোনো ব্যক্তি যদি জমি বা ফ্ল্যাট বিক্রি করতে চায় তাহলে আসলামকে তারা চাঁদা দিতে বাধ্য হয়। তানা হলে তার বাহিনীর সদস্যরা যে কোনো মূহুর্তে ওই বাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটাতে পারে। শুধু চাঁদাবাজিই নয়, মাদক ও অবৈধ অস্ত্র ব্যবসার সঙ্গেও সে জড়িত। তার সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্যরা নিয়মিত পল্লবী ও মিরপুর এলাকায় মাদক কারবার করে। তাদের প্রাণনাশের হুমকি ও হামলার আশঙ্কায় আসলামের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না। এলাকায় স্বস্তি আনতে অবিলম্বে আসলামসহ তার সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্যদের গ্রেপ্তার করতে এলাকাবাসী জোড় দাবি জানিয়েছেন।

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম