
আলাউদ্দিন কবির :রংপুর প্রতিনিধি:
রংপুর নগরীর জলকর এলাকায় মৃত আপন ভাইয়ের সম্পত্তি জালিয়াতি করে বিক্রি করার অভিযোগ উঠেছে অপর পাঁচ ভাই-বোনদের বিরুদ্ধে । জমি দখলের পর বসতের একমাত্র ঘর-বাড়িও দখল করে মৃত ভাইয়ের স্ত্রী ও সন্তানকে বের করে দিয়েছে প্রভাবশালী ভাই-বোন ও ভাতিজারা।
সিটি করপোরেশনের ১৯ নং ওয়ার্ডের জলকর এলাকায় বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের ইলেক্ট্রিক ইঞ্জিনিয়ার খায়রুল আলমের স্ত্রী ও সন্তানের সাথে ঘটেছে এমন হৃদয় বিদারক ঘটনা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের সাবেক নাজির মৃত হাবিব উল্ল্যাহ ৯ সন্তানের জনক ছিলেন। তার মৃত্যুর পর ৪ ছেলে ও তিন মেয়ে তার পৈত্রিক সম্পত্তি ভোগ করে আসছিলেন। হাবিব উল্ল্যাহর পঞ্চম সন্তান আলম বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডে কর্মরত ছিলেন। স্ত্রী ও সন্তান নিয়ে নিজ ভিটাতে বসবাস করে আসছিলেন তিনি। পৈত্রিক সম্পত্তি ছাড়াও ওই এলাকায় আরও সম্পত্তি ক্রয় করেন মৃত খায়রুল আলম।
পৈত্রিক সম্পত্তির ভাগ বাটোয়ারা সহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ভাই-বোনরা মানসিক চাপ দিতেন। একপর্যায়ে ২০১৭ সালের ৯- ই এপ্রিলে ব্রেইন স্ট্রোক করে মারা যান তিনি। পরে তার ভাই এ.কে.এম রেজাউল করিম, এ.কে.এম ইব্রাহিম ও বোন হাজেরা বেগম,খালেদা বেগম এবং আমিনা বেগম তার সম্পত্তি ভোগ দখল ও দলিল জালিয়াতি করে হস্তান্তর করেন।
জমির দলিল জালিয়াতির মূল হোতা এ কে এম রেজাউল করিমের পুত্র সেলিম রেজা (আকিব) ও শ্যালক এডভোকেট মোস্তফা জামান দোলন। অভিযোগ রয়েছে সেলিম রেজা আকিব ও তার মামা এডভোকেট মোস্তফা জামান দোলন আওয়ামী লীগের প্রভাব খাটিয়ে এসব অনিয়ম করেছেন। রেজাউল করিম তার নিজের স্ত্রীর নামে করেছেন একাধিক সম্পত্তি।
আদালতের মামলা ও এলাকাবাসী সুত্রে জানাগেছে, পৈত্রিকসুত্রে মৃত খাইরুল আলমের নামীয় সম্পত্তি ৩৮ শতাংশ ও ক্রয়কৃত সম্পত্তি ৭৩ শতাংশ মোট সম্পত্তি ১১১ শতাংশ। পুরো জমি বিক্রি করেছেন খাইরুল আলমের নিজ ভাই বোনেরা। এতে করে খাইরুল আলমের পরিবার এখন সর্বস্বান্ত ভিটে ছাড়া। অবশিষ্ট নিজবাড়ী ১০ শতাংশের মধ্যে থাকলেও সেখানেও অত্যাচার ভয়-ভীতি ও মেরে ফেলার হুমকি দেখিয়ে বের করে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করে বলেন খাইরুল আলমের একমাত্র সন্তান এ.কে.এম আজওয়াদ আবরার। নিজের বাবার রেখে যাওয়া সম্পত্তি ফিরে চান তিনি।
মামলাসুত্রে জানাগেছে, খায়রুল আলমের মৃত্যুর পর তার সন্তান আজওয়াদ আবরার নাবালক থাকায় তাদের সম্পত্তি ভোগদখল করে আসছিলো আপন চাচা ও ফুফু ও তাদের সন্তানরা। খায়রুল আলমের সন্তান আবার নাবালক থাকার সুযোগে তাদের অংশের সম্পত্তি স্বামী স্ত্রী ও সন্তান সহ বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে বেআইনীভাবে হস্তান্তর করে দখল করেন।
এদিকে মৃত খায়রুল আলমের সন্তান আবরার স্থানীয় ভূমি অফিসে খাজনা পরিশোধ করতে গেলে খারিজে জমি থাকলেও হোল্ডিং না থাকায় খাজনা নিতে অপারগতা করেন ভূমি কর্মকর্তা। পরে আবরার রংপুর সদর- সাব রেজিস্ট্রার অফিসে খোঁজ নিতে গেলে জানতে পারেন তার চাচা ও ফুফু তাদের প্রাপ্ত অংশেন চাইতে অতিরিক্ত জমি একাধিক দলিলমূলে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে হস্তান্তর করেন।
এছাড়াও সাব-রেজিস্টার অফিসে খোঁজ নিয়ে আরবার আরও জানতে পারে পূর্বে বর্ণিত দলিল ছাড়াও তারা বিভিন্ন দলিল মূলে আরও জমি হস্তান্তর করেন।
অভিযুক্তরা বেআইনিভাবে সম্পত্তি ভোগদখল করায় মৃত খায়রুল আলম ও তার সন্তান ওয়ারিশসুত্রে জমি পাওয়া সত্বেও রাধাবল্লভ ৬২ শতাংশ ও কুকরুল মৌজার ৪৯ শতাংশ জমি ও নিজ বাড়ি দখল করতে পারছেন না।
এমতবস্থায় প্রায় ৩০ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে আবরারের পরিবারের। সন্তানের পড়াশোনা সহ তার ভবিষ্যত নিয়ে দুশ্চিন্তায় তার বৃদ্ধ মা। অন্যদিকে আবরার নিজের সম্পত্তি উদ্ধার জীবন সংগ্রাম ও মায়ের চিকিৎসা সহ মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। মৃত বাবার কবরের সান্নিধ্য পেতে আবারও পৈতৃক ভিটায় ফিরে যেতে চায় আর আবরার।
এ বিষয়ে রংপুরের আইনজীবী ও মহানগর নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব এডভোকেট পলাশ কান্তি নাগ বলেন, বাবার মৃত্যুর পর নাবালক সন্তানের সম্পত্তি জালিয়াতি করে দখল বেআইনী এবং বাড়ি থেকে বের থেকে বের করে দেয়া অমানবিক। প্রচলিত আইন অনুযায়ী তার অধিকার সে ফিরে পাওয়া সুযোগ আছে বলেও মনে করেন তিনি।