কৃষিখাতের মাফিয়া বিএডিসি’র চেয়ারম্যান রুহুল আমিন খান

স্টাফ রিপোর্টার॥
কৃষক ও কৃষির অনন্য সেবায় নিয়োজিত বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) এর সকল বদলি ও টেন্ডারে অনৈতিক অর্থ বাণিজ্যের অভিযোগ চেয়ারম্যান রুহুল আমিন খানের বিরুদ্ধে। এ অনৈতিক কাজে বিভিন্ন দলের নেতাদের নাম ব্যবহার করা হচ্ছে। এ বিষয় দুর্নীতি দমন কমিশনে একটি অভিযোগপত্র জমা দিয়েছেন ভুক্তভুগিরা।

 

সূত্র বলছে, বিএডিসি’র নিয়োগ বিভাগের যুগ্মপরিচালক ইয়াছিন আলী এবং বিএডিসি’র ঠাকুরগাও অঞ্চলে উপ-পরিচালক হিসেবে কর্মরত ফারুক হোসেন ও মনোয়ার হোসেন বকুল গংদের নাম বিএডিসি’তে এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। এই চক্রটি বিএডিসি’র বদলি, টেন্ডার ও অন্যান্য সব তদবীর নিয়ন্ত্রণে করেন। বিএডিসি চেয়ারম্যান খুলে বসেছেন ঘুষের দোকান।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএডিসি’র একাধিক কর্মকর্তা জানান যে, বিএডিসি’র বর্তমান চেয়ারম্যান সব বদলী ও টেন্ডার ওই চক্রের নাম ব্যবহার করে বাগিয়ে নিচ্ছে। সম্প্রতি বিএডিসি চেয়ারম্যানের রুমে এই সমস্ত অনৈতিক বিষয়ে দফারফার গোপন সমঝোতা বৈঠক করেছেন বলে জানা যায়। ফলে প্রতিটি টেন্ডার তার পছন্দের লোককে দিতে হচ্ছে এমনকি চেয়ারম্যানের স্ত্রীও এই বদলী বাণিজ্য ও টেন্ডার প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত বলেও বিএডিসি’তে আলোচনায় রয়েছে। বিএডিসি’র ইতিহাসে এমন দুর্নীতিবাজ চেয়ারম্যান আর আসেনি বলে বিএডিসি’র দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা আফসোস করছে এবং উক্ত চেয়ারম্যান আগে যেখানে কর্মরত ছিলেন সেখানেও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে বলে জানা গেছে।

অনৈতিক আর্থিক সুবিধার বিনিময়ে ফ্যাসিষ্ট আমলে নিয়োগকৃত অযোগ্য ও ফ্যাসিষ্ট পিডি’দের পুনর্বাসন এবং আর্থিক দফারফায় ফ্যাসিষ্ট আমলে নিয়োগকৃত পিডি’দের পুর্ন:বহালের অভিযোগ রয়েছে। জানা যায়, আওয়ামী ফ্যাসিষ্ট আমলে যোগ্য কর্মকর্তাদের বাদ দিয়ে পার্টনার প্রকল্প, সোনাগাজী প্রকল্প, বায়োটেকনোলজি প্রকল্প, ফার্টিলাইজার প্রকল্প এবং বরিশাল-ভোলা অঞ্চলে সেচসুবিধা প্রদান সংক্রান্ত প্রকল্পে পিডি নিয়োগ দেয়া হয়। কিন্তু ৫ আগষ্টের রক্তক্ষয়ী গণ-অভ্যুত্থানের পরও বিএডিসি’তে এই সমস্ত পিডি’রা বহাল তবিয়তে কর্মরত থাকায় চলমান বৈষম্যের অবসান হয়নি।

 

বর্তমানে পিডি নিয়োগেও সক্রিয় একটি সিন্ডিকেট অনৈতিক অর্থের বিনিময়ে পিডি নিয়োগের বিদ্যমান শর্তাদি লংঘন করে প্রকল্প শেষ হওয়ার ৬ মাস আগেই চাকুরী হতে অবসরে যাবে এমন কর্মকর্তা ও আওয়ামী ফ্যাসিষ্টদের পুনর্বাসনের জন্য খুবই সক্রিয়ভাবে অপতৎপরতা চালাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে এই সিন্ডিকেট চক্রকে ব্যবহার করে আওয়ামী ফ্যাসিষ্ট গোষ্ঠী দীর্ঘ ১৭ বছরে উপার্জিত অর্থ তাদের সময়ে নিয়োগকৃত পিডি’দের টিকিয়ে রাখতে এবং নতুন পিডি নিয়োগে আর্থিক বিনিয়োগ করে বিএডিসি’র উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের নিয়ন্ত্রণ এই ফ্যাসিষ্টরা নিতে চাচ্ছে। প্রয়োজনে স্যাবোটাজ করে বিএডিসি ধ্বংসের পায়তারা করছে।

উল্লেখ্য, পিডি নিয়োগ সংক্রান্ত পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বিদ্যমান পরিপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, বিধি ৩.২(ঙ) মোতাবেক “প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার ৬ মাস চাকুরীর মেয়াদ থাকতে হবে”; যা অত্যন্ত দূরদর্শী ও গ্রহনযোগ্য বিধি। কারণ সাধারণত: নির্ধারিত সময়ে প্রকল্প শেষ হয় না আবার হলেও পিসিআর’সহ আনুসাংগিক কর্ম সম্পাদনে ন্যুনতম ছয় থেকে এক বছর সময় লেগে যায়। সেক্ষেত্রে পরবর্তীতে আবার পিডি নিয়োগে নানাবিধ জটিলতার সৃষ্টি হয়। এজন্য পিডি নিয়োগে অনেক সময় ডিপিপি’তে উল্লেখিত গ্রেড বা পদে যোগ্য লোক না পাওয়া গেলে প্রকল্প পরিচালক নিয়োগের শর্তাবলীর ৪.৪ মোতাবেক “ক্রয় সংক্রান্ত বিধানাবলী ও প্রকল্প ব্যবস্থাপনা বিষয়ে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এবং প্রকল্প প্রণয়ন, প্রক্রিয়াকরণ ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কাজে অভিজ্ঞ (৫ম গ্রেডের নীচে নয়) কর্মকর্তাকে প্রকল্প পরিচালক নিয়োগে অগ্রাধিকার প্রদান করতে হবে” মর্মে বিধানের আলোকে যোগ্য ও দক্ষ কর্মকর্তাকে পিডি নিয়োগ দেয়া হয়।

বীজ, সার ও সেচসুবিধাদি কৃষকের দোরগোড়ায় পৌছানোর দায়িত্বে নিয়োজিত এমন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে এমন দুর্নীতির মহাউৎসব-বর্তমান সরকারের ভাবমুর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষুন্ন করছে এবং যা জুলাই-আগস্টের শহীদদের রক্তের সাথে চরম বেঈমানীর সামিল। এমতাবস্থায় কৃষির জন্য গুরুত্বপুর্ণ এ প্রতিষ্ঠানে সরকারী নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর সুকঠোর নজরদারী ও ব্যবস্থা গ্রহন খুবই জরুরী হয়ে পড়েছে।

এ বিষয়ে জানতে বিএডিসি চেয়ারম্যান রুহুল আমিন খান এর সঙ্গে মুঠো ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।

ঘুষ-দুর্নীতির অভিযোগে জর্জরিত যুব উন্নয়ন পরিচালক হামিদ খান

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥

স্বৈরাচারী আ.লীগ সরকারের পতনের পর ও থেমে নেই ফ্যাসিবাদের দোসরদের দৌরাত্ম, গত ৫ ই আগস্ট আ.লীগ সরকার পতনের পরও তাদের দোসররা এখনো রয়েছে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে, সম্প্রতি গণমাধ্যমের আলোচনায় এসেছে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও ক্রিড়া প্রতিমন্ত্রী রাসেলের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ই লার্নিং এন্ড আর্নিং এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুদ আলম।

দেশের ৬৪ জেলায় ২৮ হাজার ৮০০ জনকে ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ দিতে সরকার ৩০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প বরাদ্দ দেয়, প্রকল্প পরিচালক মোঃ আব্দুল হামিদ খানের সর্বাত্মক সহযোগিতায় ও বিতর্কিতভাবে যোগ্য প্রতিষ্ঠানকে পাশ কাটিয়ে ছাত্রলীগ নেতা ই লার্নিং এন্ড আর্নিং এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুদ আলমের প্রতিষ্ঠান কাজ পায়।

প্রতিটি জেলায় ৬০০ জন করে শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করবেন। প্রশিক্ষণপ্রাপ্তরা দৈনিক ২০০ টাকা ভাতা ও ৩০০ টাকার খাবার পাবেন। ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সী উচ্চ মাধ্যমিক পাস কর্মপ্রত্যাশী নারী-পুরুষ এই প্রশিক্ষণের সুযোগ পাওয়ার কথা ছিল অথচ অনুসন্ধানে জানা যায় দেশের বিভিন্ন জেলায় বিভিন্ন ভুয়া নাম ও মোবাইল নাম্বার ব্যবহার করে অর্থ আত্মসাৎ করা হচ্ছে।

মাসুদ আলম সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও সাবেক ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ হাসান রাসেলের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে পরিচিত, এছাড়াও আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এমপি মন্ত্রীদের সাথে ছিল তার ঘনিষ্ঠতা, তিনি ২০২২ সালে শেখ হাসিনা ইয়ুথ ভলেন্টিয়ার অ্যাওয়ার্ড ও ২০২৩ সালে স্মার্ট বাংলাদেশ অ্যাওয়ার্ড পুরস্কার পেয়েছে, একটি বেসরকারি স্যাটেলাইট টেলিভিশনের সাক্ষাৎকারে তিনি স্বীকার করেছিলেন চতুর্থ শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন ও ২০০১ সালের বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন কারণ তার বাবা আওয়ামী লীগ নেতা ছিল ও গত ৭ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের দুইদিন পরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি স্টিকার যুক্ত গাড়িতে এক বস্তা (আড়াই কোটি টাকা) টাকা সহ আটক হন মাসুদ আলম এবং সেই সংবাদ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছিল।

ফ্যাসিবাদের দোসর হিসেবে এত তথ্য থাকার পরও ফ্রিল্যান্সিংয়ের প্রকল্প পরিচালক মোঃ আব্দুল হামিদ খান মাসুদ আলমের কাছ থেকে ঘুষ ও কমিশন বাণিজ্য করে তাকে কাজ পাইয়ে দিয়েছেন।

অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, এই তথ্য গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিভিন্ন সাংবাদিককে হামিদ খান ম্যানেজ করে দেন, ইতিমধ্যে মাসুদ আলম ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন দুদক অনুসন্ধান শুরু করেছে ও তাদের দেশ ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। অথচ পরিচালক হামিদ খানের কাছে সাংবাদিকরা গেলে তিনি মাসুদ আলমের প্রশংসা করেন কয়েকজন সাংবাদিককে হামিদ খান বলেন ভাই ব্রাদার মনে করে কাজ করেন নিউজ করে কি করবেন সুসম্পর্ক রাখেন লাভবান হবেন, মাসুদ আলমের বিরুদ্ধে বেশ কিছু গণমাধ্যমের সংবাদপ্রকাশ হওয়ার পরও অর্থের বিনিময়ে তা প্রত্যাহার করিয়াছেন আর এগুলোর মধ্যস্থতা করেছেন যুব উন্নয়নের প্রকল্প পরিচালক হামিদ খান।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, প্রকল্প পরিচালক হামিদ খান অনেক ঘুষখোর ও দুর্নীতিবাজ ব্যক্তি, তিনি অবৈধ অর্থে নিজের পরিবার ও বিভিন্ন আত্মীয়-স্বজনের নামে বেনামে বিপুল পরিমাণ সম্পদ করেছেন এবং তিনি অর্থছড়া কিছুই বোঝেন না ও মাসুদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ কমিশন নিয়েছেন তিনি, মাসুদ আলম ফ্যাসিবাদের দোসর এই তথ্য তিনি সরকারের উচ্চপর্যায়ে উপস্থাপন করেননি। আপনারা আরো ভালোভাবে অনুসন্ধান করুন তাহলে উনার আরো কুকীর্তি বেরিয়ে আসবে, যুব উন্নয়ন থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন অবৈধ ভাবে। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন প্রভাবশালী কর্মকর্তা মন্ত্রী এমপিদের সঙ্গে হামিদ খানের ঘনিষ্ঠতা ছিল সেই ধারাবাহিকতায় তিনি মাসুদ আলমের পক্ষে কাজ করেন।

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য হামিদ খানের মুঠো ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম