রাজধানীর পল্লবীতে সন্ত্রাসী আসলাম-আশরাফের হত্যা ও চাঁদাবাজীর রাজত্ব

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক:
রাজধানীর পল্লবী এলাকায় সন্ত্রাসী আসলামের চাচা আশরাফ আলী গাজী হত্যা ও চাঁদাবাজীর রামরাজত্ব কায়েম করেছে। বাউনিয়াবাদ এলাকায় এই চাচা-ভাতিজার হত্যাকান্ডের ঘটনা ও চাঁদাবাজীতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে এলাকাবাসী। অপরদিকে এসব ঘটনার তথ্য জেনেও আইন প্রয়োগ কারী সংস্থা রয়েছে নিরব। এতে করে হত্যা মামলার বাদী ও স্থানীয় এলাকাবাসী নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে বলে জানা গেছে।
জানা যায়, পল্লবীসহ মিরপুর এলাকায় দীর্ঘ দিনযাবত সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালিয়ে আসছে আসলাম গাজী। এছাড়াও ফারজানা নামের এক এনজিওকর্মীকে হত্যার নারকীয় ঘটনায় জড়িত রয়েছে সে। তার নির্দেশেই সাভার থেকে ওই গর্ভবতী ও এক সন্তানের জননী ফরজানাকে প্রথমে অপহরণ ও পরে পল্লবীর বাউনিয়াবাদ এলাকার একটি বাসায় আটকে রেখে দুই দিন পাশবিক নির্যাতন চালিয়ে তাকে হত্যা করে আসলামের সহযোগী সন্ত্রাসীরা। ওই গৃহবধূকে পরিকল্পিতভাবে অপহরণ ও আসলাম গাজীর নির্দেশে তার সন্ত্রাসী বাহিনীর সহযোগীরা নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করে। ঘটনার দুই দিন পর ফারজানার মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। বিষয়টি জানাজানি হতেই পুরো এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। এদিকে, নিহত ফরজানার পরিবারের পক্ষ থেকে পল্লবী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নেয়া হলেও ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা না নিতে স্থানীয় প্রভাবশালী ও একটি মহল পুলিশের কাছে তদবির চালায়। এছাড়াও মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে পুলিশের কতিপয় দুর্নীতিগ্রস্ত সদস্য মামলাটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করে।
আরও জানা যায়, সন্ত্রাসী আসলাম গাজী বহু বছরযাবত স্থানীয় এলাকায় বিভিন্ন অপরাধের সাথে জড়িত। তার বিরুদ্ধে রয়েছে চাঁদাবাজি, জমি দখল, অস্ত্র ও মাদক ব্যবসা এবং হত্যাকান্ডের অভিযোগ। গৃহবধূ ফরজানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনা তার অপরাধচক্রের ভয়াবহতা প্রকাশ করেছে। এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের বিচার যেন দ্রুত সম্পন্ন হয় এবং আসলাম গাজীর মত সন্ত্রাসীরা যেন কোনো প্রভাবশালীর ছত্রছায়ায় থেকে পার পেতে না পারে তার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় সাধারণ মানুষ।
এদিকে, ফারজানা হত্যা মামলার বাদী নিহতের ভাই মো. রকি তার অভিযোগে জানান, তার বোন একটি বেসরকারি এনজিওতে চাকুরি করতো। ওই এনজিওতে গ্রাহকরা টাকা রাখলে বেশি টাকা পাওয়া যায় বলে স্থানীয় লোকজন তার বোনের এনজিওতে টাকা সঞ্চয় করতে থাকে। এনজিওটির লেনদেন ভাল থাকায় মানুষ সেখানেই টাকা গচ্ছিত রাখেন। সম্প্রতি ওই এনজিওতে সমস্যা দেখা দেয়ায় স্থানীয় আমানতকারীরা তাদের টাকার জন্য ফারজানাকে চাপ দিয়ে আসছিল। এরই জের ধরে ৩০ মে রাতে সন্ত্রাসী রনি, মামুন, মুক্তার, সম্রাট, আক্তার হোসেন, মোকসেদ আলী, ওমর, জনি, সোহেল বেপারী, আসলাম গাজী, জয়, শাকিল, লাল চাঁন ও রাকিবসহ আরও ১০/১২ জন তার মা রাবেয়া বেগমকে ১১ নম্বর সেকশনের কমিউনিটি সেন্টারে নিয়ে আটক রেখে নির্যাতন চালায়। পরবর্তীতে ৩১ মে তার বোন ফারজানাকে সাভার থেকে তুলে এনে আটক রেখে তার উপর পাশবিক নির্যাতন চালায়। নির্যাতন ও মারধরের এক পর্যায়ে ফারজানার মৃত্যু হয়। পরবর্তীতে গত ৪ জুন বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ফারজানার মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তখন দেখা যায় তার সারা শরীরে নির্যাতনের ছাপ। বিষয়টি এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। পরবর্তীতে এ ঘটনায় তিনি পল্লবী থানায় মামলা করতে গেলে আসামী পক্ষের তদ্বিরের কারণে প্রথমে মামলা নিতে পুলিশ গড়িমসি করলেও পরবর্তীতে মামলা গ্রহণ করে (মামলা নং- ১৫, তারিখ: ০৫/০৬/২০২৫ ইং)।
তিনি আরও জানান, বর্তমানে হত্যাকান্ডের ঘটনায় মামলা করা হলেও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা আসামীদের গ্রেপ্তারে টালবাহানা করছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজধানীর বৃহত্তর মিরপুর ও পল্লবী এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী হিসেবে আসলাম গাজী পরিচিত। পল্লবীর চাঞ্চল্যকর রফিক হত্যার সাথে প্রত্যক্ষভাবে সে জড়িত থাকলেও চার্জশীটে তার নাম না থাকায় এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। দীর্ঘ দিনযাবত আসলাম মিরপুর এলাকায় জমি-বাড়ি দখল, চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছে। এছাড়াও পুলিশের কিছু অসাধু কর্মকর্তার ছত্র-ছায়ায় সে মিরপুরে গড়ে তুলেছে অপরাধ সাম্রাজ্য।
আরও জানা যায়, আসলাম বর্তমানে একাধিক বাণিজ্যিক ভবনের মালিক হলেও তার অধিকাংশ সম্পত্তি অবৈধভাবে দখল করা। কোনো ব্যক্তি যদি জমি বা ফ্ল্যাট বিক্রি করতে চায় তাহলে আসলামকে তারা চাঁদা দিতে বাধ্য হয়। তানা হলে তার বাহিনীর সদস্যরা যে কোনো মূহুর্তে ওই বাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটাতে পারে। শুধু চাঁদাবাজিই নয়, মাদক ও অবৈধ অস্ত্র ব্যবসার সঙ্গেও সে জড়িত। তার সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্যরা নিয়মিত পল্লবী ও মিরপুর এলাকায় মাদক কারবার করে। তাদের প্রাণনাশের হুমকি ও হামলার আশঙ্কায় আসলামের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না। এলাকায় স্বস্তি আনতে অবিলম্বে আসলামসহ তার সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্যদের গ্রেপ্তার করতে এলাকাবাসী জোড় দাবি জানিয়েছেন।

গণপূর্তে কে এই মামা সিরাজ

স্টাফ রিপোর্টারঃ

গণপূর্ত ভবনে তার অবিশ্বাস্য দাপট। অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী, তত্তাবধায়ক প্রকৌশলী,নির্বাহী প্রকৌশলী,উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী, সহকারি প্রকৌশলী সবার কাছেই তিনি কেমন মামা নামে পরিচিত। গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী শামীম আখতার নাকি তার ভাগ্নে। আর এই পরিচয়েই তিরি প্রভাব খাটিয়ে থাকেন।

প্রধান প্রকৌশলীর ব্যবসায়িক পার্টনার কিংডম বিল্ডার্সের মালিক নুসরাত আহমেদের সাথে তার ঘনিষ্ঠতাও চোখে পড়ার মত। প্রায়ই নাকি নুসরাত আহমেদকে তার ফ্ল্যাটে নিয়ে আমোদ ফুর্তি করেন। বিনিময়ে তিনি পেয়ে থাকেন প্রধান প্রকৌশলীর বিশেষ আনুকুল্য। মহাভাগ্যবান এই ভাগ্নের নাম মো: সিরাজুল ইসলাম।

রাজশাহী জেলার বাঘা উপজেলায় তার বাড়ী। আজ থেকে বছর দশেক আগে অখ্যাত একটি দৈনিক পত্রিকার বাঘা উপজেলা প্রতিনিধি পদে বিনা বেতনে কাজ করতেন। ইদানিং প্রধান প্রকৌশলীর বদৌলতে তিনি বনেগেছেন কোটিপতি। ঢাকায় আলীশান ফ্ল্যাটে থাকেন। নতুন নতুন মডেলের গাড়ীতে চড়েন। তার চালচলন দেখলে মনে হয় তিনি কোন শিল্পপতি বা প্রথম শ্রেণীর সরকারি কর্মকর্তা।

এই সিরাজুল ইসলামের কথায় নাকি গণপূর্ত অধিদপ্তরে এখন অনেক অসাধ্য কাজ সাধ্য করা যায়। তিনি তার কথিত ভাগ্নে প্রধান প্রকৌশলী মো: শামীম আখতারকে দিয়ে যা খুশি তা করাতে পারেন। বিনিময়ে যে কমিশন পান তা দিয়েই রাজকীয় জীবন যাপন করেন। একাধিক সুত্রে জানাগেছে, ভাগ্নে সিরাজ প্রায়ই ঢাকা ও ঢাকা মেট্রো জোনের কোন না কোন নির্বাহী প্রকৌশলীর দপ্তরে হাজির হন। ভিআইপি মর্যাদায় আপ্যায়িত হন।

কোটি কোটি টাকার টেন্ডারে অংশ নেন। ভাগ্নের প্রভাব খাটিয়ে ঠিকাদারী কাজও বাগিয়ে নেন। পরবর্তীতে সে কাজ অন্য ঠিকাদারদের কাছে বিক্রি করে দেন। শোনা যায় প্রধান প্রকৌশলী মো: শামীম আখতারের অনিয়ম দুর্নীতি যাতে কোন মিডিয়ায় প্রকাশ না হয় সে জন্য তিনি অলিখিত ঠিকাদারী নিয়েছেন। এ খাতে প্রায় ৭০ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন গণপূর্ত অধিদপ্তর থেকে। কিন্ত কিছু আন্ডারগ্রাউন্ড পত্রিকার মাঝে ২০/৩০ হাজার টাকা বিতরণ করেই  বাকি টাকা পকেটস্থ করেন। ফলে প্রধান প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে গত এক মাস যাবৎ একাধিক জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় সিরিজ রিপোর্ট প্রকাশ হয়েই যাচ্ছে।

একটি দায়িত্বশীল সুত্র জানায়, গণপূর্ত অধিদপ্তর থেকে সিরাজুল ইসলাম ইতোমধ্যেই প্রায় ১০ কোটি টাকার কাজ হাতিয়ে নিয়েছেন। তাকে নিয়ে এখন গণপূর্ত অধিদপ্তরে আলোচনার ঝড় বইছে। প্রশ্ন উঠেছে তিনি প্রধান প্রকৌশলীর কেমন মামা? প্রধান প্রকৌশলীই বা কি কারণে তাকে এত সুযোগ দিচ্ছেন? কি রহস্য লুকিয়ে আছে তার নেপথ্যে? এ বিষয়ে কথা বলতে মো: সিরাহুল ইসলামের সেল ফোনে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার সংযোগ পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে প্রধান প্রকৌশলী শামীম আখতার বলেন, “আমি তাকে চিনি না”।

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম